রমজান আলোচনা : দারসে কুরআন ,সূরা আল-আসর Rose Rose Rose

লিখেছেন লিখেছেন মুমতাহিনা তাজরি ২৩ জুলাই, ২০১৪, ০৭:২৬:২১ সকাল

সূরা আল-আসর (ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায়)

وَالْعَصْرِ (1) إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ (2) إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ (3)

অর্থঃ

সময়ের কসম। মানুষ আসলে খুবই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করতে থেকেছে এবং পরস্পরকে হক কথার ও সবর করার উপদেশ দিতে থেকেছে।


নামকরণঃ

প্রথম আয়াতের “আল আছর” শব্দটিকে এর নাম হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

নাযিল হবার সময়কালঃ

মুজাহিদ, কাতাদাহ ও মুকাতিল একে মাদানী বলেছেন। কিন্তু বিপুল সংখ্যক মুফাস্সির একে মাক্কী বলেছেন। এর বিষয়বস্তু থেকে বোঝা যায় মাক্কী যুগের প্রথম অংশে অবতীর্ণ। এর আকার মাক্কী সুরার বৈশিষ্ট্য বহন করে।

বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্যঃ

এর মধ্যে স্পষ্ট ভাষায়, মানুষের সাফল্য ও কল্যাণ এবং ধ্বংসের পথ বর্ণনা করা হয়েছে।

ইমাম শাফেয়ী বলেন- মানুষ যদি এই একটি সুরা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে তাহলে এটিই তাদের হেদায়েতের জন্য যথেষ্ট।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হিসন দারেমী আবু মাদীনা-

كَانَ الرَّجُلَانِ مِنْ أَصْحَابِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا الْتَقَيَا، لَمْ يَتَفَرَّقَا إِلَّا عَلى أَنْ يَقْرَأَ أَحَدُهُمَا عَلَى الْآخَرِ "سُوْرَةَ الْعَصْرِ" إِلى آخِرِهَا، ثُمَّ يُسَلِّمَ أَحَدُهُمَا عَلَى الْآخَرِ

‘রাসূলুল্লাহ (সাHappy এর সাহাবীদের মধ্য থেকে যখন দুই ব্যক্তি মিলিত হতেন তখন তারা একজন অপরজনকে সুরা আছর না শোনানো পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হতেন না।’ (তাবারানী)

ব্যাখ্যাঃ

মূলবিষয়ঃ এ সুরায় চারটি গুণাবলীর অধিকারী ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে যারা সময়ের ভেতর অবস্থানকালীন ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে-

- ঈমান

- সৎকাজ

- পরস্পরকে হকের উপদেশ দেয়া।

- পরস্পরকে সবর করার উপদেশ দেয়া।

কসমের অর্থঃ আল্লাহ সৃষ্টিকুলের কোন বস্তুর শ্রেষ্ঠত্ব, অভিনবত্ব প্রকাশের জন্য কখনও কসম খাননি বরং যে বিষয়টি প্রমাণ করার উদ্দেশ্য এই বস্তুটি তার সত্যতা প্রমাণ করে বলেই তার কসম খেয়েছেন।

এখানে সময়ের কসম খাওয়ার অর্থ হলো যাদের মধ্যে উল্লিখিত চারটি গুনাবলী রয়েছে তারা ছাড়া বাকী সমস্ত মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে সময় সাক্ষী।

সময়ের কসমঃ সময় বলতে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। এটি কোন দীর্ঘ সময় নয়। ভবিষ্যতের গর্ভ থেকে বের হয়ে আসা বর্তমান অতীতে নিপতিত হচ্ছে। অতীতের কসম হলো ইতিহাসের সাক্ষ্য। বর্তমানের কসম হলো বর্তমানের অতিবাহিত সময় মানুষকে কাজের জন্য দেয়া হচ্ছে। দ্রুত অতিবাহিত সময়ই হলো আসল মূলধন।

ইমাম রাযী কর্তৃক এক মনীষির উদ্ধৃত উক্তি-

এক বরফ ওয়ালা বাজারে হেকে চলছিল, দয়া করো এমন এক ব্যক্তির প্রতি যার পুজি গলে যাচ্ছে।

১) “মানুষ” বলতে সমস্ত জাতিকে বোঝানো হয়েছে।

২) “ক্ষতি” বলতে সাধারন অর্থে লাভের বিপরীত হলেও এখানে কল্যাণ ও সফলতা বিপরীত অর্থে।

৩) (সাফল্য ও ক্ষতির ব্যাখ্যা করতে হবে) প্রকৃত অর্থ হলো দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জায়গায় ক্ষতি বিরাজমান। চারটি গুন সম্পন্ন লোক দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জায়গাতেই লাভবান।

চারটি গুনঃ

১) ঈমানঃ ঈমানের সমন্বয় হলো ক) মৌখিক স্বীকৃতি খ) অন্তরে বিশ্বাস গ) কাজে পরিণত করা।

কোরআনে ঈমানের ব্যাখ্যা-

“যারা বলেছে আল্লাহ আমাদের রব তারপর তার উপর অবিচল হয়ে গেছে।”(হা-মীম সিজদা-৩০)

إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا

“আসলে তারাই মূমিন আল্লাহর কথা উচ্চারিত হলে যাদের দিল কেপে উঠে।”(আনফাল-২)

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ

“আসলে তারাই প্রকৃত মুমিন যারা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে এরপর কোনরূপ সন্দেহে পতিত হয়নি।”(হুজুরাত,১৫)

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا

“যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহকে সর্বাধিক ও অত্যন্ত মজবুতির সাথে ভালোবাসে।” (বাকারা-১৬৫)

وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِّلَّهِ

ঈমানের আসল লক্ষ্য হলো প্রকৃত ঈমান, কেবল মৌখিক স্বীকারোক্তি নয়।

হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান আনো।”(নিসা-১৩৬)

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا آمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ

২) সৎকাজঃ

দ্বিতীয় গুণটি হলো সৎকাজ। কুরআনের পরিভাষায় সালেহাত সমস্ত সৎকাজ এর অন্তর্ভুক্ত। কুরআনের দৃষ্টিতে, যে কাজের মূলে ঈমান আছে এবং যা আল্লাহ ও তার রাসূল (সাHappy প্রদত্ত হেদায়াতের ভিত্তিতে সম্পাদিত হয়েছে তা, সৎকাজ। ঈমানের পর সৎকাজের বর্ণনার অর্থ হলো ঈমান বিহীন কোন সৎকাজের পুরস্কার দেয়ার ...... নেই। সৎকাজ বিহীন ঈমান একটি দাবী ছাড়া আর কিছুই নয়। ঈমান ও সৎকাজ বীজ আর বৃক্ষের মতো।

পরবর্তী দু’টি গুণ হলো - যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তারা পরস্পরকে হক কথা বলা হক কাজ করা এবং ধৈর্য্য ধারণের উপদেশ দিতে হবে। এর প্রাথমিক অর্থ হচ্ছে ঈমানদার ও সৎকর্মশীলদের পৃথক না থেকে সম্মিলিতভাবে একটি সৎ সমাজ দেহ গড়ে তুলতে হবে।

“হক” শব্দটি বাতিলের বিপরীত। দু’টি অর্থ-

i) সঠিক, নির্ভুল, সত্য অনুসারী এবং আকিদা ও ঈমান বা পার্থিব বিষয়াদির সাথে সম্পর্কিত প্রকৃত সত্য অনুসারীর কথা।

ii) আল্লাহর বান্দার বা নিজের যে হকটি আদায় করা ওয়াজিব হয়ে যায়।

(১) বাতিল মাথা উঁচু করে দাড়ালে হক পন্থীরা নিরব দর্শক নয়।

(২) সমাজে প্রানশক্তি বজায় থাকে।

(৩) হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে হক পন্থীরা অন্যদেরকেও হকের উপদেশ দেয়।

সুরা মায়েদার (৭৮-৭৯) তে বলা হয়েছে-

لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ عَلَى لِسَانِ دَاوُودَ وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ذَلِكَ بِمَا عَصَوْا وَكَانُوا يَعْتَدُونَ (78) كَانُوا لَا يَتَنَاهَوْنَ عَنْ مُنْكَرٍ فَعَلُوهُ لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ

‘হযরত দাউদ ও হযরত ঈসা (আHappy এর মুখ দিয়ে বনী ইসরাঈল জাতির উপর লা’নত করা হয়েছে কারণ তাদের সমাজে গোনাহ ও জুলুম ব্যাপক বেড়ে গিয়েছিল এবং লোকেরা পরস্পরকে খারাপ কাজে বাধা দিত না।’

চতুর্থ গুনটি হলো সবরঃ হকের নসিহত করতে গিয়ে বা হকের সমর্থন করতে গিয়ে যে সব সমস্যা ও বাধার মুখে নিপতিত হতে হয় তার মোকাবেলায় তারা পরস্পরকে অবিচল ও দৃঢ় থাকার উপদেশ দিতে থাকবে।

-ঃ শিক্ষা ঃ-

(১) দুনিয়া ও আখেরাতের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রকৃত ঈমানদার হতে হবে।

(২) প্রকৃত ঈমানদারকে অবশ্যই সৎকাজ করতে হবে এবং পরস্পরকে হক কথা বলতে হবে।

(৩) ঈমানদারকে অবশ্যই বাতিলের বিরুদ্ধে লড়তে হবে এবং বাতিলকে মাথা উচু করে দাড়াতে দেবেনা।

(৪) হক পথে চলার সময় সমস্ত বাধা বিপত্তি অবশ্যই ধৈর্য্য ধরে সামনে অগ্রসর হতে হবে।

Rose Rose Rose

(সংগ্রহ)

বিষয়: বিবিধ

২০১৭ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

247436
২৩ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৮:০১
মোহাম্মদ নূর উদ্দীন লিখেছেন : উত্তম পোষ্ট । আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দিন । আমীন ।
247439
২৩ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৮:৪৫
বাজলবী লিখেছেন : মা শা অাল্লাহ গুরুত্বপূর্ণ একটি সূরার দারস পেশ করেছেন।সুন্দর হয়েছে।অাল্লাহ অাপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুক।
247453
২৩ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০১:৪৩
আমি মুসাফির লিখেছেন : আসর হলো অমাদের পুজি অর্থাৎ সময় বা আয়ু । কতটুকু আয়ু পেয়েছি এটাকে মুলধন হিসাবে কাজে লাগাতে হবে যদি ভাল কাজে লাগান তাহলে মুলধনের বিনিময়ে পুরস্কৃত হবেন অার যদি খারাপ কাজে এই পুজ খাটান তাহলে কপালে কষ্ট আছে।
247464
২৩ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০২:১৮
সন্ধাতারা লিখেছেন : Wonderful post mashallah. Jajakalla khair.
247470
২৩ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০২:৪৫
হামিদাখানম লিখেছেন : আলহামদু লিল্লাহ। সুন্দর একটা দারস পোষ্ট করেছেন। আল্লাহ আপনাকে জাযা দান করুন। অনেক ধন্যবাদ।
247503
২৩ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:৪০
বুড়া মিয়া লিখেছেন : খুবই ভালো লাগলো
247508
২৩ জুলাই ২০১৪ বিকাল ০৪:০১
আফরা লিখেছেন : মাশাআল্লাহ ! অনেক সুন্দর হয়েছে আপু । সমস্ত মানুষ ক্ষতি মধ্যে রয়েছে তবে তারা ছাড়া যারা ," ঈমান

- সৎকাজ

- পরস্পরকে হকের উপদেশ দেয়া।

- পরস্পরকে সবর করার উপদেশ দেয়া।

আল্লাহ আমাদের এই চারটি গুন নিজেদের ভিতর ধারন করার তোফিক দিন । আমীন !
247651
২৩ জুলাই ২০১৪ রাত ১১:৪০
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : আপু এতদিন পর এলেন! মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর হয়েছে। ছোট্ট একটা সূরার মাঝেও শিক্ষাটা কত গুরুত্বপূর্ণ!

নিয়মিত লিখবেন Love Struck ঈদের শুভেচ্ছা রইল Rose Rose
248026
২৫ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৯:২০
ভিশু লিখেছেন : Angel Angel Angel
খুব ভালো লাগ্লো শ্রদ্ধেয়া মুমতি আপুজ্বি ...Happy Good Luck
ঈদ-পোস্ট চাই... Rolling Eyes Rose
১০
291646
০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৫:৪৯
মাই নেম ইজ খান লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File