ফেরকাবাজীর নগ্নরূপ: সুন্নিকে হত্যার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারস্থ শিয়া!
লিখেছেন লিখেছেন জিনিয়াস ১৬ জুন, ২০১৪, ১১:২১:৩৪ রাত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকর্তৃক সাদ্দাম সরকার উৎখাতের পর অস্থিরতার মধ্য দিয়ে পার হচ্ছিলো ইরাক। এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে প্রায় একটি যুগ। এ সময় দখলদার মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা শক্তিগুলোর বিধ্বংসী অস্ত্রের শিকার হয়েছে অন্তত দশ লাখ নারী, শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ সাধারণ মানুষ। নিজেদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে শরণার্থী হয়েছে আরো বহুগুণে। বিদ্রোহী কবি নজরুলের প্রশংসিত শাতিল আরবের দেশ ইরাকিদের স্বভাব-চরিত্র প্রসঙ্গে বলেছিলেন. “সাহারায় এরা ধুঁকে মরে তবু পরে না শিকল পদ্ধতির।” অদম্য ইরাকিদের পায়ে শিকল হয়তো পরানো যায় নি, কিন্তু সেখানকার বসরার গোলাপ আজ শুকিয়ে গেছে। নেই সেই আগেকার বাগদাদ কিংবা তার সৌন্দর্য। সেখানকার শিশুরা ঠিকই ধুঁকে ধুঁকে মরছে অপুষ্টিতে। অপরদিকে দখলদার ইউরোপ-আমেরিকান শক্তি ইরাক দখল করতে এসে যৎসামান্য সৈন্য ও বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেও কুলিয়ে উঠতে না পেরে শিয়া-সুন্নির পুরনো বিভেদের বীজ বপন করে আলগোছে পিছু হটে গেছে। তারা যাওয়ার সময় ক্ষমতা তুলে দিয়ে গেছে তুলনামূলক তাদের বেশি অনুগত দালাল সংখ্যাগুরু শিয়া সম্প্রদায়ের হাতে। কিন্তু বর্তমানে সংখ্যালগু সুন্নিরা আল-কায়েদার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে শিয়াদের শাসন ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করে একের পর এক দখল করে নিচ্ছে ইরাকি শহরগুলো। এ দখল প্রক্রিয়ায় তারা এখন প্রায় বাগদাদের দ্বারপ্রান্তে। দেশের এ সংকাটপন্ন অবস্থায় সে দেশের প্রধানমন্ত্রী নূরে আল মালিকী জরুরি অবস্থা জারি করতে সংসদ অধিবেশন ডেকেছিলেন। কিন্তু সেখানে অধিকাংশ সাংসদই অনুপস্থিত থাকায় এব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় নি। এদিকে সুন্নিদের এ অপ্রত্যাশিত বিজয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে পাশ্ববর্তী Islamic Republic of Iran বলে পরিচিত শিয়া প্রধান রাষ্ট্রটির কর্তাব্যক্তিরা। তারা সৌদি মদদপুষ্ট ও আল-কায়েদা সমর্থিত এই দলটিকে সন্ত্রাসী, জঙ্গি ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে তাদেরই পুরনো শত্রু যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আহ্বান জানিয়েছে। অপরদিকে ইরাকে নিজেদের সৈন্য মোতায়েন করার সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিলেও ইরাকি কর্তৃপক্ষের অনুরোধে মালিকি সরকারকে যে কোন ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছে ইরান। একই সাথে প্রেসিডেন্ট হাসান রূহানি জানিয়েছেন, জঙ্গি হুমকি ইস্যুতে ইরান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী হওয়ার কথা বিবেচনা করছে এবং একই সাথে তিনি বলেছেন, “আমরা বলেছি যে, সব দেশকেই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হতে হবে। কিন্তু ইরাক প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে এখনো এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে দেখছি না।” গত শনিবার এক প্রেস কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন।
ইরাকের ব্যাপারে পুরনো শত্রু যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মিত্রতা গঠন প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ঐ প্রেস কনফারেন্সে বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে এমনটা ভাবব যদি তারা ইরাক অথবা অন্যত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মোকাবেলা করে।” ইরানের বর্তমান এই মানসিকতা থেকে প্রমাণিত হচ্ছে ইরাকের নতুন শক্তির উত্থান প্রসঙ্গে তারা তাদের পুরনো শত্রুতা বিসর্জন দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মিলে যেতে আপত্তি বোধ করবে না। এ লক্ষ্যে তারা যুক্তরাষ্ট্রকে এ অঞ্চলে পুনরায় এক প্রকার টেনেই নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। অর্থাৎ ইরান যুক্তরাষ্ট্রকে ইরাকি সুন্নিদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। কেন? কারণ, ইরাকে আইএসআইএল (Islamic State in Iraq and the Levant) এর বিজয় মানেই ইরানিদের আরেক পুরনো প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরবের বিজয়। ইরান এবং সৌদি আরব দুটো দেশই নিজেদেরকে ইসলামের পক্ষশক্তি বলে প্রচার করে। ইরানিরা মাযহাবগত দিক থেকে শিয়া এবং সৌদি রাজ পরিবার সুন্নিপন্থী। এরা একে অন্যকে ইসলামের শত্রু, কাফের বলে বিশ্বাস করে। তাদের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব বহু পুরাতন ও এতটাই শক্তিশালী যে- অন্য কোন অন্য ধর্মের লোককে বুঝিয়ে শুনিয়ে ইসলাম গ্রহণ করানো সম্ভব হলেও কোন সুন্নিকে শিয়া কিংবা কোন শিয়াকে সুন্নিতে রূপান্তর করা প্রায় অসম্ভব।
সৌদি রাজ পরিবারের জন্মের আগেও শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে এ শত্রুতা ও দূরত্ব বিদ্যমান ছিলো। সর্বশেষ অটোমান সাম্রাজ্য ভেঙ্গে যাওয়ার পর ব্রিটিশদের প্রত্যক্ষ মদদে হাউজ অব সৌদের প্রতিষ্ঠাতা ইবনে সৌদ নজদ ও হেজাজের ক্ষমতায় বসে সৌদ রাজ পরিবার প্রতিষ্ঠা করেন। পরে তাদের রাজ্যের আওতা আরো ব্যাপক আকারে বাড়ানো হয়। অন্যদিকে ১৯৭৯ সালে ইরানের শাহকে ক্ষমতাচ্যুত করে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইমাম খোমেনি সে দেশের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। এ বিপ্লব ছিলো মূলত সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমা শক্তিগুলোর জন্য এক মারাত্মক হুমকি। কিন্তু ইরানি শিয়াদের নিজেদের মধ্যে ঐক্যের কারণে ঐ পরাশক্তিকে টেক্কা দিয়ে তারা এখন একটি মোটামুটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে টিকে আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে শত্রু রাষ্ট্র ইরানকে বেকায়দায় ফেলানোর জন্য সৌদি রাজশক্তিটি তখন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। এ নিয়ে এ দুটো শক্তির শত্রুতা এতদূর গড়ায় যে সৌদি সরকার মক্কায় ইরানিদের হজ্বের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইরানিরা হজ্ব করতে এলে এবং ক্বাবার প্রাঙ্গনে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ধ্বংস হোক’ স্লোগান দিলে সৌদি সৈন্যরা গুলি চালিয়ে চারশত ইরানিকে হত্যা করে। দাবিদার মুসলিমদের প্রধান দুটো ভাগ শিয়া সুন্নির শত্রুতার এ ধারাবাহিকতা আজও চলমান।
এই শত্রুতার জের এবং আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের জন্য এই দু’টো শক্তি নিজেদের শক্তি বাড়ানো এবং একে অপরের ক্ষতি করতে সদা তৎপর। সৌদি সুন্নিপন্থীরা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য সুন্নিদের নিয়ে জোটবদ্ধ এবং ইরানি শিয়ারা ইরাক, সিরিয়া ও লেবাননকে নিয়ে আঞ্চলিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় মরিয়া। মধ্যপ্রাচ্যের পুরো অঞ্চলটি পাশ্চাত্যের গোলামিতে নিমজ্জিত হওয়া, ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে সেখানে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের জন্ম নেওয়া এবং এখানে সৃষ্ট অন্যান্য দাঙ্গা-ফাসাদ ও যুদ্ধের পেছনেও এই শিয়া-সুন্নির দ্বন্দ্বই মূল কারণ। পুরনো এই দ্বন্দ্বেরই ক্রমধারা আজকের এই ইরাক-ইরান পরিস্থিতি।
এভাবেই নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদেরকে। যাদের সাথে বেসামরিক ব্যক্তি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, তাদের অনেকের গায়েই সাধারণ পোশাক।এভাবেই নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদেরকে। যাদের সাথে বেসামরিক ব্যক্তি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, তাদের অনেকের গায়েই সাধারণ পোশাক।
এখন দেখা যাক ইসলামের দৃষ্টিতে ইসলামেরই অন্যতম বৃহৎ এই দুটো দলের মধ্যে কার অবস্থান কোথায়। না, আমি তাদের এবাদত, উপাসনার ভিন্নতা নিয়ে কথা বলবো না। যেহেতু আল্লাহ তাঁর কেতাবের সকল আদেশ-নিষেধ মো’মেনদেরকে উদ্দেশ্য করেই দিয়েছেন এবং তারা উভয়ই নিজেদেরকে সঠিক ও সর্বোত্তম মো’মেন বলে মনে করে সেহেতু আমরা ধরে নিতে পারি আল্লাহর ঐ মৌলিক ও সামষ্টিক আদেশসমূহ তাদের উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য।
মো’মেন ও মুসলিম হতে হলে আল্লাহ এবং তাঁর রসুল যে মৌলিক শর্তগুলো বেঁধে দিয়েছেন- বিশ্বাসগত দিক থেকে শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে সেসব নিয়ে কোন ব্যবধান দেখা যায় না। উভয় পক্ষই ঈমান রাখে আল্লাহর উপর, তাঁর মালায়েকদের উপর, অবতীর্ণ কেতাবের উপর, প্রেরিত রসুলগণের উপর, বিচার দিবসের উপর, কর্মের ভিত্তিতে ভাল-মন্দ নির্ধারিত হওয়া অর্থাৎ ভাগ্যের উপর ও বিচার দিবসের উপর। এই মৌলিক বিষয়গুলো ব্যতীত তাদের মধ্যে অন্যান্য মাসলা-মাসায়েল নিয়ে মত পার্থক্য রয়েছে, যদিও তা উভয় ফেরকার এক হওয়ার পেছনে আসলে তেমন বাঁধা হওয়ার কথা নয়। যাই হোক, আমরা আপাতত উভয়ের দাবিকে মেনে নিয়েই দেখি সত্যিকার অর্থে আল্লাহর দেওয়া মো’মেনদের বৈশিষ্টের সাথে তাদের বৈশিষ্ট মেলে কি না।
আল্লাহ কলেমায় বিশ্বাসী মো’মেনদেরকে একে অপরের ভাই হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন (হুজারাত-১০)। তিনি তাঁদেরকে আদেশ করেছেন সীসা ঢালা প্রাচীরের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকতে (সুরা সওফ-৪)। আল্লাহর রসুল এক মো’মেনের জন্য অপর মো’মেনের রক্ত হারাম ঘোষণা করেছেন-(হাদিস, মুসলিম)। তিনি (সঃ) একে অপরের সাথে যুদ্ধ করাকে কুফর হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন(হাদিস, বোখারি)। তিনি আরো বলেছেন, “প্রকৃত মো’মেন হলো সেই, যার হাত থেকে অপর মো’মেন নিরাপদ থাকে ( বুখারি ও মুসলিম)। এছাড়াও রসুলাল্লাহ মো’মেনদেরকে একটি দেহের সাথে তুলনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “দেহের একটি অংশ আক্রান্ত হলে দেহের অন্য সমস্ত অংশ জ্বরাক্রান্ত ও নিদ্রাহীন হয়ে পড়ে (মুসলিম)।”কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি মো’মেন হিসেবে তারা এ বৈশিষ্ট্যগুলোর ধারে কাছেও নেই। বরং এরা এসব বৈশিষ্ট্যের বিপরীত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। উভয় গোষ্ঠীই এক আল্লাহর বান্দা, একই রসুলের উম্মাহ, একই কোর’আনে বিশ্বাসী দাবিদার, কিন্তু তারা একে অপরের শত্রু।
আগেই বলেছি, ঈমানের মৌলিক বিষয়গুলোতে মিল থাকায় অন্যান্য বিষয়ে ছাড় দিয়ে নিজেদের ঐক্য বজায় রাখা সম্ভব। যদি তারা তাই করতো তাহলে আজকে তাদেরই মাটিতে অবস্থান করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো কিছুতেই সেখানকার মানুষগুলোকে এভাবে নির্মমতার সাথে হত্যা করতে পারতো না, ভাইয়ে ভাইয়ে বিবাদ উষ্কে দিতে পারতো না। সত্যিকার অর্থে তাদের এই শত্রুতার কারণ ধর্মীয় মত পার্থক্যে থেকেও ভিন্ন কিছু। প্রকৃত কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক (জাতীয়তাবাদ) ও স্বার্থগত সমস্যা। নিজেদের মধ্যে ব্যবধান গড়ে তুলে, একে অপরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষের প্রাচীর রচনা করে উভয় দলের নেতারা তাদের পার্থিব কায়েমী স্বার্থ ও জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত। তারা নিজেদেরকে মো’মেন দাবি করলেও মো’মেনদের প্রতি আল্লাহর বেঁধে দেওয়া মৌলিক হুকুমগুলোকে এরা কোন প্রকার তোয়াক্কাই করে না। বরং নিজেদের শান-শওকতপূর্ণ সিংহাসন ও তখত-তাউস ধরে রাখতে তারা পশ্চিমাদের গোলামিতে ব্যস্ত। পশ্চিমাদেরকে তুষ্ট রাখতে কে কত বেশি পদলেহন করতে পারে তাই নিয়ে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়। আল্লাহ মো’মেনদেরকে ইহুদি-খ্রিস্টানদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন (মায়েদা-৫১)। কিন্তু তারা উভয়েই নিজেদের পক্ষে তাদেরকে ব্যবহার করার জন্য আরবের মাটিতে তাদেরকে ডেকে আনছে, বন্ধু হিসেবে ভাবছে। কিন্তু সত্যিই যে তারা কোন দিন তাদের বন্ধু হতে পারবে না- এ বোধ তাদের আর কবে হবে? আর যারা আল্লাহর সরাসরি হুকুমকে অমান্য পরস্পর শত্রুতায় লিপ্ত হয়ে যুদ্ধ করে তারা কি করে মো’মেন হতে পারে?
না, আল্লাহ ও তাঁর রসুলের দৃষ্টিতে তারা মো’মেন নয়। রসুলাল্লাহর ভাষায়, দুই মোসলেম পরস্পর যুদ্ধ করলে উভয়েই জাহান্নামী হয়। মধ্যপ্রাচ্যে বিদ্যমান এ সংকটে আসলে বিবদমান পক্ষগুলোতে কে ঠিক আর কে বেঠিক, কে মো’মেন আর কে কাফের এই উত্তরে বলা যায় এরা আসলে কেউই মো’মেন নয়, মুসলিম ও নয়। ধর্মীয়ভাবে এরা কেউ শিয়া, কেউ সুন্নি, কেউ ওয়াহাবী, কেউ মালেকি, কেউ বা শাফেয়ী, কিন্তু কেউ মো’মেন নয়, মুসলিম নয়। অন্যদিকে জাতীয়তার ভিত্তিতে কেউ আরবি, কেউ ইরাকি, কেউ ফিলিস্তিনি কেউ বা ইরানি। এরা জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। সুতরাং কি করে তারা মো’মেন মুসলিম হয়? বরং এরা সেই অভিশপ্ত মালাউন ও আল্লাহর লানতের বস্তু।এরা যে অভিশপ্ত, মালাউন তার প্রমাণ আরো বহু আগেই হয়ে গেছে। গত কয়েক শতাব্দী আগে মঙ্গোলিয়া থেকে নেমে এসে হালাকু খানরা এদেরকে কচুকাটা করে লাশের পিরামিড বানিয়েছে, সব ধন সম্পদ লুটে-পুটে নিয়ে গেছে। জাতীয়ভাবে মো’মেনগণ কখনো পরাজিত হয়ে এমনভাবে নির্মমতার শিকার হতে পারে? আল্লাহ বলেছেন, “আমি মো’মেনদের ওয়ালি, বন্ধু, অভিভাবক (বাকারা-২৫৭, আলে ইমরান-৬৮)।” তিনি আরো বলেছেন, “যদি কাফেররা তোমাদের (মো’মেনদের) মোকাবেলা করতো তবে তারা অবশ্যই পলায়ন করতো (সুরা ফাতাহ-২২)।” হালাকু খানের কাছে পরাজিত হয়ে কয়েক শতাব্দী পরে যখন এই এরাই আবারো পেট্রোডলারের উপর ভর করে সম্পদশালী হয়ে, আল্লাহ রসুলের আদর্শ বিসর্জন দিয়ে নিজেদের মধ্যে শিয়া-সুন্নির সেই পুরনো বিভেদকে চাঙ্গা করে তুলেছে তখন আটলান্টিকের ওপার থেকে ইঙ্গ-মার্কিন শক্তি দফায় দফায় উড়ে এসে বোমা ফেলে তাদের লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করে গেছে, কোমর ভেঙ্গে দিয়ে গেছে। তবুও তাদের হুঁশ নেই। যে মাটিতে রসুলের পবিত্র পদছাপ পড়েছে, যে মাটি তাঁর আসহাবদের পবিত্র রক্তে সিক্ত হয়েছে সে মাটিতে থেকেই অনৈক্য ও যুদ্ধ বিগ্রহ করে এরা ইসলামের এতটাই ক্ষতি করেছে যে দুনিয়া থেকে একেবারে নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত বোধ হয় প্রায়শ্চিত্ত হবে না। ইতোমধ্যে ফুটে উঠা লক্ষণ বলছে, তাদের এ শবযাত্রা বোধ হয় সেদিকেই।
বিষয়: বিবিধ
১৪২৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যে শক্তিটি ২০০১ সালের ইন্সিডেন্ট টি ঘটিয়ে সারা পৃথিবীর মানুষকে লিটারেলী মুক বধির ও অন্ধ সমর্থক বানিয়ে ১০ লক্ষের ও বেশী প্রান নিয়ে পুরো মিডিল ইস্ট সহ ১,২ বিলিয়ন মুসলিমকে লিটারেলী পৃথিবীর শৃংখলিত দাস বানালো - সে শক্তিটি পৃথিবীর মানচিত্রকে লিকুইডিটিতে রূপান্তর করার জন্য খেলছে এবং তার বর্তমান প্রজেক্ট এর অন্যতম প্রজেক্ট হল শিয়া সুন্নির মধ্যে গৃহযুদ্ধ - যার টার্গেট স্বল্পতম সময়ে হাফ এ বিলিয়ন মুসলিম নামধারী মানুষকে জমির জৈব সার এ রূপায়ন, এবং মধ্যপ্রাচ্যের দাস রূপী ঐ সব বাদশাহদের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়ায় - তাদের কনসেনট্রেশান ক্যাম্পে পাঠানোর ব্যবস্থা করা আর সেই সাথে মুসলিমদের সম্পদ যা এতদিন মুসলিমদের বঞ্চিত করে তাদের বাদশাহ নামীয় এজেন্টদের মাধ্যমে ভাগ বাটোয়ারা করে খাচ্ছিল - তার পরিবর্তে পুরোটাই খাওয়া নিশ্চিত করা।
আপনি আমি সহ হাজার মনীষী সে সাথে তথাকথিত সৌদী বাদশাহ, কাতারী শেখ, ইরানী প্রেসিডেন্ট কিংবা লেবানিজ হিজবুল্লাহ কেউই আর ঐ অনুঘটক তথা গোয়ার, প্রতারনা পূর্ন,শয়তান পূজারী, সোলাইমানী জিন পূজারী, ইলোমিনাটি শক্তির বিরুদ্ধে গিয়ে শিয়া সুন্নী গৃহযুদ্ধ থামাতে পারবোনা। সো এখানে ইরানী প্রেসিডেন্ট কি বললো কিংবা না বললো তা ইমপোর্টেন্ট না - তাকে তাই বলতে হবে। সৌদী বাদশা মিশর, সিরিয়া, ইয়েমেন, বাহরাইনে যা করতে বলা হচ্ছে তাই করবে এবং করতে বাধ্য হবে - যাতে আপনি আমি আপনার ও আমার বাসার পাশের শিয়া সুন্নীর রক্ত নিয়ে হোলী খেলায় মাততে পারি, পরিপূর্ন উন্মাদনায় কোপাতে পারি, গলা ব্যবচ্ছেদ করতে পারি এবং অতি দ্রুত যা কিছু আকিদা কিংবা ইসলাম এখনো ধারন করে আছি - তা বিসর্জন দিতে পারি।
সময় পেলে 'জেরুজালেম ইন কোরআন' বই টি পড়ে আপনার অভিমত গনমানুষের সাথে শেয়ার করলে হয়তো অনেকের উপকার হবে। হয়তো অনেকে সূরা কাহাফের নতুন কিছু আন্ডারস্ট্যান্ডিং পাবে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন