সঙ্কট আরো ঘণীভূত, কত দূর যাবে ইউক্রেন ইস্যু
লিখেছেন লিখেছেন জিনিয়াস ২৭ এপ্রিল, ২০১৪, ০২:৫০:১৯ রাত
পাশ্চাত্যপন্থীদের গণ-অভ্যুত্থানে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের পতনের পর পরই রাশিয়াপন্থীদের দাবির মুখে ক্রিমিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় রাশিয়ার সেনা বাহিনী। এরপর গত ১৬ মার্চ পশ্চিমা দেশগুলোর চাপকে উপেক্ষা করে সেখানে গণভোটের মাধ্যমে ক্রিমিয়াকে নিজেদের সাথে অন্তর্ভুক্ত করে নেয় রাশিয়া। ফলশ্র“তিতে পশ্চিমাদের সাথে রাশিয়ার সৃষ্টি হয় ব্যাপক টানপোড়েন। এমনকি এ ঘটনায় রাশিয়ার উপর বিভিন্ন প্রকার অবরোধও আরোপ করা হয়। এ পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সৃষ্ট উত্তেজনাকে ষাটের দশক থেকে শুরু হওয়া নব্বই দশক পর্যন্ত চলমান ঠাণ্ডা যুদ্ধের সাথে তুলনা করেছেন অনেকেই। ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সাথে যুক্ত করে নেওয়ার ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের বিরোধিতার অন্যতম প্রধান একটি কারণ ছিল এই যে, ক্রিমিয়াকে রাশিয়া নির্বিঘেœ দখল করে নিতে পারলে হয়তো পরবর্তীতে বাকি দুর্বল রাষ্ট্র ইউক্রেনসহ অন্যান্যদের উপরেও চড়াও হয়ে সাম্রাজ্যবাদী চেতনায় পুনরুজ্জীবিত হতে পারে এবং রাশিয়া হয়তো সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মানচিত্রে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে। তাদের ধারণা, এতে এই পুরো এলাকায় নতুন করে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
পাশ্চাত্যপন্থীদের এই ধারণা একেবারে অমূলক নয়। ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সাথে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ইউক্রেনের অন্তত তিন-চারটি অঞ্চলের রুশপন্থী নাগরিকগণ স্বাধীনতা এবং রাশিয়ার সাথে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। তারা সরকারি প্রতিষ্ঠান দখল করে নিয়ে সেখানে রাশিয়ার পতাকা উড়িয়ে দেয়। এমনকি তারা স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়ে সশস্ত্র প্রতিরোধও গ্রহণ করে। এ ব্যাপারে ইউক্রেনসহ পশ্চিমা মিত্রদের অভিযোগ এই যে, এসবের পেছনে রাশিয়ারই মদদ রয়েছে। এদিকে রাস্তায় নেমে আসা রুশপন্থী স্বাধীনতাকামীদেরকে হঠানোর জন্য ইউক্রেনের সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করেছে। এতে বাঁধ সেধেছে রাশিয়া। রাশিয়ার বক্তব্য হচ্ছে ইউক্রেনে থাকা রুশ ভাষা-ভাষীদের নিরাপত্তা বিধান করা তাদের নৈতিক দায়িত্ব। ইউক্রেন যদি দমনাভিযানে যায় তবে রাশিয়াও বসে থাকবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাবি মোতাবেক এরই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ইউক্রেনের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে রাশিয়ার জঙ্গী বিমান বহুবার উড্ডয়ন করেছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে গতকাল রাশিয়াপন্থী কর্তৃক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দল আটকের ঘটনা। বিবিসি জানিয়েছে, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের শহর স্লোভিয়ানস্কে ১৩ জন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষককে বহনকরা একটি বাস আটক করেছে রুশপন্থী জঙ্গীরা। কিয়েভ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় বলেছে, রুশপন্থী জঙ্গীরা বাসটি আটক করে পর্যবেক্ষকদের সেখানকার নিরাপত্তা কার্যালয়ে রেখেছে। পর্যবেক্ষকদের দলটিতে ডেনমার্ক, পোল্যান্ড, সুইডেন এবং চেক রিপাবলিকের প্রতিনিধি ছিলেন। সেখানকার একজন রাশিয়াপন্থী নেতা বলেছেন দলটিতে ইউক্রেন সরকারের একজন গুপ্তচর থাকায় তাদের আটক করা হয়েছে।
এদিকে রুশ জঙ্গি বিমান আকাশসীমা লঙ্ঘন করে ইউক্রেনের আকাশে প্রবেশ প্রসঙ্গে পেন্টাগনের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, রুশ জঙ্গি বিমান হয় ইউক্রেনের রাডার ব্যবস্থা খতিয়ে দেখছে আর না হয় এ দেশটির বিরুদ্ধে নিজের সামরিক শক্তি প্রদর্শন করছে। পেন্টাগনের মুখপাত্র কর্নেল স্টিভেন ওয়ারেন রুশ জঙ্গি বিমানের ইউক্রেনের আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনা নিশ্চিত করেছেন। অবশ্য তিনি এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য দেননি। এ জাতীয় ঘটনা কোথায় ঘটেছে বা কি জাতীয় রুশ জঙ্গি বিমান এ সব ঘটনায় জড়িত ছিল তাও জানাননি। কর্নেল ওয়ারেন আরো জানান, চলমান সংকট নিয়ে আলোচনার জন্য রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শুইগো’র সঙ্গে টেলিফোনে সংযোগ পাওয়ার চেষ্টা করছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হ্যাগেল। কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তার এ অনুরোধে মস্কো সাড়া দেয়নি। অবশ্য রুশ সেনাপ্রধানের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছেন মার্কিন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্টিন ডেম্পসি।
এদিকে এর আগে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে সামরিক অভিযান পুরোপুরি বন্ধ করার জন্য কিয়েভের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেছিল রাশিয়া। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় স্লাভিয়ান্স্ক শহরের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণকারী রুশপন্থী অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী অভিযান শুরুর পর শুক্রবার এ আহ্বান জানায় মস্কো। রুশ পররাষ্ট্র দফতরের এ সংক্রান্ত বিবৃতিটিতে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে সব ধরনের সামরিক অভিযান এবং সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছে রাশিয়া। একই সঙ্গে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল থেকে কিয়েভের সেনাদের সরিয়ে নেয়া এবং জেনেভা চুক্তি বাস্তবায়নেরও আহ্বান জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয় জেনেভা চুক্তি বাস্তবায়ন করা হলে উত্তেজনা প্রশমিত হতে পারে।
এদিকে চলমান সঙ্কটের প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট ওবামাসহ ইউরোপের নেতারা রাশিয়ার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে। তারা বলছে রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্কট সমাধানে যে চুক্তি হয়েছে তা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে। এ বিষয়ে এক যৌথ বিবৃতিতে জি-সেভেন বলেছে, তারা খুব দ্রুতই রাশিয়ার ওপর বাড়তি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। তবে, মার্কিন এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, সোমবারের মধ্যেই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। পূর্ব ইউক্রেনে রুশপন্থী অস্ত্রধারীদের ভবন দখলের ঘটনা মোকাবেলায় ইউক্রেনের ভূমিকাকে জি-সেভেন তাদের ভাষায় ‘ধৈর্যশীল পদক্ষেপ’ বলে প্রশংসা করেছে। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ এবং ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও রেনজির সঙ্গে টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা শেষে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মারকেল জানিয়েছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা শিগগিরই বৈঠকে বসবেন।
প্রশ্ন হচ্ছে ইউক্রেনকে অবলম্বন করে সৃষ্ট এই উত্তেজনা রাশিয়া এবং পশ্চিমা বিশ্বকে কতদূর নিয়ে যেতে পারে? এক্ষেত্রে বিবদমান দু’টি পক্ষের মধ্যে বিবাদের শেষই বা কেমন করে হতে পারে? রাশিয়া বলছে রুশ ভাষা-ভাষীদের নিরাপত্তা দান করা তাদের নৈতিক দায়িত্ব। অপরদিকে এই অজুহাতে ইউক্রেনের উপর খবরদারিও ইউক্রেন এবং তার মিত্র পশ্চিমাদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। কেননা এতে করে রাশিয়ার উপর তাদের নিয়ন্ত্রণের আওতা সীমিত হয়ে পড়বে। একই সাথে রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতি ইউরোপের সন্নিকটে চলে যাবে। সুতরাং রাশিয়াকে রোধ করতে গিয়ে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক অবরোধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকাটা কি পশ্চিমাদের পক্ষে সম্ভব? শেষ পর্যন্ত রাশিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে আবার রাশিয়ার উপর অস্ত্রধারণ করতে হবেনা তো? আর যদি দুর্ভাগ্যবশতঃ তাই করতে হয় তাহলে বড় ধরনের যুদ্ধ থেকে মর্তবাসীকে রক্ষা করবে কে?
বিষয়: বিবিধ
১২০৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আজকের ক্রিমিয়া সংকট মোহাম্মদ সঃ এর শেষ জামানার প্রফেসী সমূহের একটি দুখান বা ধোঁয়ার বাস্তবায়ন করবে এবং সে সাথে দজ্জালের এক দিন ইক্যুয়াল টু সাধারন মানুষের সাপ্তাহের সেন্স এর মত পর্যায়ের শুভ সূচনা করবে।
বিস্তারিত জানতে শায়খ ইমরান হোসাইন এর জেরুজালেম ইন কোরআন পড়ুন কিংবা ইউটিউবে ওনার বক্তব্য শুনুন।
স্যেকুলার ওয়েতে এ সংকটের কোন যুক্তিসংগত কারন নির্নয় করা অসম্ভব। আপাতঃ যা দেখা যায় - মিলিটারী মাইট, অর্থনৈতিক ইস্যু সমূহ, বিশ্ব রাজনীতির পাওয়ার শেয়ারিং ইত্যাদি কোন কিছুই এ সংকটকে যৌক্তিক করতে পারেনা। স্বভাবতঃই আমাদের সুযোগ আছে ইসলামের পারসপেকটিভ হতে এ সংকটকে মূল্যায়নের আর তাই করছেন ইমরান হোসাইন। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন