কথিত মানবাধিকারের হা-হুতাশ কেন পক্ষপাতিত্বপূর্ণ?
লিখেছেন লিখেছেন জিনিয়াস ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৯:৪২:০৩ রাত
ইতিহাস যেমন বিজিতদের হয়ে কথা বলে তেমনি আজ কথিত মানবতা ও মানবাধিকারের সংজ্ঞা এবং এর প্রয়োগ হচ্ছে ক্ষমতাবানদের ইচ্ছামাফিক। ক্ষমতাবান পাশ্চাত্য বস্তুবাদী সভ্যতার মুখের অন্যতম বড় বুলি হচ্ছে এই মানবাধিকার ও মানবতা। এই মানবাধিকার ও মানবতার দোহাই দিয়ে তারা কতই না অপকর্ম করে চলেছে। পৃথিবীতে সংঘটিত বহু অপকর্মের মধ্যে যেগুলো তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে না সেগুলোর ব্যাপারে তাদের দরদ ও মানবিক দায়বোধ উথলে উঠে।
আবার যে সকল খারাপ কাজ তাদের পক্ষে যায় সেগুলোকে তারা দেখেও না দেখার ভান করে। এমনকি তলে তলে তাদেরকে সহযোগিতাও করে। আবার অনেক ভাল কাজও যা তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে না তা তাদের আনুকূল্য পায় না। এমনকি সেসব তাদের হাতে বাধাগ্রস্তও হয়। যেসব ঘটনা তাদের সৃষ্ট নির্ধারিত ফরম্যাটে চলে সেসবকে অর্থনৈতিক, সামরিক ও নৈতিক সমর্থন দিয়ে এগিয়ে নেয়। এতে কত মানুষের প্রাণ যায়, কত মানুষ নিঃস্ব হয় তা বিবেচ্য বিষয় নয়। তারা পৃথিবীবাসীদেরকে নির্ধারিত কিছু ফরম্যাট সরবরাহ করেছে। এর আলোকে যারা চলবে তারা সাধুবাদ পাবে। তবে এসকল ফরম্যাটের ভেতরে থেকেও যদি কেউ তাদের পছন্দমত কাজ না করে তবে তাদেরকেও সর্বশক্তি নিয়োগ করে প্রতিহত করা হয়।
সা¤প্রতিক বিশ্ব রাজনীতির দিকে তাকালেই বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যায়। কথিত আরব বসন্তের ঢেউ যখন মিশরে আছড়ে পড়ে তখন বহু রক্তের বিনিময়ে ৩২ বছরের স্বৈরশাসক হোসনি মোবারককে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হয়। এরপর সামরিক শাসকদের হাতে ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর পাশ্চাত্য ফরম্যাটের গণতান্ত্রিক পদ্ধতির ভোটের মাধ্যমে ইখওয়ানুল মোসলেমিনের পরিবর্তিত রূপ ফ্রিডম এন্ড জাস্টিজ পার্টি মুরসির নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে। তবে তারা একবছর পার না করতেই সামরিক বাহিনী বামপন্থিদের বিক্ষোভের মুখে মুরসি সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে নেয়। অবাক ব্যাপার হচ্ছে সামরিক বাহিনীর এই ভূমিকায় কিন্তু পাশ্চাত্য সভ্যতার মোড়ল রাষ্ট্রগুলো মোটেই বিরোধিতা করে নি। বরং তাদের সবুজ সংকেত পেয়েই সামরিক বাহিনীর প্রধান এই উদ্যোগ নিয়েছেন বলে বহু প্রমাণ পাওয়া যায়। এবারে যখন সামরিক বাহিনীর এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ইখওয়ান সেই পাশ্চাত্যেরই সৃষ্ট গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিক্ষোভে নামে তখন সামরিক বাহিনী তাদেরকে পাইকারি হারে গুলি করে পাখির মত হত্যা করা শুরু করলো। এত মানুষের হত্যাকাণ্ডের পরেও কিন্তু এবারে পাশ্চাত্য মোড়লরা সামান্য মৌখিক নিন্দা জানানোর বেশি কিছু করলো না। মানবতা ও মানবাধিকারের শানিত অস্ত্র তখন ভোঁতা হয়ে পড়ে। কিন্তু সেই মানবতার অস্ত্রকেই আমরা দেখেছি আফগানিস্তান, ইরাক ও সিরিয়ার ব্যাপারে গর্জে উঠতে। সেখানে লাখে লাখে নীরিহ মানুষ নিহত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। আহত ও উদ্বাস্তুর সংখ্যা এর কয়েকগুণ।
বর্তমানে অনুরূপ ভয়াবহ অবস্থা চলছে মধ্য আফ্রিকায়। সেখানে লংখ্যালঘু মুসলিমদের উপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালাচ্ছে খ্রিস্টান উগ্রপন্থি ও মৌলবাদীরা। উগ্রপন্থি খ্রিস্টানদের সংগঠনগুলো সেখানে এসব করছে সেখাকার সরকারের সমর্থনেই। ‘জাতিগত মুসলিম নিধনে’র মুখে পড়ে দেশ ত্যাগ করছে সেদেশের সংখ্যালঘুরা। কিছুদিন আগে ঠিক একই পরিস্থিতি চলেছিল মায়ানমারের মুসলিমদের উপর এবং কয়েক দিন পর পর এখনো সেখানে মুসলিম নিধনের উৎসব শুরু হয়। সেখানকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিজেদের মাতৃভূমি ফেলে অকূল সাগরের পথে আশ্রয়ের খোঁজে পাড়ি জমায়। ক্ষুধা ও পিপাসা নিয়ে কারো কাছে আশ্রয় পায় না। অথচ পশ্চিমাদের সামান্য হস্তক্ষেপই তাদেরকে বাঁচিয়ে তুলতে পারত। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে এদের জন্য পাশ্চাত্যের মানবাধিকার ও মানবতাবোধ জাগ্রত হয় না।
কেন তাদের মানবতাবোধ এত অন্ধ, কেন তাদের মানবতাবোধের একটিমাত্র চোখ তা যদি আমরা এখনো না বুঝি তাহলে আর কবে আমাদের বোধোদয় হবে? আর কত প্রমাণ পাওয়ার পর আমরা তাদের চিনতে পারবো? এখনো কি হুঁশ ফেরার সময় হয়নি?
বিষয়: বিবিধ
১২৫২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন