যে পৃথিবীতে নিরাপদ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ সবাই
লিখেছেন লিখেছেন জিনিয়াস ১২ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৩:২৪:১৫ দুপুর
নির্বাচনোত্তর বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু তথা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপর নির্যাতনের একটি ঘৃণ্য খেলা শুরু হয়েছে। দেশের নানাপ্রান্ত এমনকি হিন্দুপ্রধান জনপদগুলোতেও অনুরূপ ঘটনা ঘটে চলেছে। এদের অপরাধ হচ্ছে এরা বিরোধী জোটের নির্বাচন বর্জনের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে ভোটকেন্দ্রে হাজির হয়ে ভোট দিতে যাওয়া। আবার অভিযোগ উঠেছে কতিপয় প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম যার মধ্যে প্রিন্ট মিডিয়া থেকে শুরু করে কিছু ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়টি ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট দিতে যাওয়ার চিত্রকে কৃত্রিমভাবে হাইলাইট করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়টিকে চিহ্নিত করে দিয়েছে।
এক্ষেত্রে মনে করা হচ্ছে আসলে এই ঘৃণিত কাজের মাধ্যমে তাদের উপর অপরাধীদেরকে উস্কে দিয়েছে। একটি প্রভাবশালী সংবাদপত্রের এহেন ঘৃণিত কর্মকাণ্ড হাতে-নাতে ধরা পড়ার খোদ এই সংবাদপত্রটির একনিষ্ঠ ভক্ত-সমর্থকগণও নির্দ্বিধায় এর সমালোচনা মুখর হয়ে উঠেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং ব্লগগুলোতে স্বয়ং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ও এই কর্মকাণ্ডের পর এদের উপর থেকে তাদের আস্থা উঠিয়ে নিয়ে বক্তব্য প্রকাশ করতে দেখা গেছে। অথচ তারাই (মিডিয়া) অসাম্প্রদায়িকতা, সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে একসময় খুব সোচ্চার হতে দেখা গেছে। এমনকি এখনও তারা বাইরে বাইরে সংখ্যালঘুদের অধিকারের ব্যাপারে তাদের বাহ্যিক প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু সম্ভবত তাদের এই উপরে উপরে প্রচারণায়ও আর তারা আস্থা ফিরে পাচ্ছেন না। পাচ্ছেন না ভরসাও।
কোন অপ্রত্যাশিত ঘটনার পর বিরোধী জোটকে চাপে ফেলার জন্য তাদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেওয়াটা এখন রাজনীতির একটি অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ দেখা যাচ্ছে এসব ঘটনা সংঘটনে হাতে-নাতে ধরা পড়ছে খোদ ক্ষমতাসীনদের নেতা-কর্মীরাও। এসব কেন করা হচ্ছে?
এর উত্তর হচ্ছে শুধুমাত্র রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল। অন্যদিকে বিরোধী জোটটিতে একটি ধর্মীয় দলের সংশ্লিষ্টতা থাকায়, যারা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার্থে স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধীতা করেছে এবং ধর্মীয় ভিন্নতা থাকায় যুদ্ধাবস্থার সুযোগে তাদের উপর ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল। তাই তাদের মধ্যে সেই থেকে একটা স্থায়ী দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে আছে। একদিকে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হওয়া অন্যদিকে বিরোধী জোটের সাথে ঐতিহাসিকভাবে দূরত্ব থাকায় এবং সর্বশেষ মিডিয়ায় সংবাদের খোরাক হওয়া ও তাদের দুরভিসন্ধিমূলক ভূমিকা- সবকিছু মিলিয়ে এদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়টিকে একটি গুরুতর হুমকির মুখে ফেলেছে। সেই সাথে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ক্ষমতাসীনদের প্রত্যক্ষ মদদে কাশ্মীর, মুজাফফরনগর, গুজরাটে সংখ্যাগুরু হিন্দুদের হাতে সংখ্যালঘু মুসলিমরা সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হওয়ায় বাংলাদেশের মধ্যপন্থী মুসলিমদের পক্ষ থেকেও এদেশীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়টি তেমন সহানুভূতি পাচ্ছে না। এতে করে দেখা কোন দোষ না থাকা সত্ত্বেও শুধু রাজনৈতিক কারণে তাদের উপর বিপদ চারদিক থেকে পতিত হয়েছে। আর পাশ্ববর্তী দেশটি সংখ্যাগুরু হিন্দুদের অধীনে থাকলেও জাতিরাষ্ট্রের ধারণায় বিশ্বাসী হওয়ায় তারা রাষ্ট্রের বাইরের হিন্দুদের জন্য তেমন ত্যাগ স্বীকার করতে রাজী নয় শুধুমাত্র লাভটুকু আদায় করা বাদে।
আমরা একটু গভীরভাবে খেয়াল করলে দেখতে পাব রাজনৈতিক ও ধর্মভিত্তিক দলগুলোর এই বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যা থাকলেও সংবাদ মাধ্যম, বিশেষ করে যাদেরকে জাতির বিবেক, অর্থাৎ রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় তাদের এই বিতর্কিত ভূমিকা ব্যাপক রহস্যময়। কিন্তু আসলে কি তাই? আমরা খেয়াল করলে দেখতে পাব মিডিয়া আজ যাদের হাতে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে তারা মোটেই নিজেদেরকে নিরপেক্ষ ভূমিকায় রাখতে পারছে না। মিডিয়ার প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানার দিকে খেয়াল করলে আমরা দেখতে পারব যে তারা তাদের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার কাজটিই সুচারু রূপে চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ শুধুমাত্র নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থ উদ্ধারে প্রতিপক্ষকে চাপের রাখার জন্যই মিডিয়া গ্রুপ (প্রকৃতপক্ষে সিন্ডিকেট) গড়ে তুলেছে। এই মিডিয়ার মাধ্যমে একদিকে খরচ কমিয়ে নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের বিজ্ঞাপন এবং প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য গ্র“পগুলোর পেছনে লেগে থাকাই তাদের মূল কাজ। আর নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত শক্তির তাবেদারী করাটাও তাদের প্রধান কাজ। এ অংশটি বাদে আরো একটি গ্র“প মিডিয়ায় নিজেদের অবস্থান স্থায়ী করে নিয়েছে। এরা প্রগতিশীল দাবীদার বাম ঘরানা থেকে আগত। মূলত অসাম্প্রদায়িকতা, মুক্তমত, বাকস্বাধীনতা ইত্যাদি বায়বীয় ধ্যান-ধারণাকে পুঁজি করে এরা সাধারণ মানুষের চিন্তা শক্তি ঘুরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যায়। তাদের এই প্রচার-প্রচারণার খুতগুলো সাধারণ মানুষ ধরতে ব্যর্থ হয়। নানা ইস্যুতে এরা মাঠ গরম করে তুলতে সাঙ্ঘাতিক পারঙ্গম। সমস্যা হচ্ছে এদের কোন আদর্শ নেই।
এরা এমন একটা আদর্শ থেকে এসেছে যা সারা দুনিয়ায় ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু এদের অনেকেই একটা সময় মানবজাতির মধ্যে বিরাজমান অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণের উদ্দেশ্যে নিজেদের ঘর-বাড়ি, আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে নিজেদেরকে উৎসর্গ করে বেরিয়ে পড়েছিলো। কিন্তু সারা বিশ্বে যখন সমাজতন্ত্রের পালে বৈরি হাওয়া লাগে তখন তাদের আবেগ থিতু হয়ে পড়ে। কিন্তু সারা জীবন তারা বুর্জোয়া শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধ মানসিকতায় গড়ে উঠেছে বলে মন থেকে পুঁজিবাদি গণতন্ত্রকে মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু সমাজতন্ত্রের কাছে ভরসা না পাওয়ায় অর্থাৎ আদর্শের মৃত্যু হওয়ায় তারা সকল আদর্শের উর্দ্ধে উঠে যায়। অর্থাৎ তাদের আর কোন আদর্শই রইলো না, যা স্পষ্ট পথভ্রষ্টতার সামিল। তাই সেই সাবেক কমরেডরা আজ নীতি-নৈতিকতাকে কোন তোয়াক্কা না করে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিকদের নীতি-নৈতিকতাহীনতাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এটা আসলে হতাশা থেকে উৎসারিত ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ। তাদের ক্ষোভ এই যে, আমাদের আদর্শকেই যখন মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে তখন অন্য কোন আদর্শকেই আমরা ভালো থাকতে দেব না। তাই দেখা যায় ঘর-বাড়ি ত্যাগ করা ঐ কমরেডরাই আদর্শ বিকিয়ে দিয়ে বুর্জোয়াদের দালালী করে একেকজন কর্পোরেট বিজনেসম্যান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন, যা তাদের তারুণ্যের শিক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত। যারা রাজনীতিতে জড়িত আছেন তারাও সব আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে তাদের প্রাক্তন শত্রুর বগল দাবায় প্রবেশ করে ক্ষমতার স্বাদ ভোগ করছেন। ক্ষেত্র বিশেষে বুর্জোয়া পুঁজিবাদি গণতান্ত্রিকদেরকেও তারা এখন গণতন্ত্র শিক্ষা দেন। তবে তারা যে সম্মান পাচ্ছেন তাও নয়।
কারণ, তাদের বিশ্বাস করা আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে তার বিপরীত কাজ করায় বিরোধীদের কাছ থেকে প্রায় সময়ই টিটকিরি সহ্য করতে হচ্ছে। কিন্তু তাদের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে তারা লজ্জা শরমকে জলাঞ্জলি দিয়েই এভাবে নেমেছেন। তাই এহেন কর্মকাণ্ড নেই যা তাদের দ্বারা অসম্ভব। এরা নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাসহীনতার কারণে প্রয়োজনে ধর্মকে, ধর্মের প্রবক্তাদের মাথায় তোলে আবার ব্যঙ্গও করতেও ছাড়ে না। সেই সাথে বেশি বিপদ অর্থাৎ জনগণ ক্ষেপে গেলে আবার ধর্মগুরুদের পা ছুয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করতেও এরা দ্বিধাবোধ করে না। এদের ভূমিকাাঁ অনেকটা বেশ্যার পর্যায়ে ঠেকেছে। একদিকে এরা নিরপেক্ষতা ও বাকস্বাধীনতার কথা বলে সব পক্ষের কথা তুলে ধরে আবার এর বিপরীতে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণে আদর্শহীনতার স্বাক্ষর রাখে।
স্বার্থান্বেষী রাজনীতিবিদদের সাথে পাল্লা দিয়ে আদর্শভ্রষ্ট ঐ শ্রেণিটাই বর্তমানে মিডিয়াতে সংখ্যালঘু ইস্যুকে খুচিয়ে খুচিয়ে জাগিয়ে তুলছে । এতে তাদের লাভটা জল ঘোলা করে স্বার্থ উদ্ধার এবং নিজেদের অস্তিত্বের আবশ্যকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এটি এসেছে নিজেদের আদর্শবিচ্যুতির ফল পথভ্রষ্টতা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের উদভ্রান্ত ও ভারসাম্যহীন আচরণ থেকে থেকে বাদ যাচ্ছে না সংখ্যালঘু অসহায় সম্পদায়টিও।
এখন একটি গুরুতর প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে তাহলে এই শ্রেণির মানুষগুলো যাবে কোথায় যাবে, কোথায় মিলবে তাদের আশ্রয়? আর যদি তাদের যাওয়ার জায়গা থাকেও তবুও তারা কেন যাবে? এই দেশ, এই মাটিতো তাদের মাটি, এ দেশতো তাদেরই জন্মভূমি। এদেশের বুকেই তাদের পূর্ব পুরুষগণ বসবাস করে এসেছেন শতাব্দীর পর শতাব্দী থেকে, এদেশের মাটি, পানি ও বাতাসের সাথে জড়িয়ে নিয়েছেন নিজেদের অস্তিত্বকে। এদেশকে ভালবেসে এদেশের সবকিছুকে আপন বলে জেনেছেন। তাদের কি কোন অধিকার নেই কিংবা তাদের পক্ষ হয়ে কেউ কি কথা বলার নেই?
এসব প্রশ্নের উত্তর আজ কেউ দিতে পারে না। কিন্তু তাদের পক্ষে একটিমাত্র পথ খোলা আছে। সেটি হচ্ছে প্রকৃত ইসলামের উন্মেষ। কারণ প্রকৃত ইসলামেই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার ব্যাপারে কার্যকর আশ্বাস দেয় এবং শুধু আশ্বাসই নয়, মুসলিমগণ বিজিত হয়ে অধীনস্থ ভিন্নধর্মের অনুসারীদের নিরাপত্তা দেওয়ার বহু নজীরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে আজ সেই ইসলামও নেই এবং সেই মুসলিমও নেই। সেই ইসলাম আর সেই মুসলিমদের সাথে আজকের ইসলাম ও আজকের মুসলিমদের দূরত্ব হাজার হাজার মাইল। এর মধ্যে মাত্র দু’টি ঘটনা তুলে ধরছি। মুসলিম বাহিনী যুদ্ধের মাধ্যমে তৎকালীন সিরিয়ার হেমস দখল করার পর মুসলিম কমান্ডার আবু ওবায়দা (রা) অন্য এলাকায় সৈন্য মোতায়নের প্রয়োজন হয়ে পড়লে ঐ এলাকার অধিবাসীদেরকে ডেকে তাদের জিজিয়া কর ফেরত দিয়ে দিলেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বললেন, “আমরা আর তোমাদের নিরাপত্তা বিধানে সক্ষম নই। এখন তোমাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব তোমাদের নিজেদের।” এর জবাবে জনগণ বলে, “আমরা যে দমন নীতি ও নিষ্ঠুরতার মধ্যে বাস করি তার তুলনায় আপনাদের শাসন ও ন্যায়-নীতি আমাদের নিকট প্রিয়।” হেমসের ইহুদিরা সবচেয়ে বেশি আনুগত্য প্রদর্শন করে এবং প্রতিশ্রুতি প্রদান করে যে, শক্তিপ্রয়োগ ছাড়া ব্যতীত হেরাক্লিয়াসের (রোমান সম্রাট) কোন অফিসার শহরে প্রবেশ করতে পারবে না। শুধু নিজের প্রদেশে জিযিয়া ফেরত দিয়েই তিনি স্বস্তি বোধ করেননি। তাই তিনি অন্যান্য প্রদেশের গভর্নরদেরকেও একই নির্দেশ দান করেন।
প্রত্যেকটি কোর কমান্ডার জাবিয়ায় প্রত্যাহারের স্থানীয় অধিবাসীদের নিকট হতে সংগৃহিত জিযিয়া তাদের নিকট ফেরত দান করেন (দেখুন: আল্লাহর তলোয়ার, মূল এ আই আকরাম, অনুবাদ লে. কর্নেল মোহাম্মদ আবদুল বাতেন এইসি-পৃষ্ঠা: ৩৯৮)। কিন্তু সমস্যা কাটিয়ে উঠার পর আবার যখন মুসলিম বাহিনী ঐ নগরী দখল করতে আসলেন তখন দেখা গেল নগরীর অধিবাসীরা স্বেচ্ছায় তাদের হাতে রাষ্ট্র ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছে। কারণ হিসেবে তারা বলেছে একবছরের শাসনামলে তারা যে শান্তি ও নিরাপত্তা পেয়েছে তাতেই তারা মুগ্ধ। সুতরাং মুসলিম বাহিনীকে আর যুদ্ধ করে বিজয়ী হতে হবে না। এমনিতেই তারা জয়ী। তারা স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা মুসলিমদের হাতে ছেড়ে দিয়ে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করলো।
দ্বিতীয় ঘটনা হচ্ছে: আমর ইবনুল আস (রা) এর মিসর বিজয়ের পর আলেকজান্দ্রিয়ায় কে একজন এক রাতে যীশু খ্রিস্টের প্রস্তর নির্মিত প্রতিমূর্তির নাক ভেঙ্গে ফেলে। এতে খ্রিস্টানরা উত্তেজিত হয়ে উঠে। তারা ধরে নিল যে, এটা একজন মুসলিমেরই কাজ। তারা অভিযোগ করায় আমর (রা) সব শুনে ক্ষতিপূরণস্বরূপ তিনি প্রতিমূর্তিটি সম্পূর্ণ নতুন করে তৈরি কোরে দিতে চাইলেন। কিন্তু খ্রিস্টান নেতারা তাদের ধর্মের অবমাননার প্রতিশোধ নিতে চেয়ে বললো, “আমরা চাই আপনাদের নবী মোহাম্মাদের (দ) প্রতিমূর্তি তৈরি করে ঠিক অমনিভাবে তাঁর নাক ভেঙ্গে দেব।” এ কথা শুনে বারুদের মত জ্বলে উঠলেন আমর (রা)। প্রাণপ্রিয় নবীজির প্রতি এত বড় ধৃষ্টতা ও বেয়াদবি দেখে তাঁর ডান হাত তলোয়ার বাটের উপর মুষ্ঠিবদ্ধ হয়। ভীষণ ক্রোধে তাঁর মুখমণ্ডল উদ্দীপ্ত হয়ে উঠলো। কিছুক্ষণ নীরব থেকে নিজেকে সংবরণ কোরে নিয়ে বললেন, “আমার অনুরোধ, এ প্রস্তাব ছাড়া অন্য যে কোন প্রস্তাব করুন আমি তাতে রাজি আছি।” পরদিন খ্রিস্টানরা ও মোসলেমরা বিরাট এক ময়দানে জমায়েত হলো। আমর (রা) সবার সামনে হাজির হয়ে বিশপকে বললেন, “এদেশ শাসনের দায়িত্ব আমার। যে অপমান আজ আপনাদের ধর্মের হয়েছে, তাতে আমার শাসন দুর্বলতাই প্রকাশ পেয়েছে। তাই তরবারি গ্রহণ করুন এবং আপনিই আমার নাক কেটে দিন।” এই কথা বলেই তিনি বিশপকে একখানি তীখন্ ধার তরবারি হাতে দিলেন। জনতা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, খ্রিস্টানরা স্তম্ভিত। চারদিকে থমথমে ভাব। সহসা সেই নীরবতা ভঙ্গ করে একজন মুসলিম সৈন্য এলো। চিৎকার করে বললো, “থামুন ! আমি ঐ মূর্তির নাক ভেঙ্গেছি। অতএব আমার নাক কাটুন।” এই ঘটনায় বিজিতদের উপরে বিজয়ীদের এই উদারতায় ও ন্যায়বিচারে মুগ্ধ হয়ে সেদিন শত শত খ্রিস্টান ইসলাম কবুল কোরেছিলেন (বিস্তারিত: হিরাক হার, ওয়াকিদি সূত্রে Anecdotes from Islam, পৃষ্ঠা ১৯৫-১৯৭ তে বর্ণিত)। প্রকৃতপক্ষে এটাই ইসলাম, এটাই ইসলামের মৌলিক নীতি।
সেই প্রকৃত ইসলামের আদর্শ আজ হারিয়ে গেছে। কিন্তু সে আদর্শ আবার ফিরে এসেছে হেযবুত তওহীদের মাধ্যমে। হেযবুত তওহীদ সে প্রকৃত ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সেই সাথে হেযবুত তওহীদ দিয়েই যে আবার দুনিয়াতে সেই প্রকৃত ইসলাম ফিরে আসবে তার বহু নমুনা, স্বাক্ষর, চিহ্ন দেখিয়েছে। কে আছ সেখানে নিজেদেরকে সামিল করে সম্মান লাভ করবে? সৌভাগ্য হাতছানি দিয়ে সবাইকে ডাকছে। কে হবে প্রথম সারির সেই সৌভাগ্যবান?
বিষয়: বিবিধ
১৩৩২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জামায়াতকে বিদায় নিতেই হবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন