৫ই জানুয়ারির নির্বাচন: নতুন গণতন্ত্রের মুখদর্শন
লিখেছেন লিখেছেন জিনিয়াস ১১ জানুয়ারি, ২০১৪, ০১:৩১:১১ রাত
গত পাঁচই জানুয়ারী ২০১৪ এ বাংলাদেশে যে একতরফা নির্বাচনটি হয়ে গেল তাকে কথিত গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরে ঠুকে দেওয়া হয়েছে বলে যারা মনে করেন তারা খুব সম্ভবত একটা বড় ধরনের ভুল ধারণা নিয়ে আছেন। তাদের ধ্যান-ধারণায় গণতন্ত্রকে খুবই উচ্চমার্গীয় কোন জীবনব্যবস্থা জ্ঞান করা হয়। বস্তুত তা নয়। গণতন্ত্র জন্মগতভাবেই একটি ফাঁপা বেলুন সদৃশ। এর গালভরা বুলি, প্রতিশ্রুতি সবই চোখ ধাঁধানো। অনেকটা মাকাল ফল সদৃশ। এতে প্রবেশ করার পর এর আসল স্বাদ ভোগ করা শুরু হয়। অনেকে ইউরোপ-আমেরিকার উদাহরণ টেনে আনতে চাইবেন। তাদেরকে আমি সবিনয়ে বলবো যে, শুধু সম্পদ আর ভোগ বিলাসের মধ্যেই মানুষের সুখ সীমাবদ্ধ নেই। মানুষ কোন আত্মাহীন রোবট নয়। সম্পদের স্তুপের ভেতর থেকে্ও মানুষ অসুখী হতে পারে আবার সীমিত সম্পদের মধ্যেও মানুষ সুখ লাভ করতে পারে। সুখ হচ্ছে সম্পূর্ণ আত্মিক বিষয়।
তাছাড়া গণতন্ত্র শুধু প্রভুদের স্বার্থ রক্ষা করেই চলে। গুটিকয় সুবিধাভোগীরা এই গণতন্ত্রের মাধ্যমে জাল পেতে মাছ ধরার মত পানিতে না ভিজেই মাছ ধরে থাকেন। কিন্তু গণতন্ত্র মাছের জন্য নয়। গুটিকয় শক্তিশালীরা শিকার হিসেবে অধিকাংশ দেশগুলোকে পরিগণিত করে তাদের উপর গণতন্ত্রের জাল দিয়ে বেড় দেন এবং সময় সুযোগমত তাদেরকে ধরাশায়ী করেন।
নীতি নৈতিকতার কথা বলবেন? নীতি-নৈতিকতা নিচের লেভেলে একধরনের এবং উপর লেভেলে নীতি-নৈতিকতা আলাদা ধরনের। যে গণতন্ত্রের জন্য পৃথিবী জুড়ে পশ্চিমা সভ্যতার এত মায়াকান্না, কই তারাতো আমাদের জ্ঞানভুক্ত গণতন্ত্রের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে না! গণতন্ত্রই যদি চূড়ান্ত কথা হতো তাহলে তো এত বড় সেনাবাহিনী ইউরোপ-আমেরিকার অধীনে থাকার কথা নয়। অধিকাংশ জনগণ যা বলবে তাই চলবে, অন্ততপক্ষে তাই চলার কথা। কিন্তু আমরা বাস্তবে দেখছি প্রতিটি মোড়ল রাষ্ট্রের অধীনে পারমাণবিক বোমার স্তুপ, ভয়ঙ্কর সব মারণাস্ত্র। কেন? গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে তো অস্ত্র দরকার নেই।
না, এটা বাহিরের কথা। আর অভ্যন্তরীণ কথা হচ্ছে ভাল কথায় কাজ না হলে ঐসবের অস্ত্রের ব্যবহার।
তাহলে তাহলে স্বৈরতন্ত্র আর গণতন্ত্রের মাঝে পার্থক্য কী? কেনইবা হিটলারকে দিন রাত এত গালাগালি? হিটলার তো আনবিক বোমা ফাটাননি! বোমা ফাটিয়েছেন কথিত এই গণতান্ত্রিগণই।
আর বাংলাদেশের গণতন্ত্রের কফিনে পেরেক মেরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতার জোরে যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করলো তা্ও গণতন্ত্রের একটা রূপ। এখন গণতন্ত্রে একটা সরকারী দল এবং একটা বিরোধী দল আবশ্যক। কিন্তু প্রধান বিরোধী দলটি নির্বাচন বর্জন করায় নিজেদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে দল থেকে আলাদা করে কৃত্রিম একটি বিরোধী দল তৈরি করা হয়েছে। তাহলে আসল বিরোধী দল কোথায়? এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে আসল বিরোধী দল এখন জনগণ। এবারের এই গণতান্ত্রিক ক্রীড়ায় জনগণ আর সরকার খেলা খেলবে। তাই সামনে এই দুপক্ষের খেলা দেখার জন্য দর্শকগণ বাদাম নিয়ে গ্যালারিতে বসতে পারেন। উপভোগ্য একটি খেলা দেখতে পাবেন বলে আশা করছি। তবে গণতন্ত্রের পুরনো রীতি মনে রাখলে হতাশই হতে হবে। কারণ, এবার সময় আগের গণতন্ত্রের নিয়ম ভাঙ্গা, গণতন্ত্রের দ্বিতীয় পার্ট।
বিষয়: বিবিধ
১১০৯ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
০ পৃথিবীতে যত ধরনের তন্ত্র আছে তার মধ্যে গনতন্ত্রই হচ্ছে নিকৃষ্ট - কারণ , এই তন্ত্রে মারামারি - কাটাকাটি - প্রতারণা করার অবারিত সুযোগ আছে । আছে মানুষকে ক্ষমতার উতস হিসেবে '' পাম্প মেরে '' ফুলিয়ে ''জনগনকে সাথে নিয়ে'' , ''জনগন আমাদের সাথে আছে '' '' জনগন তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে '' এসব ''পিন মারা'' কথা বলে নিজেদের অন্যায় কাজগুলোকে বৈধ করে নেয় ।
বোকা জনগন এই তন্ত্রে নিজেদের যে ক্ষমতার উতস বলে মনে করে তা কেবল শুধু ভোটের সময়ই । এই ১ দিনের বাদশা যে বাকী ৪-৫ বছর প্রতিদিন নিয়মিত বাঁশ খাচ্ছে গনতন্ত্রের নিয়মের কাছে তা বোঝেও না । একদিনের রাজা হয়ে বাকী ১৮২৫ দিনের বাঁশ খাওয়াকে সে সাদরে মেনে নেয় ।
বোকা জন গন নিজেরা যেটার যোগ্য না সেটার প্রশংসা পেয়ে এতটাই পুলকিত হয়ে যায় যে সে এসব অনাচারের ব্যাপারে চুপ থাকে ,পাছে না তার এই অপ্রত্যাশিত প্রশংসা আবার ফিরিয়ে নেয় গনতন্ত্রকামীরা ।
এই তন্ত্রে ৩ জনের ২ জন যদি বাকী ১ জনকে মেরে ফেলার আইন করে তাহলে সেটা গনতন্ত্রের নিয়মানুসারে সঠিক !
যে কোন উন্নয়নশীল এবং অশিক্ষিত দেশের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার এবং সার্বভৌমত্বের জন্য গণতন্ত্র সবচাইতে বড় হুমকি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন