যেভাবে সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা যায়
লিখেছেন লিখেছেন জিনিয়াস ১০ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৮:০৬:৩৬ রাত
পাকিস্তানি শাসকদের দুঃশাসন আমল থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ পরবর্তী সময়, বিশেষ করে বিগত বছরটিতে কথিত গণতন্ত্রের নামে অন্যায়, অবিচার ও রাজনৈতিক সহিংস কর্মকাণ্ড দেখতে দেখতে রাজনীতি এবং রাজনীতির সাথে জড়িত ব্যক্তিগণের উপর সাধারণ মানুষের একটি ঘৃণাবোধ ও আস্থাহীনতার জন্ম হয়েছে। যে সকল মাধ্যমে জনগণ তাদের মনের কথাগুলো প্রকাশ করতে পারছে সেখানে লক্ষ্য করলে দেখা যায় তাদের এই আস্থাহীনতার স্বাক্ষর, যা নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমগুলোতে এই দৃশ্যটা কখনোই পরিলক্ষিত হয় না। কারণ সেখানে সেন্সর আরোপ হয়ে শুধু অনুমোদনপ্রাপ্ত সংবাদগুলোই স্থান পায়। ফেসবুক, টুইটার এবং বাংলাদেশি ব্লগগুলোতে একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে এই চিত্রটি অত্যন্ত পরিষ্কার। এসব গণমাধ্যম কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সাধারণত নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তাই স্বাধীনভাবে কথা বলা বা মত প্রকাশ করাটা এখানে খুব সোজা। একশ্রেণির অগ্রগামী তরুণরা এতে সহজেই অংশ নিতে পারছেন। কিন্তু বিশাল জনসংখ্যার বেশির ভাগ সেখানে প্রবেশ করতে পারেন না। তবুও যারা সেখানে অংশগ্রহণ করতে পারছেন তাদের অধিকাংশের প্রতিক্রিয়া বর্তমান অবস্থার প্রতি অসন্তুষ্টিতে ভরা, যদিও এদের বেশিরভাগই এদেশকে ভালোবাসেন। তাদের এই হতাশার মাত্রাটা দিন দিন শুধু বেড়ে চলছে। তারা মনে করছেন এদেশের সমস্যাটি প্রায় দুরারোগ্য রোগের মত হয়ে গেছে। যতই শান্তি কামনা করা হচ্ছে অশান্তি ততই পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে। কোন ওষুধেই এখন আর কাজ হচ্ছে না। যে কোন সেক্টরের দৃষ্টি দিলেই এই অবনতি পরিষ্কার হয়ে যায়। কারণ প্রায় সকল সেক্টরগুলোতে ভোগান্তির শিকার হওয়া ব্যক্তিরাই এখানে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য, লেখা-পড়া, অফিস আদালতে সরকারি কর্মকর্তাদের আচরণ, রাজনীতিকদের দুর্নীতি, অন্যায়, সংবাদপত্রের মিথ্যাচার, দালালি, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের প্রতারণা সবকিছুই এখানে উঠে আসে। সেই সাথে প্রতিকারহীনতা নিয়ে তাদের হতাশার চিত্রও বাদ যায় না। এরা সংখ্যার দিক দিয়ে দেশের বড় একটি অংশ। শতকরা হিসেবে তাদের সংখ্যাটা যেহেতু অধিক সেহেতু আমরা বলতে পারি যারা মনের কথাগুলো প্রকাশের সুযোগ পাচ্ছেন না তাদের সংখ্যাটাও আরো অনেক বেশি। অর্থাৎ এক কথায় বলা যায় জাতির অধিকাংশই আজ হতাশায় নিমজ্জিত।
একটি রাষ্ট্রের মানুষ যখন এমন হতাশায় ডুবে যায় তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তারা উদ্যম হারিয়ে বসে। আর উদ্যম হারানো জাতি কখনো উন্নতি করতে পারে না। তারা নতুন নতুন বৈচিত্র্যপূর্ণ কাজে হাত দিতে সাহস হারিয়ে ফেলে। যে কোন জাতির জন্য এটি একটি মারাত্মক ক্ষতিকর বিষয়। আমরা জানি যা গতিময় তাই জীবন। অন্যদিকে যার গতি নেই সে মৃত। রাজনৈতিক অচলাবস্থা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, নৈরাজ্য, লুটপাট, ব্যবসায়ে অসততা ক্রমাগত ঝেঁকে ধরে জাতিকে পঙ্গু ও স্থবির করে দিচ্ছে। তাই অনাগত ভবিষ্যত যে অন্ধকারে তলিয়ে যাবে তা বুঝতে খুব বেশি জ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নেই।
এমতবস্থায় জাতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতেই হবে। এই ‘কাউকে’টা যে কেউ হতে পারে। হতে পারে তা ক্ষমতাসীন সরকার, হতে পারে জনগণ থেকে উঠে আসা কোন একটি নিবেদিত প্রাণ কর্মীবাহিনী, হতে পারে কোন প্রতিষ্ঠান কিংবা হতে পারে এই সবকয়টির একটি একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা। জাতিকে বাঁচিয়ে রাখতে বা প্রাণসঞ্চার করতে এটি এখন অতি জরুরি। কেননা অনেক সময় দেখা যায় দুরারোগ্য কোন রোগীকেও মানসিকভাবে সাহসের যোগান দিয়ে, আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে সুস্থ করে তোলা যায়। কিন্তু জাতিকে প্রাণসঞ্চার করতে যারা উদ্যোগী হবেন তাদেরকেও আত্মিকভাবে প্রাণবন্ত হওয়া অবশ্য করণীয়। যাদের অন্তরে কালিমা থাকবে তাদের দ্বারা নির্জীবদেরকে বীর্যবান করে তোলা সম্ভব নয়। একমাত্র আলো থেকেই আলোর বিস্তার ঘটানো স¤ভব। অন্ধকার কখনো আলো ছড়াতে পারবে না। আর আলো, সত্য, সুন্দর, ভালোবাসা, ক্ষমাপরায়নতা একমাত্র মহান আল্লাহর কাছ থেকেই আসে। কারণ তিনিই এই সদগুণগুলোর আধার। অপরদিকে মিথ্যা, ক্লেদ, হিংসা, প্রতিশোধপরায়নতা আসে শয়তান থেকে। সুতরাং যারা জাতির প্রাণসঞ্চারে কাজ করবে তাদেরকে হতে হবে আল্লাহর কাছ থেকে আলোকপ্রাপ্ত। তাই আমাদের উন্নতির জন্য, সাহস ও মনোবল ফিরিয়ে আনতে আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হওয়াটা একান্ত আবশ্যক। অন্যথায় সকল প্রচেষ্টাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।
বিষয়: বিবিধ
১০২৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন