রাজনৈতিক সমঝোতার মানদণ্ড কি?
লিখেছেন লিখেছেন জিনিয়াস ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৬:১৪:৫০ সন্ধ্যা
দেশের বিবদমান রাজনৈতিক দলগুলোর সাম্প্রতিক নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া এই মানুষগুলো রাজনীতিবিদদের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়ে দলগুলোকে সমঝোতার জন্য বার বার আকুল আবেদন জানাচ্ছে। বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং শিল্প মালিকগণও এই তালিকা থেকে বাদ নন। কয়েকদিন আগে এই নিয়ে ব্যবসায়ীদের একটি বড় সংগঠন উদ্যোগ নেবেন বলেও শোনা গিয়েছিলো। কিন্তু সবকিছু ব্যর্থ প্রমাণ করে দুটি রাজনৈতিক জোট অব্যাহতভাবে তাদের নৈরাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। এটা খুবই স্বাভাবিক যে এই দুইটি জোটের মধ্যে সমঝোতা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। সম্ভাবনা নেই এজন্য বলছি যে, সমঝোতা হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট একটি মানদণ্ড দরকার যার ভিত্তিতে দল দু’টি সমঝোতায় আসতে পারে। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতা ধরে রাখাই দল দু’টির একমাত্র উদ্দেশ্য। সুতরাং ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতা ধরে রাখতে যার যা করা প্রয়োজন নির্লজ্জভাবে তারা তাই করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা চিন্তাও করছে না কে সঠিক করছে আর বেঠিক কাজটা করছে। অনেকটা যুদ্ধের সেই প্রাচীন প্রবাদ ‘নাথিং ইজ আনফেয়ার, ইন লাভ এন্ড ওয়ার’কেই তারা আদর্শ হিসেবে বেছে নিয়েছে। আর রাজনৈতিক ভাষায় তা দাঁড়িয়েছে ‘রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই’ এই নির্লজ্জ প্রবাদে। ক্ষমতায় যেতে এবং ক্ষমতায় থাকতে যা করা প্রয়োজন তাই তাদের কাছে বৈধ। সুতরাং এই দুই দলের মল্ল-যুদ্ধের মাঝখানে পড়ে ‘উলুখাগড়া’ সদৃশ জনগণ ত্রাহি চিৎকার করছে এ যুদ্ধ থামানোর জন্য। কিন্তু এ যুদ্ধ ততক্ষণ থামবে না যতক্ষণ তাদের সামনে থেকে ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতায় থাকার নির্ধারিত লক্ষ্য দূর না হবে। সুতরাং সমঝোতার আশা করাটাও অর্থহীন।
তাহলে প্রশ্ন আসে কতদিন এভাবে চলতে পারে এই অবস্থা? এর উত্তর হচ্ছে সাধারণ মানুষ যতদিন না তাদের হুশ ফিরে পাবে। একমাত্র সাধারণ মানুষই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই অবস্থার পরিসমাপ্তি আনতে পারে। সে সময়টা কতদূর এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে- এখনো দেখা যাচ্ছে এই রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকে লাখে লাখে মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসে, বিপক্ষ দলের উপর হামলা চালায়, হরতাল অবরোধ সফল করার নামে এদেশের নাগরিকদের গাড়ি-বাড়িতে আগুন দেয়, চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে মেরে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে। অন্যদিকে এই অরাজকতা বন্ধের নামে সরকারি দলও হরতাল-অবরোধ আরোপ করে সাধারণ মানুষকে অবরুদ্ধ করে, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে পেটায়, বিপক্ষ দলের উপর নগ্ন হামলা চালায়, প্রকাশ্যে মিথ্যাচার করে। এক্ষেত্রে সরকারের হুকুমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যতটা না তৎপর তার চাইতে বহুগুণ তৎপর রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীরা। আর চাকরি বাঁচানোর নামে প্রশাসনের কর্মকর্তারা রোবটের ন্যায় আচরণ করে যায়।
যত দিন পর্যন্ত মানুষ রাজনৈতিক নেতাদের ডাকে সাড়া দিয়ে এই অরাজকতা সংঘটন এবং সমর্থন করে যাবে ততদিন তারা এই অবস্থা অব্যাহত রাখবে। মনে রাখতে হবে প্রতিটি রাজনৈতিক দল সাধারণ মানুষের একটি অংশকে নিয়েই গঠিত। যতদিন তারা রাজনৈতিক দলগুলোর হয়ে কাজ করবে ততদিন শান্তি ও সমঝোতা আশা করা আর বোকার স্বর্গে বাস করা একই কথা। তাই ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষকে শান্তিতে বেঁচে থাকতে হলে এবং ব্যবসায়ীদের নির্বিঘ্নে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যেতে হলে যথাক্রমে সমর্থন ত্যাগ রাজনৈতিক দলগুলোর পেছনে অর্থায়ন বন্ধ করতে হবে।
আর সাধারণ মানুষ এই কাজটি করতে পারলেই রাজনীতিবিদগণ উপেক্ষিত হবে, অনৈতিক কাজ করতে সাহস করবে না, মিথ্যাচার করতে পারবে না। রাজনীতি হবে সত্য ন্যায়ের উপর ভিত্তি করে। আর তখনই আসতে পারে প্রকৃত মুক্তি ও সমঝোতা। নয় সব চিৎকার চেঁচামেচি, কান্নার রোল ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।
বিষয়: বিবিধ
১১৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন