মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদ কেন ফুলে ফেঁপে ওঠ

লিখেছেন লিখেছেন জিনিয়াস ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৯:৪১:২৫ রাত

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনীত প্রার্থীদের জমা দেওয়া হলফনামায় সম্পদের বিবরণ থেকে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে অনেকেই সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। কয়েকদিন যাবত পত্র-পত্রিকার একটা বড় অংশ জুড়ে তাদের অস্বাভাবিক সম্পদ বৃদ্ধির খবর প্রকাশিত হচ্ছে। ঘটনাটি নতুন নয়। এর আগেও যতগুলো সরকার দেশ পরিচালনা করেছে প্রত্যেক আমলেই মন্ত্রী-এমপিদের সম্পদের তালিকা ফুলে ফেঁপে ওঠেছে। এটা জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের ক্ষেত্রে যেমন সত্য, অনির্বাচিত ‘স্বৈরাচার’ বা সামরিক সরকারের ক্ষেত্রেও সত্য। পত্র-পত্রিকা, টকশোর মাধ্যমে বিশিষ্টজনেরা এই ধরনের অস্বাভাবিক সম্পদ স্ফীতির পেছনে দুদক, ইসিসহ সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন। তারা যে কারণগুলি উল্লেখ করছেন আমি সেগুলির সঙ্গে একটি বড় কারণ যোগ করতে চাই, এবং এটাই প্রকৃত কারণ তা পাঠকবর্গ চিন্তা করলেই বুঝতে সক্ষম হবেন এনশা’আল্লাহ। গণতন্ত্রে জনপ্রতিনিধি বাছাইয়ের ব্যবস্থায় একজন প্রার্থীকে ব্যয় করতে হয় বিপুল পরিমাণ অর্থ। এই বিপুল অর্থের একটা অংশ প্রকাশ্যে খরচ করলেও বড় অংশটাই খরচ হয় অপ্রকাশ্যে। নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের প্রথম চিন্তাই থাকে খরচ হওয়া এই অর্থ উদ্ধার করা। তাছাড়া পরবর্তী নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া, নির্বাচিত হওয়া বা সরকার গঠন করার কোন নিশ্চয়তা না থাকায় এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন মামলা, হামলা ইত্যাদির সম্ভাবনায় এই পাঁচ বছরে নিজেদের আখের গোছানোর জন্য তাদের থাকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা। স্বাভাবিকভাবেই তারা দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, অবৈধপন্থা অবলম্বন করে থাকেন। নিজের ভবিষ্যতকে নিশ্চিত করতে অনেকেই বিদেশেও টাকা পাচার করেন। তারা জনগণের কল্যাণ সাধনে যতটা চিন্তিত থাকেন তার চেয়ে বেশি চিন্তিত থাকেন নিজের ভবিষ্যত নিয়ে। সাধারণ মানুষের যতটুকু উপকার তারা করেন তা একান্তই দায়ে পড়ে কিংবা পরবর্তীতে আবার নির্বাচিত হওয়ার ইচ্ছাকে সামনে রেখেই। যে কোন সরকারের একজন মন্ত্রীর ক্ষেত্রে যেমন এটা সত্য, ছোট পরিসরে ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্যের ক্ষেত্রেও এই কথা সত্য। প্রচলিত সিস্টেমে একজন সৎ, আদর্শবান, ন্যায়নীতিসম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষে অঢেল অর্থ খরচ করে নির্বাচিত হওয়ায় যেমন সুযোগ কম, তেমনি নির্বাচিত হওয়ার পর সৎ থাকা প্রায়ই অসম্ভব। এই বাস্তবতার বিপরীতে দুদক বা ইসির মত প্রতিষ্ঠানগুলো একেবারেই অসহায়, তাদের কিছুই করার থাকে না। আত্মাহীন, দেহকেন্দ্রিক, স্বার্থকেন্দ্রিক যে জীবনব্যবস্থাটি আমরা মেনে নিয়েছি তার একটি ফল এটা। শুধু গণতন্ত্র নয়, সামরিক শাসন, একনায়কতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি মানবসৃষ্ট সকল জীবনব্যবস্থায়ই জনগণের সম্পদ লুটে নেতৃস্থানীয় বা শাসকরা অঢেল সম্পদ হস্তগত করেন এটাই বর্তমানের সময়ের ক্ষেত্রে বাস্তবতা। অন্যদিকে ইসলাম (অবশ্যই প্রকৃত ইসলাম) হচ্ছে একমাত্র জীবনব্যবস্থা যার ইতিহাস সম্পূর্ণ বিপরীত। আল্লাহর শেষ রসুল নবুয়ত পাওয়ার আগে যেমন ছিলেন পরবর্তীতে সমস্ত জজিরাতুল আরবে একচ্ছত্র অধিকারী হওয়ার পরে তাঁর অর্থনৈতিক অবস্থা আরো খারাপ বৈ ভাল হয়নি। তেমনি ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর (রা) যখন খলিফা তখনও তিনি কাপড়ের বোঝা কাঁধে নিয়ে বাজারে ছুটতেন নিজের জীবিকার উদ্দেশ্যে, রাষ্ট্র বা জনগণের সম্পদ ভোগ করতেন না। ওমর (রা) যখন অর্ধেক পৃথিবীর শাসক তখনো তিনি গায়ে তালি দেওয়া কাপড়ই পরিধান করতেন। খলিফা ওসমানের (রা) নিজের ব্যবসাই ছিল জীবিকা উপার্জনের পথ। খলিফা হযরত আলী (রা) কে জীবিকার তাগিদে কুলির কাজও করতে হয়েছে। এভাবে যতদিন প্রকৃত খেলাফত ছিল ততদিন সর্বোচ্চ নেতা থেকে শুরু করে সরকারের সর্বনিু দায়িত্বশীল ব্যক্তি পর্যন্ত কেউ দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদির চিন্তাও করতেন না। তাদের একদিকে নেতৃত্বের প্রতি ছিল অনীহা। অন্যদের অনুরোধে বা একান্ত বাধ্য না হলে তাঁরা নেতৃত্ব হাতে নিতেন না। অন্যদিকে তাঁরা জানতেন যতদিন তারা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত আছেন ততদিন তাঁদের এই নেতৃত্বকে কেউ অস্বীকার বা কেউ তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহও করবে না (মোনাফেকরা ছাড়া)। যার ফলে নিজেদের ভবিষ্যতের চিন্তা তাদের কাছে ছিল অচিন্তনীয় বিষয়। সবচেয়ে বড় কথা জাতীর নেতৃত্ব ছিল তাদের কাছে এবাদততুল্য। কারণ ইসলামে এবাদত আর খেলাফত এক ও অভিন্ন বিষয়। অন্যদিকে জনগণের জীবন-সম্পদ ছিল শাসকদের কাছে পবিত্র আমানত। নিজের দায়িত্ববোধ থেকে জনগণের প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য রাতের বেলায় ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়ানোর ইতিহাস একমাত্র ইসলামেই আছে।

আর আজ পৃথিবীময় যতগুলো জীবনব্যবস্থা প্রচলিত আছে (বিকৃত ইসলামসহ) সেখানে দেখা যায় শাসকদের সীমাহীন দুর্নীতি আর ক্ষমতার অপব্যবহার। সরকার পরিবর্তন হলেই বের হয়ে আসে থলের বিড়াল। তেমনই সমাজতান্ত্রিক দেশ দক্ষিণ কোরিয়াতে কয়েকদিন আগেও ব্যাপক দুর্নীতির দায়ে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে বর্তমান সরকার প্রধানের ফুপাকে। আত্মাহীন, স্রষ্টাবিমুখ বর্তমান প্রচলিত জীবনব্যবস্থাগুলো পরিবর্তন না করে আমরা যতই ব্যক্তি তথা নেতৃত্ব পরিবর্তন করি না কেন, এই অবস্থার পরিবর্তন হবে না। তাই এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে আমরা আত্মাহীন, স্বার্থপর এই সিস্টেমটাকে আঁকড়ে ধরে রাখব নাকি স্রষ্টাপ্রদত্ত প্রকৃত ইসলামকে গ্রহণ করে নেব।

বিষয়: বিবিধ

১০৭৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File