বিশ্ব নারী দিবস ও নারীমুক্তি

লিখেছেন লিখেছেন সাইদুল হোসেন ০৮ মার্চ, ২০১৩, ১০:২৯:৪১ রাত

সুশীল সমাজ : হে নারীজাতি, এই সমাজ তোমাদের সমঅধিকার দেয় নি । তোমাদের বদ্ধ করে রেখেছে ঘরের ভিতর । তোমাদের বানিয়ে রেখেছে দাসী । আর কতকাল তোমরা ঘুমিয়ে থাকবে ? "ভোর হলো দোর খোল, নারীজাতি ওঠো রে ।"

নারী : কে ? কে ডাকে আমাকে ?

সুশীল সমাজ : আমরা । আমরা তোমাদের ডাকছি । যুগ যুগ ধরে তোমরা শোষিত, লাঞ্ছিত । ওঠো, ওঠো, জাগো ।

নারী : তাই তো । আমাদের জাগতে হবে । চার দেয়ালে আটকে রেখে অনেক অত্যাচার করেছে পুরুষ আমাদের । এইবার জাগতে হবে । সুশীল সমাজ আমাদের মুক্তির ফরমায়েশ নিয়ে এসেছে ।

সুশীল সমাজ : আমরা তোমাদের মুক্তি দিতে এসেছি । তোমরা ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এসো ।

(নারী তার প্রথাগত আব্রু নিয়ে বেরিয়ে আসে)

সুশীল সমাজ : ওকি ! ওকি ! এই ছদ্মবেশ ছাড়ো । আমাদের মত আধুনিক বসনে বেরিয়ে এসো । প্রাগৈতিহাসিক মার্জিত আব্রু ত্যাগ কর । ওই আব্রুই তোমাকে বন্দী করে করে রেখেছে ।

নারী : ঠিক বলেছ । আমরা আব্রু ত্যাগ করলাম । এবার কি করব ?

সুশীল সমাজ : নারী ! দেহই তোমার শ্রেষ্ঠ সৌন্দর্য । সুন্দর কখনও গোপন করে রাখতে হয় না । দেখছ না, গোলাপ সুন্দর বলে সে কলি থেকে বেরিয়ে এসে তার সৌন্দর্যের জানান দিচ্ছে । তুমিও তোমার সৌন্দর্যের জানান দাও ।

নারী : কিভাবে ?

সুশীল সমাজ : দেখ, বাজারে তোমাদের জন্য টাইটস, টপস, জিন্স এসেছে । ওসব পরিধান কর ।

নারী : কিন্তু আমরা তো শাড়ী, সালোয়ার - কামিজ পড়তাম ।

সুশীল সমাজ : বাজারে তোমাদের জন্য স্বচ্ছ কাপড়ের শাড়ী এসেছে । ওটা তোমাদের সৌন্দর্যের জানান দিবে । ওটা পড় । ও হ্যাঁ, সালোয়ার কামিজ পরলে কিন্তু fitting পরবে । ওড়না পারলে বর্জন কর ।

নারী : ঠিক বলেছ । ইস ! আগে আমরা কি বোকাই না ছিলাম !

সুশীল সমাজ : তোমরা ব্লাউজ, কামিজ পড়লে কিন্তু গলাটা বড় রাখবে, যাতে একটুখানি বুক দেখা যায় । নইলে কিন্তু আধুনিক হতে পারবে না ।

নারী : কি বলছ ? এতে আমাদের ইজ্জতহানি হবে তো । তোমরা তো ঠিকই আগের পোশাকই পড়ছ । তোমরা তো তোমাদের লজ্জাস্থান দেখিয়ে বেড়াচ্ছ না, তাহলে আমরা কেন দেখিয়ে বেড়াব ? আমরা লাজুক জাতি । আমরা পারব না ।

সুশীল সমাজ : (রেগে গিয়ে) যা বলছি শোন । বেশি বুঝ না তো ! পুরুষের এসব লাগে না । পুরুষ তো এমনিতেই স্বাধীন । তোমাদের স্বাধীনতা পেতে হলে এগুলো করতে হবে । নইলে নারীমুক্তি হবে না । কেন, নারীমুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ তসলিমা নাসরিন, হুমায়ুন আজাদ কি বলেছে জান না ? movie-তে দেখ না শিলা, মুন্নি কত সুন্দর শরীর দেখায়, অক্ষয়-সালমান কি দেখিয়েছে ? যত নারী মডেল সবাই কমবেশি শরীর দেখায়, ছেলে মডেলরা কি দেখায় ? আরে বাবা, এগুলা না করলে তোমরা আধুনিক হবে কিভাবে ? এসব তো তোমাদের ভালর জন্যই । বোঝ না কেন ?

নারী : হুম, ঠিকই বলেছ । আমরাই বুঝতে ভুল করেছি । এখন থেকে আমরা আধুনিক হয়ে যাব ।

অতঃপর, যাহারা নারীকে সম্মুখ হইতে শুভবুদ্ধি প্রদান করিল, তাহারাই পশ্চাৎ হইতে মজা লইতে থাকিল, নারীর দেহকে বানাইল ভোগের বস্তু । আধুনিকতার নামে নারীকে বানাইল বিকৃত বাসনার উপকরণ । লজ্জিত, ক্ষুব্ধ নারী গেল সুশীল সমাজের নিকট বিচারের দাবী লইয়া ।

সুশীল সমাজ : কি ? তোমাদের এভাবে পীড়ন দিচ্ছে ? দাঁড়াও, সব সমস্যার সমাধান দিয়ে দিচ্ছি । এখনই, প্রতিবাদ সমাবেশ, আন্দোলন কর্মসূচি আর প্রেস কনফারেন্স করে মিডিয়াকে দিয়ে প্রচারের ব্যবস্থা করছি ।

নারী : যাক, নিশ্চিন্ত হলাম । আমি তবে এখন যাই ।

সুশীল সমাজ : আরে আরে কোথায় যাচ্ছ ? তোমাকেও থাকতে হবে । সবার সামনে তুমিই তোমার সমস্যাটা তুলে ধরবে । আর শোন, মিডিয়ার সামনে যাবে একটু আধুনিক পোশাক পড়ে এসো । দেশের মানুষ দেখবে তো । দেখবে, তুমি একেবারে হিট হয়ে যাবে ।

নারী : (অক্ষিগোলক বিস্ফোরিত করিয়া) তাই !! ঠিক আছে, ঠিক আছে । যাচ্ছি তাহলে । রেডি হয়ে আসি ।

অতঃপর, এম্ববিধ ব্যবস্থাগ্রহণ সত্ত্বেও ব্যাধির উপশম তো হইলই না, বরং ব্যাধি অত্যধিক সংক্রমিত হইল । যে নারী আসিয়াছিল ব্যাধি উপশমের দাবী লইয়া, সেও রঙ্গিন জগতে মাতিয়া গেল, ভুলিয়া গেল সম্ভ্রমহননের পীড়ার কথা । উপুর্যপুরি, ক্রমেই ব্যভিচার, ইভ টিজিংসহ নানাবিধ নতুন নতুন ব্যাধি আবিষ্কার হইতে থাকিল । বাড়িতে থাকিল নারীকে পণ্য বানাইয়া নারীব্যবসার হার ; তবে সনাতন পদ্ধতিতে নহে, বরং বিবিধ আধুনিক পদ্ধতিতে । এদিকে, নারীও ধীরে ধীরে ভুলিয়া গেল প্রবাদ - লজ্জা নারীর ভূষণ । বরং কতিপয় পুরুষ লজ্জিত হইতে থাকিল নারীর পোশাকের পানে চাহিয়া । আর সুশীল সমাজ সমস্ত বৎসরব্যাপী নারীকে নগ্ন করিয়া বিশ্ব নারী দিবসে আসিয়া গলা ফাটাইতে লাগিল নারী অধিকার রক্ষার নিমিত্তে ।

বিষয়: বিবিধ

১৩৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File