নাস্তিকতা, আধুনিকতা ও স্বাধীন বাংলাদেশ
লিখেছেন লিখেছেন সাইদুল হোসেন ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০১:০৭:৩৫ রাত
আজ বাংলাদেশে নাস্তিকতার যে নগ্ন উল্লাস, তার ইতিহাস একেবারে নূতন নয়, বরং পুরনো । অনেকদিন আগে বাংলাদেশে ‘‘হুমায়ুন আজাদ’’ নামক এক ‘Fever’ এর আবির্ভাব হয়েছিল, যাতে আক্রান্ত হয়েছিল কিছু অপরিণত তরুণ-মস্তিষ্ক । ‘নাস্তিকতা’ নামক পুরনো ‘সুরা’ নব্য ‘আধুনিকতা’ নামক অশ্লীলতার পাত্রে ঢেলে যিনি হয়েছিলেন একটি নির্দিষ্ট তরুণগোষ্ঠীর ‘icon’ । বাংলার তথাকথিত সুশীল সমাজ যাকে ‘মনীষী’ , ‘মহাজ্ঞানী’ অভিধায় করেছিল অভিষিক্ত । প্রকৃতপক্ষে, হুমায়ুন আজাদের চিন্তা-বিপ্লবের প্রধান অস্ত্র ছিল ‘‘ইসলাম-বিরোধিতা’’ বৈ আর কিছুই না । অযাচিত, অপ্রাসঙ্গিক ও অযৌক্তিকভাবে পবিত্র কুরআন-হাদিস বিবৃতকরণ, ব্যাখ্যা প্রদান, পুরো প্রসঙ্গ তুলে না ধরে নিজের সুবিধামত কুরআনের আয়াতের খাপছাড়া উদ্ধৃতিদান ছিল তার উপজীব্য - পুরো নাস্তিকতা তথা নব্য চিন্তাশীলতার মুখোশের আড়ালে যার মূল বিষয়বস্তু ছিল ‘‘অশ্লীলতা’’!
হুমায়ুন আজাদ হচ্ছেন তৎকালীন তথাকথিত সেইসব যুব- আর সুশীল সমাজের সেই পরিশীলিত ‘জ্ঞানের ভাণ্ডার’, যিনি তার প্রবন্ধে সাবলীলভাবে পুং যৌনাঙ্গকে আখ্যায়িত করেন – ‘সোনা’, ‘নুনু’, ‘ধন’ বলে ! অশ্লীল, অশালীন যৌন সম্পর্কের রস–উদ্দীপক বর্ণনা দিয়ে গুরুগম্ভীর মার্জিত ভাষার ‘‘চটি’’ লিখে আখ্যায়িত হন আধুনিক যুগের সাহিত্যিক হিসেবে । আর গণ্ডমূর্খ শিক্ষিত মস্তিষ্কগুলো অসংলগ্ন যৌনবাসনা পূরণের এই নবপন্থাকে জাগরণের মন্ত্র বলে নিজ বিকৃত রুচিকে করে তোলে সমাজস্বীকৃত ।
ইতিহাসে আরও একজন ‘মহীয়সী নারীর’ আবির্ভাব ঘটে । তার নাম ‘তসলিমা নাসরিন’ । যিনি দেশের স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ হতে ‘ডাক্তার’ লেভেল যুক্ত করে আধুনিক নারীমুক্তি আন্দোলনের নামে অশ্লীলতার নতুন পদ্ধতি নিয়ে আবির্ভূত হন । তসলিমা নাসরিন তার ‘নির্বাচিত কলাম’ বইয়ে লিখেছেন যে – একবার তিনি প্রচণ্ড গরমে বাইরে থেকে ঘরে ফিরে উঠানে দেখতে পেলেন তারই এক ভাই রৌদ্রের দাবদাহ সহ্য করতে না পেরে গায়ের জামা খুলে অর্ধনগ্ন শরীরে বসে আছে । এই দেখে তসলিমা নাসরিনের আধুনিক নারীমনে প্রশ্নের উদয় হল – ‘আমার প্রাপ্তবয়স্ক ভাই গায়ের জামা খুলে উঠানে বসে থাকতে পারলে আমি কেন পারব না?’
তসলিমা নাসরিন সেই প্রগতিশীল আধুনিকমনা নারী, যিনি মেয়েদের থ্রী-পিস এর ‘তৃতীয়’ পিসটি বিলুপ্ত করার পক্ষে, যার মতে কামিজের সাথে ‘ওড়না’ বস্তুটি অতি অপ্রয়োজনীয়, বরং উদ্ধত সৌন্দর্য প্রদর্শনই শ্রেয় ।
সুতরাং, তসলিমা নাসরিনের মতে, আধুনিক নারীদের হতে হবে অর্ধনগ্ন, করতে হবে শরীর প্রদর্শন – সর্বসম্মুখে ; আর হুমায়ুন আজাদের উত্তরসূরিরা তারই পথ ধরে সূচনা করবে পর্ণগ্রাফিক আধুনিকতার । আর তাইতো যাতে এই আধুনিকতার মূলমন্ত্র এরা মাতৃভাষায় সর্বস্তরের জনগণের নিকট পৌঁছে দিতে পারে, সেজন্যই ১৯৫২’র একুশে ফেব্রুয়ারীতে জীবন দিয়েছিল ভাষাসৈনিক আর সেই মূলমন্ত্রে দীক্ষিত আধুনিক পিশাচের দল যাতে সমগ্র দেশে নগ্ন-কুর্দন করতে পারে, সেজন্য দেশ স্বাধীন করতে রক্ত দিয়েছিল ৩০ লক্ষ শহীদ আর সম্ভ্রম দিয়েছিল ২ লক্ষ কামিনী, তাই না?
ওদের সেই আশা পূরণ হয়নি । হুমায়ুন আজাদের মূলোৎপাটন করা হয়েছে, বিতাড়িত করা হয়েছে তসলিমা নাসরিনকে । তাই আজকে আবার সেই পশুবৃত্তি চরিতার্থ করতে একত্রিত হয়েছে কতগুলো মানুষরূপী জানোয়ার । রাজাকারের শাস্তি চাওয়ার নাম করে কতগুলো বিকৃত মস্তিষ্ক নাস্তিক আজ ছড়াচ্ছে নাস্তিকতা আর নগ্নতার বিষ ।
সবশেষে বলতে চাই, ‘ন যযৌ ন তস্থৌ’ এর দিন শেষ । এই বাংলার বুকে আমরা যেমন আর একটা রাজাকারকেও চাই না, তেমনি চাই না কোন নাস্তিকের অবাধ বিচরণ । দেশ আজ ভয়ংকর বিপর্যয়ের মুখে । ভারতীয় আর পশ্চিমা আগ্রাসনে বিপথগামী কিছু মানুষের ব্যাধি সংক্রমিত আজ তরুণ সমাজে । আমার সোনার বাংলাকে সত্যিকারের সোনার বাংলায় রূপ দেয়ার এখনই সময় । এখনই সময় এই দেশের আবর্জনাগুলি উৎখাতের । রাজীব, আসিফ মহিউদ্দিন, সবাক, অমিসহ সকল নাস্তিকদের বিরুদ্ধে আজ দেশে যে গণজাগরণের জোয়ার, সেই জোয়ারে ভাটা পড়ার আগেই এই দেশকে রাজাকার আর নাস্তিক মুক্ত করতে হবে, তা যেকোন কিছুর বিনিময়েই হোক । বেলুন উড্ডয়ন, মোমবাতি প্রজ্বলন আর পুষ্পসমর্পণে নয় – বরং এই মহৎ কর্ম সাধনেই সত্যিকারের শান্তি পাবেন ’৫২ আর ’৭১ এর সকল আত্মোৎসর্গীকৃত আত্মা, ফেলবেন আশীর্বাদপুষ্ট স্বস্তির নিঃশ্বাস ।
বিষয়: বিবিধ
১৩১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন