গরীব মানুষদের সহযোগিতা করুন : ওরা আপনাকে মন থেকে দোয়া করবে, নিঃস্বার্থ ভালোবাসবে।।
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ২২ মার্চ, ২০১৩, ০৫:৫৭:৩০ বিকাল
উপরের ছবিটি ফেইছবুক থেকে নেয়া। ছবিটি দেখে আজ থেকে ১১ বছর আগের একটি ঘটনা মনে পড়ে গেলো।ভাবলাম সকলের সাথে বিষয়টি শেয়ার করি।বিশ্বাস করুন প্রিয় পাঠক, আমাকে প্রকাশ করার জন্য আমি এটা শেয়ার করছিনা। শেয়ার করছি এটা পড়ে যদি কারো মনে একটু উৎসাহের সৃষ্টি হয়।
রাসুল (সঃ) বলেছেন, তোমরা অতি গোপনে অপরকে সাহায্য কর।কখনো দেখিয়ে সাহায্য কর যাতে করে অন্যেরা উৎসাহিত হয়।
এবার আসা যাক ১১ বছর আগের ঘটনাটি কি ।
২০০২ সালে এক জুমা বার (তারিখ মনে নাই) বাড়ির কাছের ডাকবাংলো জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে বাড়ি ফিরছি। বাড়ি থেকে মসজিদের দূরত্ব ৩/৪ মিনিটের রাস্তা।আমার বাড়ি আবার পৌর শহরে।
বাড়িতে ফেরার পথিমধ্যে দেখলাম কিছু মানুষ গোল হয়ে ঝটলা বেধে কি যেন দেখছে।কৌতুহলি হয়ে আমিও সেদিকে গেলাম। কাছে গিয়ে কিছু বুঝে উঠার আগেই পরিচিত এক রিক্সা ড্রাইভার বলে উঠলো, উনি এসেছেন, কিছু একটা করবেন, আপনারা কোন চিন্তা করবেন না।
তার কথা শুনে লোকজন ঠেলে একটু ভিতরে গিয়ে দেখি দুই জন মধ্য বয়সী মহিলা একটি ১০/১১ বছর বয়সের মেয়েকে কুলে নিয়ে বসে বসে কাঁদছেন। আর একজন পুরুষ মানুষ অন্যদের কাছে সাহায্য চাইতেছেন।
কাছে গিয়ে জিগ্গেস করলাম, কি হয়েছে মেয়েটার ?
একজন মহিলা আমাকে বললেন, মেয়েটার কি হয়েছে তারাও জানেন না। তবে মেয়েটা খুব অসুস্হ্য। ২দিন হাসপাতালে ছিলেন, ডাক্তার কিছুই করতে পারে নি। বলেছেন, পারলে সিলেট সরকারী ওসমানি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে না হয় বাড়িতে। কেননা মেয়েটির অবস্তা ভালো না।
সবকিছু শুনে আমি তাদের কে জিগ্গেস করলাম, আপনাদের কাছে কিছু টাকা পয়সা আছে কি না ?
তারা আমাকে জানালো, তাদের কাছে বাড়িতে যাওয়ার মত টাকাটাও নাই।
কি আর করা। দুইটা রিক্সা ডাকলাম। একটাতে মেয়েকে সহ মহিলা দুজনকে দিলাম। আর একটাতে আমি আর তাদের সাথে থাকা লোকটা উঠে বসলাম। তাদের কে নিয়ে আবার হাসপাতালের দিকে ছুটলাম। পথিমধ্য থেকে আমার এক বন্ধুকে সাথে নিলাম।
হাসপাতালে যাওয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার জানালেন, মেয়েটার অবস্তা খুবই খারাপ। তাকে অক্সিজেন লাগিয়ে সিলেট পাঠাতে হবে।
ডাক্তারকে বললাম, আপনি মেয়েটাকে অক্সিজেন লাগান। আমরা তার সিলেটে যাওয়ার ব্যবস্তা করছি।
প্রিয় পাঠক, আমার কাছে এই পরিমান টাকা ছিলোনা যে আমিই কিছু টাকা দিয়ে তাদেরকে সিলেটে পাঠিয়ে দেই।
আমি আমার ঐ বন্ধুকে নিয়ে আমাদের পরিচিত কিছু ব্যবসায়ী ও ভাই বন্ধুদের কাছে গেলাম। তাদের কে বিস্তারিত খুলে বললাম এবং সাহায্য চাইলাম। সকলেই কিছু না কিছু সাহায্য করলেন।প্রায় ২২ শত টাকার মত জমা উঠলো।
আমরা ঐ টাকা নিয়ে হাসপতালে ফিরে গেলাম।
ডাক্তার কে বললাম, সিলেটে পাঠানোর ব্যবস্তা করতে।
ডাক্তার জানালেন, হাসপাতালের একমাত্র এম্বুল্যান্স সকালে একজন রুগী নিয়ে সিলেট গিয়েছে ,সে ফিরলে তার সাথে কথা বলে নিয়ে যেতে।কেননা এম্বুল্যান্স ছাড়া অন্য কোন গাড়িতে অক্সিজেন সুবিধা পাওয়া যাবেনা।
আমরা কিছুক্ষন অপেক্ষা করলাম। সন্ধায় এম্বুল্যান্স ফিরে এলো, কিন্তু ড্রাইভার ঐ মুহুর্তে যেতে পারবেনা বলে জানালো। কারন সে খুবই ক্লান্ত।
ড্রাইভারের কথা শুনে প্রথমে খুবই রাগ হলো। পরোক্ষনে ভাবলাম সেও তো মানুষ, সেও ক্লান্ত হতে পারে।তাই তাকে পাঠাতে হলে অন্য কিছু করতে হবে,রাগ করে হবেনা।
আমরা ড্রাইভারকে মেয়েটার অবস্তা জানালাম এবং তার হাতে ১০০ টাকা দিয়ে অনুরোধ করলাম।
দেখলাম কাজ হয়েছে। এম্বুল্যান্সের সরকারী ফি টা জমা দিয়ে মেয়েটাকে সিলেটের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিলাম।সাথে আরোও ১২ শত টাকা না কত মহিলার হাতে দিলাম।
তারপর,
তারপর মেয়েটার কি হয়েছিলো সাথে সাথে জানতে পারিনি।কেননা সে সময়ে আজকের মত মোবাইলের এত সুযোগ সুবিধা ছিলোনা।তাছাড়া ঐ পরিবারটি ছিলো একটি গরীব পরিবার।আমিও তাদের কোন ঠিকানা রাখিনি যে খবর নিব। ঠিকানা রাখার প্রয়োজনবোধও করিনি।
৪/৫ দিন পর হঠাৎ দেখী ঐ মহিলা আর পুরুষটি আমার বাড়িতে। জিগ্গেস করলাম তাদের মেয়ের কি অবস্তা ? তারা জানালো যে, মেয়েটি হাসপাতালে নেয়ার পর ঐ রাতেই মারা গিয়েছে।
তাদের কে জিগ্গেস করলাম, আমার বাড়ির ঠিকানা জানলেন কিভাবে ?
তারা আমাকে জানালো যে, আমি যে সময়ে তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যাই সে সময়ে আমার একজন প্রতিবেশি হাসপাতালে ছিলেন এবং তিনি আমার সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন আমি তাদের কি হই । তারা ঐ প্রতিবেশির কাছ থেকেই আমার ঠিকানা জেনে নিয়েছিলেন।
আজ তারা এসেছেন, আমাকে কৃতগ্গতা জানাতে।
আমার মা তাদেরকে যথাসাধ্য মেহমানদারি করলেন।
তারা আমাকে তাদের বাড়িতে যাওয়ার অনুরোধ করতে লাগলেন। আমি যাব বলে তাদের ঠিকানা রাখি।
আমি আর এর ভেতরে যেতে পারিনি।মাস খানেক পর ঐ পুরুষটি আবার আমার বাড়িতে হাজির।সাথে তার হাতে কয়েক ধরনের মাছ।
জিগ্গেস করলাম এ গুলো কেন ?
বললো,তাদের বাড়ির কাছ দিয়ে একটা নদি গিয়েছে।নদি থেকে মাছ ধরা হয়েছে তাই তার মা পাঠিয়েছেন মাছ গুলো আমার জন্য ,এবং আমাকে যেতে বলেছেন।
আমি আর অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারিনি। একদিন গিয়েছিলাম তাদের বাড়িতে আমার ঐ বন্ধুকে সাথে নিয়ে। আমাদেরকে দেখে তারা মহা খুশী।
হা সম্মানীত পাঠক, আপনি যদি কোন গরীব অসহায় মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করেন তাহলে দেখবেন গরীব মানুষগুলো আপনাকে ঐভাবে মহব্বত করবে। আপনার জন্য অন্তর থেকে দোয়া করবে। আপনাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালবাসবে।
তাই আসুন, সকলে প্রতিদিন অন্তত একটি ভালো কাজ করি। প্রতিদিন অন্তত একজনকে তার কাজে সহযোগিতা করি। একজন গরীব অসহায় মানুষকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই।
বিষয়: বিবিধ
২৮১৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন