কর্মীর ঘাম ঝরানো পয়সায় ফুলেল মঞ্চ বানাবেন না
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ২৯ মে, ২০১৭, ০৬:০৭:২৫ সকাল
"আপনার মনোহরী ইফতার খাবার দয়া করে ফেইসবুকে শেয়ার করবেন না " টাইমলাইনে এরকম একটি পোস্ট দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। বলেছিলাম, প্রতিদিন কতশত মানুষ শুধু পানি খেয়ে রোযা রাখে,রোযা ভাংগে। অনেকে সহমত পোষন করেছেন, তাদেরকে ধন্যবাদ। অনেকে কাসুন্দি টেনেছেন, তাদের প্রতিও আন্তরিক ধন্যবাদ। যে সকল ভাইরা কাসুন্দি টেনেছেন, যারা নিজেদের সামান্য ভালো খাবার ফেইসবুকে শেয়ার করেন,তাদের প্রতি সবিনয় জিজ্ঞাসা, কেন আপনারা আপনাদের মনোহরী খাবার ফেইসবুকে শেয়ার করেন? আপনারা কি মনে করেন এই খাবার আর কেউ খায় না? নাকি জীবনে পয়লা খাচ্ছেন বলেই অন্যকে জানান দিচ্ছেন? আপনি যে সময় ভালো ভালো খাবার টেবিলে সাজিয়ে ছবি তুলে ফেইসবুকে দিচ্ছেন, ঠিক সেই সময়টায় আপনার গরিব প্রতিবেশী কিছু ঠান্ডা ভাত আর ভাতের উপর সামান্য বাশী তরকারি, সাথে টিউবওয়েল থেকে তুলা একগ্লাস পানি নিয়ে আল্লাহর হুকুমের অপেক্ষায় বসে আছে।
আমার দেয়া এই পোস্টে একজন মন্তব্য করতে গিয়ে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সুযোগ্য সন্তান জনাব শামীম সাঈদীর একটি ছবি যোগ করেছেন। শামীম সাঈদীর টাইমলাইন ঘুরে দেখলাম তিনি নিজেই এই ছবি পোস্ট করে সাথে তার বাবার জন্য সকলের প্রতি দোয়া চেয়েছেন। আমার বুঝে আসে না, দোয়া চাওয়ার সাথে খাবার গ্রহণের ছবি পোস্টের কোনো মানে আছে কি না। এরকম ছবি পোস্ট দেয়া থেকে সকলের বিরত থাকা উচিৎ। বিশেষ করে সংগঠনের দায়িত্বশীলরা এই ব্যাপারে বেশী সতর্ক থাকা দরকার। কেননা, আপনার সংগঠনের হাজার হাজার কর্মী এই মনোহারী ইফতার ত দুরের কথা বাসা বাড়িতে বসে ইফতারই করতে পারে না।
প্রতি রামাদ্বানে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবির নানান দল ও গোষ্ঠীর সম্মানে,যেমন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সম্মানে, কুটনীতিকদের সম্মানে, সাংবাদিকদের সম্মানে ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে থাকে। চারতারা,পাঁচতারা হোটেলের হলরুম ভাড়া নিয়ে, বিপুল ফুলের সমারোহে মঞ্চ বানিয়ে, শানদার খাবারের আয়োজন করে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেন। বিনিময়ে দু' একটি টিভি চ্যানেলের নিউজের শেষ দিকে ছোট করে একটা খবর আর পত্রিকার ভেতরের পাতার ছোট্ট হেডিংয়ের একটা খবর ছাড়া আর কিছু নাই। বলবেন, অন্যদের কাছে নিজের অবস্থান তুলে ধরা, অন্যদের সহানুভূতি নেয়া, অন্যদের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি, ইত্যাদি কাজ হয়ে থাকে এই ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে। বলি, যেই লাউ সেই কদু। তারা আপনার পাশে বসে আপনার তুলে দেয়া খাবার খাবে। আবার আপনার ফাঁসীতে ভেতরে ভেতরে খুশিতে বগল বাজাবে। কেননা, আপনাদের লক্ষ উদ্দেশ্য ও তাদের লক্ষ উদ্দেশ্যের মধ্যে আকাশ মাটিসম ফারাক। অবস্থান, সহানুভূতি, সম্পর্ক, যা হওয়ার হয়েছে আর না।
আপনার একজন কর্মীর ঘাম ঝরানো পয়সায় আর লক্ষ টাকার ফুলের মঞ্চ বানাবেন না। নানান দল ও গোষ্ঠীর পেছনে ইফতার মাহফিলের নামে যে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করবেন সেই টাকা আপনাদেরই আহত,নিহত হওয়া দলীয় কর্মীর পরিবারে খরচ করেন। যে কর্মী পলাতক থেকে সেহরী এক যায়গায় খেয়ে জানে না ইফতার কোথায় করবে তার পকেটে ইফতারীর জন্য দশটি টাকা ঢুকিয়ে দিন। কেন্দ্র থেকে শুরু করে প্রতিটা উপজেলায় গরিব অসহায় মানুষদের সম্মানে ইফতারীর আয়োজন করুন। জমিদারি হল লাগবেনা, লক্ষ টাকার ফুলেল মঞ্চ লাগবে না, মিনারেল ওয়াটার লাগবে না, বিরিয়ানী লাগবে না। শুধু খিচুড়ির প্যাকেট করুন, টিউবওয়েলের পানি দিন আর সাথে আপনারা বসে পড়ুন। দেখবেন, তারা আপনার খেয়ে আপনারই গুণগান গাইছে। কেননা, তাদের আলাদা কোনো লক্ষ উদ্দেশ্য নাই। আপনার লক্ষ উদ্দেশ্য তাদের মধ্যে বিস্তার করাতে পারলেই হলো। আপনারা উতবা শায়বাদের দিকে মনযোগ না দিয়ে অন্ধ সাহাবাদের দিকে মনযোগ দিন। এতেই অধিক কল্যান রয়েছে।
বিষয়: বিবিধ
১১০৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার উচিৎ জামাত রিসার্স পর্ব দেখা।
আপনার লেখার সাথে একমত।
মন্তব্য করতে লগইন করুন