আওয়ামীলীগের ৩ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব ও জামায়াতের না প্রসংগে
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ০৯ মে, ২০১৭, ০৮:১৭:০৪ রাত
আওয়ামীলীগের ৩ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব ও জামায়াতের না প্রসংগে
মুহাম্মদ সাইফুল আলম
---------------------------------------------------------------
বিডি টুডে ম্যাগাজিন 'দেশ জনতা'র বরাত দিয়ে "আ’লীগের সঙ্গে নির্বাচনে অংশগ্রহনে ৩ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব : জামায়াতের না" শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশ করেছে। শিরোনাম দেখেই লেখাটি পড়তে কৌতুহলী হলাম। এমন শিরোনাম দেখলে আপনিও কৌতুহলী না হয়ে পারবেন না। খুব মনযোগ সহকারে আদ্যোপান্ত পাঠ করলাম। পড়ার পর মনে হলো লেখক বি এন পি ঘরানার কেউ হবেন। হতে পারেন। এতে দুষের কিছু না। তিনি বি এন পি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রতি দরদ দেখিয়েছেন এবং জোটের সাথে সম্পৃক্ত দলের নেতা কর্মী বিশেষ করে যারা বিভিন্ন মাধ্যমে লেখালেখি করেন তাদেরকে লেখালেখির প্রতি সতর্ক হওয়ার আহবান জানিয়েছেন। ভালো। জোটের ক্ষতি হোক এরকম লেখালেখি না করাই ভালো। কিন্তু কথা হলো, এই লেখালেখিতে জামায়াতের কি ক্ষতি হবে বা আর কি ক্ষতি হওয়ার আছে?
লেখাটা পড়ে আরো মনে হয়েছে, লেখক জোট বিরুধী লেখালেখির জন্য জামায়াতী লেখকদের দায়ী করছেন। আর সেই জন্যে জামায়াতী লেখকদের বেশী শতর্কতার জন্য তিনি কিছু পরিসংখ্যানও তুলে ধরেছেন। যা কিছুটা সত্য হলেও হাস্যকর। আবার তিনি জামায়াত নেতাদের যোদ্ধাপরাধের দায়ে দায়ীও করেছেন। যার কারণে তার লেখার জবাব দেয়ার প্রয়োজন মনে করছি।
তিনি বলেন,
জামাতের অভিযোগ ছিলো:তাদের নেতাদের একের পর ফাসি হয়েছে কিন্তু বিএনপি কোনো প্রতিবাদ করেনি।
জবাবে তিনি বলেন কথাটি অর্ধেক সত্য।নেত্রী নিজে বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে বহুবার প্রশ্ন তুলেছেন। বিএনপির সব নেতা-কর্মী বিচারের স্বচ্ছতার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু কেউই বিচার বাতিল হোক সে দাবি করেন নি।
প্রশ্ন হলো,
-জামায়াত কি বিচার বাতিলের দাবী করেছিলো?
-স্কাইপ কেলেংকারী সহ নানা অনিয়ম, অস্বচ্ছতার বিচারে জামায়াত নেতাদের ফাসি দেয়া হলো। বি এন পি কি একটি বার বলেছিলো, প্রহসনের বিচার বন্দ করুন।কিংবা ,জামায়াত নেতাদের হত্যার পর কোনো দুঃখ প্রকাশ করেছিলো?
তিনি বলেন,সম্ভবত, একমাত্র সাঈদী ছাড়া জামাতের বাকি সবাই সরাসরি স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে। সাঈদীর ব্যাপারে এটা বলার কারণ, পিরোজপুরের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জিয়া উদ্দিন সাঈদীকে ‘রাজাকার’ বলেন নি।
এখানে তিনি 'সম্ভবত' শব্দটি যোগ করে মাওলানা সাইদী ছাড়া বাকি সকল জামায়াত নেতাদের স্বাধীনতা বিরুধি বলে অভিহিত করেছেন।প্রশ্ন হলো, স্বাধীনতা বিরুধি আর যোদ্ধাপরাধী কি এক হলো? মাওলানা সাঈদীকে তিনি স্বাধীনতা বিরুধিদের বাইরে রেখেছেন।কারণ, পিরোজপুরের মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার সাঈদীকে রাজাকার বলেন নি।লেখকের কি জানা নেই, জামায়াত নেতাদের এলাকার কত শত মানুষ স্বাক্ষী দিয়েছেন যে জামায়াত নেতারা যুদ্ধের সময়ে কোনো অপরাধে জড়িত ছিলেন না। মজার বিষয় হলো, আল্লাহ না করুন, মাওলানা সাঈদী'র ফাসি হয়ে গেলে লেখক নিশ্চয় বলতেন, সবাই স্বাধীনতা বিরুধি ছিলেন।
কাদের মোল্লার পক্ষে অবশ্য আওয়ামী এমপি গো-মা রনি কলম ধরেছিলেন। তবে তা নিয়ে খুব একটা আলোড়ন হয়নি।
কেননা, বি এন পি চায় নি ।
কিন্তু ভয়ংকর তথ্য হচ্ছে, দেশ স্বাধীনের ৪৬ বছর পরেও আজ পর্যন্ত জামাত জাতির কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চায়নি।
এটা চরম ধৃষ্টতা।
এখানে তিনি তার দৃষ্টিতে ভয়ংকর তথ্য দিয়েছেন এবং জামায়াত চরম দৃষ্টতা দেখিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। হা, আপনাদের কাছে এটা চরম ধৃষ্টতা হতে পারে। কেননা, আপনারা নাকে খত দিয়ে রাজনীতি করেন।জামায়াত কেন ক্ষমা চাইবে। জামায়াত ত কোনো অপরাধ করেনি।জামায়াত যে কারনে স্বাধীনতার বিরুধিতা করেছিলো, আজ ৪৬ বছর পর এসে তার বাস্তবিকতা এবং সত্যতা দেশ এবং জাতি দেখছে।বংগবীর কাদের সিদ্দিকীর মত অনেক মুক্তিযোদ্ধারাও আজ বলতে বাধ্য হচ্ছেন, জামায়াতের অবস্থানই সঠিক ছিলো। তাই আজ জামায়াতকে ক্ষমা চাওয়া নয়, বুক ফুলিয়ে বলা দরকার, কেন এমন স্বাধীনতা জামায়াত চায় নি।
লেখক, জামায়াত কোন নির্বাচনে কত পার্সেন্ট ভোট পেয়েছে বলে কিছু নির্বাচনী পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন।এমন কি জামায়াতের ৪/৬ পার্সেন্ট ভোট বলে উল্লেখ করেছেন।লেখকের নিশ্চয় জানা আছে এই পরিসংখ্যানটাই শেষ নয়। এই পরিসংখ্যান দেয়া হয় যে সমস্ত আসনে জামায়াত প্রার্থী দিয়েছিলো সেসকল আসনের প্রাপ্ত ভোটের হিসাবে। যেমন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে জামায়াত যে ৩৮ টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিলো সেই ৩৮ টিতে যে ভোট পেয়েছে জামায়াত পার্সেন্টের হিসাবটাও সেইমতে।প্রশ্নহলো, বাকি ২৬২ আসনে জামায়াতের কি কোনো ভোট নেই?
জামাতের সাথে আওয়ামীর আতাতের কথা বহুবার পত্রিকায় এসেছে। বিভিন্ন এলাকায় জামাত নেতাও আওয়ামীলীগে যোগ দিচ্ছে।
আতাতের কথা বহুবার পত্রিকায় এসেছে আবং আরো আসবে। এখানে তিনি 'বিভিন্ন এলাকায় জামাত নেতাও আওয়ামীলীগে যোগ দিচ্ছে' বলে বুঝাতে চাচ্ছেন যে, আতাতের খবরটাও সত্য।প্রশ্ন রাখতে চাই, আর কতজন জামায়াত নেতা ফাসিতে ঝুললে উনারা মানবে যে জামায়াত কোনো আতাতের সাথে নেই। দু'একজন নেতা আওয়ামীলীগে যোগ দিচ্ছে এটা কি আতাতের অংশ হতে পারে। তার বিবেকের কাছে প্রশ্ন।
লীগের পক্ষ থেকে এমন প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে, জামাত যদি কথা দেয়, আগামীতে জোট ছাড়া নির্বাচন করবে এবং ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে তাহলে প্রতি আসনে ১০ কোটি করে ৩০০০ হাজার কোটি টাকা নির্বাচন খরচ দেবে।
এটা একটা চমকপ্রদ তথ্য দিয়েছেন লেখক। কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে এই তথ্যটা তার মনগড়া। কেননা, কবে,কোথায়, কে, কার কাছে এই প্রস্তাব দিয়েছে তার কিছুই নেই লেখনিতে।
আরও আশ্বাস দেয়া হয়, বিএনপি ছাড়লে আওয়ামী বুদ্ধিজীবী, মিডিয়া ও দলের লোক’রা ”রাজাকার” শব্দটি আর উচ্চারণ করবে না।
খুবই হাস্যকর একটি প্রস্তাব।রাজাকার শব্দটি মুছে দিলে জামায়াতের কি লাভ হবে? রাজাকার শব্দের কারনে যে সকল জামায়াত নেতা ফাসি বরণ করেছেন তারা কি ফিরে আসবে?
তাই সবার প্রতি আমার অনুরোধ, যতদিন নির্বাচনী জোট বহাল আছে, আপনারা আপনাদের চমৎকার লেখনি শক্তি নিজেদের বিরুদ্ধে ব্যয় করবেন না। বিশেষ করে প্রবাসীরা।
লেখকের প্রতি সবিনয় অনরোধ আপনিই আগে জামায়াতের প্রসংগে বিরুদপূর্ণ লেখা বন্ধ করুন,তারপর অন্যকে নসিহত করুন।
বিষয়: রাজনীতি
১৫৮২ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমরা আশা করি প্রথমে উনি নিজে সংশোধন হবেন। আপনাকে ধন্যবাদ।
আগামীতে ঐ জালিম গুষ্টির বিচারের আয়োজন হবে এবং সেই সময়টি অতি নিকটে
ইতিহাস সাক্ষী আওয়ামী লীগকে তত্ত্বাবধায়কের ফর্মুলা এই জামায়াতই দিয়েছিল। সেটার কি ফল এটা তো আমরা হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাচ্ছি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন