আমেরিকার নির্বাচন ঃ আমরা যেন হুক্কাহুয়ার জাতিতে পরিনত হচ্ছি
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ১১ নভেম্বর, ২০১৬, ০৫:৩১:৩৪ বিকাল
তিন চারদিন আগে পত্রিকার খবরে পড়লাম, আওয়ামীলীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার দানে পাওয়া দায়িত্ব সেক্রেটারি মহোদয় জনাব ওবায়দুল কাদের বলছেন, তিনি নিজেকে আওয়ামীলীগের কর্মী মনে করেন না। তিনি নিজেকে শেখ মুজিবের কর্মী,শেখ হাসিনার কর্মী মনে করেন এবং সেভাবেই কাজ করতে চান। ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং বর্তমান ভোটারবিহীন নির্বাচিত সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী। একসময় শ্লোগান ছিলো, ব্যাক্তির চেয়ে দল বড়-দলের চেয়ে দেশ বড়। তাহলে জনাব ওবায়দুল কাদেরের কথার অর্থ কি দাড়ালো? নিশ্চয় তার অর্থ ঘুরে গিয়েছে। এখন হয়েছে, দেশের চেয়ে দল বড়- দলের চেয়ে ব্যাক্তি বড়!!! আমি জানিনা, তিনি শুধুমাত্র তেল মারার জন্য এই কথা বলেছেন কি না। দুষ্টু লোকে বলে,তিনি আবার তেল মারার জন্য খুবই পারদর্শী। আর তার প্রমানোও তিনি অতিথে রেখেছেন। তেল না হলে আজ যে নেত্রীর কর্মী হিসাবে নিজেকে দাবী করছেন ফখর মইনের সরকারের সময়ে সেই নেত্রীর বিরুদ্ধে বলতে তিনি সামান্য দ্বিধা করেন নি।
তবে তেল হোক আর যাই হোক তিনি একটা চরম সত্য তুলে ধরেছেন জাতির সামনে এবং শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে আওয়ামীলীগের প্রতিটা নেতাকর্মীর কথায়,আচরণে,কাজে তার সত্যতাও পাওয়া যায়। সেটা হলো, আওয়ামীলীগের কাছে দেশের চেয়ে দল বড়- দলের চেয়ে ব্যাক্তি বড়। এই মানসিক দৈন্যতা থেকে বেচে নেই বি এন পি ও। বি এন পি'র নেতা কর্মীর কাছেও বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়াই সব। উভয় দলই তাদের দলীয় ব্যাক্তিদের প্রতিষ্ঠা করতে যতটা সময় ব্যয় করেন, দল গড়ার কাজে,দেশ গড়ার কাজে ততটা সময় ব্যয় করেন না। বক্তব্য দিতে শুরু করলে ২০ মিনিটের বক্তবে ১৫ মিনিট শুধু তাদের নেতা নেত্রীর গুণগান।
আমাদের মানসিক দৈন্যতা শুধু এখানেই শেষ নয়। আমরা নিজেদের গদি রক্ষার জন্য, গদিতে আরোহনের জন্য নিজেদের দেশকে অন্যের হাতে বিকিয়ে দিতে মোটেও কুণ্ঠাবোধ করি না। তাই ত দেখা যায়, ভারতে নির্বাচন হলে আমাদের দেশে টেনশন বেড়ে যায়। কেউ মুদি ক্ষমতায় আসার অপেক্ষায় থাকেন,মুদির বিজয়ে উৎফুল্ল হোন। আবার কেউ গান্ধী পরিবারের জন্য মিলাদ খতম পড়ান। একই অবস্তা বিরাজ করেছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও। কেউ হিলারি ক্লিনটনের জন্য হায়হুতাশ শুরু করেছেন। বিশেষ করে,বি এন পি ধরেই নিয়েছিলো, হিলারি নির্বাচিত হয়ে আসলেই তাদের আর ক্ষমতায় যেতে ঠেকায় কে? তাই ত বি এন পি ঘরানার সকলেই বিশেষ বিশেষ দোয়া কালাম পড়তে শুরু করেছিলেন হিলারির জন্য। অপরদিকে আওয়ামীলীগেরও যেন পেরেশানি শুরু হয়ে গিয়েছিলো যদি হিলারি পাশ করে তাহলে তাদের গদিখান থাকবে ত। অবশেষে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ে আওয়ামী শিবির মহাউৎফুল্ল। অবস্তা এই যেন, এখন আর তাদের কে গদি থেকে সরায় কার সাধ্য? আর আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের মানসিকতায়ও এই দৈন্যতার প্রভাব পড়েছে মারাত্বক ব্যাধির মত। আমরাও তার বাইরে কিছু চিন্তা করতে পারি না। আমরাও যেন বুঝে নিয়েছি, আমাদের ভাগ্য নিয়ন্তা আমেরিকা নয়তো ভারত! আমরা যেন হুক্কাহুয়ার জাতিতে পরিনত হচ্ছি। কেউ এসে একটা হুক্কাহুয়া বলে ডাক দিলো অমনি আমরাও একসাথে হুক্কাহুয়া বলে উঠলাম। আবার নীরবতা পালন করে যে যার মত করে জংগলে ঢুকে গেলাম।
বিষয়: রাজনীতি
১৩৫৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
প্যারিস কি এ নিয়ে মাতে নি ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন