ট্রেন ভ্রমনের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা

লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ১৬ জুলাই, ২০১৬, ০৯:১৯:০৮ রাত



বেচারা অনেক বছর ফ্রান্স থাকছেন।ফ্রান্সের ট্রেন, মেট্রো চড়ে চড়ে ট্রেনের প্রটি একটা মহব্বত তৈরি হয়েছে।ইউরোপের যে কোন দেশে চলাচলের অন্যতম বাহন হলো ট্রেন।ট্রেনের যাত্রা আরামদায়ক,নিরাপদ ও যানজটমুক্ত।তাই দেশে যাওয়ার পর খায়েস জাগছে নিজ দেশের ট্রেন চড়ার।যদিও জানেন,ইউরোপের ট্রেন আর তার দেশের ট্রেন সমান হবে না।তবুও আশা, যদি ইউরোপের ট্রেনের পঞ্চাশ ভাগও হয়।

নতুন বিয়ে করেছেন।বউকে নিয়ে ট্রেনে চড়ে ঢাকা যাবেন।সমস্যা হলো নিজের উপজেলায় ট্রেনের লাইন নাই।নাই মানে এক সময় ছিলো।পরে লোকসান দেখিয়ে লাইন বন্ধ করে দেয়া হয়।এখন বেচারাকে ট্রেন চড়তে হলে প্রায় ২৫ কিলোমিটার বাসে কিংবা প্রাইভেট গাড়িতে করে কুলাউড়া গিয়ে ট্রেন ধরতে হবে,তাও যদি ভালোয় ভালোয় টিকেট পাওয়া যায়।

টিকেটের এই অনিশ্চয়তা নিয়েও প্রাইভেট গাড়িতে চড়ে স্বস্ত্রীক কুলাউড়া এলেন বেচারা।সাথে ছোটভাই ও তার বন্ধু,তারা তাদের কাজে ঢাকা যাচ্ছে।কুলাউড়া এসে পরিচিত একজনের সুবাদে টিকেট পাওয়া গিয়েছে,দ্বিতীয় শ্রেণীর।যথাসময়ে প্লাটফরমে ঢাকাগামী ট্রেন লম্বা একটা হর্ণ বাজিয়ে এসে দাড়িয়েছে।বাইরে থেকে ট্রেনের সুরতহাল দেখে ট্রেনের প্রতি খুব মায়া হলো।এই জরাজীর্ণ ট্রেনটা প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ নিয়ে ঢাকা যাওয়া আসা করে, বিরতিহীন। বাংলাদেশের মানুষের কপাল ভালো নিশ্চয়; নতুবা ট্রেনের যে অবস্তা হররোজ একবার এক্সিডেন্ট করার কথা।

অনেক ঠেলা ধাক্ষার পর ট্রেনে উঠা গেলো।ছোট ভাই তার ভাই ভাবীকে দু'টা সীট ব্যবস্থা করে দিয়ে সে তার বন্ধুকে নিয়ে দুরের কোন সীটে গিয়ে বসলো।ট্রেনের ভেতরের অবস্তা দেখেতো আরো মাথা খারাপ।প্রথমত,বগীটা অপরিষ্কার। বগীর মেঝেতে এত এত ময়লা আবর্জনা পড়ে আছে যে রীতিমতো দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।সীটের কাপড়টা যে কত বছর আগের তা আল্লাহই ভালো জানেন।তবে ট্রেন তৈরির পর যে সীট ও কাভার ব্রিটিশরা দিয়েছিলো তা যে এখনো ট্রেনে সোভা পাচ্ছে তা অনায়াসে বলা যায়।তাও ভাগ্য ভালো সীটের কাভারটা কেও খুলে নেয় নি,যেভাবে ট্রেনের ফ্যান সহ অন্যান্ন যন্ত্রাংশ খুলে নিয়েছে ।

টিকেট মাস্টারের লম্বা একটা বাঁশি, ট্রেন তার চেয়েও অধিক লম্বা একটা হর্ণ বাজিয়ে ঝক্ষর মক্ষর আওয়াজ দিয়ে চলতে শুরু করেছে।ট্রেনের ভেতর বাইরে ভ্যাপসা গরম।সাথে ধুলোবালু তো আছেই।নিজ দেশের ট্রেন চড়ে নববধুকে নিয়ে সফর করা হচ্ছে মনে মনে তবুও বেচারার খুশি ধরছেনা।স্ত্রীকে জানালার পাশে দিয়েছেন।স্ত্রীর চোখ কিন্তু মাঝে মধ্যে জানালার বাইরে গেলেও বেশিরভাগ সময় জানালার ভেতরেই আছে।জানালার ভেতরে যে তার বুকের হার্টভির্ট বসা; কেমনে চোখ বাইরে যায়? বাইরে যখনই গিয়েছে দু'জনের চোখ একসাথে গিয়েছে।বাংলার সবুজ শ্যামল প্রান্তর,মাঠ-ঘাট,খাল-বিল,নদ- নদী,দূরে কাছের ঘর- বাড়ি, চমতকার,মনোমুগ্ধকর, চোখজোড়ানো। আর তা যদি দেখা হয় শরির ঘেষে পাশে বসা নতুন বউয়ের রঙিন স্বপ্ন চোখে, তাহলে সেই সুন্দরের তুলনাই হয় না।ঐ যে দূরে দু'টি পাখি ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে দেখলে মনে হয় তখন বেচারা আর তার পাশে বসা প্রিয়তমা উড়ে যাচ্ছে।এভাবে ভাবতেও ভালো লাগে,অন্য সময় যা এভাবে চোখে ধরা দেয়না।অনুভূতির সাগরে এ যেন এক বাঁধ ভাংগা জোয়ার।এ জোয়ারে সব সময় ভাসা যায় না।

ট্রেন ছুটে চলছে। এমন সময় বেচারার পেট মুচড় দিয়ে উঠলো হঠাত করে।সকালে ঘুম থেকে উঠে ট্রেন ধরার তাড়নায় ঠিকমতো প্রশ্রাব পায়খানা হয়নি।তার উপর তেলাল পরোটা আর বইদা বিরান খেয়ে আসা হয়েছে।পেটের ভেতরের সবকিছু যেন নড়াচড়া করছে।একটি বায়ু পেছনের রাস্তা দিয়ে বের হওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে, আর বেচারা এটাকে পেটের ভেতর রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। কেননা,এটা বের হলে তার দূরগন্ধে আশ পাশের মানুষ মারতে আসতে পারে।নতুন বউই বা মনে মনে কি ভাববে।আর বউ যদি সাহসী ও বেরসিক হয় তাহলেতো কিছু একটা বলেই ফেলবে।অনেক কষ্টে বায়ু টা পেটের ভেতর রাখলেও নিম্নচাপ যেন দ্রুত বাড়তে লাগলো। কোন উপায় নেই টয়লেটে যাওয়া ছাড়া।

বেচারা দ্রুতবেগে টয়লেটে গেলেন।পেন্ট টা খুলেই কমোডে বসলেন।অন্য কোন কিছু দেখার উপার নেই।কমোডে বসতে না বসতেই প্রাকৃতিক কাজ সারলেন।কমোড বলতে দুইটা পা দানী আর তার মাঝখানে একটা গর্ত। যা দিয়ে ট্রেনের নিচের রেল ও পাথর দেখা যায়।পেটের ভেতরের যুদ্ধটা কমলে তার যেন হুঁশ ফিরে আসে।এখনতো টয়লেটের সেঁতসেঁতে পরিবেশ আর নোংরা দুর্গন্ধময় অবস্তা দেখে বমি আসার উপক্রম।যার বগির ভেতর অপরিষ্কার তার টয়লেট এভাবে থাকাটাই স্বাভাবিক।তাই বেচারা যে দ্রুতগতিতে টয়লেটে এসেছিলেন সেই গতিতে বের হওয়ার কাজ শুরু করলেন।

পানির টেপের নিচে একটা বোতল রাখা আছে।বোতলটা হাতে নয়ে টেপের মুখে লাগিয়ে পানির সুইচ অন করলেন। কই,কোন পানিতো পড়েনা।ভাবলেন,পানি নেই টিস্যু পাওয়া যাবে।না,টয়লেটের চতুর্দিক চোখ ঘুরিয়ে টিস্যুর কোন লক্ষণই দেখা গেলনা।কি করবেন বেচারা,এখন উপায়? উপায় একটা আছে। বাংলাদেশের ট্রেনের এই হাল হাকিকত দেখে দু:খ যাতনায় যদি বসে বসে এক ঘন্টা কাঁদেন আর চোখের পানি দিয়ে বোতলটা ভরতে পারেন তবেই টয়লেট থেকে পরিষ্কার হয়ে বের হতে পারবেন।কিন্তু এটাতো সম্ভব না।বউকে একা একা সীটে রেখে তিনি টয়লেটে এক ঘন্টাতো দুরের কথা এক মিনিট ও বসতে পারবেন না।অবশেষে নিজের স্যান্ডু গেঞ্জি খুলে তা দিয়ে কিছুটা পরিষ্কার হয়ে বউয়ের কাছে গেলেন।বউয়ের কাছে থেকে পানির বোতল নিয়ে এসে পূনরায় ভালোমত পরিষ্কার হলেন। ভাগ্যিস,বউয়ের কাছে একটা পানির বোতল ছিলো।

বিষয়: বিবিধ

১৪৭৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

374773
১৬ জুলাই ২০১৬ রাত ১০:২৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এই দেশের ট্রেন এ যে চড়তে পারছেন সেই জন্যই তো উনার শুকরিয়া করা উচিত!!

সম্ভবত বড়লেখা উপজেলার অধিবাসি।
374792
১৭ জুলাই ২০১৬ রাত ০২:১৮
শেখের পোলা লিখেছেন : আর স্যাণ্ডো গেঞ্জিটা না থাকলে কি হত তাতো বললেন না। এখন থেকে বদনায় পানি নিয়ে যাবেন।
বইদা বিরাণ কেমন খাবার? ট্রেন বলে না হয় গেঞ্জি বাঁচিয়েছে, বাসে হলে কি হত!
বর্ণনাটি খাসা হয়েছে।
374799
১৭ জুলাই ২০১৬ রাত ০২:৩৭
কুয়েত থেকে লিখেছেন :
অনেক ঠেলা ধাক্ষার পর ট্রেনে উঠা গেলো ভালো লাগলো ধন্যবাদ
374807
১৭ জুলাই ২০১৬ সকাল ০৮:৩৫
হতভাগা লিখেছেন : নতুন বউ কি ফেরান্সের মেয়ে ?
377341
০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ১০:৪৫
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : ভাল ভ্রমন কাহীনি
চমতকার
386090
০১ নভেম্বর ২০১৮ দুপুর ১২:১৮
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : গতকাল শফীউদ্দিন সরদারের ''গুনাহগার'' উপন্যাস পড়লাম। সেখানেও ট্রেন ষ্ট্রেশনের ভয়াবহ দুরাবস্থার কথা আছে...

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File