***** জিন-পরীদের রাজ্যে (ঘ) *****
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ১৮ অক্টোবর, ২০১৫, ০৫:০৩:৫২ বিকাল
এখনো পুরোপুরি শীত না পড়লেও সন্ধার পর শীত শীত লাগে। এমন দিনে গ্রামের লোকজন একটু আগ বাড়িয়ে ঘরে ফিরে থাকে। ঢাকা থেকে আসা বাসটি আমার বাড়ির সামনেই যাত্রী উঠা নামা করে । আর নানুর বাড়ি যেতে হলে আমার বাড়িতে আসার প্রায় আট কিলোমিটার পূর্বে বাসথেকে নামতে হয়। বাস থেকে নেমে আরো প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে হয়।
আমার নানুর বাড়ির রাস্তাটা এমন পয়লা দেড় কিঃমিঃ রাস্তার দু'পাশে বিস্তৃর্ণ ধান্য জমি। এতটুকুন পাড়ি দিলে মাথায় একটা ছোট্ট গ্রাম্য বাজার। তারপরের এক কিঃমিঃ রাস্তার দু'পাশে ঘন-কালো ঝোপ ঝাড়,গাছ-পালা , বনজংগলে ভরা। পাশাপাশি একটা কবরস্তানও। তাও রাস্তার দু'দিকেই। কবরস্তানটা এতটাই ঝোপ ঝাড়ে ভরা যে দিনের বেলায়ই এপথে একা একা যেতে ভয় লাগে।
রাত সাড়ে এগারটা। আমি নানুর বাড়ি যাওয়ার জন্য বাস থেকে পথিমধ্যে নেমে পড়ি। আমার সাথে আরো দু'জন যাত্রী বাস থেকে নামেন। ওরা ব্যবসায়ী। তাদের জন্য সহকর্মীরা দোকানে পশে অপেক্ষা করছে। যাত্রী দুজন তাদের ব্যবসার মালপত্র নিয়ে দোকানে চলে যান। আমি কিছুক্ষণ দাড়িয়ে অপেক্ষা করি, কোন রিক্সাটিক্সা কিংবা ঐ পথে যাবেন এমন কোন পথযাত্রী পাওয়া যায় কি না ? না, রিক্সা বা পথযাত্রী কোনটিই পেলাম না। অবশেষে একাই হাটা ধরলাম।
আমি হাটছি। একা। আমার বাম কাঁধে একটা ঝুলন্ত ব্যাগ। ব্যাগে খুব বেশি কিছু না। আমার ব্যবহারের কিছু কাপড় আর মায়ের জন্য কেনা কিছু খাবার। আজকের রাতে আকাশের গায় জ্যুৎস্না ফোটেনি। তাই বলে মিটমিটে অন্ধকারও নয়। কবি সাহিত্যিকরা এমন রাতের কি বর্ণনা দিয়েছেন আমার জানা নেই। আমি হেটে চলেছি। আমার চোখ দু'টির দৃষ্টি সামনে প্রসারীত,যতদুর যায়। আমি প্রথম দেড় কিলোর অর্ধপথ চলে এসেছি। এখানে একটা ছড়া আছে যা রাস্তার বুক ছিরে দু'ধারের ধান্য জমির মধ্য দিয়ে চলে গেছে। শুষ্ক মৌসূমে এ ছড়ার পানি শীতকালীন শাক সবজি ফলাতে কৃষকদের অনেক সাহায্য করে। রাস্তার উপরে ছোট্ট একটা কালভার্ট। আমি কালভার্ট থেকে মাত্র দশ বারো হাত দুরে। শুনতে পেলাম মানুষের কথা।চেয়ে দেখি কালভার্টে দু'জন লোক কালভার্টে বসে গল্প করছে। তাদেরকে দেখে মনে কিছুটা সাহস পেলাম। ভাবলাম, রাস্তায় অন্তত মানুষ পাওয়া গেলো। পরিচিতজন হলে তাদেরকে নিয়ে বাকি পথ চলে যাব। হা, পরিচিতজনই। দাড়িয়ে কথা বললাম। জানতে চাইলো কোথা থেকে এত রাতে আসছি। বললাম, ঢাকা থেকে। তাদেরকে আমার সাথে যাওয়ায় জন্য বলার আগেই তাদের একজন বললো, রাত অনেক হয়েছে চলো বাড়ি যাই। অন্যজন বললো, হা চলো। আমিতো ভেতরে ভেতরে মহা খুশি, আমাকে বলতে হয়নি সংগি হওয়ার জন্য। এখন আমরা তিনজন হেটে চলছি। গ্রাম্য বাজারের মধ্যে ঢুকতেই বাজার পাহারাদার চেচিয়ে উঠলো, কে ? বললাম, আমি অমুক, অমুকের ভাগনা। পাহারাদার আমাকে চিনতে পারলেন। জানতে চাইলেন এত রাতে কোথা থেকে, আর কাদের সাথে যেন কথা বলছিলে ? তার কথায় আমার দুপাশে থাকালাম, কেও নেই। ওরা দু'জন গেল কোথায় ? ভয়ে সারা শরীরের লোমকুপ জেগে উঠেছে। পাহারাদারকে বললাম, মামা আমার সাথেতো কেও ছিলোনা। মিথ্যে বললাম, পাছে ওরা কোথায় গেছে,কারা ছিলো,চোর ডাকাত কি না, এসব জেরার মধ্যে পড়ে আমার দেরি হয়ে যাবে।
(ঙ)বাজার অতিক্রম করে সামনে এগুতেই আবার ওরা দু'জন ।আমিতো ভয়ে মরি মরি অবস্তা। মক্তবে যে সুরা কেরাত শিখেছিলাম তার কয়েকটা নিমিষে পড়ে নিয়ে বুকে ফুক দিয়ে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম তোমরা কোথায় গিয়েছিলে বাজারের মধ্যে ? কথা বলতে বলতে কবরস্তানের ভেতর ঢুকে গেলাম। প্রচন্ড এক আওয়াজে কবরস্তান প্রকম্পিত হয়ে উঠলো।চলবে.......।
বিষয়: সাহিত্য
১৪৮৮ বার পঠিত, ২৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ সবসময় সাথে থাকার জন্য।
দোয়া করবেন যাতে মজা করে লিখতে পারি।
গ্রামের বাড়িতে গেলে আমরাও এরকম ঘটনা শুনতাম! আমাদের কখনো ঘটেনি শুকরিয়া!
এখনো কি হয় আপনার সাথে? ভাবী জানেন? আপনাদের বাবুটাকে খুব সযত্নে রাখবেন! দোআ রইলো!
ধন্যবাদ
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন