***** জীন-পরীদের রাজ্যে (ক) *****
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ০৪ অক্টোবর, ২০১৫, ০৩:৪৭:০৭ দুপুর
(ক)
জন্মের পর থেকেই জীন পরীদের সাথে আমার একটা ভালো সম্পর্ক। জন্মের পরপরই তারা আমাকে তুলে নিতে চেয়েছিলো,পারেনি । পারেনি একমাত্র আমার মায়ের কারনে। আমার জন্ম হয় নানার বাড়ীতে। আমাদের দেশে একটা রীতি আছে, প্রথম সন্তানটা মহিলারা বাপের বাড়ীতেই জন্ম দিতে চান। সম্ভবত, তার মায়ের খাদি-খেদমত নেয়ার জন্য। আমি আমার মায়ের বড় সন্তান। তাই আমাকে পেটে নিয়ে আমার মা তার বাপের বাড়ীতে চলে গেলেন।
যে ঘরে আমার জন্ম হয় সে ঘরটি ছিলো প্রায় দশ ইঞ্চি পুরো মাটির দেয়ালের একটি ঘর। এ ঘরে আমার নানু থাকেন। নানুর খাটের অন্য পাশে আমার মাকে মাটিতে বিচানা করে দেয়া হলো। বাচ্ছা জন্ম নেয়ার জন্য নাকি মাটিই নিরাপদ। আমার মাকে ঘরের যে পাশে বিচানা করে দেয়া হয়েছে সেখানে বাহিরে থেকে সামান্য আলো বাতাস ঢুকতে পারে এরকম করে দেয়ালের মধ্যে একটা ছিদ্র করা হয়েছে। খুব বড় নয় এটি । একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের একটা হাত ছিদ্র দিয়ে সহজেই আনা নেয়া করা যাবে, সাইজটা এরকমই। রাতের বেলা ছিদ্রের মুখ ঘরের ভেতর থেকে কাপড় দিয়ে বন্দ করা হয়। দিনে কাপড় সরিয়ে আলো - বাতাসের ব্যবস্হা করা হয়। যদিও এই ঘরে দরজা জানালা দুটিই আছে, তবুও ছিদ্র নাকি থাকা ভালো। ভালো এজন্য , এদিক দিয়ে আমার মা তার মুখের থুকটুক ফেলতে পারবেন। আমাকে নিয়েতো আর যখন তখন উঠা যাবে না।
ঠিক ভরদুপুরে আমার জন্ম হলো। চমৎকার সাস্হ্য আর ধবধবে সাদা রং নিয়ে আমি জন্ম নিই। মুখটা ছিলো গোলাকার। আর কপালের এক পাশে সামান্য লাল দাগ। অনেকেই বলে থাকেন এটা নাকি সৈয়দ বংশের চিহ্ন। ধবধবে সাদার মধ্যে ঠোটের ডান পাশেই নিঘুর কালো এক তিলক ফুটে আছে,যা আমার চেহারাটাকে আরো ভাসিয়ে তুলেছে। দাইমা আমাকে হাতে নিয়েই বলে ফেললেন, এমন খুবসুরত সন্তান তিনি নাকি তার জীবনে দেখেন নি। ওকে দেখে রাখ,জীন-ভূত লাগতে পারে। কথাটা কানে যেতেই নানু ছুটে এসে দাইমার হাত থেকে আমাকে কেড়ে নিলেন। আয়াতুল কুরসী আর সুরা এখলাছের সাথে মনে মনে আরো কতকিছু পড়ে আমার সারা শরীরে ফুক দিলেন। আমার শরীর কেঁপে উঠে নানুর মুখ থেকে নিঃসৃত বাতাসে। আমার কেঁপে উঠা দেখে সবাই বলেন, জীন-ভূতের আচর আর লাগবে না, যা কিছু আচর ছিলো নানুর ফুক দেয়ার সাথে সাথে তা ছুটে গেছে। দেখছোনা, ছেলেটি ফুক দিতেই কিভাবে কেঁপে উঠেছে ।নিশ্চয়, কিছুটা আচর ছিলো, নতুবা এমন করে কেঁপে উঠতো না। আমার মা চোখ মেলে আমার দিকে তাকান। তার অন্তরটা ভরে যায় আমাকে দেখে। পরিতৃপ্ত চোখটা আবার বন্দ করে নেন, প্রসব বেদনার রেশ টা হজম করার জন্য।
এখনো আমার বয়স সাতদিন হয় নি।নিঝুম রাত। কারো কোন সাড়া শব্দ নেই, নেই কোন নাক ডাকার শব্দও । এ বাড়ীর মানুষগুলো রাতে ঘুমানোর পর ঘরররররর ঘরররররর করে নাক ডাকে না। নাক ডাকে না,কারণ সকলেই হেংলা- পাতলা। শরীর মোটা হলেই না কি মানুষ ঘুমে নাক ডাকে। কথাটা শতভাগ সত্য না হলেও আশি ভাগ সত্য। আশি ভাগ মোটা মানুষকে নাক ডাকাতে শুনেছি,দেখেছি । নাক ডাকার ঝামেলা নেই এই বাড়ীতে। মধ্য রাতে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এমন সময় ছিদ্রের কাছে ঘরের বাহিরে যেন কাদের হাটাচলা এবং ফিসফিসানি শুনা যাচ্ছে। শুনা মাত্রই আমার মা চোখদুটু মেলে ধরলেন। তার নাড়ি চেড়া ধন আমার গায়ে হাত দিলেন। দেখলেন , আমি ঠিক আছি। তার সিথানের কাছে সামান্য দুরে ল্যান্টনের আলো মিট মিট করে জ্বলছে। ইচ্ছে করেই তিনি আলোটা বাড়ালেন না। দেখতে চান কারা এসেছে, কি করতে চায় ।
(খ)
ওদের কথা বার্তায় মনে হচ্ছে ওরা মানুষ নয়। তবে কি ?
আগামী পর্বে.....।
বিষয়: সাহিত্য
৩১৩০ বার পঠিত, ৩৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ
একেবারে এমন জায়গায় এসে শেষ করলেন! কৌতুহল মেটানো যে দায়!
চলুক.......
চলবে ইনশা আল্লাহ।
০ তবে কি ওরা ছাত্রলীগ ?
ধন্যবাদ সব সময় সাথে থাকার লাগি।
ধন্যবাদ আমার পাতায় আসার জন্য।
দারুণ চলুক....
ধন্যবাদ।
তবু আসছেন যে কষ্ট করে তার জন্য একটুকুন ভালবাসা।
জ্বিন এবং জ্বীন, জীন সব ভুল!
জাজাকাল্লাহ ।
ইনশাআল্লাহ নিয়মিত হওয়ার চেষ্টা করছি!
মন্তব্য করতে লগইন করুন