***** মায়ের ভালবাসা (শেষ) *****
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৫:৩০:২৮ সকাল
বাসে সাধারণ মানুষের আলাপ আলোচনা শুনে জয়তরী বিবির হৃদয়টা হাহাকার করে উঠলো। কে জানে তার নাড়ি চেড়া ধন শাকিলের কি অবস্তা। টাউনে গিয়ে কোথায় খুঁজবেন শাকিলকে। সাথে ভাই আছে, বিধায় যত হাসপাতাল আছে সবগুলোতে খুঁজ নেবেন। না মিললে পরে থানায় যাবেন। বাস ছুটে চলছে টাউনের উদ্দেশ্য তার প্রতিদিনকার স্পীড দিয়েই। কিন্তু জয়তরী বিবির মনে হচ্ছে বাস চলছে না। ভাইয়ের দিকে বারবার তাকাচ্ছেন আর চোখ মুছছেন শাড়ীর আচল দিয়ে।
টাউনে সব মোড়ে মোড়ে পুলিশ আর বিডিয়ার অবস্তান নিয়েছে। দোকানপাট সবগুলোই বন্দ। কিছু উৎসুক জনতা বিক্ষিপ্তভাবে এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাড়িয়ে আছে। চোখে মুখে প্রবল আতংক আর কৌতুহল,কি হচ্ছে পরবর্তীতে। পুলিশ বেশিক্ষণ কাওকে দাড়াতে দিচ্ছেনা। পুলিশ আর বিডিয়ারের তৎপরতায় একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব।জয়তরী বিবি ভেবে পেলেন না কার সাথে যুদ্ধ হচ্ছে। তার মনে পড়ে, এরকম অবস্তা তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দেখেছিলেন। তখন অবশ্য পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধ ছিলো। আজ কার সাথে যুদ্ধ হচ্ছে ? যার সাথেই যুদ্ধ হোক এগুলো তার ভাবার সময় নেই। তিনি তার ছেলের খুঁজে এসেছেন তাই তার ভাইকে নিয়ে সোজা সরকারী হাসপাতালে।
হাসপাতালে গিয়ে তার ছেলের নাম ও জন্ম তারিখ বলে জানতে চাইলেন এই নামে কেও হাসপাতালে আছে কি না। জানতে পারলেন এই নামের একজন ছাত্র হাসপাতালের একটি বেডে পুলিশের হেফাযতে চিকিৎসাধীন আছে। আলহামদুলিল্লাহ বলে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করলেন যে তার ছেলে বেঁচে আছে। গতকাল মাগরিবের পর থেকে তিনি কত না কিছু চিন্তা করছেন। বাসের লোকজনের আলাপ আলোচনায় তার দম বন্দ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিলল। বলে কি না তিন চারজন ছাত্র মারা গেছে। তার ছেলের ভাগ্য নিয়ে তিনি কত না পেরেশান হয়েছিলেন।
তিনি ছুটে চললেন তার ছেলের ওয়ার্ডের দিকে। ওয়ার্ডে আরো অনেক আহত ছাত্র। অনেকেরই হাত পায়ে শিকল পরা। ওয়ার্ডের চারিদিকে পুলিশ। ওয়ার্ডে ঢুকতে চাইলে একজন পুলিশ এসে বাধা দিলেন। তিনি তার ছেলের কথা বললে, পুলিশ একজন অফিসারের সাথে কথা বলে জয়তরী বিবিকে নিয়ে শাকিলের কাছে গেলেন। তার ছেলের পায়ে বেডের সাথে শিকল পরিয়ে রাখা হয়েছে। তার ছেলের শরীরে বিভিন্ন স্হানে বেন্ডেজ বাঁধা। শাকিল ঘুমিয়ে আছে। মুখের দিকে তাকিয়ে তার মনটা বেদনায় নীল হয়ে গেলো। তিনি আর নিজেকে সংযত রাখতে পারলেন না। তার দু'চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো। তার ছেলের কপালে চুমো দিলেন,মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।
কেন তার ছেলের এই অবস্তা আর কেনই বা তার ছেলেকে পুলিশ শিকল পরিয়ে রেখেছে,তিনি ভেবে পেলেন না ।অন্যদের মারামারি দেখলে যে ছেলে ভয়ে তার মায়ের কাছে ছুটে আসত, এখনো একটা মুরগী যে ছেলে জবাই করতে সাহস করেনা, সেই ছেলের শরীরে ব্যান্ডেজ ! গ্রামের সবচেয়ে ভালো ও ভদ্র হিসাবে যে ছেলে পরিচিত, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যে মসজিদে গিয়ে আদায় করে, প্রতিদিন কাক ডাকা ভোরে মায়ের সাথে যে কুরআন তেলাওয়াত করে , গ্রামের অসহায় মানুষগুলোর জন্য যার হৃদয় কাঁদে, গ্রামের ছেলেদের যে উপদেশ দেয় ভালো মানুষ হওয়ার, তার সেই ছেলের পায়ে পুলিশের শিকল !!!
তার হৃদয়ের সমস্ত হাহাকার চোখের নালা দিয়ে নোনা পানি হয়ে গড়িয়ে পড়লো।
সমাপ্ত
বিষয়: সাহিত্য
১৪৬১ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ চমৎকার মন্তব্যের জন্য।
তবে আমি জানি যে আমি গল্পকার নই।
লিখেছিলাম সময় ক্ষেপনের জন্য।
ধন্যবাদ প্রবাসী।
গল্প ভাল লেগেছে ধন্যবাদ ভাইয়া ।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন