*****মায়ের ভালবাসা (পর্ব দুই)*****
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৭:৫২:৩৮ সন্ধ্যা
একজন ছাত্র মারা গেছে শুনে জয়তরী বিবির বুকটা ছাৎ করে উঠলো। অজানা আশংকায় তার যেন দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম ।তিনি কোনমতে নিজেকে সামলে নিয়ে হাসানের বাবার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে , এখনো হাসানের বাবা ফিরেন নি।কখন ফিরবেন তারও কোন ইয়ত্যা নেই।শেষমেশ ফজরের নামাজ পড়ে আবার আসবেন সে রকম নিয়াত করে জয়তরী বিবি নিজ বাড়ীতে ফিরলেন। সারা রাত একফোটাও ঘুমাতে পারেন নি। চোখদুটু বন্ধ করলেই শাকিলের মুখখানা তার মনের আয়নায় ভেসে উঠে। নানা রকম দুশ্চিন্তায় তার রাত কাটতে লাগলো। তিনি পেরেশানি দুর করার জন্য তিনি নফল নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, তাসবীহ তাহলিল ও জিকির আজকার করতে লাগলেন। অঝর ধারায় কেঁদেকুটে আল্লাহর দরবারে তার সন্তানের জন্য দোয়া করে রাত কাটালেন।
ফজরের নামাজ আদায় করে তিনি আবার হাসানের বাড়ীর উদ্দেশ্যে বের হলেন। অজানা আশংকায় তার পা দুটু যেন সামনে চলতে চাচ্ছেনা।না জানি কি খবর দেন হাসানের বাবা। পনেরো মিনিটের রাস্তা পনেরো ঘন্টার সময়ে পরিনত হয়েছে আজ। গায়ের সারা শক্তি দিয়ে এলোমেলো পা ফেলে এক সময়ে জয়তরী বিবি হাসানের বাড়ীতে এসে পৌছলেন। জানতে পারলেন,গত রাতে হাসানের বাবা বাড়ীতে ফিরেন নি। আর তারাও নতুন কোন খবর জানেন না। এবার জয়তরী বিবি নিজেই টাউনে যাবার মনস্ত করলেন। বাড়ীতে ফিরে এসে দেখলেন তার এক ভাই এসে বসে আছেন। তিনি জানতে পেরেছেন কলেজে মারামারির কথা,তাই তিনি শাকিলের খবর নিতে এসেছেন । ভাইকে জড়িয়ে জয়তরী বিবি কান্নায় ভেংগে পড়লেন। ভাই,বোনকে শান্তনা দিয়ে বললেন, তুমি চিন্তা করোনা, আমি টাউনে গিয়ে খবর নিয়ে আসছি, ইনশা আল্লাহ আমাদের শাকিলের কিছু হবেনা। তিনিও যাবেন টাউনে, নতুবা শাকিলের চিন্তায় তিনি মারা যাবেন। জয়তরী বিবির এ কথায় ভাই বোন মিলে দু'জনেই টাউনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন।
গ্রামের রাস্তার মাথায় এসে তারা দুজনে দাড়িয়েছেন। গ্রামের রাস্তার মাথাটা এখানে টাউনে যাবার বাস চলাচলের পিছঢালা বড় রাস্তার সাথে এসে মিশেছে। এখান থেকেই তারা বাস ধরবেন । টাউনে যেতে ঘন্টাখানেক সময় লাগবে। পনেরো বিশ মিনিট পরপর বাস আসে। তারা অনেক্ষণ থেকে বাসের অপেক্ষা করছেন। কিন্তু কোন বাসের দেখা মিলছেনা । আজ কি তাহলে কোন বাস আসা যাইয়া করবেনা। বাস না মিললে তারা কিভাবে টাউনে যাবেন , এই চিন্তা এখন তাদের পেয়ে বসেছে।
আমরা কি তাহলে আজ টাউনে যেতে পারবোনা।
বোনের এমন প্রশ্নে ভাই জবাব দিলেন, আরেকটু অপেক্ষা করি। নিশ্চয় বাসটাস আসবে।
ভাইয়ের জবাব শুনে জয়তরী বিবি আশাবাদি হলেন।
অবশেষে একটি বাসের দেখা মিললো। বাসের বাড়া আন দ্বিগুন। কেন ভাড়া বেশি দিতে হবে বা আজ বাস কেন এত দেরী করে আসছে। আর চলাচলই বা এত কম কেন ?
টাউনে ছাত্ররা হরতাল ডেকেছে। গতকাল কলেজে মারামারি করে তিন/চারজন ছাত্র মারা গেছে । তাই আজ কোন বাস চলাচল করছেনা।
চলবে....
বিষয়: বিবিধ
১৩৪৬ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চালিয়ে জান।
সাথে আছি,,,,ইনশাআল্লাহ।
চলবে ইনশা আল্লাহ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন