*****মায়ের ভালোবাসা (পর্ব এক)*****
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৭:১৯:৩৪ সন্ধ্যা
সুর্য্যটা আস্তে আস্তে পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ছে। দুরের পাখিরা ঝাক বেঁধে একে একে নীড়ে ফিরছে। আকাশে এক পশলা কালো মেঘ সাঁতার কাটছে। পশ্চিমের পুরোটা আকাশ জুড়ে লাল আলোর বন্যা । উপরে কালো মেঘ আর হেলে পড়া লাল আলোর বন্যায় কেমন যেন একটা বিদঘুটে পরিবেশ তৈরী করেছে। গোধুলী লগ্নটা এমনিতেই শাকিলের মায়ের ভালো লাগেনা। তার উপর আজকের এই বিদঘুটে পরিবেশ তাকে আরো অস্তির করে তুলছে। এতক্ষণে তার শাকিল বাড়িতে আসার কথা, কিন্তু এখনো আসছেনা ।
গ্রামের মসজিদ থেকে মাগরিবের আজান ভেসে আসছে। আগে থেকেই ওজু করে তাসবীহ হাতে নিয়ে ঘরের বারান্দায় একটা চেয়ারে বসে তাসবীহ টিপছেন আর শাকিলের জন্য অপেক্ষা করছেন জয়তরী বিবি। মসজিদের মিনার থেকে যখন "হাইয়্যা আলাছ ছলাহ (নামাজের দিকে আসো)-হাইয়্যা আলাল ফালাহ (কল্যানের দিকে আসো)" ভেসে আসলো তখন তিনি উঠে গেলেন। ঘরে ঢুকে নামাজের জন্য সংরক্ষিত ছোট্ট চৌকিটায় জায়নামাজ বিচিয়ে মাগরিবের নামাজ শুরু করলেন। একে একে ফজর তিন রাকাত, সুন্নাত দুই রাকাত ও নফল দুই রাকাত আদায় করে কিছু তাসবীহ তাহলীল ও দুরোদ পাঠ করে আল্লাহর কাছে কেঁদে কুটে তার সন্তানের মংগল কামনায় দোয়া করলেন। এটা জয়তরী বিবির নিত্য দিনের অভ্যাস ; ফরজের পাশাপাশি সুন্নাত,নফল সব আদায় করে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে শাকিলের জন্য মংগল কামনা করা।
নামাজ ও দোয়া শেষ করে ঘরের বাহিরে আসলেন, তার শাকিল আসছে কি না । না, এখনো শাকিল ফেরেনি। কি ব্যাপার, তার শাকিলতো এত দেরি করার কথা না। প্রতিদিন মাগরিবের আগেই শাকিল ঘরে ফেরে। কাপড় পাল্টিয়ে ওজু করে মসজিদে যায়,মাগরিবের নামাজ আদায় করে এসে খাওয়া দাওয়া করে। অথচ আজ এখনো ফেরছেনা। কেন ফেরছেনা ? কোন সমস্যা টমস্যা হয়নিতো ? এগুলো চিন্তা করছেন , একবার ঘরে ঢুকছেন আর একবার ঘর থেকে বের হয়ে পথের পানে তাকাচ্ছেন। হয়তো কোন কারনে দেরি হচ্ছে , এই চলে আসবে বলে মনকে শান্তনা দিচ্ছেন। তবুও মন মানেনা। তাই ঘর বাহির, বাহির ঘর পায়চারী করছেন আর পথের দিকে বারবার তাকাচ্ছেন। রাতের অন্ধকারে পথটা পরিস্কার দেখা যাচ্ছেনা,তাই দাওয়ায় একটা হারিকেন জ্বালিয়ে রেখেছেন।
মসজিদ থেকে এশার আজানের সুর ভেসে এলো। এতক্ষণ শাকিলের পথপানে চেয়ে অপেক্ষায় ছিলেন বলে সময় গড়াচ্ছে তার খেয়াল ছিলোনা। এখন এশার আজান শুনে তার মনটা আছানক কি জানি করে উঠলো। এত রাত হলো, এশার আজান হচ্ছে অথচ তার ছেলে এখনো ঘরে ফেরেনি । মাকে না জানিয়ে শাকিল কোনদিন এতটা রাত বাহিরে থাকেনি। এশার নামাজটা পড়ে ওগ্রামের আব্দুর রবের ছেলে হাসান, শাকিলের বন্ধু এবং কলেজে একসাথে পড়ে তার বাড়িতে গিয়ে শাকিলের একটু খোজ খবর নিয়ে আসবেন বলে মনে মনে স্তির করলেন।
কোন মতে নামাজটা আদায় করলেন। আজ আর দোয়াতে বেশি সময় নিলেন না, পাছে আবার রাত অনেক হয়ে যায়। বারান্ধা থেকে হ্যারিকেন হাতে নিয়ে পাশের ঘরের এগারো বছরের এক ছেলেকে সাথে নিয়ে ছুটলেন হাসানের বাড়ির উদ্দেশ্যে। হাসানের বাড়িতে যেতে পনেরো মিনিট সময় লাগলো। বাড়িতে ঢুকেই দেখলেন, হাসানের মা কাঁদছেন , আর তাকে ঘিরে অন্যরা শান্তনা দিচ্ছে। হাসানের বাড়ি থেকে জানতে পারলেন, কলেজে মারামারি হয়েছে এবং একজন ছাত্র না কি মারাও গিয়েছে। হাসানের বাবা সন্ধায় খবর জানতে পেরে টাউনে গেছেন , এখনো ফিরেন নি।
একজন ছাত্র মারা গেছে শুনে জয়তরী বিবির বুকটা ছাৎ করে উঠলো। (চলবে)
বিষয়: সাহিত্য
১৪৪২ বার পঠিত, ৩৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কলেজের মারামারিতে কি ঘটেছে সেই অপেক্ষায় আছি
ভালো লাগলো
চালিয়ে জান।
আপনার মন্তব্যে সেটা মনে হয়েছে।
ধন্যবাদ।
চলবে ইনশা আল্লাহ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন