বয়ান অরুচিকর Cheer Cheer Cheer

লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ৩১ আগস্ট, ২০১৫, ০১:০৩:৪৬ দুপুর



সুর্য্য জাগার আগে ঘুম থেকে জেগে উঠা আমার আর হয়ে উঠেনি। সেই আট টা ন'টায় বিছানা ছাড়া নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিনত হয়েছে।যার কারনে ভোরের শরীর জোড়ানো মন ভুলানো নির্মল হাওয়া আমার আর খাওয়া হয়না। খাওয়া হয়না আমার মায়ের হাতের করা চালের রুটি, আলু ভাজি কিংবা ডিম বাজি। কিন্তু প্রতিদিন বাবা মায়ের বকাঝকা খেতে হয়। বকাঝকা খেতে খেতে আমার কান দুটু ভারি হয়ে গেছে। তাই এখন আর বকাঝকা আমার কানের মধ্য দিয়ে যায় না। বরঞ্চ সকালের বকাঝকা না হলে আমার যেন ভালমত ঘুমই হয় না, অনেকটা রবীন্দ্র সংগীতের মত।

আমার বাবা মসজিদে মোয়াজ্জিনের ফজরের আজান দেয়ার আগে ঘুম থেকে জেগে উঠেন। টিভওয়েলে চাপাচাপি করে ওজু করেন। মসজিদের পানে যাত্রার আগে মাকে জাগিয়ে দেন । আমাকেও দু'এক ডাক দেন এবং মাকে বলে যান, আমাকে যেন মা জাগিয়ে দেন। আমি যেন উঠে নামাজ কালাম পড়ি। এই বলার মধ্যেই শেষ। মা আমাকে ডাকলে আমি উঠে গিয়ে প্রশ্রাব করে আবার শুয়ে পড়ি। মা ভাবেন,হয়তো আমি নামাজ পড়ে শুয়েছি।কিছুক্ষণ পর বাবা মসজিদ থেকে ফিরে এলে দু'জনে সুর দিয়ে কুরআন তেলাওয়াত করেন। এক সময় তাদের নিজেদের জীবনের গুনাহের মাফি চেয়ে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে দোয়া করেন। দোয়া করেন আমাদের জন্যও। কিছু বকাঝকা আর আর নামাজি বান্দাহ হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করে তাদের দায়িত্ব শেষ করেন। কোনদিন কাছে ডেকে নিয়ে, মাথায় হাত দিয়ে,কপালে চুমু দিয়ে আদর করে বুঝিয়ে বলেন নি কেন আমাকে সুর্য্য উঠার আগে জাগতে হবে। কেন নামাজ পড়তে হবে। নামাজ পড়া না পড়ার ভালো মন্দ দিক আমাকে বুঝিয়ে দেন নি।

প্রাইমারী স্কুলে যখন পড়ি তখন চমৎকার একটা কবিতা পড়েছি। "আমি হব সকাল বেলার পাখি" কবিতাটা এখনো ভালো লাগে। মাস্টার মশাই খুব ভালোমত মুখস্ত করিয়েছেন কবিতাটা। পরীক্ষায় খাতায় লিখতে পারলেই যে দশ মার্ক। ভালোমত মুখস্ত করেছিলাম বলে আজো পুরো কবিতা মনে আছে। মুখস্ত করেছি,পরীক্ষায় খাতায় লিখেছি, এই যা। মাস্টার মশাই বুঝিয়ে বলেন নি,এই কবিতার মধ্যে কি বলা হয়েছে। তাইতো আমার বেলায় হয়েছে উল্টো ;কবিতায় সুর্য্য উঠার আগে ছেলে উঠে যাওয়ায় মা রাগ করছেন, আর আমি মা উঠার কারনে রাগ করছি। তবুও ভালো, এধরনের কিছু কবিতা আগেকার দিনে পাঠ্য বইয়ে ছিলো,যা এখন নেই।

যখন কালমা কুরআন শিখার জন্য মক্তবে যেতাম তখন হুজুর সুর দিয়ে কুরআন পড়াতেন। হুজুর কালমা শিখিয়েছেন,সুরা কেরাত মুখস্ত করিয়েছেন,কুরআন তেলাওয়াত করতে শিখিয়েছেন,নামাজ শিখিয়েছেন। কিন্তু হুজুর কোনদিন বলেন নি, "লা ইলাহা ইল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ" তার মধ্যে কি আছে। এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করলে পরে আমাকে কোন ধরনের মানুষ হতে হবে। এটাকে বিশ্বাস করে বুকে ধারণ করলে দুনিয়ার সবকিছু থেকে অমুখাপেক্ষী হতে হয় এই শিক্ষা হুজুর আমাকে দেন নি। নামাজ পড়া শিখিয়েছেন,কিন্তু কেন নামাজ পড়তে হবে তা হুজুর আমাকে বলেন নি। সুর দিয়ে কুরআন তেলাওয়াত করতে শিখিয়েছেন,কিন্তু এই কুরআনে কি আছে হুজুর আমাকে বলেন নি। আল্লাহ তায়ালা এই কুরআন কেন নাজিল করেছেন,কিংবা অন্তত সুরা ফাতেহায় কি বলা হয়েছে, হুজুর একটি দিনও আমাকে বলেন নি। একটি আয়াত ব্যাখ্যা বিশ্লেষন করতে হুজুরকেও দেখিনি।শুধু সুর দিয়ে তেলাওয়াত করতে দেখেছি। কুরআন যে আমার জীবনের গাইড লাইন,পথ চলার পাথেয় তা কোনদিন হুজুর বলেন নি। নামাজ যে আমার মুসলমান হওয়ার প্রথম পরিচয় তাও হুজুর বলেন নি। হুজুর কালমা- কুরআন , নামাজ, সবই শিখিয়েছেন, কিন্তু আমাকে মুসলমান বানানোর চেষ্টা করেন নি।

যখন কলেজে পড়ি বলা হলো, বাংলা সাহিত্য একটা রসালো জিনিষ। বাংলা সাহিত্যের শিক্ষকরাও অনেক রসিক। বাস্তবেও তাই দেখলাম। হৈমন্তি গল্প পড়ানোর সময় দেখলাম, শিক্ষকের মন রসে টইটুম্বুর। গল্পটা পড়াতে গিয়ে তিনি সব রস ঢেলে দিলেন।পারলে বাইরে থেকে আরো রস আমদানী করে ক্লাসে ঢেলে দেবেন স্যার। আর আমরাও স্যারের ঢেলে দেয়া রসের বন্যায় একেবারে ভেসে গেলাম। এক একজন গল্পের নায়ক নায়িকার চরিত্র ধারণ করলাম। স্যার তার সমস্ত রস ঢেলে দিয়ে মানব মানবীর প্রেম শিখালেন, অন্তরে ভালবাসার শিহরণ জাগিয়ে দিলেন,কিন্তু মানুষের জন্য যে প্রেম-ভালবাসা তা স্যার শিখালেন না। তাইতো ক্লাস থেকে বের হওয়ার পরই এক ছাত্রের হাতে অন্য ছাত্রকে প্রাণ দিতে দেখি।

রাজনীতি নাকি দেশের জন্য,দেশের মানুষের জন্য। রাজনীতির মাধ্যমেই নাকি দেশের সেবা করা যায়, মানুষের কল্যান করা যায়। ভর্তি হয়ে গেলাম রাজনীতিতে। হা,সত্যি কল্যান হয়। তবে সকলের না,কিছু মানুষের। কিছু মানুষ টাকা পয়সা,গাড়ি-বাড়ির মালিক, চেয়ারম্যান, এম পি মন্ত্রী বনে যায়। আর সাধারণ জনগণ থাকেন সেই তিমিরে। যে নেতার জন্য মিছিল দেই "অমুকের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র " বাস্তবে দেখি তার উল্টো। এক একজন নেতার চরিত্র পুতিদুর্গন্ধময়। আমাদের নেতাদের শরীর থেকে প্রস্ফুটিত গোলাপের সৌরভ ছড়ায় না, ছড়ায় সিগারেট,গাজা, হেরোইন আর মদের বুদবুদে গন্ধ। সবচেয়ে বড় দুর্নীতিবাজ মানুষটি মাইকের সামনে দাড়িয়ে ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে বয়ান রাখে। অনেক সময় মাইকের ভাড়াটা পর্যন্ত আদায় করেনা। শহীদ মিনার পবিত্র স্হান বলে জুতা নিয়ে উঠা নিষিদ্ধ করে, কিন্তু রাতের আঁধারে শহীদ মিনারের বেদিতে গরু ছাগলের মত প্রশ্রাব করতে ওদের বিবেক প্রতিবাদি হয় না।

দেশের মানুষের কথা বলে, দেশের কথা বলে কিছু মানুষ ঠিকই মন্ত্রী-এম পি বনে যায় কিন্তু এদেশের ভূখা নাংগা মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না।

Cheer Cheer Cheer

বিষয়: বিবিধ

১৩৩৪ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

338810
৩১ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০১:২৫
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : ভালো লাগলো
০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০১:৪৩
280521
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : ধন্যবাদ।
338814
৩১ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০২:০২
আবু জান্নাত লিখেছেন : শুধু শুধু মাষ্টার মশাই আর মক্তবের হুজুরের দোষ দেন কেন?
ঐ শিশু বয়সে কি আপনার ঐগুলো বুঝার মত জ্ঞান ছিল?
বয়সের সাথে সাথে অবশ্যই শিখেছেন। তাই না!
০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০১:৪৬
280522
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : উনাদের দোষ দিচ্ছিনা, তবে বাস্তবতা এটাই। আর শিশুকালে মগজে যা ঢুকানো যায় তা কিন্তু কাজে লাগে ।
338816
৩১ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০২:০৯
হতভাগা লিখেছেন : আগে তো মোবাইল ফোন ছিলো না , ল্যাপটপ , ইন্টারনেটও না । এখন ইন্টারনেট , মোবাইল ফোনে সব যোগাযোগ হয় । এগুলো কি বাবা মা শিখিয়ে দিয়েছে বা শিক্ষকেরা শিখিয়ে দিয়েছে ?

সেগুলো রপ্ত করেছেন কিভাবে ?

সব কিছু কি বাবা মা বা শিক্ষকদেরই শিখিয়ে পড়িয়ে দিতে হবে ? নিজের মস্তিষ্ককে কি অব্যবহার্য্যই রাখতে চান ?

আরবীর বাংলা অনুবাদ আগের চেয়ে এখন অনেক বেশী সহজলভ্য। এখন তো সুযোগ হয়েছে । এভেইল না করার কারণ কি ?

ঠিকই তো অন্যসব একটিভিটি বাবা মা বা শিক্ষকেরা না দেখিয়ে দিলেও ভালই হস্তগত করেছেন ।
০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০১:৫২
280524
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : বাবা মা আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে যা শিক্ষা দিবে তা বুড়া হলেও কাজে লাগে।

নবী করিম সাঃ এজন্যই ৭ বছর বয়স থেকে সন্তানদের নামাজের জন্য উৎসাহিত করতে বলেছেন।

শিক্ষকদের যদি প্রয়োজন না হয় তবে এই ছোট্ট বয়সে কি দরকার স্কুলে যাবার।

338835
৩১ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০৩:৪০
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..


ভালো লিখেছেন, চিল্তার খোরাক আছে

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০১:৫৩
280525
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : শোকরিয়া।
338836
৩১ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০৩:৪১
নাবিক লিখেছেন : ভালো বলেছেন, ধন্যবাদ।
০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০১:৫৩
280526
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : ধন্যবাদ।
338861
৩১ আগস্ট ২০১৫ বিকাল ০৫:০৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
আমরা নিজেরাই যে এই অবস্থা সৃষ্টি করেছি।
০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০১:৫৪
280527
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : সকলেরই উচিৎ এই অবস্তা থেকে বের হওয়া।
338882
৩১ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৩২
আবু জারীর লিখেছেন : বাচ্চাদের বুঝিয়ে বললে তারা গ্রহণ করে কিন্তু খুব কম বাবা মাই সন্তানদের বুঝিয়ে বলেন।
ধন্যবাদ।
০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০১:৫৭
280528
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : শিশুকালের শিক্ষাই আসল শিক্ষা। অথচ এই সময়টা বাবা মা অবহেলা করেন।
339009
০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:১৩
এ,এস,ওসমান লিখেছেন : সবই যদি অন্যজন শিখিয়ে দেয় তাহলে নিজে হতে কি শিখবো???
০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০২:০০
280530
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : তবে মৌলিক বিষয়গুলো অবশ্যই ছোট কালে শিখে নিলে ভালো।
339122
০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০১:০৯
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : ধন্যবাদ জনাব Good Luck Roseতবে অনেক কিছু বয়সের সাথে সাথে শিখতে হয়
০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০২:০১
280531
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : কিন্তু মৌলিক বিষয়গুলো...।
১০
339125
০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০২:০২
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : কেন জানি মনে হচ্ছে পুরো পোস্ট না পড়ে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। ধারণা ভুলও হতে পারে। তবে মন্তব্যের ধরণ দেখে.....।
১১
339187
০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৪:০৯
কুয়েত থেকে লিখেছেন : আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে? আসলে সচেতনতা সকলরেই ক্ষেত্রে প্রয়োজন। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ
০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৪:৫২
280597
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
১২
347948
৩১ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০১:১১
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : আমাদের শৈশবের হুজুরদের জ্ঞানের এই অবস্থার জন্যই তো বলা হয়েছে, মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত!
ধন্যবাদ। অনেক সুন্দরভাবে অনেক বিষয় একসাথে তুলে ধরেছেন।
৩১ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০৩:৩৮
288889
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : শুকরিয়া আবারো।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File