গল্প : যুবক পুরুষ (পর্ব তিন)

লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ২৮ আগস্ট, ২০১৫, ০১:৩২:০৩ দুপুর



আমার কথায় সে চোখ মেলে তাকালো। বললো, আমি ভয়ে কাঁদছিনা। আমি কাঁদছি এজন্য যে, আজ তোমরা আমাকে দিয়ে এমন কিছু কাজ করিয়ে নেবে যা আমার ধর্মে সম্পুর্ণ নিষিদ্ধ। আমার আল্লাহ আমাকে হয়তো এজন্য পাকড়াও করবেন না,যেহেতু তোমাদের এই ঘৃন্য কাজে আমার সামান্যতম সায় নেই। কিন্তু যে পৌরুষত্ব আমি আমার স্ত্রীর জন্য পবিত্র রেখে আসছি আজ তোমরা তা অপবিত্র করে দেবে । আমি আমার স্ত্রীর কাছে একজন পবিত্র মানুষ হিসাবে যেতে পারবো না। আমি তার কাছে যাব আরো আট দশজন অপবিত্র মানুষের মত। আমার কান্না আসছে সেই জন্য। তোমাদের জন্যতো এই কাজ কিছুই না। তোমরা আজ আমার সাথে, কাল অন্য আরেকজনের সাথে তোমাদের এই খেলা চালিয়ে যাবে।

তার এমন কথা আমার বুকে তীরের মত বিধলো। আমার বিবেকের দরজায় যেন কেও একজন কড়া আঘাত করলো। আমার টনক নড়ে উঠলো । আমার বিবেক কথা বলতে শুরু করলো। বিবেক যেন বলে উঠলো, এ আমি কি করছি। এই ধরনের কাজ করে আমি আমার মনের ইচ্ছা পূরণ করতে পারি বঠে । কিন্তু আমি এভাবে একজন মানুষকে নষ্ট করে দিতে পারিনা। যে তার সৃষ্টিকর্তার ভয়ে ভীত এবং যে তার পৌরুষত্ব একমাত্র তার স্ত্রীর জন্য বরাদ্ধ করে রেখেছে।

আমি সোফার মধ্যে বসে পড়লাম। তার মুখের দিকে তাকালাম। দেখলাম, এখনো চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। খুব মায়া হলো। শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে এলো। বান্ধবীদের বললাম, ওকে ছেড়ে দাও। আমার এমন কথায় ওরা দুজনে মুখ চাওয়া চাওয়ী করলো। আমি আবার বললাম, ওকে ছেড়ে দাও। এবার আমার কথায় একটু জোর ছিলো। একজন গিয়ে তার হাত পায়ের বাধন খুলে দিলো। সে চলে যেতে উদ্যত হলে বললাম, আজকের দিনের এই ঘটনার জন্য আমরা দুঃখীত, আমাদের ক্ষমা করে দিবেন। আর আমি চাইনা, এই ঘটনার জানাজানি হোক। সে একবার আমার মুখের দিকে তাকিয়েই বেরিয়ে গেল।

সেইদিন থেকে আমার মনের মাঝে একটা ঝড় বইতে শুরু করেছে। প্রথমত, তার ধর্ম নিয়ে মনের মধ্যে নানান প্রশ্ন উঁকিঝুকি দিতে লাগলো। যে ধর্ম একজন মানুষকে এই পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। যে ধর্ম মানুষের এমন উন্নত চরিত্র গড়ে দিতে পারে। যে ধর্ম তার সৃষ্টিকর্তার প্রতি এতটা ভয় ও বিশ্বাস তৈরী করে দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, তার প্রতি ভালবাসা,শ্রদ্ধা ও ভরসা সৃষ্টি হলো। এধরনের একজন পুরুষের উপরইতো শুধু ভরসা করা যায়, যে জানেনা তার স্ত্রী কে হবে, অথচ স্ত্রীর জন্য সে পবিত্র থাকার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। মনে মনে বললাম, তাকেই আমার চাই।

শুরু হলো তার ধর্ম ইসলাম নিয়ে পড়াশুনা করা। মনের মাঝে যত প্রশ্ন আসে তাকে ছোট ছোট করে করতে লাগলাম। সে যথাসম্ভব উত্তর দিতে লাগলো। সে যেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনা সেটার জন্য সময় নেয় এবং দু'চারদিন পর সেই প্রশ্নের সুন্দর জবাব দেয়। সে কোন গোজামিলের আশ্রয় নেয় না। এটা আমার কাছে আরো একটা বিস্বয় মনে হলো। সাধারণত আমরা সকলেই পারি বা না পারি জোড়াতালি দিয়ে একটা জবাব দেয়ার চেষ্টা করি। পাছে আবার আমি জানিনা এটা প্রকাশ হয়ে পড়ে, এই ভয়ে। কিন্তু তার মাঝে এরকম কোন লক্ষণ দেখলাম না। সে তার সম্পূর্ণ বিপরীত।

একবার আমরা সহকর্মীরা সকলে মিলে সমুদ্র পাড়ে বেড়াতে গেলাম। সে প্রথমে যেতে চায় নি আমাদের সাথে। পরে যখন বলা হলো সে তার মত করে থাকতে পারবে তখন সে রাজি হয়। ওখানেও দেখলাম,সে যতটা সম্ভব মেয়েদের এড়িয়ে চলছে। যেদিকে মেয়ে ও ছেলেরা অর্ধ উলংগ হয়ে সাগরের নোনা পানিতে শরীর ভাসিয়ে খেলা করছে সে আছে তার বিপরীত দিকে।

আমার মনে আবার একটা কু-বাসনা জেগে উঠলো।

(চলবে)

বিষয়: সাহিত্য

১২২৭ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

338269
২৮ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০১:৫৯
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : ভালো লাগলো
২৯ আগস্ট ২০১৫ রাত ০৩:০১
279833
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : ধন্যবাদ।
338272
২৮ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০২:৩৪
হতভাগা লিখেছেন : মেয়ে সঙ্গ কিছুতেই এড়াতে পারছে না । বান্ধবীর রিক্যুয়েস্ট একসেপ্ট করে নিচ্ছেই বান্ধবীর চরিত্র বুঝা সত্ত্বেও ।
২৯ আগস্ট ২০১৫ রাত ০৩:০২
279834
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : ওখানেও আরো যুবকেরা কাজ করতো।
২৯ আগস্ট ২০১৫ সকাল ১০:২৪
279859
হতভাগা লিখেছেন : ডিফারেন্ট তো কিছুই মনে হচ্ছে না , সেই তো নারীদের সাথে বিচে গেল ।

এধরনের কাজে বাঁধা দেওয়া উচিত ছিল বা নুন্যতম পক্ষে না যাওয়াই উচিত ছিল । কিন্তু ঠিকই গেল , বোঝা কি যাচ্ছে যে সে এসব জনসম্মুখে স্বল্প পোশাক পড়ে থাকাদের পছন্দ করে না ?
২৯ আগস্ট ২০১৫ বিকাল ০৫:৫০
279916
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : অনেক সময় কাজের উন্নতির কৌশল হিসেবে অনেক কিছুই করতে হয় তবে শেয়া শালীন ভাবে ও করা যায়
৩১ আগস্ট ২০১৫ বিকাল ০৫:৫১
280247
হতভাগা লিখেছেন :
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : অনেক সময় কাজের উন্নতির কৌশল হিসেবে অনেক কিছুই করতে হয় তবে শেয়া শালীন ভাবে ও করা যায়


পুরাই ''আমি কলা খাই না'' স্টাইল
338276
২৮ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০৩:৪০
আব্দুল মান্নান মুন্সী লিখেছেন : হাশরের সেই কঠিন মূহ্বর্তে সেই যুবকই আল্লাহর আরশে আজীমের ছায়াতলে পানাহ পাবেন যে যুবক তার সতীত্ব রক্ষা করতে পেরেছেন....,গল্পটি মজার হবে এই পর্বেই মনে হচ্ছে.... অনেক ধন্যবাদ ভাই।
২৯ আগস্ট ২০১৫ রাত ০৩:০৩
279835
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : চেষ্টা করছি। শুকরিয়া
338308
২৮ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫৪
নাবিক লিখেছেন : ভালোই লাগছে...
২৯ আগস্ট ২০১৫ রাত ০৩:০৩
279836
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : খুশি হলাম।
338332
২৮ আগস্ট ২০১৫ রাত ১১:২১
আফরা লিখেছেন : গল্পটা ভালই লাগছে তবে গতানুগতিক মনে হচ্ছে নতুত্ব নেই । ধন্যবাদ ।
২৯ আগস্ট ২০১৫ রাত ০৩:০৫
279837
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : আমি যে কোন গল্পকার নই। তবুও আপনাদের ভালো লাগছে যেনে খুশি হলাম।
338338
২৯ আগস্ট ২০১৫ রাত ০১:১৯
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ভাল লাগছে.. চলতে থাকুক, ধন্যবাদ
২৯ আগস্ট ২০১৫ রাত ০৩:০৫
279838
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : শুকরিয়া। আগামি পর্বে শেষ হচ্ছে।
338419
২৯ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০৩:১৩
আবু জান্নাত লিখেছেন : ভালো লাগছে, চালিয়ে যান, সাথে থাকবো ইন শা আল্লাহ
২৯ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৩৫
279931
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : চালিয়ে যাব ইনশা আল্লাহ। ধন্যবাদ
338442
২৯ আগস্ট ২০১৫ বিকাল ০৫:৫০
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : ভালো লাগলো ,চালিয়ে যান
২৯ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৩৫
279932
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : হুম।
339382
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:১৭
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু! আগামী পর্বের অপেক্ষা.......।
০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:৩০
280746
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : ইতিমধ্যে দিয়েছি যে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File