গল্প: যুবক পুরুষ (পর্ব এক)
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ১৯ আগস্ট, ২০১৫, ১০:৩৪:৫৪ রাত
পয়লা দিনই ওর চাকরীটা নট করে দিতাম।যদি চাকরী নট আর ইয়েস করার ক্ষমতা আমার হাতে থাকতো। তবে রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে আমার সারা শরীর কাঁপতে লাগলো। আমার খুব বেশি রাগ হলে হাতের কাছে যা পাই তা ছুড়ে মারি। জিনিষটা ভেংগে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লে আমি সে দিকে তাকিয়ে থাকি , আমার রাগ দমিত হয়। আর হাতের কাছে কিছু না পেলে চোখ দিয়ে পানি আসে। আমি আড়ালে গিয়ে কেঁদে চোখের পানির সাথে সবটুকুন রাগ ভাসিয়ে দিয়ে আসি। মানুষের সামনে তো আর কাঁদা যায়না। লজ্জা হয়। সেদিনও আমি তাই করেছি। যখন বুঝতে পারছি আমার চোখ দিয়ে রাগ ঝরতে শুরু করেছে আমি বাথরুমে ঢুকে রাগ ঝেড়ে ফেলে চোখ-মুখ ধুয়ে তবেই ফিরেছি। ওখানে হাতের কাছে কিছু থাকলেও ছুড়ে মারিনা। ওটা কাজের যায়গা। এটা সেটা যখন তখন ছুড়ে মেরে ভেংগে দিলে আমার চাকরীটাও যে ভেংগে যাবে সেটা বুঝার মত বয়স আমি পেরিয়েছি। তাই সাবধান।
একটা কে এফ সিতে আমরা চাকরী করি। বিশাল ফাস্ট ফুডের দোকান। বিশ থেকে ত্রিশ বছর বয়সের মধ্যে বাইশজন যুবক যুবতী দুই পর্বে কাজ করি। অবশ্য একজন চল্লিশোর্ধ মানুষ আছেন যিনি কে এফ সির পরিচালক। কাজের যায়গায় কার কি কাজ, আর কার কত বেতন সেটা নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা নেই। সকলেই বন্ধু, সহকর্মী, সহযোদ্ধা। একে অপরের পরিপুরক হিসাবে কাজ করি। তাই কাজের অবসরে সকলে মিলে আড্ডা মারতে মোটেই কার্পন্য করিনা।
সেদিন মাত্র যুবকটি চাকরীতে যোগ দিয়েছে। সকলের সাথে হাত মেলালো, শুধু বেচে বেচে মেয়েদের ছাড়া। মেয়েদের কাছে এলে একটা সুন্দর হাসি দিয়ে হ্যালো বলে সম্ভাসন জানিয়েই সরে পড়ে। সে যে মেয়েদের সাথে হাত মেলাবেনা এটা যেন অন্য মেয়েরা জানতো। তাই তারা হাত বাড়ানোর ইশপিশ করে কান্তি দিয়েছে। আমি শুধু বোকারমত করে লম্বা একটা হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। ও অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বললো, আমি মেয়েদের সাথে হাত মিলাই না। আমার মাথায় যেন বাঁজ পড়লো। কি বলে মানুষটা । বয়স কত হবে ? বড়জোড় পঁচিশ। এই বয়সের যুবকেরা মেয়েদের সাথে হাত মেলানোর জন্য পারলে একসাথে দু'হাত বাড়িয়ে দেয়। আর সে বলে হাত মেলায় না !
আমার নাম সিনথিয়া । আমি খ্রীস্টান । তবে ধর্মকর্ম খুব একটা মেনে চলিনা। আমার বয়স মাত্র একুশ। আমার গায়ের রবং ফর্সা, যা সচরাচর আমাদের দেশের মানুষের হয়ে থাকে। চেহারা-সুরতে আমি অবশ্যই অন্য মেয়েদের ইর্ষা করার মত সুন্দরী। অনেকেই মনে করে এই দেশে বুঝি কে সুন্দরী আর কে অসুন্দরী তা নিয়ে কেও ভাবেনা। আমি এটা মানিনা । যদি কেও না ভাবতো তবে সকলেই সাজুগুজু করে অন্য পুরুষের সামনে নিজকে উপস্হাপনের চেষ্টা করতো না। সকলেই নিজেকে সুন্দরী করে ফুটিয়ে তুলতে চায়। আর মেয়েদের মনের গহীনে সুন্দরের ইর্ষাটা জন্মগত ভাবে লুকিয়ে আছে। আমিও আমার থেকে বেশি সুন্দরী কাওকে দেখলে ইর্ষা করি। তবে আমি যে সুন্দরী তা নিয়ে আমার একটা গর্বও আছে। তাই সব যুবকই আমাকে চাইবে, আমার সাথে হাত মেলানোর চেষ্টা করবে, আমার শরীরের ঘ্রান নেবে, আমার রুপ-যৌবন পিয়ে তার তৃষ্ণা মেটাবে, এই বিশ্বাস আমার অনেক দিনের।
শুধু যে বিশ্বাস,তা নয়। বাস্তবতাও আমি নিরিখ করেছি। যুবকেরা আমার মোবাইল নাম্বার চায়, আমার সাথে কথা বলতে চায়, আমাকে নিয়ে একসাথে বসে রেস্টুরেন্টে খেতে চায়, আমার নরম তুলতুলে হাতে তার হাতখানা রাখতে চায়, প্রয়োজনে- অপ্রয়োজনে গায়ের সাথে ঠেসে দাড়িয়ে কথা বলে আর ভেতরে ভেতরে তার মনের ক্ষুধা মেটাতে চায়, এটা তো আমি হরহামেশা দেখি। শুধু আমি না। সকলেই এরকম করছে। এই দেশে এটা দোষের নয়। বরঞ্চ এটা না করলে তাই হবে দোষের, লজ্জার। আপনাকে নিয়ে সবাই হাসাহাসি করবে, টিটকারি দেবে। পরবর্তীতে আপনার সাথে কেও মিশতে চাইবে না। কাজের যায়গায় আমরা সকলেই এরকম। কাজের যায়গায় যে কয়জন যুবক আছে তাদের সকলেই আমার সংগটাকে উপভোগ করে। সকলেই আমার সংগ চায়।
শুধু ব্যাতিক্রম হলো সেদিন। (চলবে)
বিষয়: সাহিত্য
১৫৭৮ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শিবিরের পোলাপানদের প্রতি সুন্দরী , অহংকারী মেয়েদের একটা চরম কৌতুহল থাকে , এই কৌতুহল দেশ ছেড়ে দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে ।
সংশোধনি;-ক্ষুভে নয় ক্ষোভে হবে, দুষ নয় দোষ হবে৷ অযাচিৎ উপদেশের জন্য স্যরি৷
মন্তব্য করতে লগইন করুন