গল্প: মায়ের পালকি (পর্ব দুই)
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ০৯ আগস্ট, ২০১৫, ০৬:৫২:২৩ সন্ধ্যা
আমি যখন আস্তে আস্তে এক পা দু'পা করে হাটতে শিখছি তখনো আমার বাবা পিঠা খাওয়ানোর আয়োজন করলেন গ্রামের মানুষদের। আমার ছোট ছোট পায়ের মত করে পিঠা বানিয়েছেন আমার মা । আমার হাটা শিখার পিঠা খেয়ে গ্রামের মানুষও খুশি । সকলেই প্রাণ ভরে দোয়া করলেন আমার জন্য।
হাসি খুশি আনন্দ আর মায়া মমতার মধ্যে আমার মা'র দিন অতিবাহিত হতে লাগলো। আমিও আস্তে আস্তে করে বড় হতে লাগলাম। কিন্তু আমি ও আমার মায়ের কপালে এত সুখ সইলো না। আমার তিন বছর বয়সে বাবা মারা গেলেন।গ্রামের প্রতিটি মানুষের মুখে মুখে রটিয়ে পড়া লক্ষি ছেলের কপালে যে বাঁজ পড়লো। মা ও ছেলেকে তাড়িয়ে দেয়া হলো বাবার চল্লিশা হওয়ার আগেই।
নানা,মামুরা গরিব। তবুও দয়া করে হোক আর মহব্বতে হোক আমাকে ও আমার মাকে তাদের কাছে ঠাই দিলেন। ছ'মাস যেতে না যেতে আমার মায়ের জন্য নতুন করে বিয়ের প্রস্তাব এলো। আমার মামুদের গ্রামেরই একজন আমার মাকে বিয়ে করতে চান। স্বভাব চরিত্র খুব ভালো না। তবে আয় রোজগার ভালো। আমার মাকে না খেয়ে মরতে হবে না।তাই আমার নানা ও মামুরা সতিনের ঘরেও আমার মাকে বিয়ে দিতে রাজি হয়ে গেলেন। লোকটার কোন দাবী দাওয়া নেই। শুধুমাত্র একজন হুজুর যিনি বিয়ের খুৎবা পড়বেন আর দুজন স্বাক্ষি ও কাজি সাহেবকে খাইয়ে দিলে চলবে।চাইলে এই খাওয়ানোর টাকাও লোকটি দিতে রাজি।
আমার মা বিয়েতে মোটেও রাজি না।আমাকে রেখে তিনি কিভাবে বিয়েতে রাজি হবেন ! কিন্তু নানা ও মামুদের অসম্ভব পিড়াপীড়িতে অবশেষে তাকে রাজি হতে হলো। বলা হলো, একই গ্রামে বিয়ে হচ্ছে এতে করে যখন তখন আমার মা আমাকে দেখতে আসতে পারবে। আমাকেও আমার নানা নিয়ে যাবেন মায়ের সাথে দেখা করতে। তাই ..........।
বিয়ের দিন লোকটি একটি পালকি সাথে করে নিয়ে এসেছে। কাজি সাহেব বিয়ে পড়িয়ে দিয়েছেন। আমার মা কে পালকিতে তুলে দেয়া হলো।পালকির চারিদিকে রংগীন কাপড় দিয়ে মোড়ানো। পালকিতে উঠার সময় আমার মা অনেক কেঁদেছেন।চারজন লোক পালকি কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছে। আমার মায়ের চলে যাওয়ার সময় আমি মা মা বলে কাঁদছি আর পালকির পিঁছু পিঁছু দৌড়াচ্ছি। কিছুক্ষণ পরপর আমার মা পালকির কাপড়ের পর্দা সরিয়ে পেছন ফেরে আমার দিকে তাকাচ্ছেন। আমার নানা এসে শক্ত করে আমার একটি হাত ধরলেন। আমি আর দৌড়াতে পারলাম না।তবে নানার সাথে হাটতে লাগলাম যে দিকে আমার মায়ের পালকি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
আমার মা চলে গেলেন তার নতুন স্বামীর বাড়িতে। আমার মা কে ছাড়া আমি প্রথম ক'দিন অনেক কান্নাকাটি করেছি। পরে আস্তে আস্তে না কাঁদতে বাধ্য হয়েছি। আমার মা প্রতি সপ্তাহে দুই তিন দিন আমাকে এসে দেখে যান।ঘন্টাখানেক সময় আমার সাথে থাকেন। মাঝে মধ্যে আমার নানা আমাকে নিয়ে মায়ের সাথে দেখা করতে যান। পরম মমতায় আমার মা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন।কপালে,গালে,মাথায় চুমো খান। আমি আমার মা কে ছেড়ে আসতে চাই না।আমার নানা আমাকে টেনেহেচড়ে নিয়ে আসেন।
এভাবে যাওয়া আসার মধ্যে আমার মায়ের নতুন স্বামী একদিন বারণ করে দিলেন আমার নানাকে, আমাকে নিয়ে যেন তাদের বাড়িতে না যান।বারণ শুনে আমার নানা আমাকে নিয়ে আর ওদের বাড়ির দিকে মুখ করেন নি। আমার মা'ই আমাকে দেখতে আসেন। একদিন আমার মা আমাকে দেখতে এসেছেন। আমি ভিষন অসুস্হ্য ,জ্বরে আমার গা পুড়ে যাচ্ছে। এই অবস্তায় আমাকে রেখে আমার মা তার স্বামীর বাড়িতে যেতে চান নি।রাতে আমার কাছে থাকতেই ইরাদা করলেন।কিন্তু রাত ন'দশটার সময় মায়ের স্বামী এসে মাকে অনেক বকাঝকা শুরু করলেন। আমার মা আমার অসুস্হ্যতার কথা বলেও নিস্তার পেলেন না। আমাকে দেখতে আসা মায়ের জন্য সম্পুর্ণ নিষেধ করে দিয়ে লোকটা মাকে নিয়ে চলে গেলেন।
চলবে...........
বিষয়: সাহিত্য
১৫৮৭ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহর কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া আল্লাহ আমাদের অনেক রহম করেছেন কারন আমার জীবন টাও এরকম হতে পারত ।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ।
গল্প হলেও বেদনা বিদূর। সুন্দর পোষ্টটির জন্য শুকরিয়া।
সুন্দর লিখেছেন ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন