"আমার" সবকিছুই বড় আপন
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ৩১ মে, ২০১৫, ০৬:০৮:০৮ সন্ধ্যা
সচরাচর আমরা 'আমার' বলে অনেক কিছুর উল্লেখ করে থাকি । এই 'আমার' র মধ্যে অনেক ভালবাসা মহব্বত থাকে,প্রেম থাকে, আশা-ভরসা থাকে, স্বপ্ন থাকে, দৃঢ়তা থাকে, শক্তি-সাহস থাকে , শান্তি ও সুখ থাকে , থাকে আশ্রয় , থাকে স্বাধীনতা ।
আমার দেশ : হোকনা হতদরিদ্র জনপদ, থাকনা রাজনৈতিক হানাহানি, ক্ষমতা দখলের কামড়াকামড়ি , তবুও আমার দেশ । এই আমার দেশ বলার মধ্যে একটা স্বাধীনতা আছে , একটা নিজস্ব পতাকা আছে, আছে ভৌগলিক সীমারেখা-মাথার উপরের আকাশ আর পায়ের নিচে একখন্ড জমি ।তাইতো দুনিয়ার যে প্রান্তেই থাকি না কেন নিজের দেশের কাওকে পেলে আমার দেশের মানুষ বলে বুকে জড়িয়ে ধরি ; তখন মানুষটাই আমার কাছে বড়ি আপন হয়।দেশের সুখে আমরা হাসি- আনন্দ করি ,দেশের দুঃখে আমরা কাদি ।
আমার গ্রাম : ছোট্ট একটা গ্রাম ।বিদ্যুৎ নেই,রাস্তাঘাট নেই । গ্রামের মানুষগুলো চাষা-ভূষা। তবুও আমার গ্রাম বলার মধ্যে কি যে সুখ ।মনে হয় এই গ্রামের গাছের ছায়ায়, লতায়-পাতায় জড়ানো সকল মায়া মমতা ছড়িয়ে পড়ছে কন্ঠে । শত সুখদুঃখের সাক্ষি এই আমার গ্রাম ।কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই গ্রামের প্রতিটি ধুলিকণায় ।
আমার বাড়ি : ঝরাজীর্ণ ঘর, চাল-ছোলহীন,ঘরের ভেতর থেকে আকাশ দেখা যায়, ভোরের সোনালী আলো ছাল ভেদ করে ঘরে ঢুকে , বৃষ্টির দিনে আকাশের কান্না , ধমকা বাতাসে কড়মড় করে গৃহখানি । তবুও নিজের একটা আবাস - মাথা গোজার ঠাই ।দিনের শেষে ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীর নিয়ে সামান্য একটু আশ্রয়, সবই নিজের বাড়িতে ।
আমার বাবা-মা : আহহা । আমার বাবা, আমার মা আমার জান্নাত । আদর- স্নেহ ভালবাসা ,শ্রদ্ধা , নিরাপত্তা । আমার বাবা আমার মাথার উপরের ছায়া, মায়ের আচল আমার ভয়কাতুরে মুখের নিরাপত্তা । আমার জন্য দোয়ার দুটি দরজা ।যাদের স্নেহ আদর ভালবাসায় বুক ভরে যায় কানায় কানায় তারাইতো আমার বাবা মা ।
আমার ভাই বোন : 'ভাই বড় ধন-রক্তের বাধন' সত্যিই এই বাধনটা বড়ই অটুট । অতি সহজে এই বাধনটা ছুটেনা ।মনোমালিন্য হলেও প্রয়োজনে ভাই ই ভাইয়ের জন্য জীবন বাজি রাখে , বোনই ভাইয়ের দুঃখে চুপি চুপি কাদে । আমার ভাই বলার মধ্যে একটা সহযোগিতা , আমার বোন বলার মধ্যে একটা মধুর সম্পর্ক স্পষ্ট হয়ে উঠে ।
আমার সন্তান : আদর-স্নেহ , ভালবাসার সমষ্টির নাম সন্তান । স্বপ্ন, সম্ভাবনার নাম সন্তান ।মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যার জন্য সম্ভাবনা তৈরী করা হয় তার নাম সন্তান ।যাকে নিয়ে স্বপ্নের প্লাটফরম তৈরী করা হয় তার নাম সন্তান ।যাকে বুকে লাগালে সারাদিনের ক্লান্তি নিমিষে দুর হয়ে যায় তার নাম সন্তান । যার জন্য একজন পুরুষ বিরতিহীন পরিশ্রম করতে পারে , যার মুখ দর্শনে একজন মহিলা দশ মাসের সব কষ্ট যাতনা এমনভাবে ভুলে যেন তার কোনো যাতনাই ছিলনা , তার নাম সন্তান । তাইতো আমার সন্তান বলার মধ্যে যেন জগতের সেরা সুখ লাগে অন্তরে ।
আমার স্ত্রী : স্ত্রী সারাদিনের ক্লান্তির পর একটা প্রশান্তি । স্ত্রী একটা সুখ, একটা আনন্দ ।জীবন চলার পথের এক সহকর্মী-সহযোদ্ধা । সুখ দুঃখের সাথী, একটা প্রেরণা ।কঠিন বিপদ মুছিবতে স্ত্রী সাহস ও শক্তি । একমাত্র স্ত্রীর বেলায় ছাড়া বাকি সব যায়গায় 'আমার'র বদলে আমাদের হতে পারে ।কিন্তু স্ত্রী কখনো আমাদের হয় না, সব সময়ই আমার । একান্ত নিজের,ব্যক্তির ।তাই আমার স্ত্রী বলার মাঝে যে কর্তৃত্ব,ক্ষমতা ,মহব্বত প্রকাশ পায় বাকি কোনোকিছুতে অতটা প্রকাশ পায় না । এই একটা যায়গায় আর কারো কোনো অধিকার নেই ।
আমার রব : উপরে বর্ণিত সব 'আমার' র সাথে এই 'আমার'র কোনো তুলনা নেই, তবে একটা সম্পর্ক আছে । সম্পর্কটা হলো, উপরের সব ' আমার' এই ' আমার'র সন্তুষ্টির উপর নির্ভরশীল । আমার রব আমার উপর যদি সন্তুষ্ট না হন তবে উপরের সব ' আমার' মুল্যহীন । তাইতো আল্লাহ আমার রব যখন বলি তখন হৃদয়ে এক পরম প্রশান্তি পাই,তনু-মন সবকিছু আনন্দে দুলে উঠে ।হৃদয়ের অন্তপুর থেকে সহসাই গেয়ে উঠি
আল্লাহ আমার রব
এই রবই আমার সব
দমে দমে তনু মনে
তারই অনুভব ।
বিষয়: বিবিধ
১২৬৬ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শত বেদনার স্মৃতি বয়ে যায়
মুখে যোদ্ধার হাসি।
ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন