কেমন আছেন আল্লামা সাঈদী
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ০৫ মার্চ, ২০১৩, ০৫:১৮:৩৪ সকাল
ফাঁসির সেলে সাঈদীকে সিসি টিভিতে পর্যবেক্ষণ
১৪ গ্রাম গুড় আর ১ পিস আটার রুটি নাশতা
নিজস্ব প্রতিবেদক
তারিখ: ৫ মার্চ, ২০১৩
প্রখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে কঠোর নজরদারির মধ্যে ফাঁসির সেলে রাখা হয়েছে। ওই সেলের মধ্যেই খাওয়া দাওয়া, গোসল থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সবকিছু করছেন তিনি। তবে ২৪ ঘণ্টা তিনি কিভাবে সময় পার করছেন, সেলের বাইরে করিডোরের ওপর বসানো সিসি ক্যামেরা দিয়ে তা মনিটরিং করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত বৃহস্পতিবার দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের আদেশ দেন। সেখান থেকে তাকে সরাসরি নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেমড সেলে। এর আগে তার প্রথম শ্রেণীর মর্যাদার সব সুযোগ বাতিল করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর দেশজুড়ে শুরু হয় প্রতিবাদের ঝড়, যা গতকাল সোমবার পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। বিুব্ধ মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে। বিুব্ধ জনতাকে ঠেকাতে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে। এতে নারী, পুরুষ ও শিশু নির্মমভাবে খুন হচ্ছে। গুলিতে একের পর এক ভক্ত মারা যাওয়ার খবর পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরে ফাঁসির সেলে সাঈদী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বলে সূত্রে জানা যায়। শুধু দেশ-বিদেশে নয়, কারাগারের চার দেয়ালের ভেতর আটক হাজারো বন্দীও সাইদীর ফাঁসির রায় হওয়ার খবর শুনে হতাশ হয়েছেন বলে জামিনে মুক্তি পাওয়া কোনো কোনো বন্দী জানিয়েছেন।
কারাগার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দীর মর্যাদা পাচ্ছিলেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় হওয়ার পর পরই তা বাতিল হয়ে যায়। যার কারণে কারা কর্তৃপক্ষ সাঈদীকে গত বৃহস্পতিবার রাতে দিয়েছেন সাধারণ কয়েদির খাবার।
সূত্র জানায়, সাঈদীকে কারাগারে ফাঁসির মঞ্চের পাশেই আটটি কনডেমড সেলের একটিতে রাখার ব্যবস্থা করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। তার সেলের সামনে হাবিলদার ও কারারক্ষীদের সমম্বয়ে নিরাপত্তারক্ষীরা পালা করে ডিউটি করছে। খাওয়ার সময় হলে রক্ষীরা তার সেলের ভেতর সকালের নাশতা, দুপুরের ভাত আর রাতের খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। তবে ২৪ ঘণ্টা তিনি কিভাবে ওই সেলে সময় পার করছেন তা মনিটরিংয়ের জন্য সেলের বাইরে করিডোরের ওপর থেকে সেলের ভেতর তাক করা সিসি ক্যামেরায় সবকিছু ধারণ করা হচ্ছে। সেটি সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলীর দফতরের সার্ভার থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, কনডেমড সেলে নেয়ার পর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে জেল কোড অনুযায়ী ১১৬.৬৪ গ্রাম আটার একটি রুটি ও ১৪.৫৮ গ্রাম গুড় দিয়ে সকালের নাশতা দেয়া হচ্ছে। দুপুরে দেয়া হচ্ছে ২৫১.৬০ গ্রাম মোটা চালের ভাত আর ২৯১.৬০ গ্রাম সবজি। এক দিনের ডাল ১৪৬ গ্রাম। তরকারির মেন্যুতে কোনো দিন ২৯ গ্রাম পরিমাণের মাছ অথবা মাংস থাকে। একইভাবে রাতের খাবার দেয়া হয়।
কারা অধিদফতর সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, জেল কোড অনুযায়ী কোনো ডিভিশনপ্রাপ্ত আসামির ফাঁসির রায় হওয়ার সাথে সাথে তাকে কয়েদির পোশাক পরিয়ে দেয়া হয়। নেয়া হয় ফাঁসির সেলে। একই সাথে তার প্রতিদিনের কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য গড়ে তোলা হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আর চাঞ্চল্যকর কোনো বন্দী হলে ওই সেলের গুরুত্বই থাকে আলাদা। সে ক্ষেত্রে জেল কর্তৃপক্ষ আলাদা নজরদারির ব্যবস্থা করে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মূলত ফাঁসির আসামিদের সেল থেকে বের করার সুযোগ নেই। কখনো কখনো ৫-১০ মিনিটের জন্য বের করা হয়ে থাকে। সেটিও পরিস্থিতি বুঝে। আর গোসল, খাওয়া দাওয়া সবই আসামিকে আট ফুট বাই আট ফুট সেলের ভেতর করতে হয়।
জানা গেছে, ফাঁসির সেলে নেয়ার পরও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আগের মতোই নামাজ আদায় করছেন আর সব সময় আল্লাহকে ডাকছেন।
গতকাল সোমবার রাত পৌনে ৮টায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী ও জেলার মাহাবুবুর রহমানের সাথে খাবার, স্বজনদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ ও ডিভিশন বাতিল প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা কেউ টেলিফোন ধরেননি। তবে কারাগার সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় হওয়ার পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তার ডিভিশন বাতিল করা হয়। বর্তমানে সাধারণ কয়েদিরা যে খাবার পাচ্ছেন সেই খাবারই সাঈদীকে দেয়া হচ্ছে। সিসি টিভিতে তাকে মনিটরিং করা হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত তার সাথে স্বজনদের দেখাসাক্ষাৎ হয়নি বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
http://www.dailynayadiganta.com/new/?p=131949
বিষয়: বিবিধ
৭৬১৭২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন