প্রধানমন্ত্রী আপনার উদ্দেশ্যে
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৪:৫১:২৯ রাত
প্রধানমন্ত্রী আপনার উদ্দেশ্যে
================মুহাম্মদ সাইফুল আলম
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে যারা লিখেন,যারা কথা বলেন তারা সকলেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেই শুরু করেন । তিনি আওয়ামীলীগের হোন বা জাত প্রতিপক্ষ জামায়াত শিবিরের হোন । সকলেই প্রধানমন্ত্রী শব্দের আগে মাননীয় শব্দ যোগ করেন । এই মাননীয় শব্দটার মধ্যে অনেক ভক্তি-শ্রদ্ধা ও আবেগ-অনুভূতি জড়িত । ছাত্র জীবনে শিখেছিলাম যে কোন প্রতিষ্টান প্রধানের কাছে লিখতে গেলে এই শব্দটা দিয়ে লেখা শুরু করতে হয় । আর প্রধানমন্ত্রী এই পদটা হলো আমাদের দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ও সম্মানিত একটি পদ । শুধু আপনি এই পদটা অবৈধভাবে দখল করে আছেন বলে আমি এই লেখার শিরোনামে এবং লেখার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোথাও মাননীয় শব্দটা যোগ করতে পারলাম না । আমি দুঃখিত । আপনি এবং আপনার দল এই পদটাকে যাচ্ছেতাই ব্যাবহার করছেন । এই পদ দখলপুর্বক আপনি তাই করছেন যা আপনার মন চাচ্ছে । বর্তমান বাংলাদেশে আপনিই সব, আপনার ইচ্ছাই সকলের ইচ্ছা ।
এই যে আপনিই সব,আপনার ইচ্ছাই সকলের ইচ্ছা এ ধরনের মনোভাব আপনার পিতাও পোষন করতেন । আপনি কিন্তু আপনার পিতাকেও হার মানিয়েছেন । আপনার পিতার শাসনামল আমি দেখিনি । পড়ে এবং নানাজনের বক্তৃতা-বিবৃতি,বিশেষ করে নিজের বাপ চাচার কাছ থেকে জানতে পেরেছি আপনার পিতার শাসনামল কেমন ছিলো । তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো এই মনোভাব পোষন করে আপনার পিতা মাত্র ৪ বছর থেকে কম সময় ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিলেন । তাকে জীবন দিতে হয়েছে স্ব-পরিবারে তারই অধিনস্তদের হাতে , মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে । এক সময়ে যারা তার জন্য জীবন দিতে পারত,পরবর্তিতে তারাই তার ও তার পরিবারের জীবন নিলো শুধু আপনি ও আপনার বোন ছাড়া ।
৭৫ এর এই নৃশংস হত্যাকান্ডকে কতজনে কতভাবে দেখে । শুনেছি,আপনার দলের অনেকেই সেদিন উল্লাশ প্রকাশ করেছিলেন । আপনার বর্তমান দখলদার মন্ত্রীবাহিনীর অনেকেই সেদিন ট্যাংকের উপর উঠে উল্লুক নাচ নেচেছিলেন । যদিও এখন আপনার পিতার গুনকির্তন করতে করতে মুখ দিয়ে ফেনা বের করছে । সেদিন আপনার পিতার সহকর্মী অনেকেই খুশি হয়েছিলেন । ফেরাউনের পতন হয়েছে,জাতি মুক্তি পেয়েছে,৭৫ এর ১৫ ই আগস্ট জাতি আরো একবার স্বাধীনতা পেয়েছে বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন । বিশ্বাস করেন প্রধানমন্ত্রী, এধরনের নৃশংস হত্যাকান্ড কখনো কাম্য নয় । প্রশ্ন জাগে,যারা শেখ মুজিবের আংগুলি হেলনে নিজেদের জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলো,যারা এই দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরত্বের স্বাক্ষর রেখেছে তারা কেন সদ্য স্বাধীন হওয়া একটা দেশের প্রধানকে তার পরিবার সহ এভাবে নির্মমভাবে হত্যা করবে ?আর হত্যাকান্ড সংগঠিত হওয়ার পর আওয়ামী নেতারা উপরুক্ত মন্তব্য গুলো করবেন ?আর কেনই বা সাড়া দেশের মানুষ শোকরানা নামাজ পড়বে । তখন মন থেকে জবাব আসে আপনার পিতার এই "আমি"টাকে কেও ই মেনে নিতে পারেন নি ।
প্রধানমন্ত্রী,মাত্র গত বছর শাহবাগ গণজাগরন মঞ্চের একজন নেতা খুন হওয়ার পর আপনি দৌড়িয়ে তার বাড়িতে গেলেন এবং গণজাগরন মঞ্চকে মুক্তিযোদ্ধের পক্ষের মঞ্চ এবং খুন হওয়া একজন নাস্তিককে দ্বিতীয় মুক্তিযোদ্ধের প্রথম শহীদ হিসাবে মর্যাদা দিয়ে এলেন । তখন মনে মনে খুবই ভয়ের মধ্যে ছিলাম,যেহেতু আপনি তাকে প্রথম হিসাবে উল্লেখ করেছেন সেহেতু দ্বিতীয় তৃতীয় এভাবে আরো দু একজন মরতে পারে শুধুমাত্র খুন হওয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য । যাক সেরকমটা আর ঘটেনি । যদিও আপনার কথিত এই মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের সৈনিকদের পাছায় আপনি এখন গরম পানি ঢালছেন ।
প্রধানমন্ত্রী,মাত্র সেদিন আপনাদের তথাকথিত মানবতাবিরুধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনাল সময়ের স্রেষ্ট সন্তান আল্লামা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়কে কমিয়ে আজীবন কারাদন্ড দিয়েছে । সেই রায়ের পর পক্ষে বিপক্ষে নানারকম কথা হচ্ছে । আপনার দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের সৈনিকরা আবার শাহবাগে জড়ো হয়েছে । সাঈদীর ফাঁসীর রায় বহাল রাখার জন্য দাবী তুলছে । ফেসবুক,টুইটার সহ সামাজিক মাধ্যমগুলোতে এই রায়ের বিরুদ্ধে লেখছে এবং এই রায়টি আপনার টেবিল থেকে ট্রাইব্যুনালে গিয়েছে বলে উল্লেখ করছে । (যদিও এই কথা অন্য কেও বললে আদালত অবমাননার বিচার শুরু হয়ে যেত ।)আপনার সৈনিকরা বলছে,আপনি ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন । তাই আপনাকে ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার জন্য আহবান করছে ।
প্রধানমন্ত্রী,আপনি সেদিন বলেছেন,একমাত্র আপনি ছাড়া আওয়ামীলীগের বাকি সবাইকে কেনা যায় । এধরনের কথা শুনার পর আপনার দলের কাওকে স্টোক করে কিংবা আত্বহত্যা করে মরতে শুনিনি । আর কেনই বা শুনবো । মনে মনে হয়তো সবাই বলছে কথাটা তো সত্য । আমি কিন্তু প্রচন্ড এক ভয়ের মধ্য দিন গুজরান করছি । কেননা,আপনি বর্তমান সময়ে চরমভাবে "আমি"র মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করছেন । যা দেশের মানুষ কেও ই মেনে নিতে পারছে না । আপনার দলীয় অনেকেও মানতে পারছেন না । মেনে নিতে পারছে না আপনার দ্বিতীয় মুক্তিযোদ্ধা সৈনিকরা । আপনি বলছেন আপনার দলের সবাইকে কেনা যায়,আপনার দ্বিতীয় মুক্তিযোদ্ধা সৈনিকরা বলছে আপনি বিদায় হোন তাই বড়ই চিন্তার মধ্যে আছি । কেননা,আপনার পিতাকে হত্যা করেছে আপনার দলীয় লোক এবং মুক্তিযোদ্ধারাই । তাহলে কি আওয়ামী নেতারা আবার বিক্রি হবে ? আপনার দ্বিতীয় মুক্তিযোদ্ধের সৈনিকরা কি আবার জেগে উঠবে । আবার কি নতুন করে ইতিহাস তৈরী হবে ? ৭৫ এর মত আর যেন কোন ইতিহাস তৈরী না হয় সে প্রত্যাশায় ইতি টানলাম ।
বিষয়: রাজনীতি
১১১৩ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এখানে Chudurbudur blog--চুদুরবুদুর ব্লগ Click this link দেখুন।
আল্লাহতায়লা জালিমকে তার সময় মতই শিক্ষা দেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন