সংসদে প্রধানমন্ত্রী কাঁদলেন এবং কাঁদালেন
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৫:৩৬:১৪ সকাল
সংসদে প্রধানমন্ত্রী কাঁদলেন এবং কাঁদালেন
--------------------------------------------
মুহাম্মদ সাইফুল আলম
গত দু'দিন আগে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে দেখলাম বাংলাদেশের পাঁচভাগ মানুষের ভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী আওয়ামীলীগ কর্তৃক দখলকৃত সংসদে গাঁজায় ইসরাইলি হামলার শিকার আহত নারী ও শিশুদের ছবি বুকে নিয়ে কাঁদছেন এবং তার সাথে সংসদে অন্যরাও কেঁদেছে । নিউজটি দেখার পর ভাবছিলাম এটা নিয়ে কিছু একটা লিখবো । কিন্তু কি শিরোনাম দেব সেটা ভাবতেই আমার এ কালক্ষেপন । আমিতো আর এমন কোন লেখক নই যে আমার লেখা দেখেই মানুষ পড়বে । তাই ভাবছিলাম কি শিরোনাম দিলে মানুষের চোখে পড়বে এবং শিরোনাম দেখে মানুষ ভেতরটা পড়ার জন্য কৌতুহলী হবে । উপরোক্ত শিরোনামে গতকাল লেখা শুরু করেছিলাম , কিছুদুর লেখার পর হঠাৎ করে লেফটপটা অফ হয়ে যাওয়ায় সেই লেখাটাও আর ফিরে পেলামনা । আমার হাতে তখন সময়ও ছিলোনা যে নতুন করে আবার লিখি । কিন্তু আমার মাথা থেকে বিষয়টি একদম যাচ্ছেনা বলে আবার লিখছি ।
এই লেখাটার শিরোনাম দিতে চেয়েছিলাম "মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে ধন্যবাদ দিতে পারলাম না"। কিন্তু পরক্ষনেই ভাবলাম আমি কেন উনাকে মাননীয় বলে সম্বোধন করবো । উনিতো আর আমার প্রধানমন্ত্রী নন,মাত্র ৫ ভাগ ভোটারের প্রধানমন্ত্রী । আর আওয়ামীলীগ কর্তৃক দখলকৃত সংসদের নেত্রী । একবার ভেবেছিলাম,"আমাদের সংসদ একটি চমৎকার নাট্যমঞ্চ"এই শিরোনাম দিয়ে লিখি । এই শিরোনামে লিখলে হয়তো খুব বেমানান হতনা । কেননা আমাদের বর্তমান সংসদ আসলেই একটি নাট্যমঞ্চ বা সিনেমা হল । আর প্রতিটা অধিবেশন এক একটা নাটক বা সিনেমা । এখানে নায়ক আছেন, নায়িকা আছেন,খলনায়ক আছেন,খলনায়িকা আছেন,কুকিলকন্ঠি গানের শিল্পী আছেন,প্রযোজক পরিচালক সবকিছুই এই বর্তমান সংসদে আছে । হাসি-কান্না,আনন্দ-স্ফুর্তি,দুঃখ-ব্যদনা,নাচ-গান,মার-দাংগা সবকিছুই আছে । আছে সাধারন জনগনের মুখে ছড়িয়ে পড়ার মত উন্নতমানের ডায়ালগ । আর যদি কেহ মরহুম হুমায়ন আহমদের নাটক সিনেমার মত কিছু চান তাহলে আছে মাজার ও ওলি-আওলিয়া ।
আমাদের সংসদে এখন যথারীতি গানের আসর বসে । আমাদের সংসদের কলাকুশলীরা চমৎকার অংগ ভংগিমায় ডায়ালগ দেন। সেদিন দেখলাম,তথাকতিথ বিরুধীদলীয় নেত্রী একটি এলাকাকে বিভাগ করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছেন আর অন্যরা খুব মজা করে হাসছে । গতকাল দেখলাম তারেক রহমানের স্ত্রী ডাক্তার জোবায়দা রহমানের চাকুরি নট করে সেই বিষয় নিয়ে সংসদে হাস্যরসের জোয়ার বইছে । জোবায়দা রহমানের চাকুরী যেথে পারে তিনি যদি তার চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করেন । কিন্তু সেই বিষয়টা সংসদে নিয়ে হাস্যরসের সৃষ্টি করবেন , রাজনীতিতে কতটা নীচতা নেমে এলেই তা সম্ভব এটা ভেবে দেখার বিষয় । আর কি কারো চাকুরী গেলে এরকম হয়ে থাকে ? আর রাজনীতির নীচতা !সেটাতো গত ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন ও তার পরবর্তী সরকার গঠনই বড় প্রমান ।
যাক সে সব কথা । আমি আমার মুল পয়েন্টে আসি । প্রধানমন্ত্রী গাঁজায় নির্যাতিত মানুষের ছবি বুকে নিয়ে সংসদে দাড়িয়ে কেঁদেছেন এবং তার সাথে অন্যরাও কাঁদছে । আমার মনে প্রশ্ন সৃষ্টি হলো এটা কি সত্যিকারের কান্না,নাকি স্রেফ একটা নাটক। আবার মনে প্রশ্ন জাগলো নাটক হলে সাথে অন্যরাও কাঁদবে কেন ? মন'ই আবার জবাব দিলো,নাটক হলেও সবাই কাঁদে । যেমন আমরা যখন টিভির সামনে বসে কোন নাটক বা সিনেমা দেখি,কোন দুঃখের কাহিনী তখন সামনে এলে আমরা এটা অভিনয় করছে যেনেও সাথে কাঁদি । সংসদেও হয়তো একই ধরনের নাটকের অবতারনা করা হচ্ছে । কেননা,মরহুম মতিউর রহমান রেন্টুর লিখিত "আমার ফাঁসী চাই" বই পড়ে আমরা জানতে পেরেছি নেত্রী এরকম অভিনয়ে খুবই পাঁকা । যাক তারপরও নেত্রী যেহেতু কেঁদেছেন,তাকে কয়েকটি কথা না বলে পারছিনা ।
আওয়ামী প্রধানমন্ত্রী আপনি নিজ দেশের মানুষের লাশের উপর দাড়িয়ে অন্যদেশের মানুষের ছবি বুকে নিয়ে কাঁদেন । খুব ভালো কথা । কিন্তু আমার মনে কি বাংলাদেশের মানুষের কান্নার আওয়াজ একটুও পৌছুয় না । আপনার মনে কি সাগর-রুনির সন্তানের জন্য কোন দাগ কাটেনা ?ইলিয়াস আলীর স্ত্রী-সন্তানের বুকফাটা আর্তনাদ আপনার কানে কি পৌছায়না ?আপনি কি সেদিন দেখেছেন ডাক্তার ফয়েজের মেয়ের কি করুন বিলাপ ?আপনি কি নজরুলের পরিবারের কান্নার আওয়াজ শুনতে পান না ?কিভাবে একজন চেয়ারম্যানকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় সেই দৃশ্যকি আপনার চোখে পড়েনা ? আপনার পুলিশ ও যৌথবাহিনী যেভাবে পাখিরমত গুলি করে মানুষ মারছে তা তো অনেকটা ইসরাইলি বর্বরতাকে হার মানাচ্ছে । সাতক্ষিরার মানুষের বাড়িঘর যেভাবে বলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে তা কি গাঁজায় ইসরাইল কর্তৃক বাড়িঘর ধ্বংস করার চেয়ে কম ?সারাদেশের মানুষকে একটা আস্ত জেলখানায় ভরে রেখেছেন,কাওকে কথা বলতে দিচ্ছেন না,কাওকে লিখতে দিচ্ছেন ,কাওকে কাঁদতে পর্যন্ত দিচ্ছেন না,ব্যবসা-বানিজ্য করতে দিচ্ছেন না,তা গাঁজায় ইসরাইল কর্তৃক অবরোধের চেয়ে কোন অংশে কম । ইসরাইল যেভাবে কথায় কথায় অস্ত্রের হুমকি দিয়ে থাকে আপনি ও আপনার দলীয় মন্ত্রী নেতা কর্মীরা তার থেকে কোন অংশে কম নয় । আজ সারাদেশের মানুষকে আপনি আপনার দলীয় নেতা কর্মীর কাছে জিম্মি করে রেখেছেন।
গাঁজার অধিবাসীরা হয়তো তাদের মনকে শান্তনা দিতে পারে এই বলে যে তারা ইয়াহুদি কর্তৃক আগ্রাসনের শিকার হয়েছে । কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ কি বলে মনকে শান্তনা দেবে ? তারা যে নিজ দেশের,নিজ জাতির,নিজ ধর্মীয় লোকদের দ্ধারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে । এমনকি যে জনগনের টাকায় পুলিশ ও যৌথবাহিনী পোষা হচ্ছে সেই জনগনকেই পুলিশ ও যৌথবাহিনী নির্যাতন করছে । এটা কিভাবে মেনে নেবে বাংলাদেশের মানুষ । আপনি জানেন,নিজ জাতি-গোষ্টির দ্ধারা আক্রান্ত হলে কতটা কষ্ট মনে আসে । আপনার বাবাকে যখন মুক্তিযোদ্ধারাই স্ব-পরিবারে হত্যা করলো (প্রেক্ষাপট যাই হোক)তখন আপনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন,পাকিস্তানিরা আপনার বাবার গায়ে একটি হাতও দেয়নি অথচ মুক্তিযোদ্ধারাই আপনার বাবা মাকে হত্যা করেছে আপনি এই বাংলাদেশীদের উপর দিয়ে তার প্রতিশোধ নিবেন । কেন বলেছিলেন ? বলেছিলেন এই জন্য যে স্ব-জাতিরাই আপনার বাবাকে হত্যা করেছে । তাই এটা আপনার জন্য মেনে নেয়া খুবই কষ্টকর ছিলো । ঠিক একই ভাবে আজ সারাদেশের মানুষের মনে একসাগর কষ্ট । এইজন্য কষ্ট যে স্ব-জাতির মানুষ হয়ে আপনি দেশের মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছেন না । তাই আপনার এই কান্নার মধ্যে কোন স্বার্থকথা নেই । আপনি যখন আপনার নিজ দেশের মানুষের ব্যাথায় ব্যাথিত হতে পারবেন,আপনার নিজ দেশের মানুষের উপর জুলুম নির্যাতন বন্ধ করে মানুষের সুখে-দুঃখের সাথী হতে পারবেন সেদিনই আপনার এই কান্না কথা বলবে ।
বিষয়: রাজনীতি
১৪৩৫ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন