১৫ ই আগস্ট শোকের দিন, সুখের দিন নাকি শিক্ষার

লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ১৬ আগস্ট, ২০১৪, ০৭:১০:৩৬ সন্ধ্যা

১৫ ই আগস্ট বাংলাদেশী জাতির জন্য একটি অন্যরকম দিন। এই দিনকে ৩ ভাবে পালন করে থাকে বাংলাদেশের বেশীরভাগ মানুষ। বড় ৩ টি রাজনৈতিক দল এই দিনকে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে পালন করে । আওয়ামীলিগ এই দিনকে শোক দিবস হিসাবে পালন করে। এমনকি আইন করে সকলকে এই দিন শোক হিসাবে পালনে বাধ্য করে । তাইতো সরকারী,আধা সরকারী,সরকারের নিয়ন্ত্রিত সকল প্রতিষ্টান,স্কুল-কলেজ,ব্যাংক-বীমা ইত্যাদি বন্দ থাকে এবং সকলেই বাধ্য হয়ে কোন না কোন কর্মসূচী পালন করে থাকেন।

শোকের দিন:

১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট কিছু মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্য শেখ মুজিবুর রহমানকে স্ব-পরিবারে তার ৩২ নম্বরের ধানমন্ডির বাসায় হত্যা করেছে শুধু মুজিব তনয়া শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাড়া।শেখ মুজিবকে কেন হত্যা করা হলো, যারা দেশ স্বাধীন করলো তারাই বা কেন খুনি সাজতে গেলো, কেন মুক্তিযোদ্ধা সাহসী সৈনিকরা তাদের প্রিয় নেতাকে স্ব-পরিবারে হত্যা করলো,কেন তৎকালীন সেনা প্রধান শেখ মুজিবকে রক্ষায় কোন প্রদক্ষেপ নিলেন না, কেন আওয়ামীলিগের নেতারা শেখ মুজিব হত্যার পরবর্তি সরকারে যোগ দিলেন,কেন হাসানুল হক ইনুরা ট্যান্কে উঠে উল্লাশ করলো, কেন বাংলাদেশের ঘরে ঘরে সেদিন মানুষ আনন্দিত হয়েছিলো, রাস্তায় কেন আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ হলো, মসজিদে মসজিদে কেন শোকরানা নামাজ হলো, কেন মানুষ ফেরাউনের পতন হয়েছে বলে মন্তব্য করলো, এই প্রশ্নগুলো নিয়ে কোন আলোচনা হয় না। অথচ এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা বাংলাদেশীদের খুবই জরুরী বলে আমি মনে করি ।

উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি আওয়ামীলিগ বের করতো তাহলে তারা অন্তত শেখ মুজিবের হত্যাকান্ড থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশ পরিচালনায় সচেষ্ট হত। তারা জানতে পারতো কোন কোন কারনে এমন একটি ঘটনার-দিনের-ইতিহাসের সৃষ্টি হলো। তারা জানতে পারতো তাদের প্রকৃত দুস্ত-দুশমন কারা। এরকম আরো একটি নেক্কারজনক দিনের সৃষ্টি যাতে না হয় সেদিকে নজর দিত। যারা শেখ মুজিবের মৃত্যুতে ট্যান্কে উঠে উল্লাশ করেছিলো তারা অন্তত মন্ত্রী হতে পারতোনা। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো,তারা আজ বিভিন্ন শোক সমাবেশে উপস্হিত থেকে মিছে মায়াকান্না দেখাচ্ছে তা অন্তত সম্ভব হতোনা ।

অপরদিকে উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর জবাব যদি বি এন পি সহ সকল বিরুধীদল জাতির সামনে তুলে ধরতো তাহলে দেশের মানুষ বিশেষ করে ৭৫ পরবর্তি প্রজন্ম জানতে পারতো শেখ মুজিব কে ছিলেন,কেমন ছিলো তার শাসনকাল,কেমন ছিলো বাকশাল। এক্ষেত্রে বি এন পি নেতা কর্মীকে ব্যার্থই বলা যায়। কোন এক অজানা ভয়ে তারা যেন মুখে কুলুপ এটে দিয়েছেন। যার কারনে আমরা জানতে পারছিনা সঠিক ইতিহাস । নতুন প্রজন্ম ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক শোক দিবস পালন করছে। যদিও শতকরা কতভাগ মানুষ মনেপ্রাণে শোক পালন করে তা জরিপ করে দেখা দরকার। এই দিন আমরা কেউই কামনা করিনা । কিন্তু আজকের বাংলাদেশের ভয়াবহ চিত্র চোখের সামনে ভেসে উঠলে মনে হয় এরকম দিন যেন বারে বারে ফিরে আসে।

সুখের দিন:

এই দিনে বেগম খালেদা জিয়া তার জন্মদিন পালন করে থাকেন। যদিও তার এই জন্মদিন নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। এই বিতর্কটা আওয়ামীলিগ ও তাদের খরিদা কিছু মানুষই করছে। তাদের কথায় মনে হয় যেন এই ১৫ ই আগস্টে কারো জন্ম হতে নেই। পারলেতো তারা এই দিন মানুষের জন্ম নেয়া বন্ধ করে দিত।

আমরা দেখলাম, বেগম খালেদা জিয়া তার নেতা কর্মী বেষ্টিত হয়ে জন্মদিনের কেক কাটছেন। ছবিতে খালেদা জিয়ার চতুরপার্শে অসংখ্য নেতা কর্মীকে দেখে মনে মনে হাসলাম। যদি এই সময়ে কোন বেরসিক একটি বাঁশিতে ফু দিত তাহলে এই নেতা কর্মীরা খালেদা জিয়াকে ফেলে এমন দৌড় দিত যে তাদের কেকের উপর পরে পিছলায় অনেকে আহত হত। এই নেতা কর্মীরাই কিন্তু সেদিন খালেদা জিয়াকে বালু ভর্তি ট্রাকের মধ্যে একা ফেলে যে যার মত করে ঘরে বসে টিভি ক্যামেরায় খালেদা জিয়ার দুরাবস্তা দেখেছেন। অথচ আজ তারা খালেদা জিয়া জন্মদিন পালন করছেন ঘটা করে। সারা দেশের মানুষকে কারাগারে রেখে,খালেদা জিয়া নিজেও কারাগারে থেকে জন্মদিন পালন করছেন। অবস্হা দেখে আমি জান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুস্পের হাসি কাজী নজরুলের একটি কবিতার এই শ্লোকটি মনে পড়লো।

সারা দেশের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় কবে আসবে সেই ঈদ,যে ঈদের পরে বি এন পি নেত্রী আন্দলনের ডাক দেবেন। মানুষ মুখিয়ে আছে একটি আন্দোলনের-সংগ্রামের। যে আন্দোলনে ভেংগে তছনছ হয়ে যাবে বাকশালীদের তখত । অথচ দেশের মানুষকে নিয়ে নেত্রী জাহান্নামের আগুনে বসে পুস্পের হাসি উপহার দিচ্ছেন। আর সেই হাসিতে লুটেপুটে পড়ছে বি এন পি'র নেতা কর্মীরা। সারা দেশজুড়ে কেক কাটার ধুম পড়েছে,যা দেশের বাহিরেও দেখতে পারছি। অথচ এই নেতা কর্মীরা তাদের নেত্রীর ডাকে সাড়া দিতে বড়ই কার্পন্য করে থাকে। বড়ই আজব এক জাতি আমরা।

শিক্ষার দিন:

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবির এই দিনকে ইসলামী শিক্ষা দিবস হিসাবে পালন করে। ১৯৬৯ সালের ১৫ ই আগস্ট শুধুমাত্র ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্হার পক্ষে জোরালো বক্তব্য রাখার অপরাধে তাদের তৎকালীন এক ছাত্রনেতাকে হত্যা করে সেক্যুলারপন্হি খুনি ছাত্ররা। ১২ ই আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আয়োজিত শিক্ষা সেমিনারে ইসলামী শিক্ষার পক্ষে বক্তব্য দেয়ায় ইসলাম বিদ্বেষীদের হাতে আহত হয়ে ১৫ ই আগস্ট শাহাদাত বরণ করেন। যার কারনে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবির এই দিনকে ইসলামী শিক্ষা দিবস হিসাবে পালন করে ।

একটি দিনে আমরা ভিন্নভিন্ন ভাবে দিবস পালন করি। আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন এই দিবসটি পালন করা আমাদের জন্য কতটুকু জরুরী এবং পালন করলে কোনটা আমাদের অগ্রাধীকার দেয়া দরকার ?

বিষয়: রাজনীতি

২৬৫০ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

254933
১৬ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৭
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : একজন ব্যক্তির জন্ম কিংবা মৃত্যু দিবস পালন করার চেয়ে ইসলামী শিক্ষা দিবস পালন করা ভালো। ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্তা দেশের জন্য আর জন্ম মৃত্যু দিবস শুধু ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে।
১৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০১:৪৭
198764
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
254944
১৬ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৮:০৬
সন্ধাতারা লিখেছেন : Good analysis in the context of political field of bd. Jajakallahu khair.
১৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০১:৪৭
198765
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : শুকরিয়া বোন, আপনি সব সময় চমৎকার উৎসাহমুলক মন্তব্য করে থাকেন।
254955
১৬ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৮:৪৬
আফরা লিখেছেন : অনেক ভাল লাগল ।
১৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০১:৪৮
198766
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ।
254979
১৬ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৯:৪৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ১৫ই আগস্ট ভুলে যাওয়ার দিন হওয়াই ভাল!!!
১৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০১:৪৮
198767
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : কিন্তু শেখ হাসিনার আচরন যে বারবার ওটা মনে করিয়ে দেবে।
255015
১৬ আগস্ট ২০১৪ রাত ১১:০২
একাকী মানুষ লিখেছেন : কোন দিবসই পালনের দরকার নেই ।কিন্তু যদি পালন করতেই হয় তবে ইসলামিক শিক্ষা দিবস কেননা এতে জাতির কল্যাণ ।
১৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০১:৪৯
198768
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : তাহলেতো জাতির কল্যান হয় এমন কিছু করা দরকার।
255019
১৬ আগস্ট ২০১৪ রাত ১১:১২
শিশির ভেজা ভোর লিখেছেন : একাকী মানুষ লিখেছেন : কোন দিবসই পালনের দরকার নেই ।কিন্তু যদি পালন করতেই হয় তবে ইসলামিক শিক্ষা দিবস কেননা এতে জাতির কল্যাণ ।
১৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০১:৪৯
198769
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : তাহলে উপরের মন্তব্যের জবাব দেখুন।
255051
১৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০২:০৩
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : শিক্ষা নেয়া দরকার যাদের তারা নেননা, Hurry Up
১৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৩:৪০
198786
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
১৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৩:৪২
198787
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : প্রোফাইল ফটো আগেরটা ভালো ছিলো Rolling on the Floor
255105
১৭ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৭:৫২
কাহাফ লিখেছেন : এ দিনটা আসলে শোকের_মালেক ভাইয়ের শাহাদাতের দিন,তবে শোক কে শক্তিতে পরিনত করে মালেক ভাইয়ের অসমাপ্ত কাজ কে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
১৭ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৫
199000
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : বারাকাল্লাফিক।
255139
১৭ আগস্ট ২০১৪ সকাল ১১:১৭
আবু আশফাক লিখেছেন : -
১৫ আগস্টে কিছু বিখ্যাত জন্মদিন
১. ভারতের স্বাধীনতা (জন্মদিন)
২. আয়ারল্যান্ডের দুইবারের প্রধানমন্ত্রী জ্যাক লিঞ্চের (Jack Lynch) জন্মদিন
৩. নেপলিয়ন বোনাপার্টের জন্মদিন
৪. পর্তুগালের ক্যাথলিক সেন্ট এন্থনির জন্মদিন
৫. ফ্রান্সের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আলেইন জুপের (Alain Juppé) জন্মদিন
৬. উগান্ডার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইউরি মুসেভেনির (Yoweri Museveni) জন্মদিন
১৭ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৪:৩৬
199001
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : ধন্যবাদ। নতুন কিছু জানলাম।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File