ঈদ এলো তাই বিদায় নিতে শুরু হলো
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ২৯ জুলাই, ২০১৪, ০৭:৩৭:১০ সন্ধ্যা
আমার জন্মভুমি বাংলাদেশে আজ পবিত্র ঈদুল ফিতর। গতকাল আমরা প্রবাসীরা ঈদ করেছি। পবিত্র মাহে রমজানের মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর,মাসব্যাপী একটি নিরলস ট্রেনিং এর পর, মাসব্যাপী তাকওয়ার গুন অর্জনে সচেষ্ট থাকার পর পবিত্র ঈদুল ফিতর আমাদের মাঝে খুশির বারতা নিয়ে হাজির হয়। আমরা ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করে নেই একে অপরের সাথে। একদিনের জন্য হলেও আমরা ভুলে থাকি বিগত দিনের ক্ষোভ, দুঃখ, যাতনা। হাসি আনন্দে ভরে উঠে আমাদের সকলের মন।
কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো ঈদের পূর্বে পুরো একটি মাসে আমরা যা কিছু অর্জন করি ঈদের নামাজ আদায়ের মাধ্যমে যে সবকিছু আবার বিষর্জন দিয়ে আসি। রমজান মাসের যে শিক্ষাগুলো আমাদের সমাজে ও ব্যক্তি জীবনে অর্জিত হয় ঈদ আসার সাথে সাথে আমাদের সমাজ ও ব্যক্তি জীবন থেকে থেকে তা অনেকগুলো আস্তে আস্তে বিদায় নিতে থাকে। আমার দৃষ্টিতে যে বিষয়গুলো পড়েছে তা নিম্নে তুলে ধরলাম।
সুন্দর একটা পরিবেশ: পবিত্র রমজান মাসে আমাদের সমাজে একটা ইসলামী আবহ তৈরী হয়। মানুষের মাঝে আন্তরিকতা বৃদ্ধি পায়,সৌহার্দ বৃদ্ধি পায়, অশ্লীলতা কিছুটা হলেও বন্ধ হয়, মহিলারা অন্য সময়ের চেয়ে এই সময়ে অপেক্ষাকৃত বেশী পরিমানে পর্দা করে থাকে, অনেকের মাথায় সুন্দর সুন্দর টুপি, মানুষের আচার আচরনে সহনশীলতা পরিলক্ষিত হয়,সব মিলিয়ে একটা সুন্দর পরিবেশ তৈরী হয়। ঈদের দিন থেকে এই সুন্দর পরিবেশ আস্তে আস্তে বিদায় নিতে থাকে ।
মসজিদের মুসল্লি: অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে রমজান মাসে মসজিদে মুসল্লির পরিমান খুব বেশী বৃদ্ধি পায় । কিশোর, তরুন,যুবক বৃদ্ধ সকলেই মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামাজ আদায় করেন। কিন্তু ঈদের দিন থেকে আবার আস্তে আস্তে করে মসজিদ ফাকা হতে থাকে।
ফজর ও এশার সময়ের মুসল্লি: রমজান মাসে ফজর ও এশার নামাজে মসজিদে প্রচুর সংখ্যক মুসল্লি থাকেন।বিশেষ করে এশার নামাজে উপচে পড়া ভিড় থাকে মসজিদে। কিন্তু ঈদের দিন থেকে এই দুই ওয়াক্তে মুসল্লির সংখ্যা হু হু করে কমে যায় । সেই কমে যাওয়ার সংখ্যাটা বৃদ্ধির জন্য আরো একটি রমজানের অপেক্ষা করতে হয়।
নামাজ ও কুরআন তেলাওয়াত: মানুষের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা অন্য সময়ে নামাজ না পড়লেও,কুরআন তেলাওয়াত না করলেও রমজান মাসে নামাজ আদায় করে থাকেন। বাড়িতে বাড়িতে কুরআন তেলাওয়াত হয়। কিন্তু রমজানের পর আবার তারা হারিয়ে যান।
দান- খয়রাত: অন্য মাসের চেয়ে এই মাসে মানুষ অধিকহারে দান-খয়রাত করে থাকেন। পাড়াপ্রতিবেশী ও নিজের গরিব আত্বীয় স্বজনকে প্রত্যেকের সাধ্যমত সাহায্য করেন, মসজিদ মাদ্রাসায় দান করেন। কিন্তু রমজানের পর তা আবার কমে আসে।
পরিবারের মধুর পরিবেশ: পবিত্র রমজান মাসে একসাথে ইফতার করা, একসাথে সাহরি খাওয়া, একে অপরের সাথে সৌহার্দপূর্ণ আচরন, ভালবাসায় যে পারিবারিক মধুর পরিবেশ তৈরী হয়,রমজানের পর তা আস্তে আস্তে বিলীন হতে শুরু করে।
আল্লাহভীতি : পবিত্র রমজান মাসের আসল উদ্দেশ্যই হলো মানুষের মাঝে আল্লাহভীতির গুন অর্জন করা। মানুষও এই সময়ে অপেক্ষাকৃত বেশী পরিমানে আল্লাহর ভয়ে তটস্হ থাকে । মানুষের কথায়,কাজে কর্মে ও আচরনে আল্লাহভীতি পরিলক্ষিত হয় । কিন্তু ঈদের পর থেকে তা আবার আস্তে আস্তে দুর হতে থাকে।
অথচ উপরোক্ত গুনগুলো ব্যক্তিগতভাবে ও সামাজিকভাবে অর্জন করে পুরো একটি বছর কাটানোর জন্য একটি ট্রেনিং হিসাবে রমজান মাসকে পেয়ে থাকি। ট্রেনিং নেই, ট্রেনিং এ কিছুটা সফল হই,কিন্তু রমজান পরে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ি । আল্লাহ আমাদেরকে রমজানের ট্রেনিং পরবর্তী সময়ে আমাদের জীবনে পরিচালিত করার তাওফিক দান করুন।
বিষয়: বিবিধ
১২২৭ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মুসল্লি ধরে রাখার কোন বুদ্ধি নাই ভাইয়া?
বড় মুসল্লি বাড়ানোর ধান্ধা নাই ভাইয়া?
আল্লাহ আমাদেরকে রমজানের ট্রেনিং পরবর্তী সময়ে আমাদের জীবনে পরিচালিত করার তাওফিক দান করুন। আমীন !
মন্তব্য করতে লগইন করুন