রমজান আলোচনা : সুরা আল-বাকারার ১৫৩ থেকে ১৫৭ নং আয়াত
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ০৮ জুলাই, ২০১৪, ০৮:১৪:২২ সকাল
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
সম্মানিত ব্লগার ও ভিজিটর,আসসালামু আলাইকুম। মাহে রামাদ্বানের রহমাতের দিনগুলো আমরা অতিক্রম করছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই মাসেই নাজিল করেন মানবতার একমাত্র পথপ্রদর্শনের কিতাব আল-কুরআন।আসুন সেই মহাগ্রন্হ থেকে কিছু আলোচনা করি।যদিও কুরআন নিয়ে আলোচনার জন্য আমি মোটেও উপযুক্ত নই তবুও সম্মানিত ব্লগার ভিশু'র আহবানে সাড়া দিতে সামান্য প্রচেষ্টামাত্র।
সুরা আল-বাকারা।
পবিত্র কুরআনের সর্ববৃহত সুরা। এই সুরার ৬৭ নং আয়াতের বাকারা শব্দটিকেই এই সুরার নামরুপে গ্রহন করা হয়েছে।এই সুরার বেশীরভাগ অংশ রাসুল (সঃ) এর মাদানী যুগের প্রথম সময়ে নাজিল হয়েছে। আর কম অংশ নাজিল হয় পরে। সুরার শেষদিকের আয়াতগুলো হিজরতের পুর্বে মাক্কি যুগে নাজিল হয় কিন্তু বিষয়বস্তুর সাথে মিল রেখে এভাবে সাজানো হয়েছে।
আলোচ্য আয়াত সমুহ : সুরা বাকারার ১৫৩ থেকে ১৫৭ নং আয়াত।
এই আয়াতগুলোতে আল্লাহ তায়ালা যা বলেছেন-
১৫৩) হে ঈমানদারগণ! ধৈর্য্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো,আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে আছেন।
একটি বিরাট দায়িত্বপূর্ণ কাজের ভার গ্রহনের জন্য যে শক্তি-সামর্থ থাকা দরকার তা দুটি জিনিসের মাধ্যমে লাভ করা যাইতে পারে। প্রথমত সবর বা ধৈর্য্য । আর দ্বিতীয়ত, নামাজ। সবর বা ধৈর্য্য হইতেছে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক গুনাবলীর সামগ্রিক রুপ।আর ইহা মূলত সকল প্রকার সাফল্য ও স্বার্থকতার চাবিকাঠি। আর নামাজ মুমিনদেরকে ব্যক্তিগত ও স্বতন্ত্রভাবে এবং তাহাদের সমাজ-সংগঠনকে সামষ্টিকভাবে একটি বিরাট কাজের জন্য অতি উত্তমরুপে গড়িয়া তুলে।
১৫৪) আর যাহারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তাদেরকে মৃত বলো না,বরং তারা জীবিত। কিন্তু তোমরা তা অনুভর করতে পারোনা।
মৃত্যুর কথা শুনলেই মানুষ ভয় পায়। মৃত্যুর কথা শুনলে মানুষ সাহস ও শক্তি হারিয়ে ফেলে।তাই আল্লাহর পথে যারা শহীদ হয় তাদেরকে মৃত বলতে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা ইহাতে আল্লাহর পথে মানুষের আত্বদানের প্রেরনা নিস্তেজ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আল্লাহর পথে যারা নিহত হয় তারা আসলেই চিরন্তন জীবন লাভ করে। রাসুল (সঃ) বলেছেন,শহীদের আত্বা সবুজ রংগের পাখী হয়ে বেহেশতের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় করে। তারা বেহেশতের নাজ-নিয়ামত দেখে নিজেদেরকে ধন্য মনে করে। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন : এখন তোমরা কি চাও ? জবাবে তারা বলে, আমরা আবার দুনিয়ায় গিয়ে তোমার পথে যুদ্ধ করে শহীদ হয়ে ফিরে আসি এবং শাহাদাতের দ্বিগুন মর্যাদা লাভ করি । তখন আল্লাহ বলেন, এটা হতে পারেনা।মৃত্যুর পর কেউই আর দুনিয়ায় ফিরে যাবেনা।
শহীদের মর্যাদা সম্পর্কে বলা হচ্ছে :
ক) শহীদগণ মৃত্যু যন্ত্রনা হতে মুক্ত।
খ) শহীদেরা মৃত্যুর সময় বেহেশতের বালাখানা দেখে দেখে হাসিমুখে মৃত্যুবরণ করেন।
গ) শহীদের রক্ত পবিত্র,তাই তাদেরকে গোসল দিতে হয়না।
ঘ) শহীদের শরীর কবরে অবিকল থাকে।
ঙ) শহীদের কবরের আযাব নেই।
চ) শহীদেরা নিকটাত্বীয় সত্তরজনকে সুপারিশ করে বেহেশতে নিয়ে যেতে পারবে।
১৫৫) আমরা নিশ্চয় পরীক্ষা করবো ভয়-ভীতি,অনাহার, তোমাদের জান,মাল ও উৎপাদিত ফসলাদির ক্ষতি দ্ধারা। ঐ অবস্হায় যারা ধৈর্য্য ধারণ করিবে,তাদেরকে সুসংবাদ দাও।
প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তির ঈমান পরখ করার জন্য কিছু পরীক্ষা করার প্রয়োজন আছে। আল্লাহ তায়ালা মুমিনদেরও পরীক্ষা করে থাকেন উপরুক্ত যেকোন একটি মাধ্যমের দ্ধারা ।আল্লাহ তায়ালা যাচাই করে নেন কারা তাদের কথায় সত্যবাদি। পরীক্ষাটা কখনো ব্যক্তিগত,কখনো পারিবারিক,কখনো সামাজিক-সাংগঠনিক সকল পর্যায়ে হতে পারে। পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হতে পারে তাদেরকেই আল্লাহ তায়ালা সুসংবাদ দিয়েছেন।
১৫৬) যখনই তাদের সম্মুখে কোন বিপদ-মুছিবত এসে হাজির হয়,তখনই তারা বলে, আমরাতো আল্লাহর জন্যই এবং আমাদেরকে আল্লাহর দিকেই ফিরে যেতে হবে।
যখন একজন মুমিনের উপর নানারকম পরীক্ষা অবতীর্ণ হয় বা কোন বিপদ-মুছিবতে আপতিত হয় তখন একজন মুমিন নিরাশ হতে পারেনা। কঠিন মুছিবতের সময়েও সে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে এবং এই ঘোষনা দেয় যে আমরাতো আল্লাহর জন্য এবং তার দিকেই আমাদের ফিরে যেতে হবে। সন্তুষ্ট চিত্তে সে আল্লাহর সিদ্ধান্ত মেনে নেয় ।
এখানে 'বলা' অর্থ কেবল মুখে এই কথা ও শব্দগুলির উচ্চারন করা নহে; বরং মনের গভীর কোন হইতে অনুভব করিতে হইবে যে ,প্রকৃতপক্ষে আমরা আল্লাহরই। আর এই অনুভব করাটা আমাদের কর্মে স্বাক্ষ দেবে।
১৫৭) তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে তাদের উপর বিপুল অনুগ্রহ বর্ষিত হবে,তাঁর রহমত তাদেরকে ছায়া দান করবে এবং এরাই হেদায়াতপ্রাপ্ত।
নিজের জান-মাল নিয়ে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পনকারীর উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে বিপুল অনুগ্রহ ও শান্তি বর্ষিত হবে, তারা আল্লাহর হেদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং দুনিয়া ও আখেরাতে তারা সফলকাম হবে।
আলোচিত এই আয়াতগুলো থেকে আমরা যা শিক্ষা পাই :
- ধৈর্য্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে হবে।
- আল্লাহ তায়ালা শাহাদাতের মর্যাদার কথা উল্লেখ করে তার পথে শহীদ হওয়ার জন্য ঈমানদারদেরকে উৎসাহিত করেছেন।তাই আমাদের উচিৎ শাহাদাতের তামান্না নিয়ে আল্লাহর দ্বীনের প্রচার-প্রসারে একনিষ্টভাবে কাজ করা।
- আল্লাহতায়ালা আমাদের ঈমানের পরীক্ষা নিয়ে থাকবেন, সেই সময়ে যেন আমরা বিচলিত না হয়ে আল্লাহর সিদ্ধান্তের উপর সন্তুষ্ট থাকি।
- যারা সর্বাবস্তায় আল্লাহর সিদ্ধান্তের উপর সন্তুষ্ট থাকবে এবং নিজের কথা ও কাজ দ্ধারা স্বাক্ষ দেবে যে আমরা আল্লাহর এবং আল্লাহর দিকেই তাকে ফিরে যেতে হবে তাহলে দুনিয়া ও আখেরাতে আমরা সফলকাম হব।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই পবিত্র রামাদ্বানে আমাদেরকে উপরুক্ত আয়াতের আলোকে জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন।
(আমি খুবই দুঃখিত , আমার সিডিউল ছিলো ৬ রমাজান।কিন্তু আমি পারিনি। আল্লাহ আমাদেরকে মাফ করে দিন)
বিষয়: বিবিধ
৬৬৭৫ বার পঠিত, ২৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমীন
وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ [٣:١٣٩]
আর তোমার হতাশ হয়ো না এবং
নিরাশ হয়ো না,যদি তোমারা
মুমিন হও তবে তোমরাই জয়ী
হবে।
(সুরা আল ইমরান,
আয়াত :১৩৯)
জাজাকাল্লাহ খায়রান ভাই। এভাবেই চলতে হবে।
যে কোন অবস্থায় ধৈর্যধারন এবং আল্লাহর প্রতি পুর্ন আষ্থাই একজন মুমিনের কর্তব্য।
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর আলোচনাটির জন্য।
আর আপনার সুন্দর আলোচনার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইরান৷
ভালো লাগলো......... ধন্যবাদ
আসলে তুমি আমার পাতায় অনেক দিনের পরে
তোমার উপর সদায় যেন খোদার রহম ঝরে ।
(ছন্দের সার্থে তুমি লিখেছি)
সবসময় আসা হয়না। তবে আমন্ত্রণ পাওয়া সব লেখা পড়তে চেষ্টা করি। ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে
মন্তব্য করতে লগইন করুন