প্রসংগ: কুকুর এবং শুয়োরের বাচ্চা
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ৩০ জুন, ২০১৪, ০৭:০০:৩৫ সন্ধ্যা
আমি দুঃখিত। খুবই দুঃখিত। যে সময়ে প্রায় সকলেই রামাদ্বান বিষয়ক লেখালেখি করছেন, আমি সেই সময়ে অন্য একটি প্রসংগে লিখছি তাও আবার রাজনৈতিক। কিন্তু কি করবো, দুই তিনদিন থেকে এই বিষয়ে লিখবোনা লিখবোনা করেও আমি যেন পারছিনা। অবশেষে লিখতে বাধ্য হচ্ছি। হা,রামাদ্বান বিষয়ে লিখলে আমিও যেমন উপকৃত হতাম, তেমনি অন্যরাও হত। তবে অনেকেই লিখছেন যার বেশিরভাগই পড়েছি এবং কিছু নেয়ার চেষ্টা করেছি ।
এবার আসি আমার লেখার প্রসংগে। শিরোনাম দেখেই হয়তো অনেকে বুঝে ফেলেছেন আমি কোন বিষয়ের অবতারনা করেছি। আপনারা নিশ্চয় দেখেছেন,পড়েছেন এবং শুনেছেন যে আমাদের জাতীয় সংসদে(!)র সম্মানিত (?) সংসদ সদস্য (?) নারায়ণগঞ্জের একক অধিপতি জনাব শামিম ওসমান অতিব নিকট অতীতে একজন পুলিশ অফিসারকে শুয়োরের বাচ্চা বলে গালি দিয়েছেন। আর সেই বিষয়ে জানতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের কুকুর বলে উপাধি দিয়েছেন। পুলিশ অফিসারকে গালিটা দিলেও তিনি সেখানে একক ব্যাক্তিকেই গালিটা দিয়েছেন,পুরো পুলিশ জাতিকে গালি দেননি। তবে সাংবাদিকদের পুরো জাতকে তিনি কুকুর উপাধি দিয়েছেন।
দুটো গালির কিছু মাহাত্ব বিশ্লেষন করার প্রয়োজনীয়তা মনে করছি ,পাশাপাশি এই গালি দুটোর সাথে জনাব ওসমান আরো কিছু কথা বলেছেন তাও বিশ্লেষন করার প্রয়োজনীয়তা আছে বৈকি। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার মধ্য থেকেই আমি চেষ্টা করবো।
প্রথমেই আসা যাক শুয়োরের বাচ্চা প্রসংগ : সেদিন ছিলো নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনে উপনির্বাচন। এই আসনের এম পি ছিলেন জনাব ওসমানের আরেক ভাই।তিনি কিছুদিন আগে মারা যান, যার কারনে এই আসনে উপনির্বাচন দিতে হয় নির্বাচন কমিশনকে। এবারও প্রার্থী হন জনাব ওসমানের আরেক ভাই। পুরো নারায়ণগঞ্জের একক অধিপতি, আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য, সারা দেশে একনামে যার পরিচিতি তার ভাই নির্বাচনে হেরে যাবেন এটা কি মেনে নেয়া যায়। কখনো না। তাই চললো ভোটারবিহীন নির্বাচনে জাল ভোটের মহোৎসব। আর সেখানে বাঁধা দিতে গিয়ে জনাব ওসমানের টেলিফোনে হুমকি ও গালির শিকার হতে হয় পুলিশ অফিসার এএসপি বশিরকে। জনাব ওসমান পুলিশ অফিসারকে শুয়োরের বাচ্চার সাথে আরো অনেক গালি দেন এবং দেখে নেবেন বলে হুমকি দেন।পাশাপাশি তিনি তার নেত্রীর কার্যালয়ে ফোন করে জানতে চান তিনি রাজনীতি করবেন কি করবেন না।
এখানে দুটো বিষয়: এক. পুলিশ অফিসারকে গালি দেয়া । আর দুই. তার রাজনীতিতে থাকা না থাকা।
এক. পুলিশ অফিসারকে গালি দেয়া : জনাব ওসমান, ঐ পুলিশ অফিসারকে গালি দিতেই পারেন। কেননা সারা দেশের পুলিশরা যেখানে আওয়ামীলিগের হয়ে কাজ করছে, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে মফস্বলের একজন পাতি নেতার কথায় উঠবস করছে সেখানে শামীম ওসমানের মত নেতার কথা শুনবেনা একজন এএসপি তা কি করে হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো ঐ গালিটা কি শুধু শামীম ওসমানের? আমারতো মনে হয়, না। আজ পুলিশ বাহিনীর অবস্হা এমন একটা তলানীতে গিয়ে পৌছেছে,যার কারনে সর্ব মহলে তারা আজ শুয়োরের বাচ্চাসহ এধরনের গালি শুনতে হচ্ছে। সরকার ও আওয়ামীলিগের হয়ে কাজ করতে গিয়ে সামান্য কিছুতে কারো কথা না শুনলে,কারো কথামত কাজ না করলে তাদেরকে এই ধরনের গালি ছাড়াও আরো অশ্লীল গালির শিকার হতে হচ্ছে। অপরদিকে বিরুধীদলের উপর তারা যেভাবে নির্যাতন চালাচ্ছে, বিরুধীদলের মিছিল মিটিং করতে না দেয়া ,নেতা কর্মীদের গ্রেফতার করা এসবের কারনে বিরুধীদলের কাছ থেকেও তারা এরকম গালির শিকার হচ্ছে অহরহ। পাশাপাশি সারা দেশে যেভাবে গ্রেফতার বাণিজ্য চালাচ্ছে এতে করে দেশের আপামর জনসাধারনের কাছে তারা শুয়োরের বাচ্চা থেকেও আরো অধম। তাছাড়া বিনা অপরাধে ধরে ধরে নিয়ে যে হত্যা ও গুম চালাচ্ছে তার জন্য হাজার হাজার মানুষের বদদোয়াতো রয়েছেই। আজ সরকারী দল, বিরুধীদল সহ সারা দেশের মানুষের কাছে পুলিশ শুয়োরের বাচ্চা। প্রার্থক্য শুধু শামীম ওসমানরা প্রকাশ্যে গালি দেয় আর সাধারন মানুষ তাদের নিজস্ব পরিসরে। কান পাতলেই পুলিশবাহিনী শুনতে পারবে মানুষের হাহাকার, বদদোয়া আর গালিগুলো।
দুই. তার রাজনীতিতে থাকা না থাকা : এখানে অনেকখানি ভাবনার বিষয় আছে। তাহলে কি শামীম ওসমানকে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে, যা ইচ্ছা তিনি করতে পারবেন, কোন ধরনের বাঁধার সম্মুখিন হবেন না, তার জন্য সব কিছু মাফ, তিনিই নারায়ণগঞ্জের একক অধিপতি থাকবেন, এধরনের আশ্বাস দিয়েই কি বলা হয়েছে তাকে রাজনীতিতে থাকতে হবে, আওয়ামীলের হাল ধরতে হবে ? হবে হয়তো। তা না হলে এরকম একজন সন্ত্রাসীর জন্য সংসদে দাড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী(?) কেন মায়াকান্না করবেন,চোখ দিয়ে জল গড়াবেন,ওসমান পরিবারের দায়িত্বে তার কাঁধে নেবেন। আর কেনই বা সামান্য বাঁধার সম্মুখিন হয়ে জনাব ওসমান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ফোন করে জানতে চাইবেন তিনি রাজনীতিতে থাকবেন কি থাকবেন না।
কুকুর প্রসংগ : জনাব ওসমান সাহেব কর্তৃক এএসপি বশিরকে গালি ও হুমকি দেয়া বিষয়ে জানতে গেলে সাংবাদিকরা কুকুর গালির শিকার হন। শুধু কুকুর বলেই তিনি ক্ষান্ত হননি,কেন ও কিভাবে সাংবাদিকরা কুকুর তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার ব্যাখ্যা হলো
তিনি বলেন, সাংবাদিকরা হচ্ছে কুকুর। আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন পাড়ার অনেকে পয়সা হলে বাড়িতে কুকুর পুষত। ওদের বাড়ির সামনে গেলে কুকুরগুলো মুখ ভেংচাত। এর পর যাদের আরও পয়সা হলো, তারা মিডিয়া পোষা শুরু করল। এগুলো হলো অ্যালসেশিয়ান কুকুর।
তার ব্যাখ্যার প্রথম অংশে একমত হলেও শেষের অংশে একমত হতে পারছিনা। তবে সাংবাদিকদের ভাবা উচিৎ আসলেই কি এমন একটা পর্যায়ে গিয়ে আমরা পৌছতেছি কি না ? আজ যেভাবে হলুদ সাংবাদিকতার ছড়াছড়ি, (যদিও সময়ের ব্যবধানে আজ হলুদ সাংবাদিকতা লাল সাংবাদিকতায় রুপান্তরিত হয়েছে। নিরোপরাধ মানুষদের হত্যায় সাংবাদিকরা যেভাবে উস্কানি ও উৎসাহ উদ্দিপনা দিয়ে যাচ্ছেন এতে করে অনেকেই তাদেরকে লাল সাংবাদিকতা বলে উপাধি দিচ্ছেন) সংবাদ ও সংবাদ কর্মীরা যেভাবে সরকারী দলের হয়ে কাজ করছেন, সত্যকে মিথ্যা দিয়ে গোপন করছেন আর মিথ্যাকে সত্যে রুপান্তরিত করছেন, সামান্য টাকার কাছে বিক্রী হয়ে যাচ্ছেতাই রিপোর্ট করছেন, তা কি ঐ প্রভুভক্তির মধ্যে পড়েনা?
তবে হা,তিনি যেভাবে সকল সাংবাদিকদের একাকার করে ফেলেছেন এটা অবশ্যই দৃষ্টিকটু অপরাধ। অসংখ্য সাংবাদিক ও সংবাদপত্র আছে যারা সৎ ও সাহসীকতার সাথে সাংবাদিকতা করছেন,সংবাদ পরিবেশন করছেন। কিন্তু তাদের সংখ্যাটা নেহায়েত কম বলে তারাও বেশীসংখ্যকদের অপরাধের দায় নিতে হচ্ছে।
আজ পুলিশ ও সাংবাদিক উভয় মহলকেই ভাবতে হবে। গালি দিয়েছে বলে শুধুমাত্র তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে, তাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে,তার বিচারের দাবি জানিয়ে লাভ নেই । সত্যিকার অর্থে আপনারাও এরজন্য কতটা দায়ি সেই বিষয়টা চিন্তা করুন।
বিষয়: রাজনীতি
১৮৯৪ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শামিম উসমানদের মত লোক বাংলাদেশের রাজনীতিতে আছে বলেই কুকুর কিংবা শুয়োরের বাচ্চা রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত আছে।ধিক্কার এইসব মানুষ রুপি পশুদের কাজকর্মের।
তবে সত্যি বলতে কি একে বারে ভুল বলেননাই আমাদের দেশের পুলিশ এর আচরন যা তাদের সাথে শুয়োরের পার্থক্য বের করা যায়না। তেমনি সাংবাদিকরাও টাকা পেলে কুকুরের মতই লেজ নারে।
এই বিষয়গুলো নিয়ে লিখতে গেলে যে অভিজ্ঞতা থাকা দরকার সেটা যে আমার নেই জনাব।
মন্তব্য করতে লগইন করুন