আপনি জানেন কি আপনার শেয়ার করা প্রিয় মানুষের ছবি দিয়ে ফেবুতে ফ্যাক আইডি খুলা হচ্ছে !
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ১১ জুন, ২০১৪, ০৮:৩৭:২২ সকাল
আজ থেকে মাত্র কিছুদিন আগেও কোন মানুষই তার ছবি,তার পরিবারের কোন মহিলার ছবি অন্য কারো হাতে দিতনা। দেয়াতো দুরের কথা পরিবারের মহিলাদের ফটো দিয়ে যে এ্যালবাম ভরা থাকতো সেই এ্যালবামটা কাওকে দেখানো পর্যন্ত হতনা। অন্য কারো হাতে পরিবারের কোন মহিলার ফটো আছে দেখতে পেলে মারামারি-খুনোখুনি পর্যন্ত হয়ে যেত। এরকম ভুরিভুরি প্রমান আমাদের সকলের সামনেই আছে। কোন বিয়ের অনুষ্টানে বা অন্য কোন পারিবারিক অনুষ্টানে একান্ত আপনজন ছাড়া কেও ছবি তুলতে পারতোনা।
স্ত্রী তার স্বামীকে পর্যন্ত ছবি দিতে লজ্জাবোধ করতো। স্বামী বেচারা স্ত্রীর ছবিটা কত যতন করে মানিব্যাগের এক কোনায় লুকিয়ে রাখতো যাতে করে বন্ধুবান্ধব কেও দেখতে না পারে। শত চেষ্টা করেও প্রেমিক তার প্রেমিকার একটা ছবি নিজের কাছে রাখতে পারতোনা। কোন প্রয়োজনে স্টুডিওতে গিয়ে ছবি তুললে সেখানেও কত রকমের হুশিয়ারী যেন ছবিটা অন্য কারো হাতে না যায়। কোন মেয়ের ছবি তুলা ছেলেদের জন্য ছিলো মহাভারত জয়।
কিন্তু আজ সময় বদলেছে। এতটাই বদলেছে যে আমরা আজ নিজেদের ভালো-মন্দটুকু পর্যন্ত বুঝতে পারিনা। আজ আমাদের অনেকের মোবাইলে অসংখ্য মানুষের ছবি লোড করে রেখেছি। আজ আমরা সকলেই নিজের ছবি অন্যের হাতে তুলে দিতে প্রতিযোগিতা শুরু করেছি ফেসবুকের বদৌলতে। পুরুষ মহিলা সকলেই আমরা আমাদের একান্ত ছবিগুলো পর্যন্ত অন্যের হাতে তুলে দিচ্ছি। নিজেরাতো দিচ্ছিই, তার উপর মোবাইলের বদৌলতে অন্যেরাও ছবি তুলে শেয়ার করছে সকলের সাথে। দেখা গেলো আপনি জানেনই না, আপনার ছবিটা আপনারই কোন প্রিয় মানুষ শেয়ার করে দিচ্ছে ফেসবুকে যা সে মোবাইল দিয়ে তুলে ছিলো। যার কারনে অনেক সময় ছবি শেয়ার করা নিয়ে পরিবারে নানান বিপত্তিও ঘটছে।
সবচেয়ে বড় যে কাজটা হচ্ছে, তাহলো আপনার ছবি দিয়ে ফ্যাক আইডি খুলে সেই পেইজে নানা রকম অশ্লীল ছবি ও স্টাটাস দেয়া হচ্ছে। অথচ আপনি জানেন না। তার জন্য শুধু আপনি দায়ি না। অনেক সময় আপনার ছবি আপনার অনুমতি ব্যাতিরেখে যে কেও ফেসবুকে শেয়ার করছে। বিশেষ করে এই প্রচলনটা দেখা যায় কোন বিয়ের অনুষ্টানে বা সামাজিক কোন অনুষ্টানে যেখানে অবাধে ছবি তুলা হচ্ছে, সেখানের ছবিটিই শেয়ার হচ্ছে আপনাকে না জানিয়ে। শিক্ষিত অশিক্ষিত সকলেই এই কাজটা করছি। কলেজ ভার্সিটির শিক্ষকরা পর্যন্ত ছবি শেয়ার করার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। নিজের স্ত্রীর ছবিতো দিচ্ছেনই , সাথে কোন সামাজিক অনুষ্টানে গিয়েও মোবাইল দিয়ে ছবি তুলে তা ফেসবুকে শেয়ার করছেন। এক্ষেত্রে যার ছবি শেয়ার করছেন তার অনুমতি নেয়াটার প্রয়োজনীয়তাও মনে করছেন না।
অনেকে নিজের বউয়ের ছবি দিয়ে নিচে আবার ক্যাপশন দিয়ে দেন যে মহিলাটি তার স্ত্রী। কেন রে ভাই,আপনার স্ত্রীকে আপনি কেন একটা লাইকের আশায় বা বউ খুব সুন্দর এধরনের একটা কমেন্টের আশায় এভাবে হাজার হাজার মানুষের লোলুপ দৃষ্টির মধ্যে ফেলে দিচ্ছ ! আপনি জানেননা, আপনারর স্ত্রীকে নিয়ে কতজনে কতভাবে মন্তব্য করে।
সেদিন এক পরিচিত মুখের ফেসবুক আইডি দেখলাম।দেখে ভেতরে গিয়ে মাথা খারাপ অবস্হা। ফোন দিয়ে জানতে পারলাম এই আইডি সম্পর্কে সে কিছুই জানেনা। তার কথায় মনে হয়েছে সে সত্যই বলছে। কিন্তু সত্য হোক আর মিথ্যা হোক তার ছবি দিয়ে একটা অশ্লীল পেইজ খুলা হয়েছে সেটাতো সত্য। এখন কি তার আর কিছু করার আছে। মেয়েদের ছবি দিয়ে যে অসংখ্য নোংরা ফেসবুক আইডি পাওয়া যায় যা সত্যিকার অর্থে ঐ মেয়ের না বা এই পেইজ সম্পর্কে সে কিছু জানেনা।কিন্তু তার ছবিটা হয়তো সে নিজে শেয়ার করেছে নতুবা তার পরিবারের কেও,নতুবা তার কোন বন্ধুবান্ধব। আর এভাবেই সে তার মানসম্মান হারাচ্ছে। শুধুমাত্র ছবি দিয়ে অশ্লীল পেইজ করার কারনে অনেক পরিবার ভেংগে গিয়েছে। অনেকে আত্বহত্যা পর্যন্ত করেছে।
আসুন, আমরা আমাদের পরিবারের মহিলাদের ছবি ফেসবুকে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকি। অনেক সময় আপনি বিরত থাকলেও অন্য কেও শেয়ার করতে পারে। তাই অন্য কারো মোবাইলে নিজের ছবি যেন না তুলি। কোন বিয়ের অনুষ্টান বা সামাজিক কোন অনুষ্টানে মোবাইলে ছবি তুলা নিয়ন্ত্রন করি। যে বিনা অনুমতিতে ছবি তুলবে বা শেয়ার করবে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। আপনি, আমি শুরু করি, দেখবেন আমাদের দেখাদেখি আরো অনেকে এগিয়ে আসছে।
বিষয়: বিবিধ
২৫৩০ বার পঠিত, ৪৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ প্যারিস ভাই। জাজাকাল্লাহুখায়রান।
প্যারিস ভাইয়া...... মন্তব্যটা ডিলিট করে দিলে ভালো হয়....... সুন্দর দেখাচ্ছে না...... ভেবে দেখুন।
আর যার সেটা আছে সবাই তার জন্য এক্সাইটেড থাকে ।
নিজের পাড়ার কথা চিন্তা করুন ( একই ভাবে ফেসবুকও) । পাড়ার সুন্দরী মেয়েটিকে দেখতে তো কিশোর থেকে শুরু করে প্রৌঢ় বয়সী লোকেরা তীর্থের কাকের মত বসে থাকতো ।
মেয়েটিও এসব ঠিকই বুঝতো এবং সেভাবেই সে নিজেকে পরিচালিত করতো যেন সবাই তাকে এডম্যায়ার করে যেতে থাকে ।
সাইবার জগতের ফিল্ড অনেক বিশাল । পাড়ার সেই সুন্দরীর তো নিজে এলাকা আগেই জয় করা হয়ে গেছে । এখন বাইরের জগতে সে কতটুকু গ্রহন যোগ্য তা তো সে যাচাই করবেই ।
যারা এরকম অপসরাকে দেখেনি তারা তো তার রুপের কীর্তন গাইবে , লাইক মারবে , কমেন্ট করবে । তার একটু মন খারাপ হলে সমব্যাথি হবে , হাজারে হাজারে সমবেদনা জানাবে । সর্বদা প্রশংসা পেতে ইচ্ছুক নারী এ সুযোগ কেন গ্রহন করবে না ?
এসব ছবি চালাচালি তো ফেসবুক আসার অনেক আগেই শুরু হয়েছে । আগে নায়িকাদের ছবি আসতো , এখন আসে লোকাল সুন্দরীদের যারাই কালক্রমে বিশ্বজয় করে । প্রিয় নায়িকার ছবি সাথে তার বিকিনি পড়া ছবি সংগ্রহে ছিল না- এরকম লোক পাওয়া দুষ্কর ।
কথা হচ্ছে , যার আছে সে দেখাতে চাইবে এবং যারা দেখতে চায় তাদেরকে সেও বন্চিত রাখতে চায় না ।
'' যখন কোন কিছুই থাকে না লুকাবার , তখন অনেক কিছুই আছে দেখাবার''
এসব কথা যারা বলে এবং কোন প্রতিবাদও করে না - আছে কি কোন উপায় এদের ঠেকাবার?
আপনার লেখাটা পড়ে হয়তো অনেকের চোখ খুলবে।আপনাকে মোবারকবাদ।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন