স্বপ্ন : প্রবাস (আট) নতুন আবহাওয়া, নতুন পরিবেশ
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ২৪ এপ্রিল, ২০১৪, ০৯:০৫:৩৫ রাত
সকল বাঁধা বিপত্তি আর বিড়ম্বনার পথ পাড়ি দিয়ে এক সময়ে মানুষ তার কাঙ্খিত স্থানে এসে পৌঁছে। সম্পূর্ণ নতুন একটা পরিবেশ, সম্পূর্ণ নতুন এক আবহাওয়া তাকে স্বাগত জানায়। নতুন পরিবেশ, নতুন আবহাওয়ায় প্রতিটি বাংলাদেশী নিজেকে সপে দেয়। যারা গরমের দেশে অর্থ্যাৎ আরব দেশ গুলোতে যান তাদের পরিচয় হয় গরমের সাথে। আর যারা শীতের দেশে আসেন তাদের পরিচয় হয় শীতের সাথে। পরিচয় হয় এজন্য বললাম যে এই রকম শীত বা গরমের সাথে বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় কখনো মোলাকাত হয়নি। যেখানে বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় সর্বোচ্চ ৪০° গরম তাপমাত্রা বা সর্বনিম্ন ১৪/১৫° ঠান্ডা তাপমাত্রার সাথে পরিচয় ছিলো সেখানে প্রবাসে আসার পর ৫০° এর উপরে গরম তাপমাত্রা বা মাইনাস ১৪/১৫° ঠান্ডা তাপমাত্রা, কোথাও কোথাও এর চেয়ে বেশী ঠান্ডা এরকম একটা আবহাওয়ার সাথে পরিচয় হয়। যার কারণে নানা রকম শারীরিক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় একজন প্রবাসীকে।
আরব দেশগুলো সম্পর্কে খুব একটা ধারণা নাই, তবে ট্রানজিটে যখন বিমান থেকে নামি তখনই বুঝতে পারি গরম কাহাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি ? আপনার শরীরে যেন কেও একজন আগুনের দলা পাকানো কিছু দিয়ে ঢিল মেরেছে এরকম মনে হয়। আরব দেশ নিয়ে লিখবেন ব্লগার প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন, তাই আমি আমার এই পর্ব থেকে ইউরোপের বিষয়কেই প্রাধান্য দেব । যেহেতু আমি এই পরিবেশ ও আবহাওয়ার সাথে পরিচিত।
আমি যখন ফ্রান্সে আসি তখন ইউরোপে সামার চলছে। সেই সামারেও তাপমাত্রা ২০/২২° । যার কারণে আমার রীতিমত শীত লাগে। কিন্তু অন্যরা যখন টিশার্ট গায়ে দিয়ে ঘর থেকে বের হয় তখন আমি কি করে শীতের কাপড় পরি। মাঝে মধ্যে অবশ্য ৩০/৩২° উপরেও তাপমাত্রা হয়। জুলাই আগষ্ট মাসে থাকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। সেই জুলাই মাসে প্রথম আসাতে ঠান্ডা লেগে কাশি পর্যন্ত হয় । অনেকেই বুঝতে পারেনা, পুরনোদের সাথে ঠান্ডার কাপড় ছাড়া ঘর থেকে বের হয় এতে করে শারীরিক সমস্যায় পড়ে। অবশ্য কিছুদিন পর ঠিক হয়ে যায়। আবার শীতের সময়েও শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। প্রচন্ড শীত থাকে ডিসেম্বর জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি এই মাস গুলোতে। এই সময়ে তুষারপাত হয়। শীত থেকে বেঁচে থাকার জন্য অতিরিক্ত অনেক কাপড় পড়তে হয় । যদি কম হয় তাহলে আর নিস্তার নাই, ঠান্ডা জনিত অসুস্হ্যতা আপনাকে পাবেই। আমার মনে পড়ে, যে বছর প্রথম এসেছিলাম ফ্রান্সে সেই বছরের ডিসেম্বর মাসে প্রচন্ড শীত পড়েছিলো। আমি এখনো বলি সেই শীতের কথা। আমিতো বলি, তার পর থেকে এভাবে শীত আর পড়েনি। অনেকেই মানতে রাজি নয়, কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে হয়তো নতুন বলে। সেই শীতে আমার হাতের আংগুল গুলো ফুলে গিয়েছিলো এবং সাথে চুলকানি। ডাক্তারের কাছে গেলাম, ডাক্তার বললো এটা কিছুনা। সব সময় হাত মুজা পরে থাকতে।
আমিতো বলি , আল্লাহ পাক ইউরোপে বেশী শীত দিয়ে রেখেছেন যাতে করে এই দেশ গুলোর মহিলারা কয়টা মাস অন্তত নিজেদেরকে কাপড়ের ভেতর আবৃত করে রাখে। নতুবা ওরা সারা বছরই উলংগ হয়ে থাকতো।
তারপর হঠাৎ গরম, হঠাৎ ঠান্ডা । দেখবেন খুব সুন্দর সূর্য উঠেছে, আপনি হালকা কাপড়ে ঘর থেকে বের হলেন তখন ঠিকই আপনার আবার ঠান্ডা লাগবে। অথবা দেখলেন একটু ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব, আপনি সামান্য বেশি কাপড় পরলেন। কিন্তু বাহিরে যাওয়ার পর আপনার গরম লাগবে এবং রীতিমত অস্বস্তিও লাগতে পারে। আসলে ইউরোপিয়ানরা সব সময় তাপমাত্রা দেখেই ঘর থেকে বের হয়। আর আমরা সূর্য দেখে ঘর থেকে বের হই। যার কারণে আমাদের দেখাটাও আমাদের ধোকায় ফেলে দেয়। আরেকটা মজার বিষয় আপনাকে ধোকায় ফেলতে পারে তাহলো, আপনি দেখবেন অনেক পুরুষ মহিলা প্রচন্ড শীতেও অপেক্ষাকৃত কম শীতের কাপড় পরেছে। এটা তারা পারে মুলত, তারা মদ পান করে যাতে করে তাদের শরীর উষ্ণ থাকে।
নতুন একটা পরিবেশেও আমাদের খাপ খাইয়ে নিতে সময় লাগে। এখন অবস্থাটা একটু সহজ হয়েছে। কেননা প্রত্যেকেরই কোন না কোন আত্মীয় স্বজন রয়েছে। এতে করে পরিবেশগত সমস্যাটা খুব বেশি অনুভূত হয়না। তবে যাদের কোন ভাই বন্ধু বা আত্মীয় স্বজন নেই তারা একটু সমস্যার মধ্যে পড়েন বৈকি।
তাছাড়াও আপনার জন্য সবচেয়ে কঠিন বিষয় হলো মোরগের খামারে বসবাস এবং সময়ের তারতম্য। রাত সাড়ে ১০টায় সূর্য ডুবে। আগামি পর্বে থাকছে সেই সব কাহিনী।
চলবে.........
বিষয়: বিবিধ
১৪৪১ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমিতো বলি , আল্লাহ পাক ইউরোপে বেশী শীত দিয়ে রেখেছেন যাতে করে এই দেশ গুলোর মহিলারা কয়টা মাস অন্তত নিজেদেরকে কাপড়ের ভেতর আবৃত করে রাখে। নতুবা ওরা সারা বছরই উলংগ হয়ে থাকতো।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন