জীবনের টুকিটাকি
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ২১ এপ্রিল, ২০১৪, ০৬:০৯:৩৮ সকাল
যেদিন প্রথম প্যারিসে এলাম
বিমানেই রাত ৮ টা বেজে গেছে। ভাবলাম বিমান থেকে নামার পর দেখবো চতুর্দিকে লালনীল বাতি জ্বলছে। বড় বড় দালান গুলোকে লালনীল বাতিতে কেমন দেখাবে। বিমান থেকে নামার পর কে রিসিভ করবে । কাওকেতো বলিনি । কি আর করা বিমান থেকে নেমে সোজা কোন হোটেলে গিয়ে উঠবো। তারপর পরিচিত দু'এক জনকে ফোন দেব। এরকম নানান চিন্তা মাথায় নিয়ে একম সময় বিমান থেকে নামলাম। নেমেই একটা টাসকি খেলাম । রাত ৮ টা, অথচ সূর্য্য যেন মাথার উপর। রাত ৮ টা,মানে প্যারিসের টাইম। তাহলে কেন দুপুরের রোদের মত সূর্য্যটা মাথার উপর। এক সময় ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে এয়ারপোর্ট থেকে বের হলাম। একজন বাংলাদেশীকে পেলাম,তাও আমার নিজ উপজেলার এবং আমার পরিচিত অনেক কেই তিনিও চিনেন। আমাকে আর হোটেলে যেতে হলোনা। তার সাথে ট্রেনে চড়ে বসলাম। প্রথম জিজ্ঞাসা, কি বিষয় রাত ৮ টা বাজে অথচ এখনো দিনের আলো ।বললেন, এই সময়ে সূর্য্য ডুবে ১০ টায়।
তিন তলা খাটের সাথে পরিচয়
তিনিই আমাকে পাঠিয়ে দিলেন আমার পরিচিত একজনের বাসায়। ৪ রুমের বাসা। দু'টি দখল করে রেখেছেন বাসার মালিক। যার একটিতে তারা স্বামী স্ত্রী থাকেন এক বাচ্চা সহ। আর অপরটি সিটিং হিসাবে ব্যবহার করেন। অপর দু'টির একটিতে ৩ তলা বিশিষ্ট দু'টি খাটে মোট ৬ জন থাকেন। আর একটি খাবার দাবারের জন্য। দ্বিতীয়বার টাসকি খাইলাম। ৩ তলা খাটে ঘুমাবো কি করে । অবশ্য আমাকে ৩ তলার নিচতলায় থাকতে দিলেন আমার এক পাশের বাড়ির চাচাতো ভাই। মাত্র ১০ দিন থেকে অন্য বাসায় চলে যাই।সেখানে দুই তলা খাটের উপর তলায় থাকতে হয়েছে অনেকদিন।
প্যারিসের ফকির
প্যারিসে অনেক ধরনের ফকির আছে। আতুড় লোড়াল্যাংড়াতো আছেই। কেও গান গেয়ে আপনাকে আনন্দ দানের মাধ্যমে আপনার সাহায্য চাইবে। কেও একটা কুকুর নিয়ে বসে আছে এবং আপনার কাছে কুকুরের জন্য খাবার চাইবে। কেও একটা লিফলেট দেবে, যেখানে লেখা আছে " আমি আশ্রয়হীন, আমার স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে, আমার কোন কাজ নেই" ইত্যাদি বলে আপনার কাছে সাহায্য চাইবে। যুবক বৃদ্ধ সব বয়েসেরই আছে। এমনকি পুরুষ মহিলা। অনেকে এসে আপনাকে রীতিমত সালাম দেবে। আমি তাদেরকে কখনো ২/১ ইউরো দেয়ার চিন্তা করতাম না। একদিন এক বৃদ্ধ যার হাতে একটি মদের বোতলও আছে। আমাদের কাছে ১ ইউরো চাইলো। আমি দিতে চাইনি। কিন্তু আমার সাথের এক বড় ভাই তিনি দিলেন। আমি বললাম, আপনার কাছ থেকে ইউরো নিয়ে সে মদ কিনে খাবে। তখন তিনি বললেন, সে কি করবে আমি জানিনা।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, কোন ছাইলকে খালি হাতে ফিরিয়ে না দিতে। আর যে আল্লাহ তাদের রিজিক নিয়োমিত দিয়ে যাচ্ছেন সেই আল্লাহর গোলাম হয়ে আমি কেন দেবনা।
তার এই কথাটা আমার খুব ভালো লেগেছিলো। এর পর থেকে আমিও যথাসাধ্য দেয়ার চেষ্টা করি।তবে বয়স্ক এবং মহিলাদের।
কাওকে ছোট মনে করতে নেই
ফ্রান্সে বৈধ হওয়ার অন্যতম সহজ পথ হলো রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা। আর আপনি যখন আশ্রয় প্রার্থী হবেন তখন আপনাকে সংশ্লীষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ইন্টারভিও দিতে হবে। ইন্টারভিও দেয়ার পরই আপনার পজেটিভ হোক আর নেগেটিভ হোক একটা রিজাল্ট আসবে। তো আমিও সেই ইন্টারভিও এর মুখোমুখি হওয়ার জন্য একটা চিঠি পেলাম। ভাবলাম নির্ধারিত তারিখে ইন্টারভিও না দিয়ে তাদের কাছ থেকে সময় নেব। (এটা সম্ভব) আমার ভাবনাটা রুম মেটদের সাথে শেয়ার করলাম। তখন আমাদের রুমমেটদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে কম শিক্ষিত এবং যাকে আমরা হাবাগুবা মনে করতাম তিনি আমাকে বললেন, ভাই ইন্টারভিও না দিলে কোনদিনই রিজাল্ট আসবেনা। যেহেতু এটাই মাধ্যম সেহেতু ইন্টারভিও দিয়ে দেন। দেখেন কি হয়। তার এই কথা শুনে ঠিকই ইন্টারভিও দিয়ে দেই এবং আল্লাহর রহমতে আমার পক্ষে রিজাল্ট আসে। সেদিন থেকে বুঝলাম কাওকে ছোট মনে করতে নেই।
বিষয়: বিবিধ
১২৮৯ বার পঠিত, ৪৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পড়ে মন্তব্য করা হপে
তৃতল বিছানা এখন সব দেশেই আছে।
০ প্যারিস তথা ফ্রান্সের সারা বছরের দিন-রাতের ডিস্ট্রিবিউশন জানালে ভাল হয় ।
''এর পর থেকে আমিও যথাসাধ্য দেয়ার চেষ্টা করি।তবে বয়স্ক এবং মহিলাদের।''
০ বয়ষ্ক এবং যারা আদৈ কাজ করতে পারবে না বলে মনে হয় তাদের দেওয়া উচিত । কাজ করতে পারে এমন ( পুরুষ বা মহিলা ) কাউকে দিলে এটা তার স্বভাবে পরিনত হবে । সামর্থ্য থাকলে মানুষের দয়া নিয়ে চলা খুব একটা সন্মানজনক না ।
তার চেষ্টা করা উচিত কোন কাজ পাবার ( এসব দেশে বাংলাদেশের মত কোন নিচু কাজে মানুষ নাক সিঁটকায় না ) অথবা আপনিই তাকে রাস্তা বাতলে দিতে পারেন ।
আল্লাহ কোন জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করেন না , যতক্ষন না পর্যন্ত তারা নিজেরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে সচেষ্ট হয় ।
''ফ্রান্সে বৈধ হওয়ার অন্যতম সহজ পথ হলো রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা। ''
০ রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনাকে দেখি সবখানেই বড় করে দেখে , কেন ?
ইন্টারভিউতে কি ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে বলা যাবে কি ?
পোস্ট ভাল লেগেছে ।
হেডিং দিয়ে কয়েক লাইনে এক প্যারা শেষ , পোস্টও বড় তথা বোরিং না । এরকম পোস্টই ভাল লাগে ।
আল্লাহ্র সাহায্য অপ্রতাশিত ও দুর্বল জায়গা থেকে শুরু হতে পারে। এমনটাই আমার জীবনে অনেকবার ঘটেছে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
একজন জ্ঞানী ব্যক্তির কাছথেকে শুনেছিলাম উপরের মাস্-আলাটি। উনার দেয়া রেফারেন্সটা এখন মনে নেই। (আমার মাথায় আসা রিলেটেড একটা কুরআনের আয়াত নিচে দিয়েছি)।
তো এখন, মদের বোতল হাতের লোকটি "টাকা পাইলে মদই কিনবে" এটা অনেকটা নিশ্চিত বলা যায়; অথবা সম্ভাবনা ৫০% এরও অধিক।
আমার মনেহয় এমতবস্থায়, উপরে বর্নিত হাদীসের চেয়ে নিচের আয়াতটি বেশি কার্যকর:
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّـهَ ۖ إِنَّ اللَّـهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
অর্থঃ সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা। (সুরা আল-মাইদাঃ ২)
আমার মনেহয় এধরনের লোকদেরকে সাহায্য না করাই উত্তম। (আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা'লা ভালো জানেন, ভুল বল্লে যেন আমাকে ক্ষমা করেদেন।)
শেয়র করার জন্য ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন