হজরত আলী (রাঃ) ও এক ইয়াহুদীর মামলা
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ০৪ এপ্রিল, ২০১৪, ০৫:৩৭:১৭ সকাল
এক ইহুদীর ঘটনা
===========
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত আলীর (রা)অধীনস্থ প্রজা সে। কিন্তু ইহুদীর কুটিলতা হাড়ে মাংসে।একবার সে হযরত আলীর (রা)লৌহবর্ম দখল করে বসল। হযরত আলী চাইলেন।অস্বীকার করলো ইহুদী।বলল,দেব না।এটা আমার। বিশাল সাম্রাজ্যের অধিপতি,তাঁর সম্পদ জোর করে দখল করে আছে তাঁরই একপ্রজা। তাও ভিন্নধর্মী,সংখ্যালঘু ইহুদী । অসংখ্য মুসলিম সৈনিক-জনতা যেখানে খলীফার একটি অঙ্গুলির ইশারায় জান দিতে প্রস্তুত সেখানে মুসলমানদের জাতশক্র একজন ইহুদী তাদের রাষ্ট্রনায়কের অধিকার কেড়ে নেয়।খলীফা বিনয়ের সাথে তাঁর নিজের লৌহবর্ম চান।কিন্তু সেদিবেই না।
খলীফার হাতে শক্তি প্রচুর ,তবে তিনি তা খাটাবেন না ।কারণ, আইন আছে। আইন মানুষের অধিকার সংরক্ষণ করে, সমাজ করে সুশৃঙ্খল, সুন্দরও নিরাপদ ।অবশেষে বাধ্য হয়ে খলীফা মামলা দায়ের করলেন ইহুদীর বিরুদ্ধে।বিচারকশুরাইহ ।খলীফার অধীনস্থ কর্মচারী ।মামলা যথাসময়ে আদালতে উঠেছে।বাদী খলীফা নিজে।বিবাদী তাঁরই একজন প্রজা।বিচারক খলীফাতুলমুসলিমীনকে লক্ষ্য করে বললেন,আমীরুল মুমিনীন! আপনার দাবির পক্ষে সাক্ষী পেশ করুন দু-জন সাক্ষী । হযরত আলী দু'জনসাক্ষী উপস্থিত করলেন যারা উভয়েই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী । একজন তাঁর ক্রীতদাস অন্যজন তদীয় পুত্র হযরত হাসান (রা) ।সাক্ষী অস্বীকার করে দিলেনবিচারক । তিনি বলে দিলেন :আমীরুল মুমিনীন আইনের দৃষ্টিতে বাপের পক্ষে পুত্রের এবং প্রভুর পক্ষে ভৃত্যের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয় । তাই আমি আপনার এই সাক্ষী গ্রহণ করতে পারছি না ।
আপনার কাছে অন্য কোনসাক্ষী থাকলে পেশ করুন ।খলীফা বিনয়ের সাথে বললেন :না, ঘটনার সময় এই দু-জন ছাড়া তৃতীয় কেউ উপস্থিত ছিল না । তাই আমি অন্য কোন সাক্ষী পেশ করতে অক্ষম ।বিচারক বললেন -তাহলে আমি আপনার পক্ষে রায় দিতে পারছি না । আইনের বিধানমতে এই লৌহবর্ম বিবাদী ইহুদীরই পাওনা ।আমি তার পক্ষেই রায় দিলাম ।বিচার মেনে নিলেন হযরত আলী । সন্তুষ্টচিত্তে ত্যাগ করলেন বিচারালয় । যেন তার কোনই অভিযোগ নেই কারো প্রতি । ইহুদীর প্রতিও তার কোন ক্ষোভ নেই । কারণ, আইনকে উপেক্ষা করতে পারেন না তিনি । করলে সমাজদেহে ভাঙন ধরবে।
অবস্থা দেখে, বিস্ময়ে বিহ্ববল হলো ইহুদী।সে ভেবে পায় না,এটা কি করে সম্ভব? একজন রাষ্ট্র প্রধানের সম্পদ অন্যজন জোরপূর্বক নিয়ে নিবে তাও ভিন্নধর্মী, তাঁরই অধীনস্থএকজন সাধারণ প্রজা! কিন্তু বিধিসম্মত প্রমাণ দিতে না পেরে পরাজয় বরণ করবে? অধীনস্থ বিচারককে সত্য জানাশোনা অকাট্য বাস্তবতার উপরও চাপ দিবে না? আইনের গতির কাছে নিজের সকল ক্ষমতা এভাবে সমর্পণ করে দিতে পারে কোন ক্ষমতাশীল শাসক?
হতবাক ইহুদী! মুসলমান শাসকের বিস্ময়কর মানবতার কাছে পরাজিত হয় তার সকল অস্তিত্ব । তার চেতনা-অনুভব মুহূর্তে পরাস্ত হয় বিবেকের কাছে।মোমের মতো গলে যায় এক মুসলিম শাসকের ঈমানী শিখার পরশে এক কঠিনহৃদয় ইহুদীর আকীদা-বিশ্বাস।অন্তঃকরণে পুঞ্জীভূত অন্ধকার বিদূরিত হয় সে আলোর ছোঁয়ায়।সবিনয়ে ফিরিয়ে দেয় খর্লীফার লৌইবর্ম। আর নবচেতনায় উদ্বেলিত বিশ্বাসে বলে উঠে-"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুমুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ "।
মুসলমানদের দেশে সংখ্যালঘু অমুসলিমদের অধিকার নিয়ে অধুনা যারা হল্লা করেন সেসব বুদ্ধিজীবীরা তাদের আধুনিক সভ্যতায় এমন একটি ঘটনার প্রমাণ দিতে পারবেন কি? যাদের স্বার্থ রক্ষায় রক্তাক্ত হয় আইনের অশরীরী গাত্র, যাদের সভ্যতার আঘাতে অমুসলিম কথিত সুসভ্য (?)দেশগুলোতে নির্বিচারে জীবন দিয়ে চলছে অসংখ্য মুসলমান,কাগজে লেখে তারাই নাকি সভ্য মানুষ । আর এসব সভ্য মানুষদের ণ্ডণকীর্তনে পঞ্চমুখ, পা-চাটা একটি বিশেষ শ্রেণী বজ্জাত গোষ্ঠী ইসলামী সভ্যতাকে বলে বর্বরতা! কিছু বলার নেই।মনে হয়, নির্লজ্জতাই আধুনিক সভ্যতার চাণক্য- ফ্যাশন।
(সংগ্রহ)
বিষয়: বিবিধ
৩৫৪৭ বার পঠিত, ২৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন