কবি আল মাহমুদ : যখন একজন অশ্লীল কবি
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ২৯ মার্চ, ২০১৪, ০৮:৩৮:৩৪ সকাল
কবি আল মাহমুদ। আমার একজন প্রিয় কবি। বাংলাদেশের জাতীয় এই কবির সাথে পরিচয় হয় তার লিখা নোলক কবিতার মধ্য দিয়ে । অসংখ্য প্রিয় কবিতার মধ্যে সেই কবিতাটি অনন্য। পাঠকের জন্য সেই কবিতাটি নিচে দিয়ে দিলাম। আশা করি ভালো লাগবে।
আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে
হেথায় খুঁজি হোথায় খুঁজি সারা বাংলাদেশে।
নদীর কাছে গিয়েছিলাম, আছে তোমার কাছে ?
-হাত দিওনা আমার শরীর ভরা বোয়াল মাছে।
বললো কেঁদে তিতাস নদী হরিণবেড়ের বাঁকে
শাদা পালক বকরা যেথায় পাখ ছড়িয়ে থাকে।
জল ছাড়িয়ে দল হারিয়ে গেলাম বনের দিক
সবুজ বনের হরিণ টিয়ে করে রে ঝিকমিক।
বনের কাছে এই মিনতি, ফিরিয়ে দেবে ভাই,
আমার মায়ের গয়না নিয়ে ঘরকে যেতে চাই।
কোথায় পাবো তোমার মায়ের হারিয়ে যাওয়া ধন
আমরা তো সব পাখপাখালি বনের সাধারণ।
সবুজ চুলে ফুল পিন্দেছি নোলক পরি নাতো !
ফুলের গন্ধ চাও যদি নাও, হাত পাতো হাত পাতো
বলে পাহাড় দেখায় তাহার আহার ভরা বুক
হাজার হরিণ পাতার ফাঁকে বাঁকিয়ে রাখে মুখ।
এলিয়ে খোঁপা রাত্রি এলেন, ফের বাড়ালাম পা
আমার মায়ের গয়না ছাড়া ঘরকে যাবো না।
সেই কবির একটি কবিতা টেনে এনে ব্লগের পাতায় সেটে দিয়ে তাকে একজন অশ্লীল কবি হিসাবে উপস্হাপনের চেষ্টা করেছেন কথিত চেতনাধারি একজন ব্লগার। আমার বুঝে আসেনা আল মাহমুদকে নিয়ে তার কেন এই চুলকানি।আর হঠাৎ করে কেন বা এই পোষ্ট ?
সত্যিকার অর্থেই কি আল মাহমুদ একজন অশ্লীল কবি ?
এই প্রশ্নটার উত্তর খুজতে গেলে আপনাকে অন্যান্ন কবিদের কবিতা ও তাদের চরিত্র সম্পর্কে পড়তে হবে। আপনি দেখবেন প্রায় সকল কবিই তাদের কবিতায় প্রেম-প্রীতি, ভালবাসা, নারী, পুরুষ , সমাজ -সভ্যতা সকল বিষয়েই লিখেছেন। লিখেছেন ধর্ম-কর্ম,সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্টান নিয়ে। প্রেম-ভালবাসা নিয়েই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি লেখালেখি হয়েছে। যেখানে ফুটে উঠেছে নারী পুরুষের আবেগ ও অনুরাগ। ফুটে উঠেছে চাওয়া-পাওয়া, কামনা-বাসনা,বিরহ-যাতনা। ফুটে উঠেছে শারিরিক গঠন-আচরন। লেখনি শুরুর প্রাথমিক পর্যায়ে এই বিষয়গুলি দিয়েই অনেকের লেখা শুরু হয়। তাইতো বলা হয়ে থাকে মানুষ প্রেমে পড়লে কবি হয়। আবার অনেকে বলেন, মানুষ বিরহে পড়ে কবি হন।
কবি আল মাহমুদ সেই সব কবিদের মধ্যেই একজন। যার একটা জীবন এই সব বিষয় নিয়েই লেখালেখি হয়েছে। তখন কিন্তু তিনি বাংলাদেশের সেরা কবি ছিলেন। (এখনো আছেন বলে আমার বিশ্বাস।) জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে তার অনেক নাম ডাক ছিলো। এখনোও আছে তবে পরিসরটা একটু ছোট হয়ে এসেছে। কেন এসেছে এটা কবির মুখেই শুনেছিলাম।
সম্ভবত, ১৯৯৬ সাল। আমাদের পার্শ্ববর্তী বিয়ানিবাজার উপজেলায় একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রোগ্রামে তাকে প্রধান মেহমান করে আনা হয়েছিলো। সেই প্রোগ্রামে তিনি বলেছিলেন, আমি এখন আর ভন্ডামী করিনা। আমি ইসলামকে জানতে পেরেছি, কুরআন হাদীস পড়ে নিজেকে জানতে পেরেছি, আমি আমার স্রষ্টাকে চিনতে পেরেছি। আমি আমার মুখে দাড়ি রেখেছি,তাই এখন আর আমাকে আগের মত সমাদর করা হয়না। তার পরও আমি খুশি, আমি তৃপ্ত এই জন্য যে আমি সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে আছি।
তার সেই কথাগুলো এখনো আমার কানে বাজে।
তাই বলি, আল মাহমুদকে নিয়ে কেন এই চুলকানি ? একজন মানুষ খারাপ থাকতে পারে। তাই বলে সে কি আর ভালো হতে পারেনা। নাকি ভালো হোক সেটা আপনারা চান না। যতই আজেবাজে কথা লিখুন আল মাহমুদই আজ বাংলাদেশের সেরা ও জাতীয় কবি।
বিষয়: সাহিত্য
১৮৮১ বার পঠিত, ৩৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ওরা জানেনা বেশ্যার নষ্টামি আর মা বাবার সংসার এক নয়, তবু তারা সুযোগ পেলেই এক করে দিতে চায়।
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7238
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
আল হামদু লিল্লাহ কবি আল মাহমুদ সুপথে চলতে চেষ্টা করছে ।
আমার দৃষ্টিতে তিনিই বর্তমানের সেরা কবি ।
বেশ কিছুদিন আগে পশ্চিমবঙ্গের এক নামী সাহিত্যিকের সাক্ষাৎকার পড়েছিলাম, খুব সম্ভবত সুনীল অথবা সমরেশ মজুমদারের, উনি অকপটে বললেন "কবি আল মাহমুদই দুই বাংলার সেরা কবি তবে আমি শুনেছি তিনি নাকি ইদানিং মৌলবাদীদের সাথে গাঁটছাট বেধেছেন"।
এই হল কবি আল মাহমুদকে নিয়ে ওদের যত হীনমন্যতা। ভালো লাগল সাইফুল ভাই অনেক ধন্যবাদ।
কবি আল মাহমুদ আমার প্রানের কবি
ধন্যবাদ আপনাকে প্রিয় কবিকে নিয়ে লিখার জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন