মুতাসিম বিল্লাহ : বয়সইবা আর কত হবে। তার জন্য দোয়া চেয়েছেন তার প্রিয় দায়িত্বশীল
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ২১ মার্চ, ২০১৪, ০৬:১১:১৪ সন্ধ্যা
প্রিয় মুতাসিমের জন্য সবাই দোয়া করবেন
- হাসমত আলী লিটন
মুতাসিম বিল্লাহ।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের একজন জানবাজ নিবেদিত কর্মী। খুবই মেধাবী ও চঞ্চল প্রকৃতির। সংগঠনের কাজে সবার আগে থাকে। জেএসসি পরীক্ষা শেষ করেছে সবে মাত্র। পরীক্ষা শেষ করে সংগঠনের সকল কার্যক্রমে তার উপস্থিত ছিলো চোখে পড়ার মতো। কিন্তু সেই প্রিয় ভাইটি আজ আমাদের খেকে অনেক দূরে। তাকে ছাড়া আজ আমাদের মাঝে অনেক শুণ্যতা বিরাজ করছে।
২০১৩ সালের ১০ ডিসেম্বর ইসলামের দুশমন বাকশালী আওয়ামী সরকারের গৃহপালিত ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার ঘোষনা দেয়। তার প্রতিবাদে সারা দেশ যখন বিক্ষোভে ফেটে পড়ে তখন রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলায় হাজার হাজার ইসলাম প্রিয় তৌহিদি জনতা রাজপথে নেমে আসে। সারা দেশে আমাদের অসংখ্য ভাই আহত হয়। সেদিন আমাদের প্রিয় ভাই মুতাসিম বিল্লাহর সাড়া শরীর অগ্নিদগ্ধ হয়। বিশেষ করে তার সমস্ত মুখমণ্ডল, গলা, দু'হাত, দু'পা, বুক ও পিঠ অগ্নিদগ্ধ হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অনেক বাধাঁ বিপত্তি অতিক্রম করে উন্নত চিকিত্সার জন্য তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
তার শরীরের অনেক জায়গায় গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয় বিশেষ করে ডান হতের কনুসহ কয়েক জায়গায় হাড় বের হয়ে যায়। ১ মাস চিকিত্সার পর ৮ জানুয়ারি তার উরুর ১০ ইঞ্চি চামড়া কেটে ডান হাতের কনু, অনামিকা আঙ্গুলে ও পিঠের মোট ৭ জায়গায় স্থাপন করা হয়। সাধারণত অপারেশন থিয়েটারে ড্রেসিং করা হয়না। কিন্তু তার প্রতিটি ড্রেসিং ছিলো এক একটা অপারেশনের চেয়েও বেশি। তার সমস্ত শরীর একে একে ১৬ বার ড্রেসিং করা হয়েছে তন্মধ্যে ১৪ বারই বেহুশ করে করা হয়েছে। তার অসহনীয় কষ্টগুলো যেনো কারাগারে বছরের পর বছর ধরে বন্দি থাকার চেয়েও বেশি। মাসের পর মাস সরকারের নিষ্ঠুর রিমাণ্ডের চেয়েও তার শারীরীক কষ্ট ছিল অনেক বেশি। তারপরও সে ছিল পাহাড়ারের মতো অটল। হাজার কষ্টের মাঝেও তাকে নিজের শরীরকে কন্ট্রোল করতে হতো অনেকটা বাধ্য হয়েই। ধৈর্যের বাধঁ ভেঙ্গে গেলেও শুধু বাম কাধেঁর উপড় ভর করেই শুয়ে থাকতে হয়। এখনো ঠিকমতো দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা। অনেক কষ্টের মাঝেও সে মোবাইল ফোনে ইসলামী সংগীত শুনতো আবার কখনো নিজেই গেয়ে নিজের কষ্টকে লুকানোর চেষ্টা করতো। এক সময় গান শেষ হয়ে গেলেও কষ্ট বেড়েই চলতো। নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে যখন পানি গড়িয়ে পড়তো তখন তার বোন চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বলতো "ভাইয়া কেঁদোনা, কাঁদলে চোখে সমস্যা হবে। সে বলতো, না না আমি কাদছিনাতো, কই, আমার চোখে পানি নেইতো।" এমনই কষ্ট হতো যে তার চোখে পানি আসা যাবেনা, ছটপট করতে পারবেনা। মাঝে মাঝে তার কষ্ট দেখে স্বজনদের কান্না আর আহাজারীতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠতো। এতো কষ্টের মাঝেও সে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে। ইসলামী সাহিত্য পড়ার চেষ্টা করে। সংগঠনের খোজ খবর রাখে সবসময়।
এমন কোনো দিন যায়নি যে আমি তার খোঁজ নেইনি। মাঝে মাঝে তার সাথেও কথা বলা চেষ্টা করেছি। এখন অবশ্য নিয়মিতই কথা হয়। যার শারীরিক কষ্ট প্রতিটি মুহুর্তের জন্য সে কষ্টের বর্ণনা দেয়া অসম্ভব। আমি যখন এ কথাগুলো লিখছি তখন আমি আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। হে আল্লাহ আমার ভাইয়ের ধৈর্যশক্তি বাড়িয়ে দাও। আমীন।
তার মা, বোন, ভাই সবসময় তার পাশে থেকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। রাত গভীর হলেও দিন-রাতের পার্থক্য করা যেনো তাদের কাছে অকল্পনীয়। বিশেষ করে তার মা তার জন্য সার্বক্ষনিক কষ্ট করছেন। সংগঠনের মহিলা বিভাগের থানা দায়িত্বশীল তিনি। সমস্ত কাজ ফেলে তিনি আজ ছেলের শিউরে দাড়িয়ে থাকেন সবসময়। অনেক সময় ক্লান্ত শরীরে চোখ দু'টো বন্ধ হয়ে আসলেও ঘুমাতে পারেন না এই চিন্তায় যে কখন ছেলে মা বলে ডাকবে। হে আল্লাহ সেই গর্বিত মাকে তুমি দীর্ঘায়ু দান করো, হায়াতে তাইয়্যেবা দান করো। আমীন।
আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী যে দীর্ঘ দেড় মাস ধরে হাসপাতালে চিকিত্সার পর এখন সে আশংকামুক্ত। আলহামদুলিল্লাহ।
আরো বেশ কিছুদিন সময় লাগবে তাকে আমাদের মাঝে ফিরে আসতে।
ভাবিষ্যতে সে ডাক্তার হয়ে দেশের অসহায়-নির্যাতিতমানুষের সেবা করতে চায়। বিশেষ করে ইসলামের সেবা করাই তার মূল লক্ষ্য। আমাদের প্রিয় এই ছোট্ট ভাইয়ার জন্য সবাই দোয়া করবেন।
হে আল্লাহ প্রিয় মুতাসিমকে তুমি দ্রুত সুস্থ করে দাও। তার শারীরীক ও মানসিক কষ্ট দূর করে দাও। তাকে সুন্দর অবয়বে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দাও। আমীন। ছুম্মা আমীন।।
মা'য়াসসালাম-
হাসমত আলী লিটন
সভাপতি
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির
রংপুর জেলা
(ফেবু থেকে কপি)
বিষয়: বিবিধ
১৪৭৮ বার পঠিত, ২৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মাগার এই ছেলেডা কি কারণে অগ্নিদগ্ধ হলো, কারা তারে তারে অগ্নিদগ্ধ করলো তার কুনো বর্ণনা নেই। মাইনষের সন্দেহ হইবার পারে!!!
মহান আল্লাহ মজলুমের সহায় হন
হে আল্লাহ প্রিয় মুতাসিমকে তুমি দ্রুত সুস্থ করে দাও। তার শারীরীক ও মানসিক কষ্ট দূর করে দাও। তাকে সুন্দর অবয়বে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দাও। আমীন। ছুম্মা আমীন।।
আমীন।
আহ। যদি কখনো এসব দায়ীদের কাছে দাড়াতে পারতাম। হাত বাড়িয়ে বলতে পারতাম, আমরা তোমার সাথে আছি। এত ভয় কেন?
মন্তব্য করতে লগইন করুন