মতিউর রহমান মল্লিক: ছেড়া পান্জাবীতে যাকে প্রথম দেখেছিলাম
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ২০ মার্চ, ২০১৪, ০৫:৫৯:০১ সকাল
সারাদিন কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে চিন্তা করেছিলাম আজ স্বপ্ন:প্রবাস সিরিজের সপ্তম পর্ব লেখবো। যখন ল্যাপটপের সামনে বসলাম নির্বাচিত পোষ্টে মল্লিক ভাইয়ের ছবি দেখে মনে হলো আজ মল্লিক ভাইকে নিয়ে লিখি। এর আগেও একবার ইচ্ছা জেগেছিলো কিন্তু কেন যেন আর লিখা হয়নি। এই মানুষটিকে নিয়ে আরো বেশী লেখা দরকার ছিলো। যারা চমৎকার শব্দ চয়নের মাধ্যমে একটি লেখাকে সাবলীল ও প্রানবন্ত করে উপস্হাপন করতে পারেন তাদের কাছে এই আবদারটুকু থাকলো।
মতিউর রহমান মল্লিক শুধু একটি নাম নয়, রাসুলের উত্তরসূরী সাহাবাদের প্রতিচ্ছবি। ইসলামী রেনেসার কবি মল্লিককে প্রথম যেদিন দেখলাম সেদিন থেকেই তিনি যেন আমার আত্বার পরম আত্বীয়। অবশ্য তাকে না দেখলেও তার নামের সাথে এবং ইসলামী গানের বই ঝংকারের সাথে, পাশাপাশি তার গাওয়া গানের সাথে আগেই পরিচিত হয়েছিলাম। বলা বাহুল্য, আমি আবার ইসলামী গানের চরম পরম ভক্ত। শুধু ভক্ত বললে মনে হয় কিছু একটা লুকানো হয়ে যাবে " আমি সেই ছোট বেলা থেকেই ইসলামী গান গজল গেয়ে আসছি এবং এখনো সুযোগ পেলে হাতছাড়া করিনা।"
সাল টা মনে নেই, সম্ভবত ১৯৯৬ সাল হবে। মৌলভীবাজারের তৎকালীন জেলা আমীরের দেওয়ান মন্জিলের বাসায় অবস্হিত সংগঠনের অফিসে ৩ দিন ব্যাপী শিক্ষা শিবিরে মতিউর রহমান মল্লিক ভাই মেহমান হিসাবে এসেছিলেন। এই প্রশিক্ষন কর্মশালায় মল্লিক ভাই আসবেন এটা জানার পর নিজের মনে অন্যরকম এক আনন্দের ঢেও খেলে যায়। অপেক্ষায় ছিলাম তিনি কখনো আসবেন। কর্মশালার দ্বিতীয় দিন কার্যালয়ের পাশেই অবস্হিত মসজিদে জুহরের নামাজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি ঠিক এই সময়ে মল্লিক ভাই মসজিদে ঢুকলেন। আমি প্রথমে চিন্তে পারিনি। কেননা তিনি এতটাই সাদাসিদা পোশাক পরে এসেছেন কেও আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার আগে আমার কছে মনে হয়েছিলো নামাজ পড়ার জন্য কোন পথচারী হয়তো মসজিদে ঢুকেছেন।
জুহরের সুন্নাত আদায় করে গিয়ে বসলাম তার পেছনের কাতারে। এখনতো আমার চোঁখ ছানাবড়া হওয়ার অবস্হা। একই ! তিনি কিভাবে মল্লিক ভাই হন ? একজন কবি সাহিত্যিক হিসাবে যাকে চিনি, যার গান ক্যাসেটে শুনা যায়, যাকে দেখার জন্য ব্যাকুল ছিলাম তিনি একটি ছেড়া পান্জাবী পরে এসেছেন। তার পান্জাবীর পেছনের দিকে ডান কাধে কিছু অংশ ছেড়া। এটা কিভাবে মানা যায় ? না , তিনি মতিউর রহমান মল্লিক না। তিনি ঐ পথচারী যিনি জুহরের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে এসেছেন।
নামাজ পড়ে দুপুরের খাবার দাবার হলো, হলো কিছুক্ষন বিশ্রাম নেয়া। কর্মশালার পরিচালক মাইকে ঘোষনা দিলেন আর মাত্র ১০ মিনিটের ভেতর সবাইকে হলরুমে প্রোগ্রামে হাজির হতে হবে। এখনকার আলোচনায় অংশ নিবেন মতিউর রহমান মল্লিক। শুনেই হাত মুখ ধুয়ে হলরুমে হাজির হয়ে একটা সামনের সীটে গিয়ে বসলাম । যাতে খুব কাছ থেকে দেখতে পারি। যথা সময়ে প্রোগ্রাম শুরু হলো। মতিউর রহমান মল্লিক মঞ্চে এসে বসলেন। তাকে দেখে আমার ঘোর কাটলো। না, তিনিই মল্লিক ভাই যাকে আমি মসজিদে ছেড়া পান্জাবী পরা অবস্হায় দেখেছিলাম। একই পান্জাবীতেই তিনি হলে ঢুকেছেন, আমাদের সামনে আলোচনা রাখলেন। আমরা সকলেই অনুরোধ করলাম গান শুনানোর। একজন শিল্পীকে অনুরোধ করার পর তা কি আর বিফলে যায়। শুধু এতটুকুই বললেন, বয়েস হয়েছে আগের মত আর গাইতে পারিনা। মল্লিক ভাই গাইলেন আর আমরা শুনলাম তন্ময় হয়ে।
মল্লিক ভাইকে এত কাছ থেকে দেখে, তার আলোচনা শুনে, গান শুনার পরও আমার যেন বিশ্বাস হচ্ছিলোনা। একজন দায়িত্বশীলকে প্রশ্ন করলাম,মল্লিক ভাইর এই অবস্হা কেন ? তিনি জানালেন, মল্লিক ভাই এরকমই খুবই সাদাসিদে জীবন যাপন তিনি পছন্দ করেন। পরবর্তীতে মল্লিক ভাই সম্পর্কে আরো জানার সুযোগ হয়েছে, দেখার সুযোগ হয়েছে সব সময়ই মল্লিক ভাইকে খুব সাধারন বেশভুসায় দেখেছি।
বিষয়: সাহিত্য
১৬৭৫ বার পঠিত, ৩০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্যটি আমার কাছে ভাল না লাগলেও আপনার চেতনায় জাগ্রতদের একটু হলেও সুখ দেবে। এ সামান্য তৃপ্তির ঢেকুর নিজেকে বিশালতা থেকে বঞ্চিত বৈ কিছুই নয়।
আমরা সবাই তাকে বলি"না"
তোমার সৃষ্ট যদি হয় এত সুন্দর
না জানি তাহলে তুমি কত সুন্দর।
এই গান গুলি যেন এখনো কানে বাজে।
তার সাথে প্রথম দেখা হওয়ার কথাটি জুম্মি নাহদিয়ার পোষ্টে লিখেছি।
মনে করুন মল্লিক ভাই জীবনে কোনদিন একটাও নেকি করেনি. কিন্তু আমার মতো কোটি যুবককে তার সাধনা দিষে একটি অশ্লীল জগৎ থেকে বাচিষে রেখেছে।
এর প্রতিদান আল্লাহর কাছে জান্নাত ছাড়া আর কি হতে পারে?????
তখন বিপথে তুমি নিওনা।
সংগঠনে যোগ দেয়ার কারণে তাকে বাড়ী থেকে বের করে দেয়া হল। তখন খান ভাই ছিলেন সভাপতি। বিষয়টি জেনে খান ভাই তাকে বলল সোজা ঢাকা চলে আসতে। তিনি তাই করলেন।
অনেক বছর পর বয়োবৃদ্ধ খান ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গেলেন ওমরাহ করতে এসে। আহ। আমি দেখিনি। কিন্তু শুনেই বিমোহিত হলাম।
এত বড় রেনেসার শিল্পী খান ভাইয়ের পায়ের কাছে মাটিতে বসে গেলেন।
- এ কি করছেন। আপনি উপরে বসেন মল্লিক ভাই, খান ভাই অনুরোধ করলেন।
- না ভাই। আপনি আমার সভাপতি। এ দ্বীনে আসার জন্য পদপ্রদর্শক। কঠিন সময়ের দিক নির্দেশনাকারী। আমার প্রিয় নেতা। আপনার পায়ের পাশে বসে আমাকে শ্রদ্ধা করতে দিন.....।
অতীতের জমে থাকা ক্ষোভগুলো এভাবে প্রকাশ করেছিলেন,
দ্যাখো, তোমাকে যদি ঘোড়ার উপর থেকে ফেলে দেয়া হয়, ওর পা ধরে ঝুলে থেকো। লাথি গুতা খেয়েও হতাশ হবেনা। টিকে থাকবে। আপন দ্বীনি ভাইয়েরাও যে লাথি দিতে পারে, এটি আপনাদের কাছে অবিশ্বাস্য ও অসহ্যনীয়। এটি সহ্য করতে পারলেই টিকে থাকতে পারবে...।
..থাক। আর বলবোনা। না জানি আমার শিয়া নামে ভুষিত হয়ে যাই.....।মল্লিক ভাইয়ের মত হাজারো মল্লিক আজ ছেড়া পাঞ্জাবী নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। দুর থেকে এরা অথর্ব। এদের ভেতরে বিস্ফোরম্মুখ এ্যটমিক বোমা ডিফিউজ করে রাখা হয়েছে........স্যরি...
মন্তব্য করতে লগইন করুন