স্বপ্ন : প্রবাস (ছয়) বিদায় মুহুর্ত
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ১৮ মার্চ, ২০১৪, ০৬:৩০:০৪ সকাল
পর্ব পাঁচ
অনেক চেষ্টা সাধনার পর এক সময় ভিসা টিকেট সব কিছুই কনফার্ম হয়। এখন গননা শুরু হয় বিদায়ের তারিখটির। আর যে মাত্র ক'টা দিন পরে বাবা মায়ের আদরের সন্তান, স্ত্রীর একমাত্র ভালোবাসা, সন্তানের আশ্রয়স্হল প্রবাসে পাড়ি দিবে। যত সময় ঘনিয়ে আসে বাবা মা'র অন্তরে অব্যাক্ত কান্নাও শুরু হয়। লোকচক্ষুর অন্তরালে স্ত্রী শাড়ির আচল দিয়ে চোঁখ মুছে। মা ব্যস্ত ছেলেকে কিভাবে সবচেয়ে ভালোটা খাওয়াবেন। বাবা ব্যস্ত বাজারের বড় মাছটা কিভাবে কিনে আনবেন। স্ত্রী ব্যস্ত স্বামীকে কিভাবে আদর সোহাগে ভরিয়ে দেবেন। কেননা প্রবাসে যাওয়ার পর অন্তত ৩/৪ বছর যে আর দেখা হবেনা।বিদায়ের দিনটা যত ঘনিয়ে আসে সকলের পেরেশানিটা তত বাড়ে।
বিদায় তারিখের দু'চারদিন আগে এলাকার মসজিদের হুজুর ডেকে এনে দোয়া মাহফিল ও খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করা হয়।যাতে করে ছহি সালামতে তাদের সন্তান নিরাপদে প্রবাস পৌছতে পারে এবং সেখানে গিয়ে হালাল রুজি করতে পারে, সকল সমস্যা থেকে যেন আল্লাহ হেফাযত করেন।মসজিদেও কিছু সিন্নি পাঠানো হয়।
একদিন ঠিকই বিদায় মুহুর্ত এসে হাজির হয়। একটি মাইক্রো ভাড়া করে বাবা মা স্ত্রী সন্তান নিয়ে এয়ারপোর্টে হাজির। যারা আসতে পারেন না তারা বাড়ি থেকেই বিদায় দেন। বিদায় মুহুর্তে কিছু আত্বীয় স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশী এসেও হাজির হন। হায়রে! কি কান্নার রুল জারী হয়। সবাই যেন এক সুরে কাঁদে। অনেকেই মাইক্রোর পিছু পিছু হাটে আর কাঁদে। কত ধরনের দোয়া দুরুদ পড়ে বিদায় দেয়া হয়। প্রবাস যাত্রীর হাতে অনেকে আবার হাদিয়া স্বরুপ কিছু টাকা তুলে দেন রাস্তার হাত খরচের জন্য। প্রবাস যাত্রীও বাড়ির সকল ছোটদের হাতে কিছু টাকা তুলে দেন স্নেহের পরশ বশত।
এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যারা বিদেশ যাত্রীকে বিদায় দিতে যান তাদের অবস্হাতো আরো করুন। তারা বিদায় মুহুর্তে হাউমাউ করে কাঁদেন। যতবারই এয়ারপোর্ট গিয়েছি ততবারই একই অবস্হার মুখোমুখি হয়েছি। মা সন্তানকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্নার দৃশ্য এখনো আমার চোঁখে ভাসে। আর স্ত্রীর করুন চাহনীটা বড়ই বেদনাদায়ক, তা ঘরে হোক আর এয়ারপোর্টে হোক।
সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যাত্রী ইমিগ্রেশনের জন্য ভিতরে ঢুকে গেলেও বাবা মা সহ যারাই বিদায় জানাতে এসেছেন তারা কিন্তু এয়ারপোর্টের বাহিরে অবস্হান করতে থাকেন। হয়তো আরো ৩ ঘন্টা পরে বিমান আকাশে উড়বে।তারা ঐ বিমান আকাশে উড়া পর্যন্ত এয়ারপোর্ট থাকবেন। বিমান উড়ার পর চোঁখ মুছতে মুছতে একটা বড় নিশ্বাস ফেলে বাড়ির দিকে মুখ ফেরান। অনেকে কিছু টাকা পয়সার বিনিময়ে হলের ভিতরে ঢুকে যান। আরো বেশী কিছুটা সময় তাদের প্রিয় মানুষটির সাথে থাকতে পারলেন। অনেকে হলের বাইরে থেকে গ্লাসের ভিতর দিয়ে দেখার চেষ্টা করেন। কেওবা এভাবে
একজন বিদেশ যাত্রী তারও মনের অবস্হা কি হয় একটু চিন্তা করে দেখুন। বাবা মা ভাই বোন স্ত্রী সন্তান আত্বীয় স্বজন সবাইকে ছেড়ে যেতে তারও যে বুকটা ছিড়ে যাচ্ছে। আমরা অনেকেই আমাদের কান্নাটা লুকিয়ে রেখে মুখে একটা কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে অন্যদের শান্তনা দেই।
শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত প্রিয়জনদের হাত নেড়ে বিদায় জানাই।
এভাবেই আমরা চলে যাই সম্পুর্ন অজানা অচেনা এক দেশে। শুরু হয় আমাদের জীবন যুদ্ধ। কি সেই জীবন যুদ্ধ তা নিয়ে থাকছে আগামির পর্বগুলো। সাথেই থাকুন।
চলবে........
বিষয়: বিবিধ
১৮৯২ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
"তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, কি তারা ব্যয় করবে? বলে দাও-যে বস্তুই তোমরা ব্যয় কর, তা হবে পিতা-মাতার জন্যে, আত্নীয়-আপনজনের জন্যে, এতীম-অনাথদের জন্যে, অসহায়দের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে। আর তোমরা যে কোন সৎকাজ করবে, নিঃসন্দেহে তা অত্যন্ত ভালভাবেই আল্লাহর জানা রয়েছে।" বাকারা ২১৫ ।
ধন্যবাদ ভাইজান সব প্রবাসীর বিদায়ের অনুভুতি আপনার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলায়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন