স্বপ্ন : প্রবাস (পাঁচ) অপ্রাপ্ত বয়স্কদের চরিত্র
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ১২ মার্চ, ২০১৪, ১০:০০:৪৩ রাত
পর্ব চার
আমার এই সিরিজের কিছু লিখা প্রতি পর্বেই ঘুরেফেরে চলে আসছে,তাই অনেকে হয়তো এটাকে শুধু সময়ের অপচয় ভাবতে পারেন।কিন্তু সত্যিকার অর্থে আমি এমন কিছু বিষয় তুলে ধরতে চাই যা অনেকের অজানা । এজন্য কিছু লেখা ঘুরেফেরে চলে আসছে। তাছাড়া আমার এই সিরিজের লেখাগুলোও হয়তো ধারাবাহিক হচ্ছেনা। আর ধারাবাহিক না হলেও সমস্যা নেই বলে আমি মনে করছি। কেননা প্রতিটা পর্বেই নতুন বিষয় আসছে যা গত পর্বের সাথে সম্পর্ক রাখতে আমাকে বাধ্য করছেনা।
গত পর্বে প্রবাস যাত্রী বিশেষ করে ইউরোপ যাত্রীদের কিভাবে চরিত্র নষ্ট হচ্ছে তা সামান্য তুলে ধরেছিলাম। এই পর্বেও সে বিষয়ে আরো কিছু এবং ইউরোপ আসার পর চরিত্র কোথায় গিয়ে পৌছতেছে সেসব বিষয় তুলে ধরতে চাই। বিশেষ করে যারা অপ্রাপ্ত বয়সে তাদের বাচ্চাদের ইউরোপ পাঠাচ্ছেন, তাদের বাচ্চারা অভিভাবকহীন অবস্তায় চরিত্রহীন হয়ে বড় হওয়ার পাশাপাশি ধর্মকে কিভাবে বিসর্জন দিচ্ছে তার সম্পর্কে।
আমরা অনেকেই আমাদের অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাচ্চাদের, ২০/২২ বছর বয়েসী সন্তানদের ইউরোপ পাঠাচ্ছি শুধুমাত্র বড়লোক হওয়ার আশায়। আমাদের হয়তো বড়লোক হচ্ছি ঠিকই,কিন্তু আমাদেরকে হারাতে হচ্ছে অনেক বেশি কিছু।
ঢাকায় অবস্তানকালে যেভাবে চরিত্র নষ্ট হচ্ছে:
দালালদের কথায় বড় অংকের টাকার বিনিময়ে আমরা আমাদের সন্তানদের ইউরোপ পাঠানোর জন্য দিনের পর দিন অভিভাবকহীন ঢাকায় রাখি। এখানে তার কিছু বন্ধু বান্ধব জুটে। সারাদিন বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে হোটেলে আড্ডা দেয়া,তাস খেলা আর সিগারেট টানা হয়ে উঠে নিত্যনৈমিত্তিক একটা বিষয়। সন্ধায় সিমেনা দেখে রাত ১২/১ টায় হোটেলে ফেরা। নামাজ কালামের কোন বালাই নেই। পাশাপাশি পতিতালয়েও যাতায়াত। এছাড়া যে তার আর কোন কাজ নেই। হয়তো সে স্কুল কলেজে পড়তো, এখন সে বিদেশের জন্য ঢাকায় পড়ে আছে। দালালের কথামত মাঝে মধ্যে কোন অফিসটফিসে যাওয়া ছাড়া তার আর কিছুই করার নেই। দালাল আজ হবে, কাল হবে এভাবে আশ্বাস দিয়ে রাখছে, বাড়িতেও যেতে দিচ্ছেনা।
আমি দেখেছি আমার পরিচিত জনদের অনেক সন্তানই এভাবে চরিত্রহীন হয়ে বাড়ি ফেরে। দীর্ঘদিন ঢাকায় অবস্তান করে সে যখন ইউরোপ পাড়ি দিতে না পেরে বাড়ি ফেরে তখন তাকে অপর্যস্ত ও নেশাগ্রস্তের মত দেখা যায়। যে ছেলেটা বড়দের সামনে দাড়িয়ে কথা বলতোনা এখন সে অনায়াসে সিগারেট টানছে। তার কথাবার্তা অসংলগ্ন। সে এখন বাড়ি থেকে বাহিরের পরিবেশ বেশি পছন্দ করে।
অপ্রাপ্ত বয়েসীরা ইউরোপ এসে যেভাবে চরিত্র ও ধর্ম দুটোই হারাচ্ছে:
বর্তমান সময়ে ইউরোপে বিশেষ করে ফ্রান্সে অসংখ্য অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোর তরুন আসছে। ইউরোপের অন্যান্ন দেশ হয়ে প্রায় সকলেই ফ্রান্স চলে আসছে।কেননা ফ্রান্সে বাচ্চাদের জন্য বৈধ হওয়া সহজ।
যেভাবে সহজ প্রক্রিয়ায় বৈধ হওয়া যায়:
এখানে ১৮ বছর এর নিচে বয়স্কদের বিভিন্ন সংস্হা সাহায্য করে থাকে। সংস্হাগুলো তাদের দায়িত্বে থাকার ব্যবস্হা,স্কুলে পড়াশুনার ব্যবস্হা এবং ১৮ পুর্ণ হওয়ার পর বৈধ হওয়ার যাবতীয় দায়িত্ব পালন করে থাকে। এমন কি প্রত্যেকের মেধানুযায়ী কাজও শিখিয়ে থাকে।
এই সুযোগটা বাংলাদেশীরা নিতে গিয়ে এক দিকে চরিত্র নষ্ট হচ্ছে, অপরদিকে ধর্ম কর্ম থেকে দুরে সরে যাচ্ছে।হারাচ্ছে তার নিজস্ব স্বকীয়তা,ভুলে বসছে তার সংস্কৃতি।
২০/২২ বছরের একটা ছেলে তার বয়স লুকিয়ে ১৬ বা সাড়ে ১৬ বলে সংস্হাগুলোর সাহায্য নেয়। সাহায্যকারী সংস্হা মাঝে মধ্যে বয়স প্রমানের জন্য পরীক্ষা করে থাকলেও বেশিরভাগ সময় করেনা। তারা ছেলেটাকে দিয়ে দিলো কোন পরিবারের সাথে বা তাদের অধিনেও রাখতে পারে।যেখানে একসাথে ছেলে মেয়ে বসবাস করে। খাওয়া-দাওয়ায় নেই হালাল হারামের বাচ-বিচার। ধর্ম নিয়ে চিন্তা করারই সুযোগ নাই। ধুমপান ও এলকোহল মাইনাস ১৮ দের জন্য নিষিদ্ধ হলেও কেও বাঁধা দিতে পারবেন না। এক কথায় তাদের মত করে আপনাকে বড় হতে হবে।
এই অবস্হায় আমাদের ছেলেরা তার চরিত্রতো হারাচ্ছেই, পাশাপাশি হারাচ্ছে তার প্রকৃত পরিচয়। এতে করে আপনার ছেলে আর আপনার থাকছেনা।এভাবে বড় হওয়া সন্তানের কাছ থেকে কিছুদিন ঠিকই টাকা পয়সা পেলেও এক সময় তাকে আর আপনি খুজেও পাবেন না। কেননা সে তখন অন্য মেয়ের হাতে হাত ধরে হাওয়ায় ঘুরে বেড়াবে।
এভাবে বৈধ হওয়ার পথটা মাত্র শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশীদের চরিত্রের যে অধপতন দেখছি তা বড়ই আশংকার।
আগামি পর্বে থাকছে, মেয়েদের ইংল্যান্ড হয়ে ফ্রান্স আসা প্রসংগে।
চলবে.......
বিষয়: বিবিধ
১৪৯৮ বার পঠিত, ৪১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
If possible they can admit Islami chatro shibir or same organizations here & there in overseas.
সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আর উলঙ্গ সভ্যতা প্রতিষ্ঠায় মরিয়া এ স্বাধীন জাতির নেতাদের হাড্ডাহাড্ডি ক্ষমতার লড়াইয়ের মাঝে বলির পাঠা এসব যবকরা আজ ফেরারী আসামীর কাঠগড়া হতে বাচার তাগীদেই যেন মিছে সুখ নামের আত্মহত্যাকেই বেচে নিচেছ।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন