স্বপ্ন : প্রবাস (চার) দালালদের খপ্পরে পড়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ০৯ মার্চ, ২০১৪, ১০:৫২:২১ রাত
যারা আগেরটা পড়তে পারেন নি তাদের জন্য
স্বপ্ন : প্রবাস (তিন) মা ফোন ধরে বলে " বাবা পত্র পাঠে আমার দোয়া নিও"
বাবার হালের গরু, চাষাবাদের একটুকরো জমি,মায়ের গহনা কত কিছু বিক্রি করে আমরা দালালদের হাতে টাকা তুলে দেই শুধুমাত্র প্রবাস যাওয়ার জন্য। শুধুকি এখানেই শেষ, দেখা গেলো ওগুলো বিক্রি করার পরও কিছু টাকা ধার করতে হচ্ছে। তখন গাঁয়ের কারো কাছ থেকে অবশিষ্ট জমিটুকুও বন্ধক রেখে টাকা এনে সংশ্লীষ্ট দালালের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। স্বপ্ন, ছেলে বিদেশ গেলে মাস শেষে টাকা পাঠাবে, বন্ধককৃত জমি উদ্ধার হবে সাথে আরো অনেক জমি কিনা যাবে। আর মায়ের গহনা , সেটাতো ছেলে বিদেশ থেকে আসার পথে নিয়েই আসবে।
কিন্তু কতজনের স্বপ্নই আর পুরো হয়। দেখা যায়, দালাল টাকা নেয়ার পর আর কোন খোঁজখবর নাই। ২ মাস বা ৩ মাসের কথা বলে টাকা নিয়েছিলো এখন ৬ মাস থেকে ১ বছর হতে চললো বিদেশ যাওয়ার কোন নামগন্ধ নাই। মাঝে মধ্যে দালালের সাথে দেখা হলে নানান বাহানায় একটা বুঝ দিয়ে সটকে পড়ে। এভাবে একটা স্বপ্ন থেমে যায় ।
বর্তমানে অনেকেই ইউরোপ আসার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা হারাচ্ছেন। দালালদের হাতে অনায়াসে টাকা তুলে দিচ্ছেন। তার পর দালালদের কথামত মাসের পর মাস ঢাকায় অবস্হান করছেন। কেও আসতে পারছেন, আবার কেও পারছেন না। অনেক দিন এক দালালের সাথে থেকে আসতে না পেরে দালাল পরিবর্তন করছেন। কিন্তু আগের দালালের হাতে দেয়া টাকা গুলো কিন্তু ঠিকমত ফেরত পাচ্ছেন না। অনেকে আবার দালালদের সাথে ইন্ডিয়াও যাচ্ছেন। অনেকে সফল হচ্ছেন, আবার অনেকে হচ্ছেন ব্যার্থ। কিন্তু কখন কার সুযোগ হয় ইউরোপে পাড়ি দেয়ার তা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।
একজন লোক তার চাচাতো ভাইকে লন্ডন পাঠানোর জন্যে তাকে নিয়ে তাদের নিকটাতীয় এক দালালের সাথে ঢাকায় এলো, তাকে নিয়ে এক ভিসা প্রসেসিং অফিসে নিয়ে যাওয়া হলো। দালাল বলেছিলো মাত্র এক সপ্তাহের ভিতর তাকে লন্ডন পাঠিয়ে দেবে। কিন্তু এমন হয়েছে যে ঐ অফিসে যাওয়ার পর প্রার্থীকে রেখে যিনি প্রার্থীর সাথে গিয়েছিলেন একটা সুযোগে তাকে ফ্রান্স পাঠিয়ে দেয়া হলো। আর ঐ চাচাতো ভাই ভাগ্যের কি পরিহাস মাত্র ৫ বছর পর ফ্রান্সে আসতে পেরেছে। আসলে এরকমই হয়। অনেকে অনেকদিন ঢাকায় অবস্হান করেও আসতে পারেনা , আবার অনেকে খুব তাড়াতাড়ি চলে আসে।
এখন আবার একটু পরিবর্তন এসেছে দালাল ধরে ইউরোপ আসার ব্যাপারে। আগে যেখানে দালালের হাতে অনেক টাকা তুলে দিতে হত , এখন আর তুলে দিতে হয়না। এখন তৃত্বীয় পক্ষ কারো কাছে টাকা রাখতে হয়। এটা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ উভয়ের জন্য। আসতে পারলে টাকা, না আসতে পারলে দালাল কোন টাকা পাবেনা। তবে ঢাকায় যাওয়া আসা থাকা খাওয়া সব নিজ দায়িত্বে। ইউরোপ আসতে না পারলে ঐটাকা গুলো খচ হলো এই যা। ইউরোপ আসার রেট কিন্তু এক এক এলাকার জন্য ভিন্ন ভিন্ন। যেমন সিলেটি হলে ১২/১৩ লক্ষ টাকার নিচে কোন কথা নেই। আর আপনি যদি সিলেটের বাহিরের হন তাহলে আপনি ৬ থেকে ৮ লক্ষ টাকার ভিতরে আসতে পারেন। তবে এক্ষে ঝুকি একটু বেশি। কেননা শুনেছি কম টাকায় আসতে গেলে দালালের হাতে পুর্বেই টাকা তুলে দিতে হয়।
আগে বেশির ভাগ মানুষ আরব দেশ গুলোতে যেত পাড়া প্রতিবশী বা নিকটাত্বীয় কারো দেয়া ভিসায়। অবশ্য এর জন্য কিন্তু ভিসার দাম প্রদান করতে হত। মানুষ নিজের প্রতিবেশি বা আত্বীয় মনে করে খুবই বিশ্বাস করে ছেলেকে তাদের হাতে তুলে দিত। কিন্তু দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যে কাজের জন্য একজন মানুষ বিদেশ গেলো সে ঐ কাজ পাচ্ছেনা বা যত টাকা মাসিক বেতন তার অর্ধেক বেতনও পাচ্ছেনা। এভাবে অনেকেই নিজের লোকের কাছে প্রতারিত হতেন। হয়তো যিনি বিদেশ নিয়েছেন তারও কিছু করার ছিলোনা। কাজের ক্ষেত্রেতো আবার আমাদের সীমাহিন অযোগ্যতা রয়েছে। কিন্তু কেন ঠিক মত কাজ পেলোনা,কেন কথামত বেতন পেলোনা এটা নিয়ে আবার ঐ প্রতিবেশী বা আত্বীয়র সাথে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
আমার দেখা অনেক কম বয়েসী যুবক তরুন আছে যারা শুধুমাত্র ইউরোপ আসার জন্য বাবা মা ছেড়ে একা একা ঢাকায় থেকে তাদের চরিত্র নষ্ট করছে। ঢাকায় কোন কাজ নেই, সাথে কোন অভিভাবক নেই, তাই তারা বাঁধনহারা জীবন কাটাচ্ছে ঢাকায়। গ্রুপ বেঁধে সিনেমা দেখছে, এমনকি পতিতালয়েও যাওয়া আসছে করছে বলে জানা যায়। সিগারেট সহ নানা রকম নেশায় আসক্ত হওয়ার খবরও পাওয়া যায়। আর যে অভ্যাস ঢাকায় থেকে গড়ে আসে তা ইউরোপ আসার পর আরো বেড়ে যায়। এখানে সব কিছু যে খুবই সহজে হাতের কাছে পাওয়া যায়।
আগামী পর্বে থাকছে সেই সব কাহানি
চলবে..............
বিষয়: বিবিধ
১৫৫৬ বার পঠিত, ৩৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ঠিক বলেছেন। অনেক ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
আমাদের দেশের অনেকেই বিদেশকে মনে করেন এমন জায়গা যেখানে একবার যেতে পারলে সকল নৈতিক ও পারিবারিক বন্ধন থেকে মানুষ মুক্ত হয়ে যায়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন