শেখ শাদী (র)'র বেয়াদবের কাছ থেকে আদব শেখা ও একজন প্রধানমন্ত্রী
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ০৯ মার্চ, ২০১৪, ০৪:১৭:৩৫ বিকাল
শেখ শাদী (র) সম্পর্কে ব্লগের অনেকেই মোটামুটি অবগত আছেন। একজন সুফি সাধক হিসাবে দুনিয়া জুড়া তার খ্যাতি। প্রাইমারীতে অনেকেই হয়তো পড়েছি তার জীবনি নিয়ে। এক দাওয়াতে গিয়ে তিনি কি কান্ডটা করেছেন তা এখনো মনে পড়লে হাসি আছে।কিন্তু ঐ কান্ডটা ছিলো আমাদের সকলের জন্য শিক্ষনীয়।
কি সেই শিক্ষনীয় কান্ড : শেখ শাদী (র) সাধারনত খুবই সাদাসিদে জীবনযাপন করতেন। একবার এক দাওয়াতে তিনি ছেড়া ও নোংরা কাপড় চোপড় পড়ে চলে গেলেন। তাই মেজবান তাকে চিনতে না পেরে ফকির ভেবে অপেক্ষাকৃত কম ও অনুন্নত খাবার দিলেন। শেখ শাদী বিষয়টি বুঝতে পারলেন। তিনি ঐ কম ও অনুন্নত খাবার খেয়ে ফিরে এলেন এবং কিছুক্ষন পর আবার ভালো ও শাহেনশাহী কাপড় চোপড় পড়ে ঐ বাড়িতে গেলেন। এবার তার সামনে সকল উন্নত খাবার দাবার ও যথাযত সম্মান দেখানো হলো। তিনি খাবার খেতে বসে কিছু খেলেন এবং কিছু খাবার তার পরনে পরা জামার পকেটে ঢুকালেন ।
এই অবস্হা দেখে মেজবান প্রশ্ন করলেন, জনাব এটা কি করছেন ?
জবাবে শেখ শাদী (র) বললেন, একটু আগে আমি এসেছিলাম, আমার শরীরে ছিলো ছেড়া ও নোংরা কাপড়। তাই আপনি আমাকে যেভাবে সম্মান দেখালেন এখন আমার বেশভুসার কারনে আমাকে তার ছেয়ে অনেক বেশি সম্মান দেখিয়েছেন। তাই ভাবলাম এই সম্মান ও খাবার দাবার আমার প্রাপ্য নয়, ওগুলো সব ঐ বেশভুসার।
সেই মহান ব্যাক্তিকে একদিন একজন প্রশ্ন করলেন, জনাব আপনি এত আদব কিভাবে শিখলেন ?
তিনি জবাব দিলেন, দুনিয়ার সকল বেয়াদবদের দেখে দেখে আমি আদব শিখেছি।
কিভাবে ? আবার প্রশ্ন ।
তিনি জবাব দিলেন, যখন বেয়াদবরা তাদের বেয়াদবি আচরন করে আর দুনিয়ার মানুষ সেটাকে ঘৃনা করে তখন বুঝে নেই এই আচরনটা আমার করা উচিৎ নয়। এভাবেই আমি বেয়াদবদের কাছ থেকে আদব শিখি।
এবার আসি মুল কথায়। আমাদের দেশে একজন প্রধানমন্ত্রী আছেন, একটি দল আছে, আছে তাদের দলের নেতানেত্রী। তাদের কাছ থেকে অন্য সকল দল ও দলের নেতাকর্মীর অনেক বিষয়ে শিক্ষনীয় আছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও তার দলের নেতানেত্রীর কথা শুনলে মতিউর রহমান রেন্টুর লেখা "আমার ফাঁসী চাই" বইকে আর অবিশ্বাস করার কোনো সুযোগ পাইনা। যেন মনে হয় রেন্টু সাহেব বইয়ের পরতে পরতে সকল সত্য তুলে ধরেছেন। একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি ও তার দলের নেতা নেত্রীরা যেধরনের ভাষা ব্যবহার করেন এটা বাংলাদেশ বলেই সম্ভব। পৃথিবীর অন্য কোথাও হলে ঐ সরকার প্রধানের বিরুদ্ধে তার দলের ভিতরেই বিদ্রোহ শুরু হত। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের । আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেরকম,তার দল সেরকম, সেরকম দলের অপরাপর নেতানেত্রী ও কর্মী। কিন্তু প্রশ্ন হলো সামান্য কিছু ভালো মানুষও কি নেই আওয়ামীলীগে ? যারা জনসমক্ষে না হোক নেত্রীর কানে কানে গিয়ে বলবে, নেত্রী আপনি প্রধানমন্ত্রী, আপনি এভাবে বলতে পারেন না। লোকে খারাপ বলবে।
গ্রামে একটা কথা আছে, একজন ঝগড়াটে মহিলা কোনো কারনে যখন তার পক্ষে সকল যুক্তি হারিয়ে ফেলে তখন সে প্রতি পক্ষকে ঘায়েল করতে গালিগালাজ শুরু করে। এমনকি খুব খারাপ ভাষার গালিগালাজ।
আমাদের প্রধানমন্ত্রীও সম্ভবত তার পক্ষের সকল নৈতিক যুক্তি তর্কে ও সাহসে হেরে গিয়ে এখন প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে খারাপ ভাষা ছাড়া আর কোন উপায় খোঁজে পাচ্ছেন না। তাই স্বভাববশত যা মুখ দিয়ে আসছে বলে দিচ্ছেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো প্রধানমন্ত্রী যে সুরে কথা বলেন, তার দলের অন্যেরাও একই সুর তাল লয় ঠিক রেখে কথা বলেন।
আমি অপর সকল দল ও দলের নেতৃবৃন্দের কাছে সবিনয় অনুরোধ করবো , আপনারা প্রধানমন্ত্রীর কথার জবাব দিতে গিয়ে একই ধরনের ভাষা ব্যবহার করবেন না। যদি করেন তাহলে আমাদের আর কোন উপায় থাকবেনা। বরঞ্চ আপনারা ঐ বক্তব্য থেকে শেখ শাদীর মত শিক্ষা গ্রহন করুন।
বিষয়: বিবিধ
২৪৫২ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এরা তাই পালন করে যাচ্ছে৷
"একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি ও তার দলের নেতা নেত্রীরা যেধরনের ভাষা ব্যবহার করেন এটা বাংলাদেশ বলেই সম্ভব"
এখানে খুব সূক্ষ্মভাবে বাংলাদেশকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। দেশের মানুষের ভিতর যে হতাশাও বিরাজ করছে তাও বুঝানো হয়েছে, আসলে ভাই যে কোন দেশের রাজনৈতিক অবস্থা এমন হলে সেই দেশের অবস্থাও এমন হত। অনেক দেশেই অনেক কিছু হয়। বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস বলে, বাংলাদেশের মানুষরা এ অবস্থায় চুপ থাকার নয়। বাংলাদেশের কোন মানুষ চাই না তাদের প্রধানমন্ত্রী এমন হোক।
মন্তব্য করতে লগইন করুন