স্বপ্ন : প্রবাস (তিন) মা ফোন ধরে বলে " বাবা পত্র পাঠে আমার দোয়া নিও"
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ০১ মার্চ, ২০১৪, ১২:০১:০২ রাত
যারা আগের দুটো পড়তে পারেন নি তাদের জন্য
স্বপ্ন : প্রবাস (পর্ব শুরু)
স্বপ্ন : প্রবাস (শুরুর পরবর্তি)
একটা সময় ছিলো বাংলাদেশের মানুষ শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দৈন্যদশা দুর করার জন্য প্রবাসে চলে যেতেন। হালের গরু, চাষাবাদের একটুকরো জমি, এমনকি বসতভিটা পর্যন্ত বিক্রি করে মানুষ প্রবাস যাওয়ার সকল বন্দবস্ত করতেন। অনেকেই প্রবাস চলে গিয়ে সফল হয়েছেন,দুর করেছেন তার পারিবারিক অর্থনৈতিক দৈন্যতা। আবার অনেকে হয়েছেন ব্যার্থ। খালি হাতে অনেককে ফিরতে হয়েছে। আবার অনেকে জীবন যুদ্ধে ঠিকে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন।
আবার অনেকে প্রবাসও যেতে পারেন নি, ফিরেও পাননি প্রবাসে যাওয়ার জন্য তার দেয়া জমি বেচার টাকাটাও। বসতভিটার মত শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে অনেকে হয়েছেন পথের ভিখারি।(বর্তমান সময়ের দালালদের কথা অপর পর্বে থাকছে) অনেকে হয়েছেন পাগল। যার কাছে প্রবাস যাওয়ার টাকা তুলে দিয়েছিলেন তার সাথে চলেছে ঝগড়া বিবাদ মাসের পর মাস,বছরের পর বছর। আস্ত আস্তে কিছু ফিরে পেলেও তার হারানো সম্পদটুকু আর ফেরত পাননি । অনেকেই ছিলেন যারা ব্যবসা প্রতিষ্টান বিক্রি করে প্রবাসে চলে গেছেন। ব্যার্থ হয়ে ফিরে এলেও ব্যবসা প্রতিস্টান ফিরে পাননি। অনেকে স্কুল কলেজের চাকুরি ছেড়ে প্রবাসে গিয়েছেন। প্রবাসের অবস্হা দেখে আবার কেও কেও ফিরে এসে পুনরায় চাকুরিতে যোগ দিয়েছেন।
একটা সময় ছিলো পরিবারের কেও প্রবাসে গেলে সে ঠিকমত পৌছতে পারছে কি না তা জানার জন্য অন্তত ২০/২৫ দিন অপেক্ষা করতে হত। ২০/২৫ দিন পর একটা চিঠির মাধ্যমে জানা গেলো সে ঠিকমত যথাস্হানে পৌছতে পেরেছে। এখন অপেক্ষার পালা, সে যে কাজে প্রবাস গিয়েছে সে কাজে যোগ দিতে পেরেছে কি না। তারপর অপেক্ষার প্রহর গুনা শুরু কবে বিদেশ থেকে টাকা আসবে। এখনকার মত টাকা ছাড়ারও এত সুযোগ সুবিধা ছিলোনা। প্রবাসী মানুষটি বাংলাদেশে অবস্তানরত তার ফ্যামিলির কারো নামে টাকা ড্রাফ্ট করে পাঠাতেন। সেই ড্রাফ্টের চিঠিটি এক সময় দেশে এসে পৌছত। বাংলাদেশে যিনি আছেন তিনি ড্রাফ্টটি ব্যাংকে জমা দেয়ার পর আরো কয়েকদিন অপেক্ষা টাকা উত্তলনের জন্য। বড় অংকের টাকা হলেতো ব্যাংকের ম্যানেজারকে কিছু একটা দিতে হত ,নতুবা টাকা উত্তলনে ঝামেলা লেগে থাকতো। মজার বিষয় হলো ড্রাফ্টওয়ালা চিঠিটা নিয়ে পিয়ন বাড়িতে গেলে তাকে কিছু দিতে হত।
কত সুখ দুঃখের চিঠি আসতো প্রবাস থেকে। ছেলে বাবাকে লেখতো, স্বামী তার স্ত্রী কে লেখতো, বন্ধু তার দেশে থাকা বন্ধুকে লেখতো। কত কথাই না লিখা থাকতো এক একটা চিঠির মধ্যে। অনেকে লেখা পড়া জানতনা বলে প্রবাসের একটা চিঠি নিয়ে এ বাড়ি সে বাড়ি ঘুরতেন কাওকে দিয়ে চিঠিটা পড়িয়ে শুনার জন্য। অন্য কেও যখন চিঠিটা পড়ছেন তখন বাবা আকাশের দিকে তাকিয়ে জোরে শ্বাস নিচ্ছেন, মা তার আচল দিয়ে চোঁখ মুছতেছেন। কেও আবার স্বামীর চিঠি পড়ে লজ্জায় মুখ লাল করছেন। এদিকে দেশ থেকে যে চিঠি টা প্রবাসে যাচ্ছে সে চিঠিতে রয়েছে অভাব অভিযোগ অনুযোগ।
আস্তে আস্তে টেলিফোনের যোগ এলো। চিঠিপত্র আদান প্রদান কমতে থাকলো। তবে এখনকার মত এত সচরাচর নয়। ফোন করতে গেলে ফনের দোকানে যেতে হয়। অনেক ফোনের দোকান হলো। এখন বাবা মা , স্বামী স্ত্রী ফোনে কথা বলতে শুরু করলেন তবে তাও মাসে ২/১ বার। কেননা ফোন করতে গেলে যে অনেক পয়সা লাগে। একদিন একজন মা তার ছেলেকে ফোনে বলতেছেন "বাবা পত্রপাঠে আমার দোয়া নিও।
আগামি পর্বে থাকছে সেই সব কাহিনী, সাথেই থাকুন।
চলবে........
বিষয়: বিবিধ
১৪৪৮ বার পঠিত, ৪২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চুক চুক
লিখাটা আবেগ প্রবন ভালোই লাগলো-
অবশেষে আমার ব্লগে!
গল্প চালিয়ে যান সাথে আছি
ক্ষুদ্র দেশ ইসরাইল। সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে আছে ইহুদীরা। তারা নিয়মিত তাদের আয়ের অংশ ইসরাইলে পাঠায়।
ছোট বেলা থেকে একটা স্বপ্ন দেখতাম – অর্ধেক বাংলাদেশী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে যাবে – আর দেশ উন্নত হবে। যে ভাবে, উনবিংশ শতাব্দীতে জাপানীরা ইয়োরোপ এসে জ্ঞানবিজ্ঞান অর্জন করে দেশে ফিরে জাপানকে একটি শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হবার ভিত তৈরী করে। ফলতঃ দুটো বিশ্বযুদ্ধ করেও তারা টিকে আছে। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য তা হলো না কারণ কর্তা ব্যক্তিদের অদূরদর্শিতা, দুর্নীতি, ......,
আমরা দক্ষ লোক বিদেশ পাঠাতে পারছিনা, পেশায় দুর্বল, ভাষায় দুর্বল, সরকারী সাহায্য নেই, সম্ভাবনাময় এই খাতের প্রতি সবারই বিমাতা সুলভ আচরণ, রাষ্ট্রদুতদের অদক্ষতা – কি ভাবে এই খাতকে শক্তিশালী করা যায় ইত্যাদি বিষয়গুলোর প্রতিফলন আপানার ধারাবাহিকে ও লেখায় দেখতে চাই।
যাযাকাল্লাহু খাইরান।
আমার এক মামা মামীর কাছে চিঠি দিয়েছিলো। মামী লুকিয়ে লুকিয়ে সেই চিঠি পড়ে। কখনও মুচকি হাসে কখনও চোখ মোছে।
বাড়ীর অন্যঘরের এক মেয়ে যে কিনা আমার সম্পর্কে খালা হয়, অর্থাৎ মামীর ননদ, সে কিছুক্ষণ পরপর মামীর কাছে আসে আর বলে,' ও ভাবী, ভাই আপনার কাছে কি লিখছে, দেননা একটু পড়ি।'
আমার তখন মনে হচ্ছিলো মামী দেখিয়ে দিলেই তো পারে, এটা এমন আর কি সমস্যা।
আমি আমার চেয়ে বয়সে বড় এক খালাতো বোনকে বললাম,'মামী রাণিখালাকে চিঠিটা দেখায়না ক্যান?'
তখন ঐ আপা বললো'একজনের চিঠি আরেকজনকে পড়তে দিতে হয়না।'
ঐ আপা রাণিখালাকেও নিষেধ করলো -আর যেন চিঠি পড়তে না চায়।
এখন ঘটনাটা মনে পড়লেই হাসি পায়।
স্বদেশী-প্রবাসী সবারই কাজে লাগবে!
মন্তব্য করতে লগইন করুন