স্বপ্ন : প্রবাস (শুরুর পরবর্তি)
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১০:২১:৫৯ রাত
যারা আগেরটা পড়তে পারেন নি তাদের জন্য
স্বপ্ন : প্রবাস (পর্ব শুরু)
শুরুর পর্বে বলেছিলাম, আমার বাংলাদেশের মানুষ অধিকহারে প্রবাস নিয়ে স্বপ্ন দেখে। আর তার জন্য দায়ি করেছিলাম বাংলাদেশের দারিদ্রতাকে।বর্তমান সময়ে এসে দারিদ্রতা বিষয়টার কিছু পরিবর্তন হয়েছে। এখন বাংলাদেশের মানুষ শুধু দারিদ্রতার জন্য প্রবাসের স্বপ্ন দেখেনা। এখন মানুষ বড়লোক হওয়ার জন্যও প্রবাসকে বেচে নেয়। কে কার থেকে বেশি পয়সাওয়ালা হওয়া যায় তার জন্য প্রবাসকে বেচে নেয়।
হা, একটা সময় ছিলো শুধুমাত্র পরিবারের আর্থিক অনটন দুর করার জন্য মানুষ প্রবাস যেত।কিন্তু এখন অনেকেই শুধু আর্থিক অনটন নয়, বরঞ্চ বাবা বা বড় ভাইয়ের অর্থের সাথে প্লাস করার স্পৃহা নিয়ে প্রবাস যান। এই জন্যই দেখা যায় বাবা প্রবাসে আছেন তিনি তার সন্তানদের প্রবাসে নিয়ে আসছেন, (ইউরুপ আমেরিকার কথা ভিন্ন) বড় ভাই নিয়ে আসছে ছোট ভাইকে। বাবা দেশে ব্যবসা করছেন,তিনি তার সন্তানদের পাঠিয়ে দিচ্ছেন প্রবাসে। কেননা পাশের বাড়ির অমুকের ছেলে যে গত মাসে একসাথে ৫০ হাজার টাকা পাঠিয়েছে। একসাথে এত টাকা! আমার ছেলে বিদেশ থাকলে সেওতো এভাবে টাকা পাঠাতো, এই মানসিকতা থেকে তিনি তার ছেলেকেও পাঠিয়ে দিচ্ছেন। অমুকের ছেলে মাসে মাসে টাকা পাঠায়, অমুক কি আরামে আয়েসে দিন কাঠাচ্ছে এই মানসিকতা থেকে অনেকেই তাদের সন্তানদেরও প্রবাসে পাঠিয়ে দেন।
নানা প্রক্রিয়ায় মানুষ প্রবাসে এসে থাকে। বেশিরভাগ মানুষ বৈধ পন্হায় প্রবাসে এলেও অবৈধ পন্হায় প্রবাসে আসা মানুষের সংখা কিন্তু কম নয়। বিশেষ করে ইউরোপে। একটা সময় মানুষ প্রবাস হিসাবে মধ্য এশিয়ার আরব দেশ গুলোকে গুরুত্ব দিত, এখনও দিচ্ছে। তাইতো এক সৌদি আরবে যত বাংলাদেশী ,সারা দুনিয়ায়ও তত বাংলাদেশী নাই। তবে বর্তমানে মানুষ ইউরোপের দিকে ধাবিত হচ্ছে।কেও কেও সরাসরি বাংলাদেশ থেকে আসছেন,কেও আবার আরব দেশ থেকে আসতেছেন।
গলাকাটা ভিসা : আজ থেকে ২০/২২ বছর আগে শুনতাম অনেকেই গলাকাটা ভিসায় বিদেশ যাচ্ছেন। বুঝতে পারতাম না গলাকাটা ভিসা কি ? ভিসার কি আবার গলা কাটা থাকে নাকি ! একটু বড় হওয়ার পর বুঝতে পারলাম, আসলে ভিসার গলা কাটা নয়, গলা কাটা পাসপোর্টে যার ছবি তার। মানে পাসপোর্টের আসল মানুষটির গলা কেটে নকল মানুষের মাথা লাগিয়ে ঐ পাসপোর্ট দিয়ে প্রবাস গমন। বর্তমানে এই ধরনটার একটু পরিবর্তন হয়েছে। এখন শুধু গলা কাটা নয়,বরঞ্চ ছবিযুক্ত ঐ পৃষ্টাটিই পরিবর্তন হয়ে যায়। সেখানে নতুন ছবি লাগিয়ে নাম ঠিকানা ঠিক রেখে নতুন আরেকটি পৃষ্টা লাগানো হয়। এই প্রক্রিয়ায় অসংখ্য মানুষ ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছেন, এখনো পাড়ি দিচ্ছেন।
বর্তমানে ইতালীর এগ্রিকালচার ভিসা ও বৃটেনের স্টুডেন্ড ভিসায় প্রচুর পরিমানে বাংলাদেশী ইউরোপ আসছেন। ইতালীতে আসার পর কেও তার কাজের যায়গায় যান না। ছড়িয়ে পড়েন ইউরোপের অন্যান্য দেশে,বিশেষ করে ফ্রান্সে। এতে করে তিনি বৈধ প্রক্রিয়ায় ইউরোপ আসলেও কিছুদিনের ভিতর অবৈধ হয়ে যান, কেননা তার কাছে ইউরোপ থাকার বৈধ কোন ডকুমেনস থাকেনা। ঠিক একই ভাবে স্টুডেন্ট ভিসায় যারা বৃটেন আসছেন তারাও বৃটেন ছেড়ে পূর্ব ইউরোপে চলে আসছেন শুধুমাত্র সহজ প্রক্রিয়ায় বৈধ হওয়ার আশায়। অনেকেই বিভিন্ন আরব দেশ থেকেও নানান ভাবে ইউরোপ আসছেন। অনেকেই নানান ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে প্রবাস পাড়ি দিচ্ছে।
একটি স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কতভাবেই চেষ্টা করে যাচ্ছে মানুষ। অনেকে সফল হচ্ছে, আবার অনেকে হচ্ছে ব্যার্থ। অনেকেই হচ্ছে সর্বস্বান্ত, অনেকে দিচ্ছে জীবন। প্রবাসে আসার পরও আমরা কতজনেই বা আর সফল হতে পেরেছি। কতটা কঠিন পরিস্হিতির সম্মুখিন হতে হচ্ছে আমাদের।
সেই কঠিন পরিস্হিতি নিয়ে থাকছে আগামির পর্বগুলো। বলা বাহুল্য, আমি প্যারিসে থাকি বলে আমার লেখায় ইউরোপ স্হান পাবে বেশি। তাই যারা আরব দেশে অবস্হান করছেন তারা এবং যারা বাংলাদেশে আছেন তাদের মধ্যে থেকে যদি সম্মানিত ব্লগাররা তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন তাহলে আমার আগামির পর্বগুলো হবে সমৃদ্ধ।
আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
চলবে...............
বিষয়: বিবিধ
১৫৪৬ বার পঠিত, ৪৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
....... অনেক ভাল লেগেছে। ধন্যবাদ।
সুন্দর কথা
১০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০বার ধন্যবাদ।
মানুষ কিন্তু সবসময়ই পরিযায়ি। তাই মাইগ্রেশন কোন অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। একসময় বাংলাদেশে যখন প্রচুর সম্পদ ছিল তখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে থেকে বাংলাদেশে মানুষ বসতি করেছে। এখন যে দেশে সম্পদ বেশি সেই দেশে মানুষ বসতি করবে এটাই তো স্বাভাবিক। তবে আমরা বিদেশি বনিকদের স্বাগত জানিয়েছিলাম কারন আমরা বিশ্বাস করতাম পৃথিবীর সম্পদের উপর সকলের সমান অধিকারে। আর ওরা আমাদের অবৈধ বলছে কারন ওরা মনে করে যে সম্পদ কেবলতাদেরই অধিকার।
পরের পর্বের অপেক্ষায়
মন্তব্য করতে লগইন করুন