ভালোবাসার বিয়ে : অতপর..........
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৫:২৬:২৪ বিকাল
সেই ছাত্র জীবন থেকেই একে অপরকে ভালোবাসে। পল্লি গায়ের মানুষ হওয়াতে কেও কাওকে মুখ ফুটে বলতে পারেনি 'আমি তোমাকে ভালোবাসি।' কিভাবে বলবে এত বড় লজ্জার কথা,কেও শুনে ফেললে গ্রামে আর ইজ্জত নিয়ে থাকা যাবেনা। তাই মনের মাঝে চাপা পড়ে রয়েছে কথাটা। কিন্তু কথাটা না বললে কি হবে, দুজনেরই চোঁখের ভাষা বলে দিয়েছে কতটা ভালোবাসাবাসি চলছে দুজনের মনের অন্দর মহলে।মিটিমিটি তাকানো আর মুগ্ধমধুর ছোট্ট একটা হাসিই জানান দিয়ে যায় তাদের ভালোবাসার না বলা কথা ।
বয়েসইবা আর কত হয়েছে দুজনের। সবেমাত্র ক্লাস টেনে উঠেছে শামিল, আর শাহানা এইটে। শাহানাদের বাড়ি স্কুলের কাছাকাছি, শামিলকে শাহানাদের বাড়ির পাশ দিয়ে ছোট মেঠো পথ ধরে স্কুলে যেতে হয়। স্কুলে যাওয়া আসার এই সময়টুকুই দুজন একসাথে যাওয়া আসা করতে পারে। যদিও কেও কোন কথা বলতে পারেনা,কেননা গ্রামের ছেলে মেয়েরা দল বেঁধে স্কুলে যায়। তাই শামিল থাকে ছেলেদের দলে আর শাহানা থাকে মেয়েদের দলে।
টেষ্ট পরীক্ষা দেয়ার আগেই দুবাই থেকে শামিলের মামা শামিলের জন্য একটা ভিসা পাঠিয়ে দিলেন। অর্থনৈতিক অবস্হা ভালো না হওয়াতে এবং শামিল বাবা মায়ের বড় ছেলে হওয়াতে তাকে দুবাই যেথেই হবে।কি আর করা, বাবা মায়ের ইচ্ছাকেতো আর অবহেলা করা যাবেনা । তাই অনিচ্ছা সত্যেও শামিল পাড়ি জমায় দুবাইতে। দুবাই যাওয়ার আগে শামিলকে স্কুল থেকে বিদায় সংবর্ধনা দেয়া হয়। সেই অনুষ্টানে শামিল দেখেছিলো শাহানার দু'চোঁখ ভেজা, করুন একটা চাহনী। সেদিনই শামিলের মনের মাঝে একটা গোপন ইচ্ছা জাগলো, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশে ফিরে সে শাহানাকে বিয়ে করবে।
মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় শামিল দেশে ফিরে। ততদিনে শাহানাও একটু বড় হয়েছে, সে এখন ইন্টারে পড়ে। শামিল বাড়িতে আসায় বাবা মায়ের পক্ষ থেকেও তার বিয়ের কথা উঠলো। শামিল তার বাবা মায়ের কানে শাহানার পস্তাব পাঠালে তারাও মেনে নিলো। শামিলের বাবা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে শাহানার বাড়িতে। উভয় পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের দিন তারিখ সব ঠিক হলো। বিয়ে হবে রাতে। কেননা ঐ গ্রামের ঐতিহ্য হলো রাতে বিয়ে করা। শাহানার মনে আনন্দের ঢেও। শামিলেরও কি কম! দুজনে নতুন এক সুখের স্বপ্নে বিভোর। আর হবেই না কেন? যে কথাগুলো দুজন দীর্ঘদিন একে অপরকে বলতে পারেনি বিয়ের পর মন উজাড় করে সব বলবে সব।
বিয়ের সকল আয়োজন শেষ। গ্রামের প্রতিটা ঘরে ঘরে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। শামিল ও শাহানা তাদের সহপাঠিদের দাওয়াত দিয়েই কান্ত হয়নি, উপস্হিতি নিশ্চিত করেছে।
বর্ষা কাল। অজোপাড়া গায়ের মানুষ,এমনিতেই রাস্তা ঘাট নেই, যা আছে তাও বৃষ্টিতে চলাচলের অনুপযোগী। তাই বলে শাহানাকেতো আর কাদামাটি মাখিয়ে ঘরে তুলা যাবেনা। তাই বর যাত্রা আর কনে নিয়ে ফেরার জন্য ৫ টি ইন্জিন চালিত নৌকা ভাড়া করা হলো। এক কিলোমিটারের মধ্যে দুজনের বাড়ি হলেও শামিলের সহপাঠিরা চাইলো নৌকা নিয়ে তারা নদিপথ ঘুরে শামিল আর শাহানাকে নিয়ে বাড়ি ফিরবে। শামিলও তাদের কথায় রাজি হলো।
বিয়ের দিন সকাল থেকেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। যার কারনে শামিলের বাবা মায়ের মনেও পেরেশানি। বিকেলের দিকে বৃষ্টি একটু থামলেও বর নিয়ে যখন বের হবে তখন আবার বৃষ্টি। এর মধ্যেই বর যাত্রা গিয়ে পৌছলো শাহানাদের বাড়ির কাছের মসজিদে। এখানে মাগরিবের নামাজ আদায় করে সবাই গিয়ে উঠলো শাহানাদের বাড়ি। বৃষ্টিও যেন কিছুটা কমেছে।
এই সুযোগে খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ হলো। বর কনেকে এক সাথে করে মিষ্টিমুখ করানো হলো। শামিল তার গলার মালা শাহানার গলায় তুলে দিলো আর শাহানাও তার মালা শামিলকে পরিয়ে দিলো।মালা বদলের ফাকে একে অপরকে এক নজর দেখে নিলো। দুজনের চোঁখে কি যে এক প্রশান্তি। শামিলের বাবা এসে তাড়া দিলেন,রাত বেশি হয়ে যাচ্ছে, এখনি বর কনেকে নিয়ে ফিরতে হবে।
শাহানাকে তুলে দেয়া হলো শামিলের নৌকায়। সেই নৌকায় আরো আছে শামিলের ছোট বোন, শামিলের সহপাঠিরা আর শামিলের কিছু আত্বীয়। সহপাঠিদের কথানুযায়ি নৌকা ছুটলো নদিপথে। পনের বিশ মিনিটের রাস্তাকে তারা করে ফেললো তিন ঘন্টার রাস্তা। আর দেরি করা যায়না, এখন ফিরতে হয়। নৌকা যখন বাড়ির দিকে আবার মুখ করলো শুরু হলো বৃষ্টি তার সাথে প্রবল বাতাস। একটু সময়ের মধ্যে নদিতে ঢেও খেলতে শুরু করলো,সাথে নৌকাও এদিক সেদিক দুলতে লাগলো। শাহানা আর শামিলের মনে অজানা এক আশংকা দেখা দিলো। শাহানা খুব শক্ত করে শামিলের হাত ধরে রাখলো।
বৃষ্টি আর প্রবল বাতাস নদিতে ঘুর্ণিঝড়ে রুপান্তরিত হলো। নিকষকালো অন্ধকারের মধ্যে এক সময় শামিলের নৌকাটি নদিতে তলিয়ে গেলো। যে যার মত করে বাঁচার আপ্রান চেষ্টা চালালো। গ্রামবাসীরা ছুটে এলো শামিলদের সাহায্যে।
(গল্পটির জন্য প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীনকে শুভেচ্ছা। আর গল্পের শেষ অংশে এসে এই অবস্হায় অনেকেই মৃত্যু কান্ড ঘটিয়ে থাকেন আমি এর থেকে বিরত থাকলাম।)
বিষয়: বিয়ের গল্প
৫২৫৯ বার পঠিত, ৬১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো তো লাগবেই, তাই আগে কমেন্ট করে ফেলি।
আচ্ছা ভাই আপনি না বিয়ের আরেক কিস্তি লেখা শুরু করেছেন? ওটা কি পাব?
লেখালেখিতে দক্ষতার প্রমাণ পাওয়া গেল। ধন্যবাদ আপনাকে।
শেষমেষ তাহলে এই অবস্থা?
গল্পটির জন্য প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীনকে শুভেচ্ছা দেওয়ার কোরন বলবেন ভাইয়া ?
'শেষ হইয়াও হইলোনা শেষ'
আর হা, শাহীনকেতো সাবধান করা দরকার।সে আবার আমার এই লেখা পড়ে কল্পনাতে চলে গিয়েছে।
ছোট গল্প ।
অনেক ধন্যবাদ মেরে না ফেলার জন্য।
সুন্দর সাদামাটা কাহিনী।
মন্তব্য করতে লগইন করুন