চিনি-পানের পর যখন বিয়ে ভেংগে যায়
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ২৬ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৭:২০:১৫ সন্ধ্যা
এক
তারা দু'বোন। বয়েসটা অনেক বেড়ে যাচ্ছে কিন্তু বিয়ে হচ্ছেনা। গরিব পরিবারের মেয়ে তার উপর বিয়ে হচ্ছেনা এতে করে পাড়া প্রতিবেশির মাঝেও কানাঘুষা চলছে। যে কথাবার্তা হয় তা আবার তাদের কানেও পৌছে। এখন তাদের মানসিক অবস্হাটা চিন্তা করে দেখেন। যাক এই সময়ের মধ্যে বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেলো। মানুষ বলাবলি করলো এখন তাদের গিট্টু ছুটেছে তাই অপরজনেরও তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যাবে।
কিন্তু না, বিয়ে শাদি যে আল্লাহর হাতে। তাই ছোটজনের বিয়ে হতেও দেরি হচ্ছে। মাঝে মধ্যে বিয়ের প্রস্তাব দু'একটা আসছে আবার কেন জানি কথা শুরু হওয়ার আগেই সরে পড়ছে বর পক্ষ। আবার গ্রামবাসীর মাঝে কানাকানি ফিসফিসানি। কোন কারনে সামান্য ঝগড়া বাধলেই মেয়েটিকে দুই কথা শুনিয়ে দেয়া "কেন বিয়ে হচ্ছেনা,বুড়িকে কে বিয়ে করবে" ইত্যাদি। আর এই কানাকনি ফিসফিসানি বা ঝগড়াঝাটিতে দুই কথা শুনিয়ে দেয়া এর সব গুলোই হচ্ছে তার স্বজাতির কাছ থেকে অর্থাৎ মহিলাদের পক্ষ থেকে।
এই সমস্ত বিষয় নিয়ে পরিবারেও অশান্তি। গরিব পরিবার তার উপর যদি হয় অশিক্ষিত তাহলে অবস্হা কোথায় গিয়ে দাড়ায়।
একদিন মেয়েটির বিয়ের প্রস্তাব আসলো,কিন্তু যেখান থেকে আসলো সেই পরিবার আর মেয়ের পরিবারে আকাশ পাতাল প্রার্থক্য।দেখেই মনে মনে সন্দেহ করেছিলাম এখানে বিয়ে হবে কিনা। কিন্তু ঘটক আশ্বস্হ করলো যে সব কিছু জেনেই তারা আসছে অতএব নো টেনশন। তাই গ্রামের মেয়ে হিসাবে নিজেও চাইলাম বিয়েটা হয়ে যাক। যতধরনের সাহায্য সহযোগিতা প্রয়োজন তাও দিতে লাগলাম।
কথা বার্তা এগুলো। বর মিয়া কনে দেখে পছন্দ করলেন।বরের পরিবারও কনে ও কনের বাড়িঘর দেখে পছন্দ করে কনে পক্ষকে দাও্য়াত দিয়ে গেলেন। যথারীতি কনে পক্ষ বরের বাড়িতে গেলো,সাথে আমিও গেলাম।সব কিছু দেখে শুনে পছন্দ হলো। বর প্রবাসী তাই বিয়েটা তড়িৎ করতে হবে যার কারনে একটু তাড়াহুড়া পরিলক্ষিত হলো। মুরব্বিরা চিনি পানের তারিখ দিয়ে এলেন,চিনি পানের দিনে বিয়ের তারিখ ফাইনাল হবে।
যথারীতি কনের বাড়িতে চিনি পানের অনুষ্টান হলো,বিয়ের কথা পাকাপোক্ত হলো,তারিখ নির্ধারন হলো। কনের পরিবারে বিয়ের আয়োজন শুরু হলো। বিয়ের কার্ড তৈরী হলো,দাওয়াত দেয়া শুরু হলো,কে কোন দায়িত্ব পালন করবে জানিয়ে দেয়া হলো,সবাই সে অনুযায়ী কাজ করছে। এর মধ্যেই একদিন ঘটক সাহেব হাজির,কেন ? তিনি এসে জানালেন, বিয়ে হবেনা। এখন চিন্তা করে দেখুন মেয়ের অবস্হাটা কি হতে পারে। আমাদের সমাজ ব্যবস্হায় চিনি পানের পর বিয়ে ভেংগে গেলে সব দায় দায়িত্ব মেয়ের উপর চাপিয়ে দেয়। মেয়ের বিয়ে হতে আরো দেরী হয়। ভেবে দেখুন এই ধরনের সমাজ ব্যবস্হায় থেকে মেয়েটার মানসিক অবস্হা কি হতে পারে।
এই সমাজ ব্যবস্হার কারনেই সম্ভবত মেয়েরা আত্বহত্যার পথ বেচে নেয়।
দুই
ছয় বোনের মধ্যে জুহরা ৩ নম্বর। লেখা পড়ায় খুব ভালো না, মাত্র এস এস সি পর্যন্ত লেখা পড়া করেছে। বড় দুই বোনের আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। দুই বছর হয় জুহরা লেখাপড়া বন্ধ করে বসে আছে তাই পরিবার থেকে বিয়ের তুড়জুড়।তার পরিবার আবার অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল পরিবার। বড় এক ভাই লন্ডনে থাকে, তাই নো চিন্তা। ভালো ভালো ঘর থেকে প্রস্তাব আসছে কিন্তু জুহরার পরিবার আরো ভালোর প্রত্যাশায় ওগুলো হাতছাড়া করছে।
একদিন জুহরার পরিবার একই উপজেলার একজন ব্যবসায়ি বরকে পছন্দ করলেন। যথারীতি বিয়ের কথা বার্তা পাকাপোক্ত হলো। জুহরার সমস্হ দায় দায়িত্ব তার এক চাচার। কেননা জুহরার বড় ভাই লন্ডনে,ছোট ভাই দায়দায়িত্ব পালনের মত উপযুক্ত হয়নি। জুহরার বাবা মারা গিয়েছে আজ অনেকদিন হয় তাই চাচাও যেন বাবার দায়িত্ব পালন করছেন।
চিনি পান হয়ে গেলো,বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হলো। জুহরার পরিবার মহা ধুমধামের সাথে বিয়ের সকল প্রয়োজন সম্পন্ন করতে ব্যস্হ। ইতিমধ্যে বিয়ের কার্ড তৈরী করা হয়েছে কয়েক ধরনের । দাওয়াত দেয়াও প্রায় শেষ পর্যায়ে। গায়ে হলুদের জন্য ষ্ট্যাজ তৈরী,পুরো বিয়ের প্রোগ্রাম ভিডিও করার জন্য একটি প্রতিষ্টানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সব কাজ ঠিকটাক মত এগুচ্ছে। এর মাঝে একদিন বর পক্ষ থেকে ঘটকের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হলো যে বিয়ে হবেনা। এই কথা শুনার সাথে সাথে জুহরার চাচা যিনি বাবার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন তিনি ষ্টোক করে মারা গেলেন।
চিন্তা করে দেখুন, এমনোতেই আমাদের সমাজ ব্যবস্হা বিয়ে ভেংগে যাওয়াকে ভালো চোঁখে দেখেনা,তার উপর জুহরার চাচা মারা গেলেন। এই অবস্হায় জুহরার মানসিক অবস্হা কি হতে পারে আপনারাই ভেবে দেখুন।
(পরিশেষে আপনাদের জানিয়ে দেই উপরের দু'টি ঘটনা সত্যি।দুই নম্বর ঘটনায় জুহরা নামটা আমি দিয়েছি।তারা দুজনেরই বিয়ে হয়েছে,হয়েছে সন্তানাধি।জুহরাকে কিন্তু তার পরিবার নির্ধারিত বিয়ের তারিখেই অন্যত্র অপেক্ষাকৃত ভালো পরিবারে বিয়ে দিয়েছে। জুহরা ৪ সন্তান নিয়ে ভালো আছে।)
আসুন গান ধরি...
বিয়ে শাদী খোদার হাতে খোদার কলম নড়েনা
খোদায় যদি কলম মারে সেই কলম আর ফিরেনা।
বিষয়: বিয়ের গল্প
৩২০৭ বার পঠিত, ৫৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমাদের কে আমাদের সমাজ অনেক দুরে ঠেলে দিয়েছে।
ভয়ের কি আছে?
সাহস করুন।
যতটা কঠিন ভাবছেন, ততটা না।
সমাজ আমাদেরকে দূরে ঠেলে দিয়েছে বলেই কি আমরা দূরে সরে গিয়েছি?
সমাজ আমার, আমার অধিকার আমাকেই প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
ভাই আপনাকে অনুরোধ, আপনার কথাটি উঠিয়ে নিন, নইলে .......
সবই মহান আল্লাহর ইচ্ছা!
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
কিতা মাত মাতইন রে ভাই?
হা হাআাআাআাআাআাআাআা
ধন্যবাদ। .
বিয়ে শাদী খোদার হাতে খোদার কলম নড়েনা
খোদায় যদি কলম মারে সেই কলম আর ফিরেনা।জাযাকাল্লাহ।
যারা এরকম কাজ করে তাদের জন্য সামাজিকভাবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করলে ভবিষ্যতে অন্যরা এসব কাজ করার আগে কিছুটা চিন্তা করবে।
ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন