প্রতারনা করলে নিজেই প্রতারনার শিকার হতে হয় (প্যারিসের পুলিশকে মামু বলে বাংলাদেশীরা)

লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৮:৩৯:৪২ রাত



কিছুদিন পূর্বে কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে দেখলাম মেট্রোর উপরে দাড়িয়ে একজন বাংলাদেশী কিছু ফলমুল বিক্রি করছে।তাকে দেখেই পাশে গেলাম এবং কোশল বিনিময় করলাম। এটা আমার সাধারন একটা অভ্যাস। কোথাও কোন বাংলাদেশীদের রাস্তার পাশে কোন কিছু বিক্রি করছে দেখলেই দাড়িয়ে যাই, কথা বলি এবং সামান্য হলেও কিছু কেনার চেষ্টা করি।প্রয়োজন না থাকলেও কিনি শুধুমাত্র ঐ ভাইটিকে কিছু সহযোগিতার জন্য।আমি হয়তো ১/২ ইউরোর কিছু কিনলাম, এতে করে তার কিছু বিক্রি হলো এই যা। তবে এক্ষেত্রে ভাইদের কাছ থেকে নিজেও কিছু সুবিধা পেয়ে যাই। নিজে না চাইলেও ওরা একজন বাংলাদেশী হিসাবে অন্যের থেকে কিছু কমে যে কোন জিনিষ দিতে চায়।

সেদিনও তার কাছ থেকে কিছু কলা কিনলাম।তার ব্যবসা কেমন চলছে প্রশ্ন করলাম।বললো ভাই খারাপ না , তবে মাঝে মধ্যে মামুরা (প্যারিসে পুলিশকে বাংলাদেশীরা মামু ডাকে) নিয়ে যায়।

(মামুর একটা গল্প বলি আপনাদের। এক যুবক তার মায়ের সাথে কথা বলছে। তার মা জানতে চাইলেন সে কি করে।যুবকটি জানালো সে ব্যবসা করে কিন্তু প্রায়ই ব্যবসার সব মামু নিয়ে যায়।ঐ মহিলা মনে করলেন হয়তো উনার ভাই তার ছেলের কাছ থেকে সব নিয়ে নিচ্ছেন, তাই তিনি ভাইকে ফোন দিলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন তুমি কেন আমার ছেলের কাছ থেকে তার ব্যবসার সব কিছু নিয়ে নিচ্ছ? তখন মামু যেন আকাশ থেকে পড়লেন। বললেন, নাতো আমি তোমার ছেলের কাছ থেকে কোন কিছু নিচ্ছিনা। এটা শুনে মহিলা তার ছেলেকে আবার ফোন দিলেন এবং জানতে চাইলেন বিষয়টা কি।তখন তার ছেলে জানালো এই মামু সেই মামু না। এই মামু হচ্ছে প্যারিসের পুলিশ।)

কথার ফাঁকে ব্যবসায়ী ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমি নতুন কি না ? আমি তাকে মুখে কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়লাম। এতে করে সে বুঝে নিয়েছে আমি নতুন।সে আবার জিজ্ঞেস করলো কতদিন হয়েছে? আমি উত্তর দেয়ার পুর্বে সেই বলতেছে কি ৬ মাস হয়েছে কিনা । আমি শুধু মাথা নাড়লাম। সে বুঝে নিয়েছে। আমি মনে মনে একটু হাসলাম, এই ভেবে যে তাকে বুকা বানিয়েছি। জানিনা আমি ঐ সময় কেন এটা করেছি। কেননা আমি প্যারিসে আসার ৯ বছর হতে চলেছে। কারো সাথে মজা করলেও সাথে সাথে আবার বলে দেই, কিন্তু ঐ ভাইকে বলা হয়নি।

তার সামান্য কিছুদিন পর এক বাংলাদেশী দোকানে গিয়েছি। দেখলাম কয়েকজন ভাই মিলে মিষ্টি জাতীয় কিছু একটা খাইতেছে । আমাকে দেখে ক্যাশে যিনি আছেন তিনি খাওয়ার জন্য আহবান জানালেন। জানতে চাইলাম কি উপলক্ষে খাবারটা হচ্ছে। তিনি বললেন নতুন কাগজ পেয়েছেন (মানে বৈধ হয়েছেন) তাই এই খাবার। উত্তর শুনে আমিও যেন আকাশ থেকে পড়লাম।কেননা আমি জানতাম তিনি অনেক পুরনো মানুষ এবং ঐ ব্যবসার সাথে পার্টনার।কিন্তু তিনি এমন ভাবে বলেছেন তার কথা বিশ্বাসও করতে পারছিনা আবার অবিশ্বাসও করতে পারছিনা। আমি যে হতবাক হয়েছি তার উত্তরে এটা গোপন করে বললাম,ভাই তাহলে এই খাবারে হবেনা, আপনাকে মিষ্টি খাওয়াতে হবে।

আমার সাথে আরও একজন ভাই ছিলেন,তিনিও যোগ দিলেন আমার কথায় এবং আমরা দুজনে মিষ্টি খাওয়ার জন্য নানান কথা বলছি। এক পর্যায়ে ঐ ভাই আমাদের জানালেন যে, তিনি নতুন নয় অনেক পুরাতন এবং তার প্যারিসে শুধু কাগজ নয় ন্যাশনালিটি পর্যন্ত আছে। এই কথা শুনে আমি একদম থ হয়ে দাড়িয়ে গেলাম। তখন আমার মনে পড়লো, আমি যে আচরন করেছিলাম আমার ফল বিক্রেতা বাংলাদেশী ভাইয়ের সাথে ঠিক একই আচরনের শিকার আমাকে হতে হয়েছে।

বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি কথা বলতে চাই, অতীতে যারা এই দেশের সহজ সরল মানুষের সাথে প্রতারনা করেছেন তারা নিজেরাও একই ভাবে প্রতারনার শিকার হয়েছেন। নিজের সহকর্মীদের হাতে, নিজের অধঃস্হন কর্মকর্তাদের হাতে জীবন দিতে হয়েছে। আজও যারা প্রতারনা করবে তাদেরকেও একই অবস্হার মুখোমুখি হতে হবে ইনশা আল্লাহ।

বিষয়: বিবিধ

১৮৩১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File