জামাত কি তাহলে তৃতীয় শক্তি ? জামাতের উত্থানে ভারত ও আওয়ামীলীগই দায়ী।
লিখেছেন লিখেছেন প্যারিস থেকে আমি ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৫:৫৪:৪২ সকাল
জামাত শিবিরের নেতা কর্মীরা প্রায়ই বলে থাকেন যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারাই তৃতীয় শক্তি।আর ইসলামীক দলগুলোর মধ্যে তারাই প্রধান।শুধু প্রধানই নয়, কর্মী সমর্থকের দিক দিয়ে, ময়দানে শক্তি সামর্থের দিক দিয়ে, ত্যাগ তিতিক্ষার দিক দিয়ে, তাদের সম পর্যায়ের আর কোন ইসলামীক দল বাংলাদেশে নাই। অনেক হিসাব নিকাশ করে তারা তাদের পক্ষের এই কথাটির সত্যতাও প্রমান করতে চান।
কখনো মনে হয় তাদের কথাই ঠিক, আবার কখনো মনে হয় বেঠিক।জামাত শিবিরের প্রতিপক্ষরা ভিতরে ভিতরে জামাত শিবিরকে তৃতীয় শক্তি হিসাবে মেনে নিলেও বাইরে যেন এটা প্রকাশ করতে চান না। এমনকি জামাতকে কোন শক্তির মধ্যেও ফেলতে চান না। ইনিয়ে বিনিয়ে প্রতিটি নির্বাচনে জামাত কতটি আসন পেয়েছে তার সুন্দর একটা হিসাব দিয়ে বুঝাতে চান জামাত আসলে কোন শক্তি নয়। কিন্তু, তাদের কথা বার্তা এবং আচরনই সব সময় বলে দেয় যে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলই জামাতকে প্রধান প্রতিপক্ষ হিসাবে মনে করে।
তাছাড়া আমরা যদি বাংলাদেশের নির্বাচনে কে কতটা আসন পেয়েছে এই হিসাবে রাজনৈতিক দলগুলোকে হিসাব করি তাহলে বলা যায় আসলে জামাত কোন শক্তিশালী দল নয়। সত্যিকার অর্থে মাঠে ময়দানের অবস্হার আলোকে জামাতের নির্বাচনি হিসাবটা যেন মিলেনা।প্রতিটা নির্বাচনের আগে জামাতের একটা শক্তিশালী অবস্হান দেখা যায়।কিন্তু নির্বাচনে দেখা যায় এর বিপরিত।জানিনা তার কারন কি ? তবে আমার মনে হয় এক্ষেত্রে জামাতের নির্বাচনী অদুরদর্শিতা এবং প্রার্থীদের এলাকার মানুষের সাথে সম্পর্ক কম এটাই প্রধান কারন। যাক জামাত কেন কম আসন পায় সেটা নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই।
আমি যে কথাটি বলতে চাই,তাহলো বাংলাদেশের প্রতিটা নির্বাচনের সময়ে বাংলাদেশের মানুষ একটা নাজুক সময় অতিক্রম করে। একদিকে সরকারি দল ক্ষমতায় আজীবন ঠিকে থাকার চেষ্টার কোন কমতি করেনা, অপরদিকে বিরুধীদল সরকারি দলকে টেনেহেছড়ে ক্ষমতা থেকে নামাতে চায় এবং নামায়ও।কোন নির্বাচনে তার ব্যতিক্রম ঘটেনি , এবারও ঘটবে বলে মনে হয়না।সরকারি দলকে টেনেহেছড়ে ক্ষমতা থেকে নামানোর জন্য বিরুধীদল আস্তে আস্তে কোমর বেঁধে মাঠে নামছে বলেই মনে হয়।
সরকারি দল আর বিরুধী দলের এই টানাটানির সময়ে মানুষের অবস্হা হয় ত্রাহি ত্রাহি। তখন সাধারন মানুষ থেকে শুরু করে সুশিল সমাজের মানুষেরাও বাংলাদেশে একটি তৃতীয় শক্তির আকাংখ্যা করেন। এই সময়ে খুব জোরেসুরে তৃতীয় শক্তির প্রসংগটি উঠে আসে। কিন্তু কখনো কোন তৃতীয় শক্তি আমাদের সামনে আসেনি এবং আমরাও নির্বাচনের পর বেমালুম ভুলে যাই। ন্যুনতম ৪ বছর আর এই তৃতীয় শক্তি নিয়ে কোন কথা হয়না বা তার কোন প্রয়োজনীয়তাও দেখা দেয়না।
এবারও এই তৃতীয় শক্তির কথা উঠেছে এবং অনেকেই তৃতীয় শক্তি সাজার বৃথা চেষ্টা করেছেন। তবে এই সময়ে জামাতকে অনেকেই তৃতীয় শক্তি হিসাবে অকপটে মেনে নিয়েছেন।তার বাস্তব প্রমান হলো আজকের মিডিয়াগুলো। ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়ার খবর এবং টকশো'র মুল আলোচ্য বিষয় থাকে জামাত।একই অবস্হা প্রিন্ট মিডিয়ারও। আর জামাতের এধরনের একটা অবস্হান তৈরীর পেছনে আওয়ামীলীগ ও ভারতই দায়ী।গত ৫ টি বছর আওয়ামীলীগ একটি মুহুর্তের জন্যও জামাত শিবিরকে শান্তিতে থাকতে দেয়নি।এর পরও জামাত শিবির সব সময় সরব থেকেছে।আওয়ামীলীগ যেভাবে জামাতকে শান্তিতে থাকতে দেয়নি ঠিক সেভাবে জামাতও আওয়ামীলীগকে এক মুহুর্তের ছাড় দেয়নি। এতে করে রাজনৈতিক ময়দানে জামাত যে কোন দলের জন্য একটা প্রধান শক্তিশালী প্রতিপক্ষ তা প্রমান করতে সামর্থ হয়েছে।
তাছাড়া ভারত! ভারত সব সময়ই তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে জামাতকে প্রধান শত্রু হিসাবে চিন্হিত করেছে। তাদের প্রতিটা কথা জামাতের বিরুদ্ধে।যেন জামাত না থাকলে তারা সহজে এবং নিশ্চিন্তে বাংলাদেশ থেকে তাদের স্বার্থ হাসিল করতে পারে। তারা যত বেশি জামাতের বিরুদ্ধে বলেছে তত বেশি বাংলাদেশের মানুষ জামাতের পক্ষ নিয়েছে।কেননা বাংলাদেশের বেশীরভাগ মানুষই ভারত বিরুধী। একথাটার সত্যতা পাওয়া যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মন মোহন সিং এর কথায়ও। তিনি বলেছেন বাংলাদেশের ২৫ ভাগ মানুষ জামাতকে সাপোর্ট করে যারা সব সময় ভারত বিরুধী।
এই নির্বাচনে শুধুমাত্র জামাত বধের জন্য ভারত কতকিছুই না করতেছে।গতকালও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং এর কথায় সুস্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে তারা জামাত নিয়ে কতটা টেনশনের মধ্যে আছেন।তিনি এক্ষেত্রে কোন গোপনীয়তা দেখাননি। এরশাদ সাহেবকে তিনি সরাসরি বলে ফেলেন যে যদি তিনি হাসিনার অধিনে নির্বাচনে না যান,আওয়ামী লীগ যদি আবার ক্ষমতায় না আসে তাহলে জামায়াত-শিবিরের উত্থান হবে। কিসের এত ভয় জামাতকে নিয়ে ?
আজ জামাত বাংলাদেশে একটি প্রধান শক্তিশালী দল হিসাবে নিজেদেরকে তুলে ধরতে পেরেছে শুধু আওয়ামীলীগ ও ভারতের কারনে। শত বাঁধা বিপত্তি উপেক্ষা করে, নির্যাতনের ষ্টিম রোলার নিজেদের গায়ের উপর দুয়ে মাড়িয়ে জামাত ময়দানে একটা শক্তিশালী ভিত তৈরী করে নিয়েছে। গত চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে জামাত যতটা শক্তি অর্জন করতে পেরেছে তার চেয়ে অধিক শক্তি ও সাহস জামাত এই সরকারের সময়ে অর্জন করতে পেরেছে।প্রতিটি কর্মী সমর্থককে বাচাই করে নিয়েছে ময়দানের কঠিন মুহুর্তে কারা ঠিকে থাকতে পারে।যে জামাত এক সময়ে একা কোন কর্মসুচি দিতে শতবার চিন্তা করতো সেই জামাত এখন যেকোন কর্মসুচি দিয়ে তা সফলভাবে পালন করে।
তাই বলতে দ্বিদ্ধা নেই যে আজকের জামাতের এই শক্তিশালী অবস্হানের পেছনে ভারত ও আওয়ামীলীগই দায়ী। দেশ প্রেমিক সকল মানুষের কাছে একটি আবদার, যারা তৃতীয় শক্তি খুজেন তাদের কাছে আবদার আপনারাই বিচার করে দেখুন জামাত দেশের জন্য তৃতীয় শক্তি কি না। তৃতীয় শক্তি বলতে আওয়ামীলীগ ও বি এন পির পরের কোন রাজনৈতিক দল নয় বরং আওয়ামীলীগ ও বি এন পির বিকল্প একটি রাজনৈতিক দল।
বিষয়: রাজনীতি
২২৫৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন